আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাছে-দূরে, ফিরে ফিরে একাত্তরে

[গর্ডন স্ল্যাভেন দেরী করিয়ে দিলেন। ইচ্ছে ছিলো লেখাটা ৭ ডিসেম্বর দেওয়ার। আশা ছিলো ওনার স্মৃতিকথাটাও সেদিনই পোস্ট করবেন। ঘটনার একটা রোমাঞ্চকর সমাপ্তির প্রত্যাশায় জুলজুলে মন ভীষণই হতাশ হলো। অবশ্য গর্ডনকে দোষই বা দিই কিভাবে!৪০ বছর আগের স্মৃতিচারণায় ভুলভ্রান্তি হতেই পারে এক ষাটপেরুনো মানুষের।

তখনকার রোমাঞ্চকে উনি এখন বিচার করেছেন বাস্তবতার নিরিখে প্রাপ্তমনস্ক মননে, সুবাদেই বদলে গেছে দৃষ্টিভঙ্গী। আর তাতে ব্যাপক ফারাক দেখা দিয়েছে সে সময়কার প্রচার ও তার বর্ণনায়। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর যশোরের পতন হওয়ার পর সেখানকার কারাগার থেকে মুক্তি পান দুজন বিদেশী। ২০ বছর বয়সী স্ল্যাভেনের সঙ্গী ছিলেন অ্যালান ল্যাঙ্গল কনেট। ২৯ বছর বয়সী এক মার্কিন তরুণী।

দুজনেই ছিলেন অপারেশন ওমেগার সদস্য। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য নিজেদের বিপন্ন করে প্রায় দুমাস জেল খেটেছিলেন। সঙ্গী ছিলেন আরো অনেকেই। অপূর্ব সেই অভিযানের আদ্যোপান্ত নিয়েই এই লেখা। ]
 
শুরুর কথা:
তুমুল যুদ্ধের মাঝে এ এক দারুণ রোমান্টিক কাহিনী হতে পারতো।

নিউ জার্সির মেয়ে অ্যালেন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো বৃটিশ স্কুল টিচার পল কনেটকে। দুজনেই অ্যাকটিভিস্ট। যুদ্ধবিরোধী প্রচারণা ও শরণার্থীদের সাহায্যের সঙ্গে জড়িত। লন্ডনভিত্তিক War Resisters' International (WRI) নামে একটি সংগঠনের কর্মী। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান যখন রক্ত বন্যায় ভাসছে WRI সিদ্ধান্ত নেয় দুঃস্থ বাঙালিদের সাহায্যে এগিয়ে আসার।

আগস্ট থেকেই সংগঠনটি ছোটো ছোটো দলে ভাগ করে তাদের কর্মীদের ‘অপারেশন ওমেগা’ নামের এই প্রতিবাদী কর্মসূচীতে সংশ্লেষ করছিলো। প্রতিবাদ বলতে তখনও বাঙালীরা শরণ নেওয়ার জন্য ভারত ছাড়া কাউকে পাশে পায়নি। গোটা বিশ্ব চুপচাপ চেয়ে দেখছিলো পাকিস্তানের এই তথাকথিত আভ্যন্তরীণ সমস্যা। অক্টোবরের শুরুতে অ্যালেন ও গর্ডন স্ল্যাভেন নামে আরেক বৃটিশ যুবক যশোরের উপকণ্ঠে শিমুলিয়ায় প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে ছিলো শ’দুয়েক শাড়ি-আসন্ন শীতের জন্য গরম কাপড় চোপড়, বিস্কুট।


৪ অক্টোবর একটি গির্জা থেকে তাদের এসব ত্রাণসামগ্রী সহ গ্রেফতার করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। সাদা চামড়া বলেই হয়তো রেয়াত পান দুজন,তার ওপর অ্যালেন আবার মার্কিন নাগরিক। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দুবছরের জেল দিয়ে দুজনকে যশোর কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে পলের তখন দিশেহারা অবস্থা, স্ত্রীর কোনো খবরই পাচ্ছেন না। ১ ডিসেম্বর এক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে জানলেন অ্যালেনের অবস্থান।

৮ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসে ছবিসহ খবর বেরোয় অ্যালেনের। ঠিক আগের দিন মঙ্গলবার যশোরের পতন ঘটে, মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা মুক্ত করেন বন্দিনী অ্যালেনকে। তাকে সসম্মানে পৌছে দেওয়া হয় কলকাতায়। সেখান থেকে তিনি উড়ে যান বাবা-মায়ের কাছে নিউ জার্সিতে।



মোটামুটি এটাকে কাহিনী ধরলে আসলে কিছুই বলা হয় না।

বরং দীর্ঘ অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে আরও চমকপ্রদ ঘটনার উল্লেখ। আর সেটা আরও টুইস্ট খেয়েছে যখন দীর্ঘদিন পর গর্ডন একটি ব্লগ লিখে শেয়ার করেন তখনকার ঘটনাপ্রবাহ। চল্লিশ বছর পর তার প্রাপ্তমনস্ক মস্তিষ্ক সেই সময়কার ঘটনাপ্রবাহকে নিতান্তই এক তরুণের এডভেঞ্চার হিসেবে সরলীকরণ করে ফেলেন যদিও। তবুও তার স্মৃতিচারণায় বেরিয়ে আসে ইতিহাসের না খোঁড়া কিছু পৃষ্ঠার ফসিল। পুরোটা আমরা নিস্পৃহভাবেই যদি বিচার করার সিদ্ধান্ত নেই তাহলে এর উপাদানগুলো অর্থাৎ ঘটনায় সামিল ব্যক্তিত্বদের আলাদা আলাদাভাবে একবার জেনে নিই, তাতে বিবেচনার সুবিধে হয়।


কনেট দম্পতির একাত্তর:
পল কনেটকে স্মরণে রাখবেন মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে সক্রিয় প্রতিটি স্বাধীনতাকামী বাঙালী। এদের একজন সিএএস কবীর। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে লন্ডনই ছিলো আমাদের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন আদায় এবং গণহত্যার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের ঘাটি। শুধু বাঙালীই নয় প্রচুর বিদেশীও এই মানবতাবিরোধী অপরাধযজ্ঞের প্রতিবাদে সামিল ছিলেন। এমন দুটো সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করতেন সিএএস কবীর।

স্কুল শিক্ষক পল কনেট এবং ম্যারিয়েটা প্রকোপের ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ এবং রজার মুডি, এলেন কনেটের তত্বাবধানে পরিচালিত ‘অপারেশন ওমেগা’ ছিলো সে দুটো সংগঠন। এবং দু্টোই ছিলো ওয়ার রেজিস্টার্স ইন্টারন্যাশনালের (WRI) সহযোগী সংগঠন।
প্রসঙ্গত, বলতেই হয় সে সময় বিশ্ববিবেককে নাড়া দিতে যেসব সংগঠন মাঠে নেমেছিলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাদের কথা খুব একটা কৃতজ্ঞতা সহকারে আলোচনা হয়েছে বলে মনে পড়ে না। এদের মধ্যে হিপ্পি ছিলো, চার্চ ভিত্তিক সংগঠন ছিলো, বিপ্লবী ছিলো। এর আগে এক লেখায় জানিয়েছিলাম বাল্টিমোরে পাকিস্তানী অস্ত্র বোঝাই জাহাজ পদ্মাকে ঠেকাতে সাগরে নৌকা নিয়ে নেমে পড়া কোয়াকার্সদের কথা।

WRI নিজেদের দাবি করতো থার্ড ক্যাম্প হিসেবে। শীতল যুদ্ধের নামে বিশ্বকে দুইভাগ করে ফেলা মার্কিন-সোভিয়েত পরাশক্তির বিপক্ষ হিসেবে। অপারেশন ওমেগায় তাদের অনুপ্রেরণা ছিলো বিশ্বযুদ্ধের সময় একদল ফরাসি চিকিৎসকের সংগঠন Médecins sans Frontières, তারা নামটি নিয়েছিলো Teilhard de Chardin-এর দর্শন থেকে। এবং আদর্শও ছিলো একই- "No boundary is legitimate which attempts to separate those in pain from those who can help. Human beings do not need permission to aid those threatened with death."
মূলত এটি ছিলো একটি বহুজাতিক ট্রান্সন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান,এর আগেও প্রাগে সোভিয়েত দমননীতির প্রতিবাদে মস্কো, বুদাপেস্ট, ওয়ারশও এবং সোফিয়ায় ছোটো ছোটো চারটি দল পাঠিয়েছিলো WRI যার নেতৃত্বে ছিলেন ইতালিয়ান নাগরিক মার্কো প্যানেলা। পূর্ব পাকিস্তানে এই দায়িত্ব পান রজার মুডি।

সংগঠনটির তখনকার জেনারেল সেক্রেটারি দেবী প্রসাদের ভাষায় -Operation Omega started in August, aimed at bringing attention to the genocide being committed in Bangla Desh by the Pakistan government, to the ineffectuality of aid at the moment and to Britain's responsibility as ex-colonial masters, as well as to provide some practical aid.
অন্যদিকে অ্যাকশন বাংলাদেশের কার্যক্রম ছিলো মূলত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে অনুদান সংগ্রহ করা এবং পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিবাদ র‌্যালি আয়োজন করা। এদের দুটো উল্লেখযোগ্য এবং সফল কর্মসূচী ছিলো। প্রথমটি এপ্রিলে প্যারিসে আয়োজিত দাতা দেশগুলোর বৈঠকে (প্যারিস কনসোর্টিয়াম) পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ঋণ ও অনুদান বাতিল করানো। সিএএস কবীর এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন: প্যারিসে পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে বাংলাদেশের একটি পতাকা হাতে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে পল কনেট। পুরো দৃশ্যটা টিভিতে ধারণ করা হয় এবং এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করে- তুমি তো বাঙালী নও, ইংরেজ, তুমি একা কিভাবে ইয়াহিয়ার জান্তার বিরুদ্ধে লড়বে আর বাংলাদেশ স্বাধীন করবে? পতাকা নাড়তে নাড়তে পলের দৃঢ় উচ্চারণ ছিলো- দেখোই না আমি কি করতে পারি! ১ আগস্ট যেদিন নিউইয়র্কে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজিত হচ্ছিলো, সেই একইদিন লন্ডনের ট্রাফলগার স্কয়ারে ‘স্টপ জেনোসাইড, রেকগনাইজ বাংলাদেশ নামে একটি র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেসময়ের রেকর্ড ২৫ হাজার মানুষের সেই জমায়েতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা পুনরুচ্চারিত হয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ ও অনশন কর্মসূচীও সফলভাবে আয়োজন করেছিল অ্যাকশন বাংলাদেশ।



১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট ৮ জনের একটি দল নিয়ে মুডি উদ্বোধন করেন অপারেশন ওমেগার। পেট্রাপোলে দুটো ল্যান্ডরোভার বোঝাই ত্রানসহ তারা ধরা পড়েন। ২৬ ঘন্টা আটকে রাখার পর তাদের আবার পুশব্যাক করে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ।

৫ সেপ্টেম্বর ৪ জনের একটি দল পায়ে হেটে বহনযোগ্য কিছু ত্রান নিয়ে ঢুকে পড়েন বাংলাদেশে। যথারীতি তারা ধরা পড়েন এবং ১১ দিন আটকে রেখে তাদের ইংল্যান্ডের প্লেনে তুলে দেওয়া হয়। ওই একই দিনে একটি মিনি ট্রাক নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেন আরো দুজন। একটনেরও কিছু কম খাদ্য সামগ্রী,ওষুধ ও কাপড়চোপড় তারা বিলি করেন ৬০০ বাঙালীর মাঝে। এটি ছিলো একটি সফল অভিযান।

১০ সেপ্টেম্বর পুনরাবৃত্তি ঘটে তার। এবার তিন জনের একটি দল পাঁচ দিনের এক সফল অভিযাত্রায় তাদের ত্রাণ কর্মসূচী চালায় বাংলাদেশ সীমান্তে। অ্যালেন ও গর্ডনের অভিযান ছিলো অপারেশন ওমেগার ষষ্ঠ এবং মোট ৯ বার সীমান্ত অতিক্রম করে সংগঠনটির সদস্যরা। পাকিস্তান সরকার কিন্তু এই তৎপরতাকে ভালো চোখে দেখেনি। তারা প্রায়ই পত্রিকায় বিবৃতি দিতো যে মাদকাসক্ত একদল বিদেশী অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, তাদের আটক করা হয়েছে কিংবা দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।


অপারেশন ওমেগার সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসেব নিকেষে না গিয়ে বরং এর মূল উদ্দেশ্যটা নিয়েই কথা বলা যাক। একাত্তরে অরাজনৈতিক এই সংগঠনটির কর্মীরা ভিয়েতনামের তান্ডবের পাশাপাশি বাংলাদেশে পাকিস্তানীদের বর্বরতা সম্পর্কেও বিশ্বজনতার চোখ খুলে দিতে সাহায্য করে। তাদের কার্যক্রম আলোচনায় আসে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রযন্ত্রেও। যেমন গর্ডনের আটকাদেশ সম্পর্কে বৃটিশ পার্লামেন্টে এক সওয়াল জবাবের রেকর্ড পাওয়া যায়।
HC Deb 22 October 1971 vol 823 c207W 207W
§ Mr. Meacher
asked the Secretary of State for Foreign and Commonwealth Affairs what action he proposes to take following the arrest and imprisonment in East Pakistan of the unarmed relief worker, Gordon Slaven, a British subject.
§ Mr. Anthony Royle
Mr. Slaven who is a member of the Organisation known as Operation Omega was arrested on 4th October and charged under Section 3(2)A of the Foreigners Act of 1946 with entering Pakistan by a route not authorised for entry by foreigners. He pleaded guilty, and was sentenced on 12th October to two years' imprisonment. A member of the Deputy High Commission in Dacca attended Mr. Slaven's trial.
ফিরে আসা যাক অ্যালেন পল দম্পতিতে।

নিউইয়র্ক টাইমসে পরদিনই অ্যালেন কনেটের মুক্তিসংবাদ ছাপা হয়। এ ব্যাপারে আরেকটু বিস্তারিত আসে ওয়াশিংটন পোস্টে। দেশে পা রাখার পর মার্কিন সাংবাদিকদের উদ্দেশে তার কথাগুলো ছিলো অসাধারণ-মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ওরা স্বাধীনতা পাবেই। ঈশ্বর স্বাক্ষী যেই নারকীয়তার মধ্যে দিয়ে তারা গেছে এরপর এটাই তাদের অধিকার।

বন্দীদশার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানিয়েছেন তার সঙ্গে আরো দুশো নারী আটক ছিলেন কারাগারে যারা সব হিন্দু এবং এদের সাধারণ ক্ষমা দিয়ে ফিরিয়ে আনার পর গ্রেফ্তার করে পাকিস্তানীরা। কারাগারের নীচের দিক সব কর্মকর্তা ছিলেন স্বাধীনতাপন্থী এটা জানিয়ে অ্যালেন আরো বলেন গর্ডন এক বন্ধু পেয়েছিলেন যার মাধ্যমে রেডিওর খবরাখবরে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে খবর পেতেন তিনি। মূলত তার মুক্তির আগের দিনই পাকিস্তানীরা যশোর ছেড়ে পালায়।



এ ব্যাপারে সবচেয়ে চমকপ্রদ হচ্ছে পল কনেটের প্রতিক্রিয়া। স্ত্রী পাকিস্তানীদের হাতে বন্দী আর তিনি হা-হুতাশেই দিন কাটাচ্ছিলেন- এমন কিন্তু নয়।

তিনি সঙ্গী হয়েছিলেন মুক্তি বাহিনীর। ওমেগার সদস্য নন পল, অহিংসও নন। তার কথা হচ্ছে আমি বলেছিলাম কোনো ধরণের সাহায্য দেওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই সশস্ত্র সমর্থন লাগবে। আমার স্ত্রীর অভিজ্ঞতা বলে আমার ধারণাই সঠিক। পল-অ্যালেন দম্পতি এখনও বেচে আছেন।

এখনও যু্ক্ত পরিবেশবাদ আন্দোলনে।
গর্ডন স্ল্যাভেনের কথা:
পুরোটা ঘটনায় একরকম পার্শ্বচরিত্রেই ছিলেন গর্ডন। অথচ অপারেশন ওমেগার প্রথম সফল অপারেশনটিতে অংশগ্রহণ ছিলো তার। ৫ সেপ্টেম্বরের সেই সফল অভিযান সম্পর্কে ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত পিস নিউজে লেখা হয়: The Second Team – Freer Speckley, Marc Duran and Gordon Slaven – moved in, with a vehicle, to Bangladesh territory also during last Sunday. Their mission was successful. They carried out a two-day operation covering some 33 square miles inside East Bengal, during which time they distributed enough high-protein food for 3 days’ sustenance for 800 people. They drove their vehicle to the water’s edge, and then loaded the half-ton weight of supplies on to a boat, which took them across the water to where distribution could begin. Their main items off-loaded were: 1,000 loaves of high-protein brown bread; some biscuits; and 350 saris. They were accompanied by Bengali guides, whose presence ensured a more equitable distribution of food than would otherwise have been possible – since large numbers of hungry people rushed towards them in an effort to get ‘first in the queue.’
স্ল্যাভেন ‘1971 again’  শিরোনামে একটি ব্লগে লিখেছেন তার স্মৃতিকথা। স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে সে সময়ের অভিযান।

আগেই বলেছি সময়ের প্রলেপে এবং প্রাপ্তমনস্কতা তার সেই স্মৃতিকথাকে এক তরুণের জীবনবাজি অভিযাত্রার আমেজ দেয়নি। তারপরও সেখানে স্পষ্টই বর্ণনা করেছেন ঘটনাক্রম, কিভাবে যুক্ত হলেন ওমেগায়, লন্ডন থেকে এম্বুলেন্স নিয়ে তাদের সড়কযাত্রা। কলকাতায় দিনগুলো, শরণার্থীদের কথা, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা, বন্দী যাপনের কথা। সেখানে এক বন্ধুপ্রতীম ডাক্তারের সাহায্যে গণহত্যার রেখচিত্রও পেয়েছেন তিনি। চমকপ্রদ হচ্ছে শিমুলিয়ার যেই ক্যাথলিক চার্চ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো, সেই চার্চে ৪ এপ্রিলে নিহত হয়েছিলেন একজন ইতালিয়ান যাজক (একাত্তরের যীশু নামে একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচিত্র নির্মিত হয়েছিলো এই ঘটনার ছায়াবলম্বনে)।

ফাদার মারিও ভেরোনেসির অপরাধ ছিলো বিপন্ন মানুষকে তিনি আশ্রয় দিয়েছেন,আর সেজন্যই তাকে গুলি করে হত্যা করেছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
গত ৫ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের এক সম্বর্ধনায় এসেছিলেন কনেট দম্পতি। কিন্তু স্ল্যাভেন উপেক্ষিতই রয়ে গেছেন কিংবা হয়তো এড়িয়ে গেছেন নিমন্ত্রণ। যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিলের শিক্ষা পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন এখন তিনি। কনেট দম্পতি দীর্ঘদিন পরিবেশবাদী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা হিসেবে পল একটি বই লিখছেন জানিয়েছেন, নাম দিয়েছেন ‘অ্যাকসিডেন্টাল একটিভিস্টস’।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।