আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

::: খেয়ালী ভাবনা :::



মেয়ে স্টুডেন্ট খুব কম পড়ানো হয়েছে জীবনে। তার মধ্যে বেশীর ভাগই ব্যাচ এ। আর মোটামুটি মেয়েদের প্রতি এলারজি ছোটবেলা থেকেই,খুব ভাল মিশতে পারি না। আল্লাহর একটা অমিয় রহমত এক ভাই একটা স্টুডেন্ট এর খুজ দিলেন, যাত্রাবাড়ীতে। মেয়ে স্টুডেন্ট, না করার উপায় পেলাম না।

চাহিদা ছিল প্রকট। ৩০০০ দিবে শুরুতে পরে বাড়াবে এ রকম আলোচনা হল। আমরা যারা সম্মানী দরিদ্র তাদের এতে হয়ে যায়, দারিদ্রতা যায় না বিধায় বেতন বাড়ার চাহিদা রয়ে যায়। যাক জুলাই বা অগাস্ট এর ১৮ তারিখ থেকে শুরু করলাম। উচ্চতর গণিত আর পদার্থ পড়াতে হবে।

প্রথম দিন ওরে দেখে টাস্কি। আমি যতদূর জানি ক্লাস নাইন এর মেয়ে সমাজের আট দশ টা মেয়ের মত বড় হবে। কিন্তু ওরে দেখে মনে হচ্ছিলো পিএসসি দিসে বা দিবে। আমি এই ভাবনা টা ওরে জানাইলাম, হাসি দিয়া সম্মতি প্রকাশ। ছোট বলাতে পুরাই ছোট হইয়া গেছিলো।

কোন কিছুতে আর বড় করা যায় না। আর এই সুযোগে মেনারলেস চলাফেরা করতে পারতো কিছু বলা যেত না। যাক প্রথম দিকে ভালই চলছিল। যাই বুঝাইতাম বুঝত বা at least বুঝার চেষ্টা করত। আমি আবার যেকোনো স্টুডেন্ট এর চেষ্টাটাকে পছন্দ করি।

তার জানার আগ্রহকে সমীহ করি। ভালই সে তাল মিলিয়ে চলছিল। কিন্তু কোন এক কারনে ও আমাকে ভুল বুঝে বা আমি তাকে ভুল বুঝি যার কারনে কেমন জানি দেয়াল পরে গেল পড়ালেখায়। যাক আমি যেকোনো স্টুডেন্ট কে আমার জানা বিষয় গুলো খুব ভাল ভাবেই জানাই, আমার দায়িত্ববোধ থেকে। কিন্তু এই স্টুডেন্ট তা বুঝত না তা নয় কিন্তু মানবে না।

যাক তাকে নিয়ে লিখছি বিশেষ কারনে তেমন কিছু নয়,খেয়ালী ভাবনা। এমনিতে ও অনেক ভাল, পর্দা করে, নামাজও মনে হয় যথারীতি আদায় করে (সোদি থেকে এসেছে এ রকম কালচারিং ছিল ) তাদেরকে আজ এঞ্জয় করার সময়,চিন্তা করার না। চিন্তা করার বহুত টাইম জীবনে পইরা আছে। এখন খালি মজা কইরা যাও। আর ঐ সময় যদি কেউ তারে চিন্তা করা শিখায় তখন সমাজও কটু দৃষ্টি দিবে আর এঞ্জয় কারী তো দিবেই।

সমাজের আট দশটা শিক্ষক এর মত আমাকে ভাবাতে খুব বিব্রত হতে হয়েছে। আমি আমার স্টুডেন্ট কে কখনো বলদ ভাবি না যে আমি তাকে দিয়া পিডাইয়া হাল চাষাবো। আমি তাকে মানুষ ভাবি আর তাই তাকে চিন্তা করতে শিখাই। তারপর সে তার চিন্তার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সে আমার মত করে আনতে যত ক্ষতি হবে তার মেনে নেয়া উচিত,কিন্তু ও মানতে পারে না।

যার ফলাফল সে ম্যাথও মুখস্ত করে আর যার ফলে দিনকে দিন গবেট হতে লাগলো। তাৎক্ষনিক লাভ এর প্রত্যাশা বৃহৎ ক্ষতিকে লুকিয়ে রাখে। যাক আমি আমার পন্থায় অটল। মানুষ কে চিন্তা করাইতে পাড়াটাই বড় আনন্দের। যে একাজ করাতে পারে সেই জানে।

আর চিন্তা করতে পাড়াটা তো আরও আনন্দের। যে করে সেই জানে। এই মাসে এক টিউশন গেল, আর একটা আসিতেছে ্‌। একটা টিউশন চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা বাড়াই দিল। বাড়ি থেকে একটু বেশি আসা শুরু করল।

যখন টিউশন টা গেল ,তখন একটু বিচলিত হয়ে গেলাম। তারপর ৫ /১০ মিনিট এর মাথায় এল রিজিক আল্লাহ্‌ এর হাতে। আল্লাহ্‌ কীভাবে যেন রিজিক আমার জন্য বের করে আনেন, আমি মাঝে মধ্যে ঝুউউউউউমমম খাইয়া যাই। সুবহানাল্লাহ। গতকাল আমার স্টুডেন্টটা এস এম এস এ জানাইল স্যার আমার উচ্চতর গণিত পরীক্ষা খারাপ হইছে।

কেন জানাইল জানা নাই,ধরতে পারতাছি না। ওকে আগেই ওর পরীক্ষা খারাপ হওয়া নিয়ে বিপদ সংকেত দেয়া হয়েছিল। এস এম এস পাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আমার এক ছেলে স্টুডেন্ট কে পরাইতে গিয়া ওর রেজাল্ট জানলাম শুধু উচ্চতর গণিত এর, শাখা প্রথম আর পুরো স্কুলে চতুর্থ। ওর হায়ার মেথ স্যার নাকি ওরে দার করাইয়া ছাত্রদের জারি দিছেন। [বলা বাহুল্য এবারের হায়ার মেথ প্রশ্ন সামসুল হক এ অনেক হার্ড করেছিল ]আমার ধারনা মতে শিক্ষকতা আমার একটা প্যাশন তাই অনেক যত্নবান এই প্রফেশনটাতে ।

অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি,এখনও অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। As a Teacher ..... আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন আমার স্টুডেন্টগুলো সমাজের এমন স্থানে পৌছায় যাতে আমি গর্ববোধ করতে পারি, দুনিয়া আখেরাত উভয় স্থানে। আর আমি চেষ্টা করি নিজেকে ঐ ভাবে সাঁজাতে যাতে করে আমার স্টুডেন্ট আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে। আল্লাহ্‌ আমাকে কবুল করুক আমিন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।