আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাওয়া (ধারাবাহিক গল্প) -শেষ পর্ব

ব্যান হবো না তো! আবার আমি সাগরের মইধ্যে পড়ি। কুল কিনারা নাই। রাইত হইয়া গেছে। আমি মাইয়াডারে কুলে নিয়া রিক্সায় উঠি। সাথে মর্জিনা।

দুইজনে কোন কথা হয় না। মর্জিনা মাইয়াডারে কোলে নেয়। চুমা খায়। চোখ দিয়া পানি তখন পড়ছে। আমার চোখেও কি দুই ফোটা পানি আসলো? বলতে পারি না।

বস্তিতে যাইয়া ভাত খাইয়া তিনজনে ঘুমাইতে যাই। সকালে ঘুম থিকা উঠি। মর্জিনা সকালে এক বাসায় কাম করে। টাকা পয়সার জন্য না। সময় কাটানোর জন্য।

আইজ আর কামে যাইবো না। মাইয়াডা যদি হারাইয়া যায়। আমি আইজ কামে যামু। কবে ফিরবো জানি না। দুই, তিন, চাইর দিনও লাগতে পারে।

মনের মধ্যে ভয় নিয়া আল্লার নাম নিয়া কামে রওয়ানা দিলাম। মর্জিনারে কইলাম-ভালো কইরা দেইখা রাখিস। এর মধ্যে নাকি একদিন মাইয়া হারাইয়া গেছিলো। অনেক খুজাখুজি কইরা তারে পাইছে। আমারে জানায় নাই বকাবকির ভয়ে।

আমি তিনদিন পরে আইসা শুনলাম। কতো বড় ফাড়া কাঁটছে। আল্লার কাছে শুকরিয়া করলাম। নামাজ কালাম পড়ি না। কিন্তু এই মাইয়া পাওয়ার পর থিকা আল্লার নাম বেশী বেশী মনে পড়ে।

তবে এই তিনদিনে থানার থিকা ডাক পড়ে নাই। দারোগা সাব কি ভুইলা গেছে ব্যপারটা? এত কাম তার, ভুইলা গেলে আমি বাইচা যাইতাম। তিনদিন পর আবার কামে যাইতে হইবো। এর মইধ্যে একটা কিনারা হইলে ভালো হইত। একদিন যায়, দুই দিন যায়, তিন দিনের দিন থানা থিকা ফোন আসে।

-মাইয়া নিয়া থানায় আসো। -এক্ষনি আসতাছি স্যার। আমি আর মর্জিনা মাইয়াডারে নিয়া থানার দিকে রওয়ান দেই। দারোগা সাব বাইরে বেঞ্চে বসতে বলে। আর কিছু বলে না।

আমরা অপেক্ষা করতে থাকি। এক পুলিশরে ডাইকা ব্যপার জিজ্ঞাস করি। কিছু নাকি জানে না। বুক দুরুদুরু করতে থাকে। আবার আটকাইবো না তো? আবার টাকা ......।

নানা চিন্তা আসে মাথার ভিতরে। ঘন্টা খানেক পরে একটা গাড়ি আইসা ঢুকে থানার ভিতরে। পছনের সিট থিকা একজন পুরুষ আর একজন মহিলা নামে। স্বামী-স্ত্রীই হইব মনে হয়। দুইজনের বয়সই চল্লিশের উপরে হইবো।

সোজা দারোগার সাবের রুমে ঢুকে। একজন পুলিশ তাগো দারোগার সাবের রুমে নিয়া যায়। বুকের দুরু দুরু বাড়তে থাকে। আমার নামে কেস করবো না তো? জেলে যাইতে হইবো না তো? ভিতর থিকা হাসির আওয়াজ পাওয়া যায়। দারোগার সাবের দোস্ত-বন্ধু হইবো মনে হয়।

তুই তুকারি সম্পর্ক। একটু পরে আমার ডাক পড়ে। আমরা তিনজন ভিতরে যাই। দারোগা সাবের মুখে হাসি। আমার কোলের মাইয়াডারে দেখাইয়া মেম সাবরে কয়-দেখেন তো ভাবি পছন্দ হয় কি না।

আমি আল্লারে আবার ডাকতে থাকি। আল্লা, মাইয়াডারে যেন তাগো পছন্দ হয়। মেম সাবের মুখে হাসি। বলে –খুব পছন্দ হয়, ভাই। দেখে তো মনে হচ্ছে বড়লোকের মেয়ে।

পরে কোন ঝামেলা হবে না তো। দারোগা সাব কয়- ঝামেলা হলে আমি তো আছি। মেমসাব চেয়ার থেকে উঠে আসে। দাঁড়াইয়া থাকা মর্জিনার কুল থেইকে সুমিরে কুলে নিতে চায়। সুমি যাইতে চায় না।

একটু জোড়াজুরি করে। সুমি কাইন্দা দেয়। আমি কই-আফা, ও লজেন খুব পছন্দ করে। আমার হাত থেইকে দুইটা লজেন মেম সাবের হাতে দেই। মেম সাব সুমিরে লজেন দেখায়।

সুমি কোলে যায়। লজেন নিয়া আবার মর্জিনার কোলে আসতে হাত বাড়ায়। মর্জিনা হাত বাড়ায় না। কিন্তু চোখ থিকা পানি গড়াইয়া পড়তে থাকে। আমার চোখেও পানি।

দারোগা সাব একটা কাগজে সই করতে বলে। আমি জিজ্ঞাস করি-কিসের দলিল, সার। -তুমি যে মাইয়াডারে দান করতাছো তার দলিল। তোমার কোন ভয় নাই। এরা আমার বন্ধু।

খুব ভালো মানুষ। তোমার কোন ক্ষতি হবে না। -মাইয়াডা তো আমি কুড়াইয়া পাইছিলাম। -তাও দলিলে লেখা আছে। তোমার কোন অসুবিধা নাই।

দারোগা সাবের কথার বিশ্বাস কইরা দলিলে সই করলাম। একটা বিপদ থিকা তো বাঁচলাম। পরে বিপদ আইলে, পরে দেখা যাইব। মেম সাবের কোলে সুমি কান্না কাটি শুরু করছে। আমি আর মর্জিনা চার চোখ ভরা পানি নিয়া থানা থিকা বাইর হই।

পিছন থিকা মেম সাব ডাকে। আমি পিছনে তাকাই। মেম সাবের হাতে পাঁচশ’ টাকার দুইটা নোট চোখে পরে। আমি “লাগবো না” কইয়া রিক্সায় উঠি। মর্জিনার গলায় হাত দিয়া বস্তির দিকে রওয়ানা দেই।

মর্জিনা ফুপাইয়া কানতে থাকে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.