আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কি ভাগ্য !!!!! মারহাবা মারহাবা!!!! তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি মুক্ত থাকাকালীন হত্যার রেকর্ড ভাংতে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন কারাগারের ভিতর হত্যার রেকর্ড গড়ার মধ্য দিয়ে।



পাশের বাড়ির একটি মেয়েকে ভালোবেসেছিলেন নরসিংদীর যুবক শাহজাহান মিয়া। কিন্তু সমাজ তা মেনে নেয়নি। গ্রামে সালিশ বসে। শাহজাহান সেই সালিশে যাননি। তার অনুপস্থিতিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

রাগ, অভিমান আর লজ্জায় গ্রাম ছাড়েন শাহজাহান মিয়া। ঘটনাটি ১৯৭৪ সালের। তখনও তিনি জল্লাদ নন প্রেমীক শাহজাহান । এরপর পাল্টে যায় তার জীবন। নরসিংদী সরকারি কলেজের এইচএসসি পাস করা এই শাহজাহান খুন, ডাকাতিসহ অপরাধের সব শাখায় বিচরণের পর এখন দেশের কারাগারের প্রধান জল্লাদ।

মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি ৩২টি খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। মোট ৩৬ মামলায় তার সাজা হয়েছে ১৪৩ বছর। প্রধান জল্লাদ শাহজাহান বাংলাদেশের সব থেকে বেশি আসামিকে (৩২ জনকে) ফাঁসি দিয়েছেন। তিনি একমাত্র জল্লাদ যিনি এক রাতে দুই কারাগারে চারজন আসামিকে ফাঁসি দিয়েছেন। তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয়কারী জল্লাদদের আইডল বলা হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লাকেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের দায়িত্ব পালন করেন এই খ্যাতনামা জল্লাদ। । কারা সূত্র জানায়, শাহজাহান জল্লাদকে এখন অনেকভাবেই ডাকা হয়। তিনি সর্বোচ্চসংখ্যক আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। দেশের সব থেকে দীর্ঘ সময়ের (৩৭ বছর) কারাবন্দী তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ ঘাতককে ফাঁসিতে ঝোলানো ছাড়াও কুখ্যাত এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমিন রিমা হত্যার আসামি মনির, ডেইজি হত্যার আসামি হাসান, জঙ্গি নেতা আবদুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ ও ইফতেখার মামুনসহ আলোচিত বহু হত্যাকাণ্ডের আসামিকেএবং সর্বশেষ কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন শাহজাহান মিয়া। হয়তো আগামীতে আরও অনেককেই ঝুলতে হবে তার হাতে। তার ভাগ্য বলা চলে তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি মুক্ত থাকাকালীন হত্যার রেকর্ড ভাংতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন কারাগারের ভিতর হত্যার রেকর্ড দিয়ে। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের এই শাহজাহানের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ। অবিবাহিত এই জল্লাদ এইচএসসি পাস করেছেন নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে।

তিনি কিছু দিন সেনাবাহিনীতেও চাকরি করেন। সূত্র জানায়, একসময় বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শাহজাহান। মুক্তিযুদ্ধের চার বছর পর যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। তার পারফরম্যান্স দেখে কেন্দ্র থেকে তাকে ডেকে পাঠানো হয়। তাকে নরসিংদী জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

১৯৭৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি জেলার দায়িত্ব্ব গ্রহণ করেন। কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করার পর যে কোনো অপারেশনে তার চাহিদা বেড়ে যায়। নামডাক ছড়িয়ে পড়ে অপরাধ জগতে। খুন, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের শীর্ষ মণিতে পরিণত হন শাহজাহান। অবশেষে একটি অপারেশন করতে গিয়ে তাকে থামতে হয়েছে।

সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালে মাদারীপুরে ছিল তার জীবনের সর্বশেষ অপারেশন। সেখানে তার অপারেশন শেষ করে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে শাহজাহানের দল মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাবে। মানিকগঞ্জে পুলিশ চেকপোস্ট বসালে শাহজাহান তার ওই এলাকার বাহিনীর মাধ্যমে তা জেনে যান। সব জেনেই ওই এলাকা দিয়ে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।

রাতভর মানিকগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ করেন। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। এরপর ঢাকায় পেঁৗছে যখন নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা হন পথিমধ্যে পুলিশ তাকে আটকে ফেলে। সেই থেকেই আজ পর্যন্ত রয়েছেন তিনি জেলে। হয়েছেন প্রধান জল্লাদ।

৩৬ মামলায় ১৪৩ বছরের জেল : ১৯৭৯ সালে আটক হওয়ার আগে ও পরে তার নামে সর্বমোট ৩৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে ১টি অস্ত্র মামলা, ১টি ডাকাতি মামলা এবং অবশিষ্ট ৩৪টি হত্যা মামলা। বিচারকার্যে দেরি হওয়ার কারণে সাজা ছাড়াই তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ১৭ বছর হাজতি হিসেবে কারাগারে থাকেন। ১৯৯৫ সালে তার সাজা হয় ১৪৩ বছর। পরে ১০০ বছর জেল মাফ করে তাকে ৪৩ বছরের জন্য জেল দেওয়া হয়।

শাহজাহানের জেল থেকে বের হওয়ার তারিখ তার জেল কার্ডের ওপর লেখা আছে ডেট অব রিলিজ ২০৩৫. ওই সময় তার বয়স হবে ৮৫ বছর। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনি যেন সুস্থ শরীরে মুক্ত জিবনে ফিরে যেতে পারেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।