আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দশম নয় একাদশ সাধারণ নির্বাচনের জন্যই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে হবে!!!

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের প্রথম শর্ত হল, সর্বশেষ নির্বাচনে যে দল বা জোট নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, সেই দল বা গোষ্ঠীর সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহন। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি'র নের্তৃত্বে বিরোধী দল/জোট যেহেতু দশম সাধারণ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত অংশগ্রহন করেনি, তাই আগামী ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দশম সাধারণ নির্বাচনকে আর ক্রেডিবল ইলেকশান বলার সুযোগ নেই। এখনো যেহেতু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সরকারি দল ও বিরোধীদলের নেতারা একটি সমঝোতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটি হয়তো একাদশ সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩ ছিল দশম সাধারণ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। অতএব আগামী ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে দশম সাধারণ নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের আর কোনো সুযোগ নেই।

সেক্ষেত্রে ৫ জানুয়ারি'র ভোটের পর যে সরকার গঠিত হবে, সেই সরকার আগামী একাদশ সাধারণ নির্বাচনের একটি সর্বজনগ্রাহ্য সুযোগ বের করার চেষ্টা করবে। হয়তো বর্তমানে চলমান উভয় দলের বৈঠকের ফলাফল সেই ইঙ্গিত-ই দিচ্ছে। দশম সাধারণ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি'র অনুপস্থিতি'র কারণে অন্তত ১৫৪ আসনে একক প্রার্থী বৈধ থাকায় আগামী ৫ জানুয়ারি'র নির্বাচনে এই ১৫৪ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। যা দেশের টেকসই গণতন্ত্রের জন্য কোনো মতেই শুভকর কোনো খবর নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধান রক্ষার নামে মূলত পঞ্চাদশ সংশোধনী'র পরে বর্তমান সংবিধানের যে রূপটি পরিগ্রাহ্য হচ্ছে, সেটিকে রক্ষা করার জন্যই অন্তত দেশের অর্ধেক মানুষ এখন নিশ্চিত ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকেই বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন।

যে কারণে দশম সাধারণ নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হবে সেই সরকার কতোটা শক্তিশালী হবে সেটিও একটি নতুন সমীকরণে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ। নতুন সরকার যেহেতু আওয়ামী লীগ-ই গঠন করতে যাচ্ছে, সেহেতু সেই সরকার হয়তো একাদশ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দেশের প্রধান বিরোধীদলের সঙ্গে একটি গঠনমূলক ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। অন্তত বাংলাদেশে নব্বই পরবর্তী নির্বাচন কালীন সরকার নিয়ে বিগত ২৩ বছর যে রাজনৈতিক অচলবস্থা তৈরি হয়েছে, তা থেকে স্থায়ীভাবে বের হবার জন্যই সেই সুযোগটি তৈরি করতে হবে। নইলে জনগণের আস্থা নিয়ে ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সেই সরকার নৈতিক ভাবেই একটা দুর্বলতার মধ্যে বেশি দূর অগ্রসর হতে পারবে না বলেই সবার ধারণা। পাশপাশি দেশের নির্বাচন কমিশনকে দুর্বল রেখে যে নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও সেই গণতন্ত্র মোটেই টেকসই নয়, সেই ধারণাটি আবারো পুনঃস্থাপিত হবে।

নতুন সরকারের হয়তো কিছু কিছু কাজ দ্রুততার সঙ্গে করার প্রচেষ্টাও থাকবে। যেমন- চলমান যুদ্ধাপরাধিদের বিচারাধীন মামলাগুলো'র দ্রুত নিস্পত্তি করা, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করা, দেশের বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ঝামেলাগুলো মিটিয়ে ফেলা, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা, সংবিধানে বিদ্যমান বিতর্কিত বিষয়গুলোকে সমাধান করা, এবং দেশে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করার যুগোপযুগী উপায় প্রতিষ্ঠা করা। আর যদি সেটি করতে নতুন সরকার ব্যর্থ হয়, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হুমকি'র মুখে পরার পাশপাশি রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরো ঘনীভূত হবার সম্ভাবনাই বেশি। এমনিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবার পর জামায়াত শিবির বিএনপি'র ছত্রছায়ায় সারা দেশে সহিংস কর্মকাণ্ড করছে। কাদের মোল্লা'র ফাঁসির রায় কার্যকর হবার পর থেকে সারা দেশে জামায়াত শিবিরের নাশকতায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরো সংকটপূর্ণ হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রধান বিরোধীদল আইনগতভাবে দশম সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহনের সুযোগ এমনিতেই আর নেই। এখন যদি আগামী ৫ জানুয়ারি অবশিষ্ট আসনগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠানে জামায়াত শিবিরের মত বিএনপিও বাধা দেয়, তাহলে সেই নির্বাচনগুলো উপনির্বাচনে পরিনত হবে। কারণ, অলরেডি ১৫৪ আসনে যেহেতু একক প্রার্থী বৈধ হয়েছে, সুতরাং সরকার গঠনে আর কোনো আইনগত অসুবিধা নেই। সেক্ষেত্রে বাকী ১৪৬ আসনে যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হলে সেখানে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উপ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে। তখন সেই দুর্বল সরকার গঠিত হলেও তারা ৫ জানুয়ারি'র পরে আরো ৯০ দিন সময় পাবে ওই নিবর্বাচনগুলো অনুষ্ঠান করার।

তখন সেই সরকার যতোই দুর্বল হোক সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে সেই সরকারকেও আরো ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ করার আইনি জটিলতা থাকবে। সেক্ষেত্রে সেই নতুন সরকার যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবার পাশাপাশি বিএনপি'র সঙ্গে চলমান বৈঠকও চালিয়ে যাবার চেষ্টা করবে। আর যদি বিএনপি একাদশ সাধারণ নির্বাচনের জন্য একটি গঠনমূলক সমঝোতায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যমতে পৌঁছায়, তাহলে হয়তো দশম সাংসদের মেয়াদ হবে শুধু নিয়ম রক্ষার। নতুবা বিএনপি যদি সমঝোতায় না গিয়ে কোনো ধরনের একগুয়েমি করে, তাহলে আগামী দশম সংসদ যতোই দুর্বল হোক না কেন সেই সংসদকেই রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে সকল কাজ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবার পাশাপাশি আগামী সরকারকে জামায়াতে ইসলামী'র বাংলাদেশে রাজনীতি করার কি ধরনের অধিকার থাকবে বা আদৌ সেই অধিকার তাদের দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে একটি কঠিন সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

যদি জামায়াতে ইসলামী'র রাজনীতি করার অধিকার দেওয়া হয়, তাহলে তাদের সহিংস রাজনীতি অবশ্যই ত্যাগ করতে গণতান্ত্রিক রাজনীতি'র সুষ্ঠু ধারায় ফিরে আসতে হবে। নতুবা সহিংসতার সকল দায় দায়িত্ব নিয়ে তাকে রাজনৈতিক অধিকার হারাতে হবে। সেক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হাতে সেই সহিংস আন্দোলন মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী'র নের্তৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নির্বাচনে অংশগ্রহন করেনি। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল।

বহির্বিশ্বে সেই নির্বাচন গ্রহনযোগ্য হয়েছিল। অতএব দশম সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি'র অংশগহন না করাও একটি রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। সেই হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে না গিয়েও যদি নির্বাচনকালীন সরকারের স্থায়ী সমাধানের জন্য একাদশ সাধারণ নির্বাচনের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সরকারকে সদিচ্ছা নিয়ে সহায়তা করে একটি সমঝোতায় উপনীত হয়, তাহলে আর দশম সাধারণ নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরি হবে না। আর যদি কেবল রাজনৈতিক সুবিধা ভোগ করার জন্য গণতন্ত্রকে আরো হুমকির দিকে ঠেলে দেবার জন্য বিএনপি আরো কঠোর অবস্থানে চলে যায়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জামায়াত শিবিরের সহিংস আন্দোলনে বিএনপি'র নিরব সমর্থণকে বেশ সাহসের সঙ্গেই আমলে নেবে। সেক্ষেত্রে বন্দুকের নল থেকে জন্ম নেওয়া বিএনপি'র মতো একটি রাজনৈতিক দল কিভাবে নিরীহ সাধারণ মানুষের কথা মাথায় না নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে সহিংস আন্দোলনে যোগ দিয়ে কতোদিন রাজনীতি করার সুযোগ পাবে, সেটিও সময় নির্ধারণ করে দেবে।

যদি বিএনপি'র রাজনৈতিক নের্তৃত্ব একটি বিষয়ে নিশ্চিত না হয়, সেটি হল বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসেবেই পৃথিবীর মানচিত্রে টিকে থাকবে। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে না সেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি'র যুগপথ আন্দোলন ও রাজনীতি হয়তো একটি স্থায়ী সমাধানের পথ বিএনপি নের্তৃত্বতেই বের করতে হবে। বিএনপি যদি সেটি না করতে পারে, তাহলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হবার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির যে উল্টোদিকে যাত্রা, সেই যাত্রাকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আবার ঘুরিয়ে দিল, মাঝখানের এই ২১ বছরের সকল অপরাজনীতি'র জন্য বিএনপিকে মহাকালের কাছেই জবাবদিহি করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে আবার নব্য পাকিস্তান বানানোর জন্য জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি'র সকল রাজনৈতিক ঐক্যকে তখন নতুন সমীকরণে রাষ্ট্রদ্রোহতার মত রাজনৈতিক জটিলতা মোকাবেলা করার প্রেক্ষিত তৈরি হতে পারে। যদি বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় ফিরে এসে সুষ্ঠু রাজনৈতিক কার্যক্রমে ফিরে আসে তাহলে বাংলাদেশে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা আর দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

নতুবা বিএনপি'র কৌশল যদি হয় যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে মিশে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখল, তাহলে বিএনপিকে রাজনৈতিক ভাবেই কঠিন সময় মোকাবেলা করতে হবে। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তাই আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি'র কৌশলের উপরই নির্ভর করছে সমঝোতা কিভাবে হবে আর তা কতোটা শক্তিশালী গণতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে একটি সমঝোতা করুক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া চলমান থাকুক, জামায়াতের রাজনীতি বাংলাদেশে কিভাবে গ্রহণ করা হবে,সে বিষয়ে একটি স্থায়ী সমাধানে আসুক, আর আগামীতে নির্বাচন কালীন সরকার কেমন হবে, নির্বাচন কমিশন কতোটা শক্তিশালী হবে, এসব বিষয়ে যদি দেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দল একটি সুনির্দিষ্ট সমঝোতায় আসতে না পারেম, তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব একটি নতুন হুমকীর মুখে পড়বে। আর সেই সমস্যার জন্য রাজনৈতিক বিচারে বিএনপি-ই কাঠগড়ায় উঠবে। আমরা চাই নিয়ম রক্ষার দশম সাধারণ নির্বাচন নিয়ে আর হৈ চৈ না করে একাদশ সাধারণ নির্বাচন থেকেই দেশকে কতোটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ফিরিয়ে এনে উন্নয়নের ধারা এবং মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা যায়, তা নিয়ে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে একটি স্থায়ী সমাধান বের করুক।

নইলে বাংলাদেশ বিপন্ন হবে। দেশের মানুষের জানমালের আরো ক্ষতি হবে। এবং বাংলাদেশে একটি সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। সেই পথে না গিয়ে আমাদের রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দের মধ্যে সত্যিকারের দেশপ্রেম এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা জাগ্রত হবে বলেই আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।