আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'ওরা ১১ জন' স্বাধীনতার প্রামাণ্য দলিল

'ওরা ১১ জন' আপনার প্রথম পরিচালনা, তাও আবার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র- অনুভূতি কেমন ছিল?

সে এক অসাধারণ ভালো লাগার ব্যাপার। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের উন্মাদনা-উদ্দীপনা, অন্যদিকে মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই উৎসাহ আর চেতনা 'ওরা ১১ জন' নির্মাণে আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। স্বাধীনতা লাভের ৪১ বছর পরও সবাই আমার 'ওরা ১১ জন' নিয়ে কথা বলছে, প্রশংসা করছে, টিভি চ্যানেলগুলো চলচ্চিত্রটি প্রচার করছে, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে_ এটি আমার জন্য এক বিশাল প্রাপ্তি। আমি কিন্তু 'ওরা ১১ জন' চলচ্চিত্রের জন্যই আজ চাষী নজরুল হতে পেরেছি।

পরিচিতি পেয়েছি। একথা ভাবলে গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। সত্যি কথা বলতে 'ওরা ১১ জন' নির্মাণ করেছিলাম দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে।

 

চলচ্চিত্রটিকে কি শুধুই একটি চলচ্চিত্র হিসেবে দেখেন, নাকি বেশি কিছু?

'ওরা ১১ জন' শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি স্বাধীনতার ইতিহাস ও প্রামাণ্য দলিল। প্রতিটি প্রজন্ম চলচ্চিত্রটি দেখবে আর মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ অধিকার আদায়ের আন্দোলন, যুদ্ধ, স্বাধীনতা লাভের ইতিহাস এবং রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় সম্পর্কে জানতে পারবে।

চলচ্চিত্রের অভিনয় শিল্পী ও যুদ্ধের সরঞ্জাম এবং নির্মাণের অনুকূল অবস্থার কথা বলুন।

'ওরা ১১ জন' চলচ্চিত্রে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকায় যারা অভিনয় করেছেন- খসরু, ফিরোজ, আলতাফ, মঞ্জু, হেলাল, ওলীন, আবু, আতা, নান্টু, বেবী ও মুরাদ, এরা কেউই কিন্তু পেশাদার শিল্পী ছিলেন না। সবাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তা সত্ত্বেও অভিনয়ে তাদের যে এঙ্প্রেশন তা এখন কোথায়? পাশাপাশি রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, মাহফুজ, সুমিতা দেবী এবং মিতা নামে নতুন একটি মেয়ে এতে কাজ করেছিলেন। তাদের সবার অনবদ্য অভিনয় এখন কোথায় পাব।

চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ সবই ছিল আসল। তখন সরকার এবং সশস্ত্র বাহিনী চলচ্চিত্রটি নির্মাণে যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, এখন তো তা কল্পনাই করা যায় না। যেখানে যার সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল প্রত্যেকে উদারভাবে এগিয়ে এসেছিল। সবাইকে আমি এখনো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। অনেকেই আজ আমাদের মধ্যে নেই।

তাদের আত্দার মাগফিরাত কামনা করি।

এখন আরেকটি 'ওরা ১১ জন' নির্মাণ সম্ভব?

কিভাবে সম্ভব। আগেই বলেছি সেসব অভিনয় শিল্পী এখন কোথায় পাব। পাশাপাশি যেসব সহযোগিতা প্রাপ্তির কথা বলেছি, তা কি এখন পাওয়া যাবে। এতসব অভাবের মধ্যে আরেকটি 'ওরা ১১ জন' নির্মাণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

 

ওরা ১১ জন নিয়ে আনন্দ ও বেদনার কোনো স্মৃতি আছে?

অবশ্যই আছে, আনন্দের স্মৃতি হচ্ছে বোম্বেতে যখন চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করা হলো তখন এটি দেখে বলিউডের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার রাজকাপুর বলেছিলেন, 'হাউ ইট পসেবল?' সদ্য স্বাধীন দেশে এত কম সময়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমন একটি জীবন্ত চলচ্চিত্র নির্মাণ কিভাবে সম্ভব? বলিউডে তো আমরা এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণে এখনো সাহস পাচ্ছি না। সত্যিই একটি অসীম সাহসী এবং কালজয়ী কাজ হয়েছে এটি। ' রাজকাপুরের এই মন্তব্য এখনো আমাকে উজ্জীবিত করে, অফুরন্ত আনন্দ দেয়। অন্যদিকে দুঃখবোধ হচ্ছে যখন মনে হয়, এখনকার মতো কারিগরি সহযোগিতা যদি তখন পেতাম, তাহলে হয়তো আরও উন্নত নির্মাণের ধারায় যোগ হতো 'ওরা ১১ জন' চলচ্চিত্রটির নাম।

 

'ওরা ১১ জন' চলচ্চিত্রের নামকরণ কিভাবে হলো-

তৎকালীন ১১ দফা ছাত্র আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের কথা মাথায় রেখেই চলচ্চিত্রের নামকরণ করা হয়েছিল 'ওরা ১১ জন'।

পাশাপাশি ছয়দফা আন্দোলনের কথা অবিস্মরণীয় করে রাখতে চলচ্চিত্রের শুরুতেই ছয়টি কামানের গোলার শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত ১১ ও ছয়দফা আন্দোলনের ফসল হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়।

এ চলচ্চিত্রের মুখ্য নায়ক খসরু সম্পর্কে বলুন-

অতি দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তিনি এখন অসুস্থ হয়ে সবার দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছেন। খসরু ছিলেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। শুধু ৭১ সালে যুদ্ধ করেননি।

৫২, ৬৯ সহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। এর জন্য বীর উত্তম খেতাব তার প্রাপ্য ছিল। যা তাকে আজও দেওয়া হয়নি। সরকার বা চলচ্চিত্রের মানুষজন

তার খবর নেয় না।

* আলাউদ্দীন মাজিদ

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।