আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তিযুদ্ধের ছবি নিয়ে উৎকন্ঠায় ছিলাম, 'আমার বন্ধু রাশেদ'- বিভ্রান্তি মেটালো।



মুক্তিযুদ্ধের ছবি মানেই ছবির কোননা কোনও অংশে কোন এক পর্যায়ে বর্বর পাকি আর্মি কিংবা দেশীয় কোনো রাজাকারের দ্বারা একটা প্রচন্ড মন খারাপ করা সিন-এর বীভৎসতা আচ্ছন্ন করে রাখে বেশ কিছুটা সময়, বিশেষত রেইপ সিন গুলো। তাই মুক্তিযুদ্ধের ছবি শুনলেই যেন অনেকটা এড়িয়ে চলি অবচেতনে। অনেকদিন পর শিরোনামে উল্লেখিত মুভিটি দেখলাম। বইটা পড়া ছিল আগে থেকেই। আবছায়ার মত মনে আছে যেন।

হলিউড আর বলিউডের ভীড়ে কী একটা অজানা আগ্রহেই কীনা ছবিটি দেখতে বসলাম। দেখি, কেমন হয়েছে অডিওভিজুয়াল-এই মানসিকতায়। 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত, মনন চলচ্চিত্র ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড এর ব্যানারে প্রযোজিত, মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলামের চলচ্চিত্র আমার বন্ধু রাশেদ। প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর। নস্টালজিয়ায় ভর করে যেন পৌঁছে গেলাম সেই সেদিনের ক্লাসরুমে।

সেই গরজ গলার মজিদ স্যার-এর রুমে। এক অপ্রস্তুত ছিপছিপে অবয়ব ধীরপায়ে এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে ক্লাসরুমের দরজায়। উকি মারে ক্লাসের ভেতর। রোল কল শেষে মজিদ স্যার এগিয়ে যাচ্ছিলেন ব্ল্যকবোর্ডের দিকে। পেছন থেকে আওয়াজ এলো, স্যার, স্যার দ্যাখেন কে আসছে- -এই, তুই কে রে? কি চাস? মজিদ স্যারের প্রশ্নের জবাবে নির্লিপ্তভাবে একটা কাগজ এগিয়ে দেয় ছেলেটা।

-এটা কি?? -কাগজ। -কাগজ তো দেখতেই পাচ্ছি। কী কাগজ? প্রশ্নবান যতটা না তীক্ষ্ণ, তার চেয়েও বেশী তীক্ষ্ণ যেন ছেলেটার জবাব। -জানিনা, অফিস থেকে দিয়েছে। -এ ত ভর্তির কাগজ! তুই এই ক্লাসে ভর্তি হয়েছিস? -জানিনা।

মজিদ স্যারের চশমাপরা চোখে বিস্ময়। -মানে(!)? নাম কি তোর? -লাল্টু। -লা-ড্ডু? হেসে ওঠে পুরো ক্লাস। -চুপ। এক্কেবারে চুপ।

প্রচন্ড ধমকে ক্লাস থেমে এলে মজিদ স্যার জিগেস করেন, ভাল নাম কী? -ভাল নাম নাই। -ভাল নাম নাই! লাড্ডুর আগেপরেও কিছু নাই!আমার ক্লাসে শুধু লাড্ডু, কাভি নেহি। তোর বাবাকে গিয়ে বলবি একটা ভাল নাম দিয়ে দিতে। -বাবাকে বলে লাভ নেই স্যার। -লাভ নেই মানে? -আমার বাবা একটু পাগল কিসিমের।

আর আলসেও। হাসির দমকা ওঠে ক্লাসে আবার। আলসেমি করে যে বাবা ছেলের পুরো না্ম রাখেন নি সেটাই বুঝি এই হাসির উৎস! এভাবেই আমরা পরিচয় পাই রাশেদের। লেখার অভিনবত্ব আর শৈলীতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক অনন্য উচ্চতায় এনেছেন নিজেকে। বই পড়ে আমদের মনের ক্যানভাসে যখন ভেসে ওঠে দৃশ্যপট, সেই চিরচেনা দৃশ্যপট যেন ধরা দেয় হুবহু চোখের সামনে; সেলুলয়েডাইজ হয়ে।

-তারপর? -তারপর একদিন রাশেদ নিয়ে এল স্বাধীন বাংলার পতাকা। ফ্ল্যাগের চারপাশে ওরা গোল হয়ে বসে দেখে। সেই সাথে যেন দেখি আমরাও। যাই হোক, ঘটনা-দূর্ঘনার পরিক্রমায় সময় পেরিয়ে চলে। মাঝে কিছু দৃশ্যে অরু আপা চরিত্রে হোমায়রা হিমুকে দেখা যায়।

অজানিত শঙ্কা কাজ করে মনের গহীনে। একটু বাদেই বুঝি সম্ভ্রমহানির পর উষ্কোচুলে অভিনয়ের দৃশ্যে দেখানো হবে তাঁকে। অপেক্ষা করছি। এধরনের কোন সিন এলেই উঠে পড়ব। আর দেখব না।

একই বীভৎসতা নিয়ে আর কত ব্যাবসা! আমার পাশে বসা সহদর্শক বাংলা ছবির পোকা। সিনের আগেই তার ঠোটে চলে আসে ডায়লগ। বলে, দেখো, এরে কী নির্যাতন করে এখন। আমি ভয়ে ভয়ে দেখি। পড়া বইটা ভাল করে মনে নেই তো, তাই।

কিন্তু না। লেখক যেন সেই ভাষা বুঝেছিলেন অনেক আগেই। তিনি আর রগড়গে কোন সিনের এন্তেজাম রাখেন নি তাই। শেষ পর্যন্ত রহস্যময়তা রেখেই শেষ হয় আমার বন্ধু রাশেদ। "রাশেদকে রেখে এরা চলে গিয়েছিল।

না হলে সেদিন অন্য অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারত। " এইটুকু কথাতেই উঠে এসেছে অনেক অনেক সন্দিগ্ধতা। চরিত্রচয়নে কিছু দূর্বলতা থাকলেও আমার মত অনভিজ্ঞদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় সহজাতভাবেই। চিত্রনাট্যের চেয়ে তাই বেশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালকেই। বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ পুরোনো ম্যুভি এটা।

তারপরও লিখলাম, ভাললাগার তো সময় অসময় নেই। কিছু ছবি দিতে পারলে হয়ত মন্দ হত না। কিন্তু হায়! কপাল (নেট স্পীড) খারাপ। কী করব,সামু যে আপলোডাইতেই দিতেছেনা! ভালমন্দ বিবেচনা নয়। অথবা, রিভিউ লিখতে চাইনি কোনমতেই।

ভ্রান্তিতে ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ছবি নিয়ে। এই ধারনাটা যে শুধু একান্ত আমারই, তা হয়ত নয়। উঠতি প্রজন্ম, বিশেষত যারা ৭১ দেখিনি স্বচক্ষে। এটুকু উপলব্ধিবোধ থেকে লিখলাম যে, মুক্তিযুদ্ধের ছবি মানেই এইসব ডিপ্রেসড রেইপ সিন থাকতে হবে, তা নয়- একটু দেরীতে হলেও বুঝতে পারলাম এতদিনে(!)।

(এই দায় কি শূধুই আমাদের? নাকি সিনেমা যারা নির্মান করছেন তাঁদেরও??) Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.