আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তবু প্রশ্নের শেষ নেই

বাফুফে ও স্পন্সর কোকা-কোলা বারবারই বলছে এবারই প্রথম দুনিয়া কাঁপানো বিশ্বকাপ ফুটবলের মূল ট্রফি বাংলাদেশে এসেছে। র্যাডিসন হোটেলে দুই দিন ট্রফি দেখে অনেকে আবেগে বলেছেন, স্বপ্নের এ ট্রফি দেখে তাদের জীবন ধন্য হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কারো কারো জীবন ধন্য হলেও ট্রফি আগমনে স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যাবে কি? বাফুফে থেকে বলা হয়েছিল মূল ট্রফি ঢাকায় আসাতে ঝিমিয়ে থাকা ফুটবল জেগে উঠবে। কেউ কেউ আবার এ কথায় হেসেছিলেন। তাদের কথা দেশের ফুটবলে যে অবস্থা তাতে লাইফ সাপোর্টে বেঁচে আছে বলা যায়।

সুতরাং এক ট্রফিকে ঘিরেই যদি ফুটবল জেগে উঠত তাহলে তো আর দুশ্চিন্তা থাকত না। মানলাম এবার মূল ট্রফি এসেছে। কিন্তু উন্মাদনা বলতে যা বুঝানো হয় তা কি লক্ষ্য করা গেছে। বাফুফে বা কোকা-কোলা মনঃক্ষুণ্ন হতে পারে। কিন্তু এটা বাস্তব সত্য যে ২০০২ সালে রেপ্লিকা ট্রফি আসলেও তা ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল এবারে মূল ট্রফি যদি এসেও থাকে তা ছিল অনুপস্থিত।

কোনো সন্দেহ নেই ট্রফি যারা দেখেছেন তারাই খুশিতে আত্দহারা হয়ে গেছেন। কিন্তু বাফুফে যা আশা করেছিল বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেছিল কিনা। সত্যি বলতে কি প্রকৃত ফুটবলপ্রেমীরা এ ট্রফি দেখার সুযোগ হারিয়েছেন। র্যাডিসন হোটেলে ট্রফি উন্মোচন করে ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বেশ মুডেই বলেন, হোটেলে রাখা হয়েছে বলে শঙ্কায় ছিলাম দর্শক আসবে কিনা। এখনতো দেখছি রীতিমতো ভিড় জমে গেছে।

বাংলার মানুষ ফুটবলকে যে ভালোবাসে এতেই প্রমাণ মিলছে। হ্যাঁ, মান ও জনপ্রিয়তা যতই কমে যাক না কেন ফুটবলের প্রতি কারোর ভালোবাসা হারিয়ে যায়নি। এটাও ঠিক গতকাল ট্রফি দেখতে প্রচুর দর্শকের সমাগম ঘটেছিল। অবরোধের মধ্যেও এত ভিড় সত্যিই চোখে পড়ার মতো। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এর মধ্যে প্রকৃত ফুটবলপ্রেমিক কতজন ছিলেন।

ট্রফি দেখে ভি চিহ্ন দেখানো আর গ্যালারিতে ধুলো মেখে খেলা দেখা দর্শকদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ট্রফি রাখলে কিছু হলেও তো প্রকৃত ফুটবলপ্রেমীরা ট্রফি দেখার সুযোগ পেতেন। তারপরও প্রশ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুতে যদি ট্রফি রাখা হতো উত্তেজনা থাকত কি না। কারণ এবার গ্যালারির বদলে মাঠে লাইন করে ট্রফি দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাও আবার বাফুফে ও কোকা-কোলা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছিল ১৫ হাজার দর্শক।

অর্থাৎ নিজেদের নিমন্ত্রিত ছাড়া কেউ আর ট্রফি দেখার সুযোগ পেতেন না। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের আশা ট্রফি আগমনে ফুটবলে প্রাণ ফিরে আসবে। জানি না তার মতো ফুটবল জ্ঞানী লোক একথা বলেন কীভাবে? তিনি জানেন গ্যালারি না ভরলে কোনো কিছুতেই লাভ নেই। ২০০২ সালে টিকিট থাকলেও রেপ্লিকা ট্রফি দেখতেই পুরো গ্যালারি ভরে যায়। তারপর আবার বাড়তি আকর্ষণ বাড়াতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান-আবাহনীর সাবেক তারকাদের নিয়ে প্রদর্শনী ম্যাচের আয়োজন হয়।

মাঠে ঢাকার প্রতিটি ক্লাবকে ট্রফি স্পর্শ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। পরিকল্পনা করে আয়োজন করা হয়েছিল বলে সেবার কিছুদিনের জন্য হলেও ফুটবলে নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি হয়। এবারতো ট্রফি হুট করে আসেনি। ছয় মাস আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ডিসেম্বরে বিশ্বকাপের ট্রফি আসছে। বাফুফে যদি প্লান করে সব ঠিক রাখত আর যাই হোক ট্রফি ঘিরে প্রকৃত ক্রীড়াপ্রেমীরা ঠিকই জেগে উঠতেন।

তাছাড়া অক্টোবরের পর থেকেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা হাঙ্গামা হবে তা নিশ্চয় বাফুফের অজানা ছিল না। সেক্ষেত্রে তাদের কি উচিত ছিল না বিকল্প হিসেবে আর্মি স্টেডিয়ামকে ঠিক করে রাখা। কেউ কেউ ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন অযথা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ভেন্যু পরিবর্তন করা হয়েছে। কারণ যতই সহিংস ঘটনা ঘটুক না কেন কেউ আর বিশ্বকাপের ট্রফি ক্ষতি করার চেষ্টা চালাত না। না, যে কারণেই হোক ভেন্যু পরিবর্তন করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় মিলেছে।

কারণ ক্রীড়াঙ্গনে কখনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও এবার চট্টগ্রামে এক ককটেল বিস্ফোরণে ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূধর্্ব ১৯ দল সিরিজ শেষ না করে দেশে ফিরে গেছে। যা নিয়ে বিসিবি এখন টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে চিন্তায় আছে। কিছুই হতো না কিন্তু কেউ যদি বিশ্বকাপের ট্রফির ক্ষতি করত তাহলে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ইমেজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো কেউ কি তা চিন্তা করেছে। আসলে বাফুফে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা স্বপ্নের ট্রফি দেখতে বঞ্চিত হয়েছে।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।