আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আহা আমজনতা বাজাও তালিয়া!!

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

আজ দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রথম পাতায় বেশ জোরালো ভাবে আট কলামে আট জন আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যের আয় ব্যয়ের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে তারা আয় ব্যয়ের যে হিসাব দিয়েছিলেন, তারই একটি তুলনামূলক চিত্র। সেই চিত্রটি দেশের জন্য মোটেও সুখকর নয়। মাত্র পাঁচ বছরে এক এক জন সংসদ সদস্যের আয় যদি ডাবল থেকে শুরু একশো সাত গুন পর্যন্ত বাড়তে পারে, তাহলে বুঝতে হবে উন্নয়নের জোয়ার সত্যিকার অর্থে কোথায় কোথায় আসে। জাতীয় সংসদের নেতা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংসদের একবারে নবীন সাংসদ পর্যন্ত এই চিত্রটি যদি দেশবাসী'র কাছে নির্বাচন কমিশন ভোটের আগে প্রকাশ করতো, তাহলে হয়তো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হত।

দেশের মানুষ বুঝতে পারতো কাদেরকে ভোট দিয়ে তারা আইন প্রণয়নের জন্য সংসদে পাঠান। জনগণের উন্নয়নের কথা বলে নিজেরা যেভাবে আখের গুছিয়ে নেয়, এই সংস্কৃতি যে নতুন নয়, সেটি বোঝার জন্য বেশি পণ্ডিত হবার দরকার নেই। অবশ্য আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন যতোটুকু শক্তিশালী'র ভান করে সেইটুকু শক্তি দিয়ে আমাদের গণপ্রতিনিধিদের আয় ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করার মত দুঃসাহস রাখে না। আমাদের মহামান্য সাংসদের ভাষায় দুষ্টু সাংবাদিকদের শয়তানী কলমের খোঁচায় তাদের আয় ব্যয়ের যতোটুকু সাধারণ মানুষ জানতে পারে, তাতেই একটা বিষয় খুব পরিস্কার, আমাদের এখানে সাংসদদের প্রধান টার্গেট থাকে টাকা কামাই করা। জনসেবা করা একটা অযুহাত।

জনসেবা বললে তার সঙ্গে অনেক মানবিক বিষয়, মহানুভবতার বিষয়, গরিব মানুষের দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নেবার বিষয়, জনকল্যানকর বিষয়, জনহিতকর বিষয়, কত হাজারো সেবার একটা সংমিশ্রণ একসঙ্গে ফুটে ওঠে। সেই মহৎ পেশা যারা বেছে নেন তারা তো সবাই ফেরেশতা। নইলে নিজের সংসার ধর্ম ফেলে, নিজের ঘরের কাজ ফেলে, নিজের সৌখিন শখ সাধ আহলাদ ফেলে কেউ কি স্বেচ্ছায় জনসেবা করতে নামে? আল্লাহ'র নবী ও রাসুলদের পর আর যদি কোনো প্রেরিত ব্যক্তি থাকে তারা হলেন জনসেবক। আমাদের মহান রাজনীতিবিদরা সেই দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সকল ধরনের সেবা করে যাচ্ছেন। সেই সেবায় গত ৪২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে! ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর মিস্টার হেনরী কিসিঞ্জার সাহেব কইলেন, আমরা নাকি তলাবিহীন ঝুড়ি।

একেবারে বোটমলেস বাসকেট! সেই কথার জবাব দেবার প্রস্তুতি নিতে নিতেই শুরু হল '৭৪ সালের অকাল দুর্ভিক্ষ। সেই দুর্ভিক্ষে মাত্র দশ লাখ গরিব মানুষ মরেছে। গরিব মানুষ দশ লাখ মরাও যা, এক কোটি মরাও তাই!! গরিব দেশের মানুষ মরবে, না খেয়ে মরবে, বিনা চিকিৎসায় মরবে, ধুকে ধুকে মরবে, দুঃখে শোকে মরবে, এটাই তাদের চরম নিয়তি!! কিন্তু ধনী মানুষ কিন্তু '৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে একজনও মরেনি। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশের একজন সংসদ সদস্যও '৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায়, ধুকে ধুকে মরেনি। যারা মরেছে, তারা গরিব মানুষ।

গরিব মানুষের জীবনের দাম তখন ছিল দিনে আড়াই টাকা। আর মরলে চার আনা। আর সেই একই গরিব মানুষের জীবনের দাম ৪২ বছর পরের বাংলাদেশে দিনে পঞ্চাশ টাকা। আর মরার পর এককালীন পাঁচ হাজার টাকা!! ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তারা তখন কেবল টাকার মুখ দেখা শুরু করেছেন। টাকা চিনতে শুরু করেছেন।

কোনটা কয় টাকার নোট তা চোখ বুজে বলার মত দক্ষতা অর্জন করতে শুরু করেন। টাকার গন্ধই নাকি জীবনের সবচেয়ে পরম সুখ। অনেকে টাকায় চুম্মা খান। আহা টাকাই জীবন, টাকাই কিবলম। টাকাই সব।

তখন আওয়ামী লীগের শাসনকাল। কেউ কেউ বলেন দুঃশাসন। সেই কথার কিছুটা সত্যতা তো আছে বটে! গোটা দেশের যেখানে চুরি-চামারি, লুটপাট, চর দখল, খাসজমি দখল, সব নাকি আওয়ামী লীগের লোকজন করেছে। মুরব্বীদের মুখে ছোটবেলায় এসব গল্প শুনতাম। বঙ্গবন্ধু বাঙালি'র নেতা।

তিনি পরম দয়ালু ছিলেন। কাউকে নাকি নিষেধ করার তেমন চেষ্টা করতেন না। দু'একটা বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি হলে চড়-থাপ্পর দিয়ে ডাইরেট অ্যাকশান দেখিয়ে তাৎক্ষণিক বিচার করে দিতেন। তাতে চুরি লুটপাট বন্ধ হয়নি। বরং সেই সুযোগে চোরেরা সবাই আওয়ামী লীগের ঘাড়ে গিয়ে, আওয়ামী লীগের ঘরে গিয়ে উৎপাত শুরু করলো।

সেই উৎপাতের কথা ইতিহাসে যতোটা আছে, তার চেয়ে মুরব্বীদের কথায় বেশি শুনেছি। তখন ডাট আর দাপট এই দুটো শব্দ বেশ পরিচিত ছিল। কেউ বেশি দেমাগ দেখালে সবাই বলতো, শালার চাঁন মিঞার পোলার ডাট কতো? পরণে ছেড়া লুঙ্গি, গায়ে চড়াইছে কোট, দেখো বান্দার চোট!! ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মম ভাবে নিহত হলেন। আওয়ামী লীগের সেই সব চোর, লুটপাটকারী, দখলকারী, দেমাগী ডাট দেখানো একজন লোকও সেদিন রাস্তায় নামেনি। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের মা একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করেছিলেন।

ইতিহাসে ওই একটি প্রতিবাদ মিছিলের অস্তিত্ব খুঁজে পাই। অখচ, বঙ্গবন্ধু'র মত একজন অবিসংবাদিত নেতার অমন করুণ মৃত্যুতে দেশে কয়েক মিনিটের মধ্যেই রায়ট হবার কথা ছিল। যুদ্ধ লেগে যাবার কথা ছিল। সেনাবাহিনী-সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনী-জনতা, আওয়ামী লীগ-বিরোধী পক্ষ তখনই যুদ্ধ লাগার কথা ছিল। অন্তত যুদ্ধ না লাগলেও একটা এসপার ওসপার হওয়া উচিত ছিল।

কিছু জ্বালাও পোড়াও খুন জখম হবার কথা ছিল। কিন্তু গোটা দেশ একেবারে চুপ! ভাবা যায়? একো বড় একজন নেতাকে মেরে ফেলা হল, অথচ কোনো প্রতিবাদ হল না? দেশের সাধারণ মানুষের কথা বাদ দিলাম, আওয়ামী লীগ তো একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, কিন্তু করেনি। অর্থ্যাৎ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর যারা এতোদিন কেবল খাই খাই করেছে, তারা সবাই আরামছে লাপাত্তা। দিন দুপুরে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠের আওয়ামী সাংসদরা কর্পূরের মত হাওয়া! সৌভাগ্য গুনে বঙ্গবন্ধু'র দুই কন্যা তখন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। নইলে আওয়ামী লীগ হয়তো আর বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবেই থাকতো না।

অন্তত আওয়ামী লীগের তখনকার যারা রাতারাতি ভোল্ট পাল্টে খুনি মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলালেন, কেউ কেউ হাত মেলঅনোর চেষ্টা করে গেলেন। আর যারা খাস আওয়ামী লীগার, যারা মাথা চারা দিয়ে উঠতে পারে, তাদের ধরে ধরে জেলে পুরে দিলেন। আর একদল সুযোগ সন্ধানী আওয়ামী লীগ বিদেশে নিজের প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গেলেন। এবার মাঠ ফাঁকা। তাই বলে কি চুরি থেমে যাবে? দখল থেমে যাবে? ক্ষমতা উদযাপন থেমে যাবে? শুরু হল পাকিস্তানের পরাজিত অপশক্তি'র নানামুখি খেলা।

সেই খেলায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করলেন জেনারেল জিয়া। এবার বাংলাদেশের মানুষকে বোঝাতে হবে, এই দ্যাখো আমি কত সৎ! আমি কত নিষ্ঠাবান! আমি কত দেশপ্রেমিক! প্রেসিডেন্ট জিয়ার একটা মাত্র ব্রিফকেস, তাও আবার ভাঙা! হতেই পারে, গরিব একটি দেশের প্রেসিডেন্টের ভাঙা ব্রিফকেস থাকল তো দোষ নেই। ব্রিফকেস যে আছে, সেইতো মহা আনন্দের খবর। সেই ভাঙা ব্রিফকেসে কি কি আছে? ছেড়া গেঞ্জি আর ছেড়া শার্ট! তাতো বটেই তাতো বটেই। ভাঙা ব্রিফকেসে কি আর নামি দামি প‌্যান্ট কোট টাই থাকবে মশাই? তখনো মুরব্বীদের মুখে শুনতাম, আমাদের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া নাকি রাতে আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ডিনার করেন।

সকালে সবজিআর পরোটা খান। দুপুরে খান সবজি ভাত। তো রাতারাতি আমাদের প্রেসিডেন্ট জনপ্রিয় হয়ে গেলেন এই সব প্রচারের ফলে। তারপর তিনি খাল কাটা শুরু করলেন। নিজ হাতে খাল কাটা উদ্ভোধন করেন।

হেলিকপ্টারে উড়ে উড়ে গোটা দেশে খাল কাটলেন। দেশের গরিব মানুষ কিছু নগদ গম পেল। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে খাল কাটলেন। মাভৈ মাভৈ। এই তো বাংলাদেশ! সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে আবার চিনতে শুরু করলো!! ওদিক ক্যান্টনমেন্টে মুখ ব্যাজার করে বসেছিলেন জেনারেল মঞ্জুর সাহেব।

সিনিয়রিটি টপকে এরশাদকে করা হয়েছে সেনাপ্রধান। আর মঞ্জুর সাহেবকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। জ্যোতিষি পর্যন্ত জেনারেল জিয়াকে নাকি চট্টগ্রামে যেতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু সারা দেশে তিনি উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিচ্ছেন। তার আবার কে শত্রু? চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে রাত্রিযাপন করলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া।

সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাতে নাকি প্রেসিডেন্ট জিয়ার খাটে বি চৌধুরী ঘুমালেন। আর বি চৌধুরী'র খাটে গিয়ে ঘুমালেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। সার্কিট হাউজের বাইরে অতন্ত্র প্রহরা সেনাবাহিনীর। কিন্তু মঞ্জুরের কমান্ডিং ফোর্সের কাছে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তায় রক্ষিত সেনাবাহিনী প্রথম ধাক্কায়ই কুপোকাত।

হট্টগোল শুনে ঘুম ছেড়ে প্রেসিডেন্ট জিয়া নাকি বাইরে বেরিয়ে আসলেন! তারপর তাকেও নির্মম ভাবে হত্যা করা হল ৩১ মে ১৯৮১ সালের প্রথম প্রহরে। ঢাকায় প্রধান বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ মঞ্জুরকে দেখে নেবার হুমকি দিলেন। অনেক নাটকের পর জেনারেল মঞ্জুর ধরাও পড়লেন। কিন্তু বিচারের কাঠগড়ায় যাবার আগেই তাকেও হত্যা করা হল। তারপর ওস্তাদের দেখানো পথেই জেনারেল এরশাদ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসলেন ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ।

কোথায় দেশপ্রেম? কোথায় গণতন্ত্র? কোথায় জনসেবা? প্রেসিডেন্ট জিয়ার ফেলে যাওয়া ভাঙা সুটকেস থেকে যেসব ছেড়া জামা কাপড় পাওয়া গেল, তাই টেইলরের দোকানে নিয়ে বেগম জিয়া দুই ছেলের জন্য জামা কাপড় বানালেন! এরশাদ সাহেব তার ওস্তাদের অমন করুণ মৃত্যুর পরে সেনানিবাসে সেনাপ্রধানের বাড়িটাই বেগম জিয়াকে বসবাসের জন্য দান করলেন। আহা দানবীর মহাত্মা মহসীনের পরে হয়তো এরশাদের নামই বিএনপি'র সবচেয়ে বেশি উচ্চারণ করার কথা। দিনে দিনে জেনারেল এরশাদ হয়ে উঠলেন পল্লীবন্ধু। বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামে একে একে গড়ে উঠতে লাগল গুচ্ছ গ্রাম। এবার আর দেশে গরিব থাকবে না।

বন্যার হাঁটু জল ভেঙে জেনারেল এরশাদ গোটা দেশের মানুষকে ত্রাণ বিতরণ করলেন। গরিব তুই কেমনে মরবি? মরার আগে ত্রাণ খাইয়া ল, তারপর যতোখুশি মরিস! ততোদিনে রাজ্জাক-তোফায়েল সাহেবরা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আওয়ামী লীগ পুনঃগঠনে উঠে পড়ে লাগলেন। বেগম জিয়া সেনানিবাসের বাড়িতে বসে সরকারি খরচে খেয়ে পড়ে জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধেই আন্দোলনের হুমকি দিলেন! তারপর '৮৬ আর '৮৮ সালের নির্বাচন হল। দেশের মানুষ খেতে পাক না পাক বেশ উৎসবের সঙ্গেই ভোট দিল! মিজান চৌধুরী যেভাবে যা বলেন, এরশাদ সাহেব তাই করেন। কিন্তু এরশাদ সাহেবের চেহরা সুরত মাশাল্লা আল্লাহ'র দেওয়া এক্কেবারে রাজপুত্তুরের নেহান! মেয়েরা তাকে দেখলেই তার প্রেমে পড়ে যান।

কাভি খুশি কাভি গাম! মুম্বাই থেকে জগজিৎ সিং উড়ে এসে এরশাদ সাহেবকে গজল শোনান। মিজান সাহেব বয়সের ভারে একটু কাবু জবু থবু হবার পর এরশাদ সাহেব সেই দায়িত্ব দেন কাজী জাফর সাহেবকে। উনি বেশ দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান করলেন। রামপুরা টেলিভিশন ভবনের সামনে বিশাল প‌্যান্ডেল বানানো হল। ভারত থেকে নামিদামী সঙ্গীত শিল্পী আসলেন।

গান গাইলেন। এরশাদ সাহেব অনুষ্ঠান উদ্ভোধন করে দিয়ে জাফর সাহেবকে দায়িত্ব দিয়ে বঙ্গভবনে গেলেন। রাষ্ট্রের কত কাজ! রাস্তায় গান বসে বসে শুনলে হবে? ফার্স্ট লেডি রওশন এরশাদ কাজী জাফরের পাশে বসে গান শুনলেন। আহা এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি? গোটা দেশ আনন্দে নাচতে লাগলো। তার মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এরশাদের উপর ক্ষেপে গেল।

মিজান চৌধুরীকে ন্যাংটা করলো। মওদুদের হাতে গামছা ধরিয়ে দিল। পরিস্থিতি কাজী জাফর সাহেব সামাল দিতে না পারায় এরশাদ সাহেব তাকে বহিস্কার করে দায়িত্ব দিলেন ব্যারিস্টার মওদুদের উপর। মওদুদ সাহেব আইনের মানুষ। ইতোমধ্যে গুলশানে তিনি বিশাল একটা বাড়ি বাগিয়ে নিলেন! আর এরশাদ সাহেবকে সকল ধরনের বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালের বিকালে ছাত্রদের কাছে ধরাসাই হয়ে পলায়নের পথ খুঁজে নিলেন।

তারপর নির্বাচন হল উৎসবমুখর। বেগম জিয়া হলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে স্বৈর শাসন পরবর্তী গণতন্ত্রের জোয়ার বইতে শুরু করলো। সেই জোয়ারে শেখ হাসিনা গা ভাসায় কি করে? তিনি মাঠে নামলেন। বেগম জিয়ার চূড়ান্ত পরাজয় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না আওয়ামী লীগ।

তারপর একটি ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হল ১৯৯৬ সালে। তারপর বেগম জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হলেন। আবার নির্বাচন হল। এবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলেন। দেশের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।

আহা এইবার দেশ বাঁচলো। গণতন্ত্রও বাঁচবে বলে দেশের মানুষ আশায় বুক বাঁধলো। শেখের বেটি পাহাড় শান্ত করলেন। গঙ্গায় পানি আনলেন। বয়স্ক ভাতা চালু করলেন।

গ্রামে গঞ্জে স্বাস্থ্য ক্লিনিক গড়ে উঠলো। এবার আর গরিব মানুষ বিনা চিকিৎসায় মরবে না। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হল। কে বলেছে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি? কোথায় সেই হেনরী কিসিঞ্জার? এবার বাজাও ঢোল। প্রস্তুত হও শান্তি পদক দেবার জন্য! তারপর কি হল? ২০০১ সালৈ আবার নির্বাচন হল।

এবার আবার বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসলেন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। এবার আর ঠেকায় কে? এবার বনানীতে প্রিন্স তারেক সাহেব একটি হাওয়া ভবন গড়ে তুললেন। বন্ধু মামুনকে নিয়ে শুরু করলেন খাম্বা ব্যবসা। আর জামায়াতের দুই বীর সেনানীকে জাতীয় পতাকা দিয়ে জামাই আদর করে ঘরে তুলে নিলেন বেগম জিয়া।

একাত্তরের পরাজিত জামায়াত রাজাকার আবার জাতীয় পতাকা লাগিয়ে সবার সামনে পত পত করে দাপিয়ে বেড়ান। পারলে ঠেকাও মনু? তারপর কি হল? একটি ওয়ান ইলেভেন! গোটা বিশ্ব দেখলো আমেরিকায় যদি নাইন ইলেভেন হতে পারে বাংলাদেশে কেন অন্তত একটা ওয়ান ইলেভেন হবে না? তারপর দুই নেত্রী জেলে গেলেন। নিজেদের রান্না করা খাবার পরম্পর বিনিময় করলেন। তারপর কি হল? আবার একটা নির্বাচন হল। এবার ক্ষমতায় আসলেন আবার শেখ হাসিনা।

এবার সেই নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা। এবার আর ঠেকায় কে? দেশে এবার সব কিছুই আইনের শাসন অনুযায়ী চলবে। সেই ফাঁকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হল। বঙ্গবন্ধু'র খুনিদের ফাঁসি দেওয়া হল। আর সুশাসনের বাতাসে গোটা বাংলাদেশ আবার সুফলা সুজলা শস্য শ্যামলায় ভরে উঠতে লাগলো।

কেবল কিছু ছাত্রলীগের বেপরোয়ারা পোলাপাইন বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে মারলো। দৌড় প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হওয়া আবুল মন্ত্রী হয়েও পদ্মা সেতুর বারোটা বাজালো। কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে সুরঞ্জিত বাবু রেলের চাকায় পা ফসকে পড়ে গেলেন। আর সোনালী ব্যাংক থেকে সেই সুযোগে হলমার্ক নামধারীরা বেহিসাবী টাকা পয়সা লোন নিতে থাকলো। ওদিকে শেয়ারবাজারের মন্দ কপাল আবারো '৯৬ সালের মত পড়লো।

আর কি হল? সংবিধান সংশোধন করা হল। ভোটের সময়ও সাংসদরা এমপি থাকতে পারবেন! শেষের এই কিচ্ছায় আবার বেগম জিয়া বেঁকে বসলেন। তিনি জামায়াত সহ ১৮ দলকে সাথে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে শুক্রবার বিরতি দিয়ে লাগাতার হরতাল অবরোধ দিতে লাগলেন। সেই ফাঁকে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হল। আর ওদিকে বিনা কনটেস্টে ১৫৪ জন এমপি হয়ে গেলেন।

হে প্রিয় জনগণ, আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন। তোমরা উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যাকে খুশি ভোট দিবা। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। তবু এদেশের মানুষের ভাতের অধিকার, ভোটের অধিকার আদায় করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ।

বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে। গোটা দেশ যেখানে স্বল্পোন্নত তালিতা থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হতে যাচ্ছে, সেখানে দেশের মহান সাংসদদের আয় ব্যয় একটু বাড়বে, দুই চারটা গাড়ি ঘোড়া কিনবে, বিদেশে সেকেন্ড হোম বানাবে, আর বাকী সময় জনসেবা করে গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে, এটাই তো সবাই চাই আমরা। হে আমাদের মহান সাংসদরা, আপনারা আরো বেশি বেশি জনসেবা করেন। আল্লাহ আপনাদের মনের বাসনা পূরণ করবেন। গরিব মানুষের জীবনের আবার দাম আছে নাকি? গরিব গরিব-ই।

তাদের যতো গরিব রাখতে পারবা, ততো বেশি বেশি জনসেবা করার সুযোগ তৈরি হবে। দেশে যদি একদম গরিব না থাকে, তাহলে আমাদের এতো মহান নেতারা কাদের সেবা দেবেন। অতএব, আমাদের মহান নেতাদের সেবা দানের সুযোগ অব্যাহত রাখার জন্য আসুন আমরা কিছু গরিব লালন করি। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়িয়ে, ব্যবসাপাতি আমদানি রপ্তানি বাড়িয়ে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করি। ঘুম পাইতাছে।

আর লিখুম না। 'বড় কষ্টে আছি আয়জদ্দি' এই শ্লোগান এখন আর বাংলার আনাচে কানাচে সোনা যায় না। কারণ, দেশ এখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। জনগণ তোমরা কাঁথা গায়ে দিয়া ঘুমাও। ঘুম থেকেউঠে আবার কাজে যাবা।

যাবার পথে পেট্রোল বোমায় পুড়তে পারো। কারণ তোমরা এখনো গরিব। তোমাদের কাজে না গেলে খাবার জুটবে না। যাও, আল ডিঙ্গাইয়া ঘাস খাইতে চাইয়ো না। তোমরা জনগণ, তোমাদের সেবা করাই আমাদের ধর্ম।

হক মাওলা। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।