আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জানেমান...মুভি রিভিউ!

"ব্লগকে সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই"...গরীব স্ক্রীপ্ট রাইটার গতবার খুলনা হইতে ঢাকা আসার পথে বাসে বসে বসে টালিউডের এক সময়কার জনপ্রিয় শিশুশিল্পী মাস্টার বিট্টু যে কিনা হাল আমলে নায়ক সোহাম হয়েছে, তার অভিনীত বাংলা চলচ্চিত্র ‘জানেমান’ দেখতে দেখতে এসেছি। আর কোন কাজ না পেয়ে তাই মনে হল এটার সম্পর্কে কিছু লিখবো। আগে বলে নিই যে ছোটবেলায় কিছু প্রশ্ন আমার মাথায় খুব ঘুরপাক খেতো নায়করা কেন সবসময় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়!? কেন এত ভাল রেজাল্ট থাকা সত্বেও নায়ককে পথে পথে ঘুরতে হয় একটা চাকরির জন্য?! কেন ই বা নায়কের মেজ ভাই ভাবী শয়তান থাকে!? কেন ভিলেন আর নায়ক নায়িকার প্রেমে পড়লে নায়ককেই নায়িকা হ্যা বলে?! কেন আড়িপেতে অর্ধেক কথা শুনে নায়িকা নায়ককে ভুল বুঝে!? কেন লাস্টের ফাইটে ট্রেনিংপ্রাপ্ত ভিলেন দল ট্রেনিং সুবিধা বঞ্চিত নায়কের কাছে পরাজিত হয়!? দিন বদলে গেছে, বিট্টু এখন সোহাম হয়ে গেছে! সব বন্ধু-বান্ধব চাকরি বাকরি করে কিন্তু নায়ক সৌখিন বেকার! এই নায়ক ফার্স্টক্লাস ফার্স্টও না আর চাকরির জন্য পথে পথে ঘুরেও না! তার যেদিন ইন্টারভিউ থাকে সেদিন সে যায় না, বাবা তার উপর ক্ষেপে আগুন। আগুন পানি মাটি যা ই হোক এগুলো তে তার কি! সে তার বাবার ফোন ই ধরে না আর বাসায়ও যায় না কাজেই বাবার রাগ তো দূরের কথা বাবার চেহারাটা সোহাম আর দর্শক দেখে না! মাঝে মাঝে তার বন্ধুদের সাথে বাবার কথা হয়! বন্ধুবান্ধব বহুত কষ্টে এক ভদ্রমহিলাকে বলে সোহামের একটা ইন্টারভিউ এর ব্যবস্থা করে কিন্তু ইন্টারভিউ এর আগে একদিন ম্যাডামের সাথে দেখা করতে যায় বাসে করে। বাস থেকে নেমেই দেখে এক অপরূপা সুন্দরী রমনী কোয়েল হেটে যাচ্ছে।

যাকে বলে ছ্যাবলা প্রেম আইমিন প্রথম দর্শনে প্রেম আর কি! সোহাম রাস্তায় দাড়িয়ে কল্পনায় জানেমান জানেমান গানের সাথে নাচানাচি করছে আর বন্ধুরা ম্যাডামের রুমের সামনে গিয়ে দেখে সোহাম নাই সাথে! দৌড়ে গিয়ে ধরে নিয়ে ম্যাডামের সাথে সাক্ষাত করায়। নেক্সট সান ডে তে ইন্টারভিউ। ইন্টারভিউ দিতে এসে আবারও একই কাহিনী কোয়েলকে দেখে নায়ক উধাও! আবারও ধরে এনে ইন্টারভিউ এর রুমে ঢোকালো বন্ধুরা... কাচের জানালা দিয়ে কোয়েলকে যেতে দেখে ইন্টারভিউ ফেলে সোহাম দিল দৌড়। বন্ধুরা চরম বিরক্ত সোহামের ইন্টারভিউ নিয়ে তারা কত্তো সিরিয়াস আরেক লোকের কাছে গাড়ি ধার করে এনেছে! আর সে কিনা কোয়েলের জন্য ধুর! সব ভেস্তে দিল! যার গাড়ি সে শ্বশুবাড়ি গিয়েছিল, ফিরে আসার দিন সোহামকে বলে রেলস্টেশনে গাড়িটা নিয়ে যেতে। একটু আগেই যে কোয়েলকে দেখলাম আধুনিক পোশাক পরে ঘুরতে তাকে রেলস্টেশনে দেখি সাধারণ একটা সালোয়ার কামিজ আর হাতে একটা ব্যাগ হাতে কাচুমাচু করে এক বৃদ্ধ লোকের সাথে ট্রেনের জন্য ওয়েট করছে! ট্রেন লেইট হবে শুনে বুড়োটা বেশ ক্ষেপে গেল।

তার অসহায়ত্ব দেখে সোহামের মনে হল এই বৃদ্ধ কে (আসলে কোয়েলকে) সাহায্য করা তার সামাজিক দায়িত্ব! সে তাদের নিয়ে কোলকাতার দিকে রওনা দিল। যেতেযেতে গাড়ির তেল খতম হযে গেল। সোহাম তেল নিতে একটা পেট্রোল পাম্পের মধ্যে ঢুকলো, পাজি বুড়োটা গাড়ি থেকে নেমে একটু দূরে ফোনে কথা বলতে গেল। কোয়েল সোহামকে বলল, গাড়ি চালাতে। যার জন্য এই উপকার করতে সে এসেছে সে বলেছে আর সোহাম শুনবে না এটা কি হয়! সোহাম গাড়ি টান দিল, কিছু দূর যাবার পর কোয়েল সোহামকে রেলস্টেশনে নামিয়ে দিতে বলল।

কোয়েল নামার সময় ট্যাক্সি ড্রাইভার ভেবে টাকা দিতে গেল কিন্তু সোহাম নিল না। কোয়েল গাড়ি থেকে নেমে যাবার পর সোহাম কোয়েলের কথা ভেবে রঙিন স্বপ্ন বুনতে লাগলো। এমতাবস্থায় কোয়েল দেখলো কাবিলার (ভিলেনের নামটা ভুলে গেছি তাই কাবিলা দিয়ে চালাচ্ছি আপাতত) লোকজন খেলনা নিয়ে দাড়িয়ে। উল্টা দৌড় দিয়ে আবার গাড়িতে উঠে সোহামকে গাড়ি নিয়ে কোলকাতা যেতে বলে কোয়েল। কোন এক টপ টেরর ভাইয়ের লোকজনকে মারপিট করেছিল একবার সোহাম, তাই তার কোলকাতা যাওয়া নিষেধ ছিল।

কিন্তু জানেমান কোয়েল বলেছে সোহাম কিভাবে না যেয়ে পারে! কোয়েল এগুলোর কিছুই জানে না। কোয়েল একটু একটু করে সোহামকে বিশ্বাস করতে শুরু করলো। সে জানলো সোহাম ড্রাইভারও না গাড়ির মালিক ও না। সে তার দুঃখের কাহিনী এইবার বলল। ভালবেসে বিয়ে করেছিল তার মা বাবা।

কিন্তু তার বাবা একটা মাতাল তার মা সব সহ্য করতে করতে একসময় মারা গেছে। এখন বাবা তাকে কাবিলার সাথে বিয়ে দিতে চায়। তাই কোলকাতায় সে তার ঠাম্মার কাছে যাচ্ছে। কোলকাতায় কোথায় যাবে ঠিকানা জিজ্ঞেস করাতে কোয়েল একটা রাস্তার নাম বলল যেটা তার ঠাকুরদার নামে। এর মধ্যে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল।

কোয়েল রাস্তার বাচ্চাদের সাথে টাইম পাস করতে একটা গান করলো। একটা হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে তারা খেতে গেল। কোয়েল কিছুই খাবেনা কিন্তু সোহাম তার জন্য একগাদা অর্ডার দিল আর নিজে শুকনা রুটি আর এক কাপ চা খেল। (অনেকেরই মনে হতে পারে শিলিগুড়ি থেকে কোলকাতা কত দূর?সিনেমা এখনও শেষ হয় না কেন! আমারও এমনটাই মনে হয়েছিল) এরপর পথে কাবিলার লোকজনের সাথে টুকটাক মারপিট করতে করতে তারা কোলকাতা যেতে লাগলো। কাবিলা আর সেই ভাই কনফিডেন্সের অভাবে ভূগতে লাগলো।

তারা শিশুকালে পড়েছিল ‘দশের লাঠি একের বোঝা’ শিশুকালের শিক্ষা তারা ভুলে নি। তাই তারা এক সাথে হয়ে বলল, কাবিলার চাই কোয়েল আর ভাইয়ের এক চামচার চেহারা নষ্ট করেছিল সোহাম তাই তার সোহাম চাই। শিশুকালের শিক্ষা এবং বড়কালের ফাইট শিক্ষা কোন কাজে লাগলো না। তারা আবার মার খেয়ে হার মেনে চলে গেল। অবশেষে কোয়েল তার ঠাম্মার কাছে পৌছালো।

ঠাম্মার বাড়িতে কোন একটা বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। ঠাম্মা মায়ের হুবুহু চেহারা দেখে কোয়েলকে চিনে ফেললো। এরপর তাকে ভাল জামা আর গয়না পরিয়ে আনতে বলল। ওদিকে সোহামকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল বাসার কেয়ারটেকার। সোহাম মনের দুঃখে একটা শপিংমলের সামনে দাড়িয়ে থাকলো।

কোয়েল ফিরে এলো প্রথমে বলল সবার সাথে শপিং করতে এসেছে। পরে বলল যে তার মামারা তাকে দেখে বিরক্ত তাই সে ফিরে এসেছে। এরপর যা হয় আর কি! সিনেমা শেষ! বাই দ্য ওয়ে শিলিগুড়ি থেকে কোলকাতা ৪৫৮.৯৮ কিমি দূর! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।