আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কি বলব - হাসিনা-খালেদার খেলা, শিশুরা খেলে" নাকি"শিশুদের খেলা, হাসিনা-খালেদা খেলে" ?



আমাদের বাসায় দুই থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে পাঁচটি শিশু আছে । এরা সকলেই পরস্পর পরস্পরের চাচাতো-ফুফাতো-মামাতো ভাই-বোন । এরা সারাদিনই হৈ চৈ করে সারা বাড়ি আলোড়িত করে রাখে । এদের সকলেরই কম-বেশী অনেক খেলনা আছে । এই পাঁচজন শিশু আবার দুইটি দলে বিভক্ত- তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্টের কারনে ।

প্রথমদলে আছে একজন সদস্য, আর দ্বিতীয়দলে আছে চারজন সদস্য । প্রথমদলের সদস্যের বৈশিষ্ট হলো- সে তার কোন খেলনা অপরদলের চার সদস্যের কাউকে দেবে না, এমনকি ছু,তেও দিবে না । কিন্ত আবার, সে দ্বিতীয়দলের সদস্যদের খেলনা নিয়ে খেলতে চাইবে, না দিলে প্রচন্ড কান্না কাটি করে, সে তার মা-বাবাকে মার-ধর করবে এবং চিৎকার-চেচা-মেচি করবে । অপরদিকে, দ্বিতীয়দলের সদস্যরা তাদের খেলনাগুলি নিয়ে নিজেরা মিলেমিশে খেলবে কিন্ত প্রথমদলের সদস্যকে কিছুতেই দিবে না । কারন, তাদের যুক্তি হলো- প্রথমদলের সদস্য যেহেতু, তার খেলনা ছু,তেও দেয়না, তাই তারাও তাদের খেলনা প্রথমদলের সদস্যকে দিবে না।

এইজন্য দ্বিতীয়দলের সদস্যরা যখন খেলনা নিয়ে খেলবে, তখন তারা একটা রুমে, দরজা আটকিয়ে এমনভাবে খেলবে, যাতে প্রথমদলের সদস্য সেই রুমে কিছুতেই ঢুকতে না পারে । তখন প্রথমদলের সদস্য ঐ রুমের আশে-পাশে ঘুর ঘুর করবে, আর রুমের ভিতরের দ্বিতীয়দলের সদস্যদের সাথে খেলার জন্য বায়না ধরবে কিন্ত দ্বিতীয়দলের সদস্যরা কিছুতেই প্রথমদলের সদস্যের সাথে খেলতে রাজি হয় না । তাতে, প্রথমদলের সদস্যটি আবার চিৎকার-চেচামেচি শুরু করে দিবে । ফলে অনেক সময় আমরা দ্বিতীয়দলের সদস্যদেরকে চাপ সৃষ্টি করি, প্রথমদলের সদস্যকে সাথে নিয়ে খেলা করার জন্য, কিন্ত তাতে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে । তখন দ্বিতীয়দলের সদস্যরাও কান্নাকাটি আর হৈ চৈ শুরু করে দেয়, প্রথমদলের সদস্যের সাথে খেলতে বলার জন্য ।

শিশুদের এই ঝগড়া-ঝাটি আর হৈ-হুল্লুর আমাদের বাসার নিত্ত নৈমিত্তিক ব্যাপার । বেশ উপভোগ্যই লাগে তাদের এই ঝগড়া-ঝাটি । এখন দেখি, আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে শিশুদের এই ঝগড়া-ঝাটির সাথে কোন মিল খুজে পাই কি না । ১৯৯৬ইং সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার অধীনে কোনক্রমেই নির্বাচনে যাবেন না বলে গো ধরলেন তখনকার দুইটি উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচূপি হয়েছিল বলে । শেখ হাসিনা দাবী তুললেন যে, খালেদা জিয়ার সরকারের পরিবর্তে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।

তাহলেই কেবল শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবেন । জামায়াতে ইসলামীসহ সংসদের অপরাপর বিরোধীদলের সাথে শেখ হাসিনার ১৭৩দিনের হরতালের কারনে, শেষতক খালেদাজিয়া সংবিধানে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হলেন । আবার ২০০৬ইং সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসাবে, বিএনপির সাবেক তৃনমূল কর্মী আখ্যা দিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির কে,এম হাসানের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে । যার ফলশ্রুতিতে "এক-এগারো" পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে, আর্মি ব্যাক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চলে যায়, যাদের অধীনে ২০০৮ইং সালের নির্বাচনের মাধ্যমে অবশেষে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূনরায় ক্ষমতায় আসে । শেখ হাসিনা, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী থাকার সুবাদে এবং সংসদে তিন-চতুর্থাংশ মেজোরেটির সুবিধা নিয়ে, আদালতের দোহায় দিয়ে অত্যন্ত সুপরিকল্পিভাবে, তারই আবদারে প্রতিষ্ঠিত নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে, তারই অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাকাপোক্ত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করলেন ।

যেই শেখ হাসিনা,শুধুমাত্র খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নয়, বিএনপির একজন তৃনমূল নেতাকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসাবে মেনে নিয়ে নির্বাচন করেননি, সেই শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে, তারই অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে খালেদা জিয়াকে রাজি হতে বলেন, সেই শেখ হাসিনা ! এ কেমন দাবী দুইবারের প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনার ? একমাত্র অবুঝ শিশু ছাড়া আর কার পক্ষে, এই রকম অযৌক্তিক দাবী করা সম্ভব ? খালেদা জিয়াও তো দুইবারের প্রধানমন্ত্রী ! কি করে সম্ভব খালেদা জিয়ার পক্ষে এমন অপমানজনক দাবী মেনে নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।