আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তের বছর যাবত শেঁকলে বাধা স্বাধীনতা !

মানব সেবাই আমার মূল ধর্ম

হাঁড়-কাঁপুনি তীব্র শীতের ঝাঁপটার মাঝে শনিবার রাত ৮টায় কামরুল শেঁকলবন্দী অবস্থাতে সাংবাদিক দেখে সে যেন সারাদিনের অবহেলিত সময়গুলোর মধ্যে একজন বন্ধু খোজে পেলো। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ করতেই কামরুলে সে কি মুক্তহাসি। হঠাৎ ক্যামেরার আলোতে,এক নির্মল দারুনে আন্দোলিত যেন কামরুল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সদর উপজেলার সিএনজি ষ্টেশন লাগোয়া দিনমজুর কামাল মিয়া ও মা সামসুন্নাহার বেগমের বড় আদরের সন্তান তাদের কামরুল। ৪ সন্তানের মাঝে কামরুল সবার বড়।

মা-বাবার সাথে কথা বলে জানা গেছে,-জন্ম্রে ৩ বছর পর টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে মানসিক ভারসাম্য হারায় আজকের শেঁকলবন্দী কামরুল ইসলাম(১৫ বছর ১১মাস ৮দিন) জন্ম গ্রহন করে ১৯৯৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বিজয় দিবসের দিন। দেশের ইতিহাসে জ্বলজ্বলে দিন বিধায় কামরুলের পিতা দিনমজুর কামাল মিয়া বলেন দেশ স্বাধীনের দিন ওর জন্ম হইছিলো দিক্ক্যা আমরা খুব খূশী হইছিলাম। আশা করছিলাম আমার পোলা একদিন আমাগো দু.খ-কষ্ট দূর কইরা বড় অফিসার হইবো। সাহেব হইয়া গরীবের বর্তমান হাল-হকিকত দূর করবো।

অহন খোঁদা আমগো উপর কি উল্টা সাজা ফালাইছে। জমি-জমা,ঘড়ের থালাবাটি সব বেইচ্চ্যা কামরুলের পিছনে চিকিতসা আর ঔষধপত্র কিন্ন্যা অহন দোঁচালা এই ভাঙ্গা ঘরাটায় থাহি। হারিক্যানের আলোয় একটি আকাঁশমনি গাছের সাথে কামরুলের শরীরের পা ও গলায় রাজবন্দী বা একাধিক দূর্ধর্ষদাগী আসামীর ন্যয় গলায় শেঁকলে বন্দী কামরুলের মাথায় আদর আর শীতের কুঁয়াশার শিশির নিজের শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুছে দিতে দিতে সশব্দে আর্তচিৎকার করে বলতে থাকেন, অ…আল্লাহ গোঁ…আমরা কোন জনমে কি পাঁপ করছিলাম…আজ আমার কামরুলরে শীতের মইধ্যেও গাছের লগে বাইন্দা রাখোন লাগে। মা সামসুন্নাহার এক পর্যায়ে কাঁন্না থামিয়ে দেশবাসীর কাছে তার সন্তানকে সুস্থ্য করতে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। মা সামসুন্নাহার জানান,-একাধিকবার ঢাকায় মানসিক চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়েছে।

প্রত্যেকেই বলেছেন এটি টাঁইফয়েড থেকে সৃষ্টি হওয়ায় হাসপাতালে রেখে নিবিড় পরিচর্যা ও মূল্যবান কিছু ঔষধ খাওয়ালে কামরুলের সুস্থ্য হয়ে উঠার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু,এতে খরচ হতে পারে প্রায় ৫ লাখ টাকা। যা তাদের কাছে স্বঁপ্নের মতো। পাশের বাড়ীতে বসবাস করেন মো.সাব মিয়া মেম্বার। তার কাছ থেকে জানা গেছে যাবতীয় আরো তথ্য।

কামরুলকে বেধে না রাখলে সে নিজের ঘড়ের খাদ্যদ্রব্য,তৈজসপত্র এমনকি পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বাড়ীতে যেয়ে জিনিসপত্র নষ্ট করে ফেলে। এ ছাড়া একা-একা দূর-দূরান্তে হারিয়ে যাওয়ার উদহারন রয়েছে একাধিকবার। গরুর গোবর থেকে শুরু করে যতো আবর্জনা খেয়ে ফেলে। শেঁকলে তালামারা বন্দী অবস্থাতেই প্রকৃতির ডাঁকে সাঁড়া দেয় কামরুল। সারাক্ষণ মা তাকে দৃষ্টিতে রাখার চেষ্টা করেন।

নতুবা নিজের মলমূত্র নিজেই খেয়ে ফেলে। হাতের নাগালে কোন প্রকার গাছ,গাছের ছাল,পোঁকামাঁকড় যা পায় সবই সে খেয়ে ফেলতে চাওয়ার কারনে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। শীত হোক আর বৃষ্টি হোক-তাকে ঘড়ের ভেতর নিয়ে যাবার একান্ত ইচ্ছে থাকা সত্বেও সন্তানকে ঘড়ে নেবার জো নেই। তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলে। জানা গেছে-তাকে সারাক্ষণ উলঙ্গ-ই রাখতে হয়,কারন যে কোনো কাপড় পরিয়ে দিলে সে কাপড় দাঁতে কাঁমড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলে বা খেয়ে ফেলে।

এই প্রতিনিধিকে দেখে কামরুল ইশারায় তাকে মুক্ত করতে ইশারায় আকুতি জানায়। এমন আকুতি করে সামনে যাকে পায় তাকেই সে করে থাকে। স্বাধীনতা চায় কামরুল। স্বাধীন হতে চায় মানসিক ভারসাম্যহীন বিজয়ের দিনে জন্ম নেয়া কিশোর কামরুল। আরো জানতে ভিজিট করুন http://www.comillardak.com


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।