আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোগল হেরেমের দুনিয়া কাঁপানো প্রেম (২০ তম পর্ব)

অবশেষে আমরা আগ্রা নগরীতে পেঁৗছলাম। নগরের শাসনকর্তা ইমতিয়াজ খানের প্রাসাদে আমাকে রাখা হলো। আগ্রা দুর্গের ঠিক পশ্চিম দিকে যমুনার তীরঘেঁষে সুরম্য প্রাসাদটিকে দেখে আমার মনে হলো যেন সাক্ষাৎ বেহেশত। এ কয় দিনের অনবরত যাত্রায় যদিও আমি ছিলাম অতিমাত্রায় ক্লান্ত তথাপি অসংখ্য জনপদ পাড়ি দেওয়ার দৃশ্য। রাস্তার দুই পাশের বন-বনানী, শস্যক্ষেত্র আর হাটবাজারের ছবিগুলো মনের পর্দায় ভেসে উঠছিল একের পর এক।

প্রতিটি দৃশ্য আমার কৌতূহলী মনের মধ্যে অসাধারণ এক প্রশান্তির ছাপ রেখেছিল। ইমতিয়াজ খানের প্রাসাদ প্রকোষ্ঠে বিশ্রামের জন্য খাটিয়ার ওপর দেহ রাখার পরও চোখের পাতা বন্ধ করতে পারছিলাম। আমার কামরাটি ছিল দক্ষিণমুখী। জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছিল হরেক রকম ফুলের বাহারি বাগান। নানা রকম প্রজাপতি সেসব ফুলের ওপর বেড়াচ্ছিল।

পাশেই একটি অর্জুন গাছে বসে গোটাকয়েক পাখি কিচিরমিচির শব্দে চারদিক মুখরিত করে তুলছিল। আর যমুনা নদী পার হয়ে আসা স্নিগ্ধ শীতল বাতাস আমার কামরায় প্রবেশের পূর্বে নিকটস্থ ফুলের বাগান থেকে মনোহরি সুভাস নিয়ে সুরোভিত হয়ে যখন জানালার ফাঁক দিয়ে ঝিরঝির শব্দে ছন্দ তুলছিল, তখন আমার ক্লান্তি যে কোথায় উবে গেল টেরই পেলাম না।

মহামতি সম্রাট তার রাজধানী আগ্রা থেকে ফতেপুর সিক্রিতে স্থানান্তর করলেও লোকজন তখনো আগ্রাকেই রাজধানী মনে করত। আমি জানতে পারলাম ফতেপুর সিক্রিতে আমার কর্মক্ষেত্র সম্রাজ্ঞী রুকাইয়া সুলতানা বেগমের প্রাসাদে যাওয়ার আগে ইমতিয়াজ খানের প্রসাদে সাত দিন থাকতে হবে। এই প্রাসাদের কর্ত্রী এবং তার কন্যারা অত্যন্ত সম্মানসহকারে আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন।

মোগল হেরেমের বাসিন্দা হিসেবে আমাকে বিশেষ মর্যাদাসহকারে সবাই সম্বোধন করতেন এবং আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম, আমি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বিকেলবেলা এক বয়স্ক অভিজাত মহিলা আমার কামরায় আসলেন এবং জানালেন যে, আমার আপত্তি না থাকলে আমাকে নিয়ে শহর দেখতে বেরুবেন এবং আগ্রার ইতিহাস বর্ণনা করবেন। তিনি এই শহরের সবচেয়ে নামকরা শিক্ষিকা যিনি কিনা হেরেমের বাসিন্দাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে শিক্ষা দান করেন। তিনি নিজেকে পারসিক মুসলমান বলে পরিচয় দিয়ে নিজের নাম খানজালা বলে জানালেন।

আমি আমার শিক্ষিকা খানজালার সঙ্গে শহর দেখতে বের হলাম।

আমাদের বহন করার জন্য দুই ঘোড়ার চমৎকার একটি জুড়ি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। গাড়ির সামনে দু'জন বর্শাধারী সেন্য তাদের নিজ নিজ ঘোড়ার পিঠে চড়ে প্রস্তুত হয়েছিল আমাদের যাত্রাপথের নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য। আমরা গাড়িতে উঠামাত্র সৈন্যরা কুর্নিশ করে আমার শিক্ষিকার কাছে থেকে গন্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিল। আমরা চলছিলাম আর শহর দেখছিলাম। এত বড় শহর, বড় বড় প্রশস্ত রাজপথ আর অলিগলি জীবনে দেখা তো দূরের কথা কল্পনাও করিনি।

রাস্তার দু'পাশের সারিবদ্ধ অট্টালিকা, ছোট-বড় বাগানওয়ালা অভিজাত প্রাসাদসমূহ। বিপণি বিতান এবং হাজার হাজার ব্যস্ত মানুষের কোলাহল- ছোটাছুটি দেখে আমার দুচোখ জুড়িয়ে গেল। আমি উৎসুক দৃষ্টিতে আমার শিক্ষিকার দিকে তাকালাম।

শিক্ষিকা আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, শোন আফসানা! তুমি এখন এমন এক শহরে আছ যার গোড়া পত্তন হয়েছিল মহাভারতের যুগে।

আজ থেকে ২৭০০ বছর আগে অর্থাৎ খ্রিস্ট জন্মের এক হাজার বছর আগে এর নাম ছিল মহর্ষি আঙ্গিরা। পরবর্তী সময়ে সুলতানি আমলে ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সিকান্দর লোদী এই শহরের নামকরণ করেন আগ্রা। তার পুত্র ইব্রাহিম লোদীর আমলেও আগ্রার প্রাধান্য অক্ষুণ্ন থাকে। তবে মোগল আমলেই এর শান-শওকত বাড়তে থাকে অভাবিতভাবে। যদিও ফতেপুর সিক্রিতে হাল আমলে রাজধানী করা হয়েছে, তথাপি দিলি্ল ও আগ্রার গুরুত্ব একটুও কমেনি।

বরং অযাচিত ঝক্কি-ঝামেলা কমে যাওয়ায় শহর শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এই শহরের সবচেয়ে মূল্যবান আকর্ষণ হচ্ছে প্রবহমান যমুনা নদী। উত্তরখানের যমুনা তীর সুউচ্চ পর্বতমালা থেকে প্রবাহিত যমুনা নদী ৮৫৫ মাইল পথ অতিক্রম করেছে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে। উত্তরখান, হরিয়ানা, আগ্রা, হিমাচল প্রদেশ এবং দিলি্ল হয়ে এলাহাবাদের ত্রিবেনী সঙ্গমে গিয়ে শেষ হয়েছে।

মুসলমানরা নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত কিংবা আসমান-জমিনের যে কোনো সৃষ্টি নিয়ে আলাদাভাবে মাতামাতি করে না।

তারা সব কিছুকেই এক আল্লাহর সৃষ্টি বলে মানে। কিন্তু হিন্দু ধর্মটির মূল ভিত্তি হলো হাজার নয়- কোটি কোটি গল্প বা উপকথা। এই ধর্মের দেবদেবী রয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি। এই ৩৩ কোটি দেবদেবীকে ঘিরে আবার কয়েকশ কোটি কাহিনী প্রচলিত আছে। এসব দেবদেবী এবং কাহিনীকে তাবৎ দুনিয়ার হিন্দুরা বিশ্বাস করে।

তাদের ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে পরম শ্রদ্ধা আর ভক্তিসহ করা এসব উপকথা নিবিড়ভাবে মিশে আছে। এসব বিষয় ভালোভাবে না জানলে হিন্দু সম্প্রদায়কে কোনো মতেই শাসন করা যাবে না। কাজেই মোগল সালতানাতের সব সরকারি কর্মকর্তার প্রতি কঠোর নির্দেশনা রয়েছে, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে হিন্দু ধর্মের সব দেবদেবী এবং উপকথার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। হিন্দুরা যমুনা নদীকে অত্যন্ত পুত ও পবিত্র মনে করে বছরের বিভিন্ন সময় দলবেঁধে গোসল করে পাপমুক্তির উদ্দেশ্যে। তারা বিশ্বাস করে, মৃত্যুর দেবতা ইয়ামার বোন হলো ইয়ামি।

তাদের পিতা হলেন সূর্য, দেবতা সুরাইয়া এবং মায়ের নাম সারানু। দেবী ইয়ামিকে হিন্দুরা যমুনা নামে ডাকে। আর তাই এর উৎসস্থলে তারা দেবীর নামে তৈরি করেছে বিশাল এক মন্দির। হিন্দুদের অন্যতম দেবতা শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ও বেড়ে ওঠার অনেক স্মৃতি রয়েছে যমুনাকে কেন্দ্র করে। শ্রীকৃষ্ণের নিষ্ঠুর মামার নাম ছিল কংস।

তিনি জ্যোতিষীদের মাধ্যমে জানতে পারলেন, তার বোন দেবকী এবং ভগি্নপতি বাসুদেবের ঘরে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হবে এবং পরবর্তীতে এই শিশুর হাতেই তার জীবন ও রাজ্যের বিনাশ হবে। বহু বাধা আর অলৌকিক ঘটনার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হলে তার পিতা বাসুদেব একটি ঝুড়িতে করে শিশু কৃষ্ণকে যমুনা নদীতে ভাসিয়ে দেন ঠিক যেন ইসলামের নবী হজরত মুসা (আ.)-এর মতো।

শিশু শ্রীকৃষ্ণকে ধারণ করে যমুনার স্রোতে তাকে নিরাপদ দূরত্বে পেঁৗছে দেয়। আর সেই দিন থেকে কৃষ্ণের সম্মানে যমুনার পানি স্বচ্ছ নীল রং ধারণ করে কৃষ্ণের গায়ের রঙের সঙ্গে মিল রেখে। অনাদিকাল থেকে আজ অবধি যমুনাতে কখনো ঘোলা বা কাদাযুক্ত পানি প্রবাহিত হয়নি।

যমুনা নদী এবং এর তীর অনাদিকাল থেকে মানব-মানবীর প্রেমের লীলাক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। অন্য কোনো নদীকে ঘিরে এতো প্রেম কাহিনীর সৃষ্টি হয়নি। এই প্রেম কাহিনীর শুরুটা করেছিলেন হিন্দুদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে। তার কৃষ্ণলীলা নামে পরিচিত বর্ণাঢ্য প্রেমের উপাখ্যানগুলো এই যমুনা তীরেই অভিনীত হয়েছে। হাজার হাজার মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধি অর্জন করেছে আপন মামী রাধার সঙ্গে পরকীয়ার উপাখ্যানটি।

যমুনা দেবীর সঙ্গেও তার প্রেম ছিল। কৃষ্ণের প্রেমে পাগল হয়ে দেবী যমুনা ভিন্ন নাম ধারণ করে মর্তে এসেছিলেন। তিনি কৃষ্ণের জন্য কালিন্দা পাহাড় থেকে নেমে এসে কালিন্দার কন্যা পরিচয় দিয়ে যখন আরাধ্য দেবতার কাছে প্রেম নিবেদন করলেন, তখন দেবতা জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি নাম গো কন্যা। দেবী উত্তর করলেন কালিন্দী- আর তখন থেকেই দেবতা শুরু করলেন নতুন এক কৃষ্ণলীলা। যমুনা শুধু প্রেমের জন্যই অমর হয়ে আছে তা কিন্তু নয়! ভারতবর্ষে মানবজাতির সভ্যতার বিকাশে এই নদীর রয়েছে এক অনন্য ভূমিকা।

গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী এ তিনটি নামের মধ্যে ভারতবর্ষের তাবৎ মানুষের জন্য রয়েছে জীবন-জীবিকার নানা উপকরণ। পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বর ভূমি দোয়াব অঞ্চল এই নদীর মোহনায় অবস্থিত। অন্যদিকে গঙ্গা-যমুনা সরস্বতীর মধ্যে রাগারাগী হওয়ার কারণে এদের শাখা নদী ঘঘর এক সময় শুকিয়ে যায়। ফলে ওই অঞ্চলের সুপ্রাচীন হারাপান সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় আর সৃষ্টি হয় সুবিখ্যাত থর মরুভূমির। তাই তো ভারতবাসী হিন্দুরা গঙ্গা-যমুনাকে তাদের দেবদেবী বানিয়ে পূজা অর্চনা করে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকে।

পৃথিবীর অনেক প্রাচীন ভৌগোলিক মানচিত্রে যমুনা নদীর বর্ণনা রয়েছে। আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলুকাস যমুনা নদী জরিপ করার জন্য সার্ভেয়ার পাঠিয়েছিলেন ৩০৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। গ্রিক পর্যটক ও ভূগোলবিদ মেগাসথিনিস ২৮৮ ক্রিস্ট পূর্বাব্দে অর্থাৎ যে বছর সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মারা গেলেন সে বছর যমুনা নদীর অববাহিকায় ব্যাপক জরিপ চালান। তার রচিত ইনডিকা বইতে সে কথা তিনি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।

যমুনার বড় গৌরব এর রাজসিকতায়।

এই নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা জনপদের শাসকরাই ভারতবর্ষ শাসন করে আসছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। এই ধারাবাহিক সাম্রাজ্যের শুরুটা হয়েছিল চানক্য বংশের মাধ্যমে। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে এলো মগধ সাম্রাজ্য। ইমরা সাম্রাজ্য রাজত্ব করল ৩২১ থেকে ১৮৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ অবধি। সুঙ্গা সাম্রাজ্য, কুসান সাম্রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য ও চাওলা সাম্রাজ্য ধারাবাহিকভাবে এই অঞ্চলকে রাজার নগরী বানিয়ে শেষমেশ মোগলদের হাতে সমর্পণ করেছে ঐতিহাসিক দায় মেটানোর জন্য।

এ পর্যন্ত বলে আফসানা হঠাৎ শাহজাদার দিকে নজর দিল আর লক্ষ্য করল এক অন্য পরিবেশ- খাটের ওপর মখমলের তুলতুলে নরম বিছানায় শুয়ে শাহজাদা অত্যন্ত একাগ্রতার সঙ্গে আফসানার কথা শুনছিলেন আর মনে মনে হেরেমের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। আফসানার মতো একটি সহজ-সরল গ্রাম্য বালিকা শিক্ষা পেলে যে কতটা অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে তা তিনি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলেন দুই ঘণ্টা ধরে। নারীর অমিত সুন্দর অভিব্যক্তি এবং তার আকর্ষণীয় শারীরিক গঠনের সঙ্গে যদি জ্ঞান ও মেধা যুক্ত হয় তবে সে আর নারী থাকে না- হয়ে যায় দেবী। আফসানাকে তার দেবী বলেই মনে হলো। শ্রীকৃষ্ণ দেবতা হয়ে যাদের সঙ্গে প্রেমলীলা চালিয়েছিল- তাদের বেশির ভাগই ইতিহাসে দেবীর সম্মানে অধিষ্ঠিত হয়েছে।

তাহলে শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে নিশ্চয়ই অলৌকিক কিছু ছিল। আজ অবধি কত পুরুষ কত রাজ্য দখল করল- কত নারীর দেহমনে প্রবিষ্ট হলো কিংবা যুমনা তীরে কতই না রঙ্গলীলা করল- কিন্তু কেউ তো কৃষ্ণ হতে পারল না! আফসানার কথা শুনতে শুনতে শাহজাদা আনমনে এসব প্রসঙ্গ ভাবছিলেন আর মাঝে মধ্যে দুষ্ট চোখে নারীর সুন্দর অঙ্গগুলোর দিকে তাকিয়ে উসখুস করছিলেন।

আফসানা কথা থামিয়ে শাহজাদার মুখের কাছে মুখ নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে মুখপানে তাকিয়ে রইলেন। তার মুখমণ্ডল ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে স্পষ্ট কমনীয়তার ছাপ দেখে শাহজাদার শারীরিক উত্তেজনা বেড়ে গেল। শোয়া থেকে ওঠার চেষ্টা করে তিনি আফসানাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলেন।

খ্যাপাটে পুরুষের মতো উত্তেজনায় তার ঠোঁট ও জিহ্বা শুকিয়ে গেল। আফসানা শাহজাদাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে উল্টো তার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে উত্তেজিত ঠোঁট, মুখমণ্ডল তার দুষ্ট দুষ্ট চাহনীর চোখ দুটোতে বারবার ভালোবাসার চিহ্ন বসাতে থাকলেন। শাহজাদা হতোদ্যম হয়ে সুবোধ বালকের মতো নিষ্ক্রিয় থেকে আফসানাকে তার কর্ম স্বাধীনভাবে করতে দিলেন। সারা জীবন নিজে অগ্রণী হয়ে নারীর মধ্যে বিলীন হয়ে আনন্দ লাভের চেষ্টা করেছেন। আর আজ নারীই- এই প্রথম তাকে কুপোকাৎ করার চেষ্টা করছে! তিনি চোখ বুঝে সেই কুপোকাতের আক্রমণ অনুভব করার চেষ্টা করলেন।

বেশ ভালোই তো লাগছে।

কিন্তু হঠাৎ কি মনে করে যেন ভয় পেয়ে গেলেন। নিজের পৌরুষ এবং পুরুষত্ব সম্পর্কে তার একটু সন্দেহ দেখা দিল। তিনি যদি আফসানার কাছে বেইজ্জত হয়ে যান! সর্বনাশ! এই ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে তার সারা দেহমনে এক ধরনের অবসন্নতা অনুভব করলেন। তিনি বড় বড় হাই তুললেন কেবল এ কথা বোঝানোর জন্য যে, তার বড্ড বেশি ঘুম পেয়েছে।

শাহজাদার হঠাৎ পরিবর্তন দেখে মনোরম মিহিসুরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল আফসানা। সেকি হাসি! হাসি আর থামেই না। বিব্রত শাহজাদা ঘুমের ভান করে আবার হাই তুললেন এবং পাশ ফিরে শুতে শুতে বললেন- হাসছ কেন? কি হয়েছে তোমার! কিছু হয়নি গো আমার মালিক! কিছু হয়নি- কেবল কলিজার মধ্যে উথাল-পাতাল করছে বলেই আরেক দফা হাসতে আরম্ভ করল। শাহজাদা ভারি মসিবতে পড়লেন। এমন অবস্থায় তিনি জীবনে কোনো দিন পড়েননি।

এমন মেয়েও দেখেননি। যেমনি সাহসী, তেমনি মেধাবী, আকর্ষণীয়। তবে অতি মাত্রায় মুখরা। মুখে কোনো কিছু আটকায় না। যা জিজ্ঞাসা করা হয় সবই ফটাফট বলে দেয়।

গত দুই ঘণ্টা সময় তার মতো অস্থির চিত্তের একজন মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বশ করে রেখেছে কেবল কথা দিয়ে। শব্দ চয়ন, বাচনভঙ্গি, তথ্য সংযোগে তার জীবনের ইতিহাস এমনভাবে বর্ণনা করছে, তাতে মনে হচ্ছে- সব কিছু ছেড়ে কেবল গল্পই শুনি। নিজের জীবনের কাহিনীর সঙ্গে আগ্রা নগরী এবং যমুনা নদীর ইতিবৃত্ত মিলিয়ে এমন কাহিনী শুনিয়েছে যে, সেই কাহিনীর পরবর্তী অংশ না শুনলে মনে হয় জীবনটা ব্যর্থই হয়ে যাবে। তার মনে পড়ল আনারকলির কথা। অসম্ভব সুন্দরী আর প্রেমময়ী শান্তশিষ্ট একটি ভাব জাগানিয়া মেয়ে ছিল সে।

কিন্তু আফসানা যেন আগুনের গোলকের মধ্যে প্রস্ফুটিত একটি সুরভিত বসরার গোলাপ। কারও সঙ্গেই তাকে তুলনা করা যাবে না। যেন এক অনন্য পরিপূর্ণ নারী- এ কথা ভাবতে ভাবতে শাহজাদা চোখ মেলে আফসানার দিকে তাকাতে চেষ্টা করলেন আর তখনই বাইরে থেকে ভেসে এলো বহু সৈন্যের কোলাহল আর ঘোড়ার পায়ের আওয়াজ। [চলবে]

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/index.php     দেখা হয়েছে ২৭ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.