আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরও ৪৬ জনের লাশ উদ্ধার

সাভারে ভবনধসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৩৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৪২৫ জনের লাশ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি নয়জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বুধবার রাত আটটার পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা পর্যন্ত ৪৬ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতাল, মর্গসহ অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ থেকে স্বজনদের কাছে ৩৯০ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

আর শনাক্ত না হওয়ায় ৩২ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে জুরাইন কবরস্থানে। অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে আছে চারজনের লাশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ডের মর্গে আছে ১৭ জনের লাশ।
এখনো ধসে পড়া ভবনের আশপাশে, হাসপাতাল ও অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা ভিড় করছেন। তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, এত দিন চাপা পড়ে থাকার পর তাঁদের স্বজনের লাশ চিহ্নিত করাই এখন মুশকিল হয়ে যাবে।

আর খননযন্ত্র ও ক্রেনের টানে লাশ নষ্ট হয়ে যাওয়ারও ঝুঁকি থাকছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গতকাল পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা ১৮৩ জন। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাবের শিক্ষার্থীরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের একটি তালিকা করছেন। তাঁদের কাছে প্রথম দিন থেকে এক হাজার ৩৫০ জন নিখোঁজ ব্যক্তির নাম নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু লোককে পরে জীবিত ও মৃত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গেছে।

আর কিছু লোকের নাম একাধিক স্বজন এসে একাধিকবার নিবন্ধন করেছেন। এখন আইবিএর পরিচালকের নেতৃত্বে শিক্ষকেরা এই তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন।
সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্ধার অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ৪৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো ধ্বংসস্তূপের ভেতরে লাশ দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, লাশ দেখা গেলেই যন্ত্র বন্ধ রেখে যথাযথভাবে উদ্ধার করা হচ্ছে।

এ জন্য ধ্বংসস্তূপ সরাতে সময় বেশি লাগছে। তিনি নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের উদ্দেশে বলেন, সর্বশেষ লাশটি উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁরা এখান থেকে যাবেন না।
ধসে পড়া রানা প্লাজার বিভিন্ন তলায় কর্মরত পোশাক কারখানার মৃত ও আহত ব্যক্তিদের স্বজন এবং জীবিত সুস্থ কর্মীদের আজ শুক্রবারের মধ্যে সাভার মজিদপুরের ক্যাপিটাল পোশাক কারখানার সমানে নাম-ঠিকানা তালিকাভুক্ত করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পোশাক মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তালিকাভুক্ত লোকজনকে বেতন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
ধ্বংসস্তূপের ওপরে উঠে গেছে খননযন্ত্র: যান্ত্রিক পদ্ধতিতে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে গত রোববার রাত ১২টার দিকে।

এর মধ্যে ধসে পড়া ভবনটির দক্ষিণ পাশে অবস্থিত তিনতলা ভবনের ওপর পড়া ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। রানা প্লাজার কিছু অংশ ওই ভবনটির ওপর পড়ে ছিল। বড় ক্রেন, বুলডোজার, হাইড্রোলিক ভাইব্রেটর দিয়ে রানা প্লাজার সামনের অংশের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ধসের পর নবম তলার ছাদটি তিনতলার সমানে চলে এসেছে। গতকাল খননযন্ত্র দিয়ে সেই ছাদের একাংশ কেটে বের করে আনা হয়েছে।

তবে এর নিচের অংশগুলো বিস্কুটের মতো গুঁড়া গুঁড়া হয়ে গেছে।
ভবনের পেছনের দিকে ক্রেন দিয়ে টেনে মুখ থুবড়ে পড়া কিছু ধ্বংসস্তূপ সরানো হয়েছে।
ধ্বংসস্তূপে আরও লাশ: গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় ভবনের পেছনের অংশ থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, লাশের মুখমণ্ডল ও শরীর ফুলে গেছে, কিছুটা বিকৃতও হয়েছে। লাশের পরনের প্যান্টের পকেটে পরিচয়পত্র পাওয়া যায়।

তাতে তাঁর নাম লেখা লিয়াকত হোসেন। তাঁর পকেটে উদ্ধারকর্মীরা একটি ক্রেডিট কার্ড ও মুঠোফোনের সিমও পেয়েছেন।
উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, ভবনের পেছনের অংশে ধ্বংসস্তূপ সরানো শুরু করলে বেশ কিছু লাশের অংশবিশেষ দেখা যায়। কয়েকজন উদ্ধারকর্মী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, অনেক লাশ পচে গেছে। ভবনের উত্তর-পূর্ব দিকে একটি জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি আছে।

এর মধ্যে অনেক লাশ চাপা পড়ে থাকার লক্ষণ দেখছেন তাঁরা।
অসহযোগিতার অভিযোগ: লাশ হস্তান্তরে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জগতলা গ্রামের আবদুর রহমান। তাঁর দাবি, গতকাল সকালে অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে তিনি স্ত্রী চায়না বেগমের লাশ শনাক্ত করেন। এরপর তিনি নিয়ন্ত্রণকক্ষে গিয়ে লাশ গ্রহণ করতে চান। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শায়েদ ইকবাল ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা সম্ভব নয় বলে জানান।

এ সময় তিনি (রহমান) কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাশের জন্য আকুতি জানাতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই কর্মকর্তা রহমানকে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
সাংবাদিকেরা বিষয়টি জানার চেষ্টা করলে শায়েদ ইকবাল সাংবাদিকদের ওপর খেপে গিয়ে তাঁদেরও সেখান থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। স্বজনেরা এর প্রতিবাদ করে বিক্ষোভ করেন এবং ওই কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবি করেন। একপর্যায়ে ওই কর্মকর্তা ঘটনাস্থল থেকে সরে যান।


খবর পেয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) এ কে এম আমিনুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্বজনদের কাছে চায়নার লাশ হস্তান্তর করেন। এ কারণে সকাল সাতটায় লাশ আনা হলেও স্বজনদের বুঝে পেতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
এ কে এম আমিনুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্বজনদের বিক্ষোভ ও দাবির কারণে ম্যাজিস্ট্রেট শায়েদ ইকবালকে নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।