আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লেন্দুপ দর্জির অজানা ইতিহাস ও ইতিহাসের খেরোখাতা

আমি খুবি সাধারণ পেন্সিলে আঁকা সহজ স্বপ্ন আমার । স্বপ্ন দেখতে ভুল হলে ইরেজার দিয়ে সহজে মুছে ফেলা যায় । আমার স্বপ্ন ।

গত ২৯ শে ডিসেম্বর বিকেলে টেলিভিশনে দেখছিলাম বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারী বাহিনী তাঁর পূর্বঘোষিত ‪#‎March_for_Democracy‬ তে অংশ নিতে দেয়নি। সরকারী বাহিনী বাসভবনের ফটকেই বেগম জিয়াকে আটকে দিলে বিরোধী দলীয় নেতা ক্রুদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন 'আপনি লেন্দুপ দর্জির ইতিহাস পড়ে দেখুন।

তখনি হালকাভাবে মনে পড়লো কে এই লেন্দুপ দর্জি।

তার সম্পর্কে জেনেছিলাম বছর দুয়েক আগে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একজন অধ্যাপকের কাছ থেকে। স্পষ্ট মনে পড়ে ফেলানি হত্যাকাণ্ডের কিছূদিন পরে যখন তিতাস নদীতে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ দেয়া হলো অনেক মন খারাপ করে বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক Tareque Shamsur Rehman স্যারের সাথে দেখা করতে গেলাম। আমি ক্ষোভের সাথে বাংলাদেশকে বাফার স্টেট বলায় স্যার বিরোধিতা করলেন অনেক আলোচনা করলেন। জানতে পেরেছিলাম রাষ্ট্রবিজ্ঞান কিংবা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যয়নে ‘জোন অব প্রিভিলিজড ইন্টারেস্ট’ একটি বহুল আলোচিত, প্রচলিত ও সমালোচিত শব্দ।

সেদিন বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করছিলাম স্যারের সাথে। সবকিছূ মনে নাই তবে একটি বিশ্বাসঘাতকের নাম এখনো মনে পীড়া দেয় তিনি লেন্দুপ দর্জি যার জন্য এমনি একটি জোন অব প্রিভিলিজড ইন্টারেস্ট তত্ত্বে পড়া দেশ সিকিম তার স্বাধীনতা হারিয়েছিল শুধু মাত্র ৫ বছরের মূখ্যমন্ত্রীত্বের বিনিময়ে।

স্যার কথা প্রসঙ্গে এও বলেছিলেন একজন কিন্তু দাশু লেন্দুপ দর্জি আছেন ভুটানের ওয়াংচুক রাজ পরিবারে তোমরা আবার এর সাথে কাজি লেন্দুপ দর্জিকে গুলিয়ে ফেলোনা। কথা প্রসঙ্গে জেনেছিলাম ঐ বিশ্বাসঘাত কাজি লেন্দুজ দর্জিই প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ স্বাধীন মাতৃভূমিকে ভারতের হাতে তুলে দেন। সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর পদ লাভের লালসায় কেবলমাত্র তার একক কর্মকাণ্ডে পতন ঘটেছিলো সমৃদ্ধ রাজধানী গ্যাংটক এর।



কাজি লেন্দুপ দর্জি ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পদ ধরে থাকলেও তাকে একসময় নিক্ষিপ্ত হতে হয় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। অবাক করার বিষয় ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই বিশ্বাসঘাতক লেন্দুপ দর্জির এসএনসি রাজ্যসভায় একটি আসনও পায়নি। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে লেন্দুপ দর্জি বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করেন ভোটার তালিকায় তার নামটি পর্যন্ত নেই। নিঃসঙ্গ, লাঞ্ছিত অপমানিত অবস্থায় ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই কলিংপং এ মারা যায় এই বেইমান। তবে তার করুণ মৃত্যু সিকিমবাসীর মনেও কোনো সহানুভূতির জন্ম দেয়নি বরঞ্চ একরাশ ঘৃণায় থুতু ছিটিয়েছে মানুষ।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো তা হচ্ছে ২০০০ সালের দিকে দেয়া কাজি লেন্দুপ দর্জির একটি সাক্ষাৎকার । এতে দর্জি বলেন, "ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রয়োজনের সময় সিকিমের সর্বনাশ করতে নয়াদিল্লির সব অনুষ্ঠানে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেও কাজ শেষ হলে লাত্থি মেরে তাড়িয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। "

দেখে নেয়া যাক ইতিহাসের খেরোখাতায় লেন্দুপ দর্জি কে ছিলেনঃ

Kazi Lhendup Dorjee, also spelled Kazi Lhendup Dorji or Kazi Lhendup Dorji Khangsarpa, was the first chief minister of Sikkim from 1974 to 1979 after its union with India. He was popularly known as Kazi Saab in Sikkim.

Born: October 11, 1904, Pakyong, India
Died: July 30, 2007, Kalimpong, India
Awards: Padma Vibhushan

বিশ্বাসঘাতকতার নির্মম দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী কাজি লেন্দুপ দর্জি হচ্ছেন ভারতের ইতিহাসের ভাষায় সিকিমের প্রথম মূখ্যমন্ত্রী যে হতভাগা ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় আসীন ছিলো। সিকিমে একসময় কাজি সাহেব নামে পরিচিত ।

১৯০৪ সালের ১১ অক্টোবর পূর্ব সিকিমের পাকিয়ং এর জন্মগ্রহণ করেছিলো।

সিকিমের অভিজাত খঙ্গসর্প পরিবারের সন্তান এই বরাহশাবক মাত্র ৬ বছর বয়সে তার চাচার তত্ত্বাবধানে একটি লামা মনস্ট্রিতে শিক্ষালাভ শুরু করে। সিকিমের মহারাজা তুলকু নামগয়ালের পাকিয়ং ভ্রমণের সময় ঐ মনস্ট্রিতে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন যখন তার দৃষ্টিগোচরে আসে এই বেজন্মা লেন্দুপ। তারপর গ্যাংটকে গিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করে রাজনীতিতে প্রবেশ করে সিকিমের কালসাপ লেন্দুপ দর্জি।

১৯৪৫ সালে লেন্দুপ দর্জি সিকিম প্রজামণ্ডল নামে একটি রাজনৈতিক দলের প্রবর্তন করে তার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলো। ১৯৫৩ সালে ভাগ্যচক্রে সিকিম স্ট্রেট কংগ্রেসেরও প্রেসিডেন্ট বনে যায় সে যে দায়িত্ব তার উপর ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত বর্তায়।



এরপর ১৯৬২ সালে এই বরাহশাবকের নেতৃত্বেই সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস নামে একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। অন্য সব দেশের দেশের মতো এখানেও লেন্দুপদর্জি চেতনা আর ধর্মনিরপেক্ষতার বাণী আউড়ে জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা করে। অবাক হলেও সত্য তার এই ধর্মনিরপেক্ষ দলটিকে সবদিক থেকে সহায়তা করে আসছিলো কট্টর সাম্প্রদায়িক হিন্দুরাষ্ট্র ভারতের মৌলবাদী দল বি.জে.পির পাশাপাশি শিবসেনা, বজরং ও আর.এস.এস এর মতো কিছু উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক সংগঠন।

এদের সহায়াতা পেয়ে একসময় ক্ষমতার লালসা পেয়ে বসে দর্জিকে। ১৯৭০ এর দিক থেকেই সে চেষ্টা করে ভারতের সাথে একীভূত হতে।

এই সময় নানা প্রতিকূলতা ও দেশপ্রেমিক জনগণের বাধার মুখে পড়তে হয় তাকে। নির্বিচার গুলি চালিয়ে অনেক মানুষ হত্যা করে সে। ভারতের সহায়তা নিয়ে তখন প্রচুর দেশপ্রেমিককে কারারুদ্ধ পর্যন্ত করা হয়। এতো বিশৃঙ্খলা ও হাজার হাজার প্রতিবাদ মানুষের লাশের উপর দিয়ে সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলো এই বেজন্মা লেন্দুপ দর্জি।

অদৃষ্টের পরিহাসে ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সিকিমের মূখ্যমন্ত্রী থাকলেও মানুষের প্রতিবাদ ঘৃণা ও ধিক্কারের মুখে তাকে ঠিকই সরে যেতে হয় সিকিমের রাজনীতি থেকে।

শেষ পর্যন্ত তাকে রাজধানী গ্যাংটক থেকে অনেক দূরে কলিংপং এর রাস্তায় বুভুক্ষু কুকুরের মতো মরতে হয়েছে।
এর দ্বারা আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে ইতিহাস আর যাইহোক বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করেনা। ভারত তার বিশ্বাসঘাতকার পুরুষ্কার হিসেবে ২০০২ সালে তাকে পদ্মভূষণ উপাধি দেয়, পদলেহী সরকার ২০০৪ সালে তাকে সিকিম রত্ম পুরষ্কার দিলেও জনগণের কাছ থেকে কিছু ঘৃণা আর ধিক্কার বাদে কিছুই মেলেনি লেন্দুপ দর্জির জন্য। শেষ পর্যন্ত আত্মপরিচয়হীনভাবে ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই কলিংপং এর রাস্তায় হার্ট এটাকে কুকুরের মতো জীবন দিয়ে সিকিমের মানুষের সাথে গাদ্দারির ঋণ শোধ করতে হয়েছে তাকে।

সিকিমের প্রাক্তন রাজা লেন্দুপ দর্জির কয়েকটি মন্তব্য:

"সিকিমকে ভারতের হাতে তুলে দিতে হেন চেষ্টা নেই যা আমি করিনি।

কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নয়দিল্লি আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে"।

সাপ্তাহিক জন আস্থা পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে লেন্দুপ দর্জি বলেন,
"আগে নয়াদিল্লিতে আমাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করা হতো। এখন ভারতের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতেও আমাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়"।

২০০০ সালে অপর এক সাক্ষাৎকারে লেন্দুপ দর্জি বলেন,
"প্রধানমন্ত্রী জওয়াহের লাল নেহরু ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লিতে এক সময় আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতেন। কিন্তু রাজনৈতিক মঞ্চে কাজ শেষ হলে আমাকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা হয়"।



এই পোস্টটি ভাল লাগলে অবশ্যই ফেইসবুক শেয়ার করবেন ।

*** এই ইতিহাস পড়ার পর সত্যি মন খুব খারাপ হয়ে যাবে। তখন মন ভালো করার জন্য ঘুরে দেখতে পারেন নিচের লিংকটি। ভাববেন হায় এতো সুন্দর সোনার দেশগুলোতে কিভাবে বেজন্মা শাসকের আবির্ভাব হয়। এখানে শুধুমাত্র একটা স্থানীয় পরিবেশের সামগ্রিক সৌন্দর্যটা কেমন তা তুলে ধরার ব্যর্থ প্রয়াস চালানো হল ।

Click This Link ধন্যবাদ সবাইকে

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.