আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ প্রহরের শিশির


অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখতাম মাঝখানে বেশ কিছুদিন। দেখতাম যে আমি মঙ্গল গ্রহে। ওইখানে ঘোরাফেরা করছি। বাজার-সদাই করছি। কোনকিছুর দাম বেশি হলে দরদাম করতে গেলে দোকানদার আবার বলতেছে ভাই এটা পৃথিবী না।

মালামাল এক্সপোর্ট করা লাগে। দামতো একটু বেশি হবেই। এই টাইপ স্বপ্ন দেখার পর প্রতিবারই ঘুম ভেঙ্গে ভাবতাম কি আশ্চর্য!এসব দেখছি কেন। দুনিয়ায় কি জায়গার অভাব পড়ছে নাকি যে ভিনগ্রহ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে হবে।
দেশের বাইরে যারা থাকে তারা ভাল করেই জানে এখানকার দৈনন্দিন জীবনের একটা বড় সময় কেটে যায় ট্রেন-বাসে যাতায়াত করতে করতে।

তো এইরকম একদিন ট্রেনে যেতে যেতে ব্যপারটা নিয়ে ভাবলাম এবং নিজের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা ব্যখ্যা দাঁড় করালাম। ব্যপারটা এরকম যে আমার কাছে আসলে আমার দেশ মানেই আমার পৃথিবী। আমার জন্য দুনিয়ার সব সুখ ওইখানেই। ঐ দেশটা বাদে বাকি সব জায়গাই তো আমার জন্য ভিনগ্রহের মতই। তাই এক হিসেবেতো ভিনগ্রহেই আছি।

যাহোক আসল কথা হল এই ভিনগ্রহে আর কিছুদিন পর হয়ত বছরখানেক পূরণ হবে। সময়ের হিসেবে অল্প হলেও অভিজ্ঞতার হিসেবে অত্যন্ত বৈচিত্রময় সময় কাটিয়েছি বলতেই হবে। বাইরের লাইফ নিয়ে কথা হলে বন্ধু-বান্ধবদের প্রায়ই একটা কথা বলি যে এই অল্পসময়ের প্রবাসজীবনে এত এত অভিজ্ঞতা হয়েছে যে পুরো একটা উপন্যাস লিখে ফেলতে পারব। এত এত কাহিনী। কাহিনী মানেই বিড়ম্বনা আর ঝামেলার অভিজ্ঞতা।

প্রত্যেকটা দিনই ঘটনাবহুল। উফফফ!

গত কিছুদিন ধরে এখানকার উৎসব-উৎসব ভাব,আয়োজন বারবার ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ নিয়ে যায়। তখনই খেয়াল হয় আরেকটা বছর শেষ হতে যাচ্ছে। সবখানেই নতুন বছর নিয়ে প্ল্যান করার পাশাপাশি চলছে পুরনো বছরের হিসেব-নিকেশও। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সমীকরণের বিবেচনায় দেখলে আত্মতুষ্টি আছে।

রোমাঞ্চকর একটা বছরই পার করলাম। পরম করুণাময়ের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা সেজন্য। আর নতুন বছরের পরিকল্পনা নিয়ে ভাবলেতো শেষই হবেনা। আমরা আর কি প্ল্যান করি!ডয়েচে ভেলের একটা আর্টিকেলে পড়লাম যে খোদ জার্মানদেরও নতুন বছর নিয়ে চাওয়ার বেশির ভাগই পুরণ হয়না। ছোট-বড় অনেক চাওয়া থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে মূল চাওয়া একটাই।

যেখানেই যাই,যাই করি কিংবা যে অবস্থাতেই থাকিনা কেন আত্মায় শান্তি যেন থাকে। তারপরও স্পেশাল কিছু চাওয়া তো সবারই থাকে। কোন সন্দেহ নাই আগামী বছরের সবচেয়ে বড় চাওয়াটা হল দেশে ফেরা আর যদি সত্যিই সব ম্যানেজ করে যেতে পারি তবে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। এই স্ট্যাটাসের ২য় অংশ নাহয় সেদিনই লিখব।

সবশেষে কিছু পুরনো কাসন্দি ঘাটা যাক।

জার্মানী আসার পর প্রথম কয়েকদিন যে কাজটা খুব বেশি করতাম সেটা হল আকাশের দিকে তাকিয়ে প্লেন দেখা। আমার বন্ধুপ্রতীম এক ভাইকে বলতাম ভাই,ওই দ্যাখেন। আরেকটা প্লেন যাচ্ছে। ওইটাও বাংলাদেশে যাচ্ছে। ভাই কিছু বলত না।

শুধু হাসতো। বলতেন না কেন ভাই,আপনার কেন মনে হয় যে সব প্লেনই শুধু বাংলাদেশেই যায়?হয়তো ভাই নিজেও ভাল করেই জানতেন কেন আমি এ কথা বলি। কেন?ওই যে আগেই বললাম প্রাণতো শুধু একটা গ্রহেই। পৃথিবী। আর আমার পৃথিবী??আমার দেশ।

ব্যক্তিগতভাবে নিজের বছরটা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি মিলিয়ে ভাল গেলেও আমার দুঃখিনী দেশটার এই বছরটা ভাল যায়নি। এখনো যাচ্ছেনা। সন্তানরা মানুষ হলে নাকি মায়ের মুখে হাসি ফোটে। দেশমাতার সন্তান যারা বিভ্রান্ত হয়ে বিপথে তারা সঠিক পথে ফিরে আসবে। মায়ের মুখে হাসি ফুটবে।

হয়তো দুরাশা,তবু আশা তো!মায়ের জন্য,দেশের জন্য শুভকামনা।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
Greetings of New Year to all.

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।