আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোপালগঞ্জ-বন্দনার জবাব

জীবনে সফল হতে না পারি দুঃখ নেই... একজন ভাল মানুষ হিসেবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে চাই...

ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ [৫ মে-তে শাপলা চত্বর অভিযানের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড]-সহ বহু গোপালগঞ্জী পুলিশ কর্মকর্তার বাড়াবাড়ির শিকার খালেদা জিয়া বলেছিলেন, "গোপালগঞ্জ জেলার নামই বদলে যাবে, বুঝছেন? গোপালগঞ্জ আর থাকবে না। আল্লাহর গজব পড়বে, আপনারা যা শুরু করে দিয়েছেন।
http://www.youtube.com/watch?v=HJjxC8xN8cs

এর পরই শুরু হয়েছে শাসক দলের গোপালগঞ্জ-বন্দনা:

নৌ-পরিবহন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, "গোপালগঞ্জ হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান। এটি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তীর্থস্থান। "

Click This Link


সাবেক পররাষ্ট্রচারী মন্ত্রী দিপু মনি বলেছেন, "প্রকৃতঅর্থে বেগম খালেদা জিয়া গোপালগঞ্জ ও তার অধিবাসীদের লক্ষ্য করে কটাক্ষপূর্ণ উক্তির মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণ করেছেন তিনি পাকিস্তানিদের পদলেহী ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর।

"

Click This Link


তরিকত চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেছেন, "গোপালগঞ্জ না হলে বাংলাদেশই হতো না। গোপালগঞ্জ, বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনতা একই সূত্রে গাথা। "

Click This Link


যথারীতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শামিল হয়েছেন এই বন্দনায়:

"গোপালগঞ্জে জাতির পিতার জন্ম। তার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি। গোপালগঞ্জ স্বাধীনতা দিয়েছে।

"

Click This Link


সত্যিকার অর্থে, ইসলামিক আইনবিজ্ঞান (ফিকহ)-এর দৃষ্টিকোণ থেকে "গোপালগঞ্জ না হলে বাংলাদেশই হতো না" বা "গোপালগঞ্জ স্বাধীনতা দিয়েছে" এই জাতীয় বক্তব্য পরিষ্কার শিরক ও কুফরী।


রাজনৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করলে বিষয়টি অতি সংকীর্ণ আঞ্চলিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

খালেদার বক্তব্যটি ছিল, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অত্যাচারিতের আর্তি। লক্ষ্য করুন, গোপালগঞ্জের নামসংক্রান্ত বাক্যের পরই তিনি বলেছেন, আল্লাহর গজব পড়বে, আপনারা [গোপালগঞ্জী পুলিশ] যা শুরু করে দিয়েছেন।

তাই খালেদার বক্তব্যটি হলো, একটি অত্যাচারী [গোপালগঞ্জী পুলিশ] শ্রেণির বিরুদ্ধে আল্লাহ ও জনগণের উদ্দেশে একজন গৃহবন্দীর বিক্ষুব্ধ মনের বহিঃপ্রকাশ।




তবে যদি কেউ খালেদার বক্তব্যকে আক্ষরিক অর্থে "গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তনের পরিকল্পনা" হিসেবে দেখতে চান, তাহলে বলতে হয়, ওই নাম পরিবর্তন করতে চাওয়াও এমন কোনো নজিরবিহীন ঘটনা নয়।

ভারতমাতাই তো বোম্বে, মাদ্রাজ-সহ বহু শহরের নাম বদলিয়েছে:

Click This Link


সারা পৃথিবীতেই ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কারণে নাম পরিবর্তনের উদাহরণ আছে:

Click This Link


লেনিনগ্রাদ, স্তালিনগ্রাদের নামও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বদলেছে।


বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নামের স্থাপনাগুলোতে এমন পাইকারিভাবে শেখ মুজিবের নাম বসানো হয়েছিল যে, অনেকে ঠাট্টা করে বলত, "ভাগ্যিস, জিন্নাহর কবরটি পূর্ব পাকিস্তানে ছিল না! নইলে ওটাকেও শেখ মুজিবের কবর নাম দেয়া হতো!"

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় গুলিস্তানের যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে, সেটার নামই ছিল "জিন্নাহ এভিনিউ"।


এই গোপালগঞ্জেরও পূর্বনাম ছিল রাজগঞ্জ!

সরকারি ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্যমতে:

http://sadar.gopalganj.gov.bd/node/427456

সেখানে বসতি বলতে ছিল নিম্নবর্ণের জেলে, মাঝি, বেদে আর কুমোর। প্রায় সবাই নম:শুদ্র হিন্দু।

দেড়শ বছর আগে এখানে একঘর মুসলমানের বসতির কোন সন্ধান পাওয়া যায় না।

ব্রিটিশদের দালাল হিন্দু নারী রাসমনি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় এক উচ্চপদস্থ ইংরেজ সাহেবের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। পরবর্তীতে তারই পুরস্কার হিসাবে বৃটিশ সরকার রাসমনিকে মকিমপুর স্টেটের জমিদারী প্রদান করেন এবং তাঁকে রাণী উপাধিতে ভুষিত করেন। সেই কলকাতাবাসিনী রাসমনির নাতি গোপালের নাম অনুসারে রাজগঞ্জের নামকরণ করা হয় "গোপালগঞ্জ"।

ব্রিটিশদের রাজাকার এক জমিদারনীর নাতির নামটি পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক একটি দাবিই হতে পারে! পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের নাম তো হয়েছে বাহাদুর শাহ পার্ক।



তাই ওই জেলার কৃতি সন্তান, ১৫ আগস্ট ১৯২৬ সালে জন্ম নেয়া ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের নামে ওই জেলার নাম "সুকান্তগঞ্জ" রাখা যেতে পারে।

প্রতি বছর ১৫ আগস্টে ধুমধাম করে "সুকান্তগঞ্জ" জেলায় পালন হবে কিশোর-কবির জন্মউৎসব !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।