আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাত পোহালেই নির্বাচন : আর কত জঘন্য ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে হবে বাঙালীকে



আর মাত্র কয়েকঘন্টার নতিদীর্ঘ একটি রাত পেরুলেই বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ হবে । অনুষ্ঠিত হবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন । পূর্বে সংসদীয় গনতন্ত্রের বাংলাদেশে নির্বাচন আসলেই চারদিকে সাঁঝ-সাঁঝ রব পরে যেত । এ যেন ঈদের মত আনন্দ । চায়ের দোকানে আলোচনার ফূলঝুড়ি ফুটত ।

আলোচকের আলোচনার ফাঁকে চা যে কখন ঠান্ডা হয়ে যেত তা তিনি খেয়াল রাখতে পারতেন না । তবুও তার কথা থামতই না । গাঁও-গ্রামের অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিতরা এক একজন মস্তবড় রাজনীতিবিদ বণে যেত । এসকল মানুষগুলো নির্বাচনের আমেজ পুরোপুরি কাজে লাগাতে কয়েকদিন সকল কাজ-কাম থেকে ছুটি নিয়ে শুধু রাজনীতির আলাপ করেই চলত । শহরের কোন লোক যদি গ্রামে আসত তাহলে তাকে কয়েকজন ঘিরে ধরে শহরের অবস্থা জিজ্ঞাসা করত ।

তার কাছ থেকে নতুন কোন খবর পেলে তার সাথে রং-চং মিশিয়ে এলাহী কান্ড ঘটিয়ে বসত । সারা বছর যারা ভূলেও একবার খবর শুনে না বা পত্রিকা পড়েনা তারা হয়ে ওঠত রাজনীতির সবজান্তা । ভোটের দিন সকালে সবাই মিলে দলে দলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট পছন্দের প্রার্থীকে দিয়ে সারাদিন ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে রাতে ভোটের ফলাফল নিয়ে বাড়ী ফিরত । ফলাফলে পছন্দের প্রার্থী হারলেও সে রেশ বেশি সময় থাকত না । ভোটের পরেও কতক দিন নির্বাচনী আবহাওয়া গ্রামময় বিরাজ করত ।

ভোট নিয়ে এতক্ষন যে কথাগুলো বললাম সেগুলো বাংলাদেশের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্তের ঘটনা । দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ন ভিন্ন । দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে আনন্দের লেশটুকুও নাই । সারা দেশব্যাপী কেবলি উৎকন্ঠা আর অনিশ্চয়তা । ভোটের ফলাফল মোটামুটি নিশ্চিত হলেও জয়ী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও আনন্দের ছিটে-ফোঁটাটুকু নেই ।

বরং তারা আছে উৎকন্ঠার চরম পর্যায়ে । নিজেদের নিরাপত্তার সাথে যোগ হয়েছে পরিবারের নিরাপত্তার প্রশ্ন । ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী আসাদুজ্জামান নুর তার এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে প্রতিপক্ষ দলের হামলার শিকার হয়েছেন । গত পাঁচবছর আওয়ামী শাসনামলের প্রতাপশালী নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ নির্বাচন কমিশনের কাছে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আরজী জানিয়েছেন । গত নির্বাচনগুলোতেও আমরা প্রার্থীদের মধ্যে তুমুল লড়াই লক্ষ করেছি ।

তবে সে লড়াই ছিল বুদ্ধির লড়াই , ভোটারদেরকে পক্ষে টানার লড়াই । নবম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দেশ ডিজিটাল হয়েছে । যদিও আওয়ামীলীগ বা তাদের অঙ্গ-সংঘঠনের যোগ্য বিরোধীদল নির্বাচনে নাই তবুও আওয়ামীলীগ প্রার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে শক্তির লড়াই নেমেছে । এটা অর্থ এবং বাহুর শক্তি ।


রাত পোহালেই যে নির্বাচন হবে তার ফলাফল সূর্যালোকেরর চেয়েও স্পষ্ট ।

বাংলাদেশের ৩০০ নির্বাচনী আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বিজয়ী হয়েছে । আওয়ামী সরকার কত জনপ্রিয় সেটা বুঝতে চাইলে বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন পরিস্থিতির উপর চোখ বুলালেই হয় ! বাকী যে ১৪৭ আসনে নির্বাচন হবে তার বেশির ভাগ আসনেই আওয়ামীলীগ বা তাদের শরীকদলের প্রার্থীদের বিপক্ষে লড়াই করছে আওয়ামীলীগ থেকে বের হওয়া যাওয়া নেতারা অথবা এলাকার কম পরিচিত স্বতন্ত্রের ব্যানারের কিছু নেতা । যে সকল আসনে নির্বাচন হবে তার বেশির ভাগ আসনেই রাঘব বোয়াল এবং চুনোপুঁটির মধ্যে লড়াই হলেও চুনোপুঁটিরা বোয়ালদেরকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । ১৪৭ আসনের বেশির ভাগ আসনেই আওয়ামীলীগ প্রাথীরা জয়ী হবে তথাপিও একটি আসনেও যদি আওয়ামীলীগ প্রার্থীরা জয়ী হতে না পারে তবুও আওয়ামীলীগ আগামী পাঁচবছরের জন্য সরকার গঠনকরার পর্যাপ্ত আসন ইতোমধ্যেই অর্জন করেছে । দেশের আভ্যন্তরীন জনগোষ্ঠীর একটি অংশ এ নির্বাচনকে বৈধতা দিলেও দেশের বড় একটি অংশ দশম সংসদ নির্বাচনকে কোন অবস্থাতেই বৈধতা দিতে নারাজ ।

সংলাপ সমঝোতার প্রশ্নে নিজেদের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর দেশের শান্তিকামী জনগন তাকিয়েছিল বিশ্ব নেতৃবৃ্ন্দ এবং উচ্চ সংস্থাগুলোর পানে । দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করে তারা এগিয়েও এসেছিল কিন্তু দুই দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা-নেত্রীদের “শালিসি মানি কিন্তু তালগাছ আমার” মনোভাবের কারনে সবচেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে ।

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ক্ষমতাধর দেশ বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সকল দলের অংশগ্রহনে শান্তিপূর্ণ একটি শূষ্ঠূ নির্বাচন হিসেবে দেখতে চাইলেও কেবলমাত্র সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র ভারত চেয়েছে যে কোন উপায়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসুক । সেমতে যে ধরনের পরামর্শ দেয়া দরকার তার কোন অংশের অপূর্ণতা তারা রাখে নি । ভারতের নিজস্ব গনমাধ্যম এবং তাদের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির কথাবর্তায় সেটা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে ।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের অন্যতম মন্ত্রী সালমান খুরশিদ যুক্তরাষ্টসহ সকল দেশগুলোকে বাংলাদেশের অবস্থাকে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন । প্রশ্ন আসতে পারে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি কি ? আপনাদের অজানা থাকার কথা নয় আর মাত্র মাস তিনেক পরেই ভারতের সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । বিভিন্ন ইস্যুর কারনে ভারতের জনগনের কাছে বর্তমান ক্ষমতাশীল কংগ্রেসের গ্রহনযোগ্যতা একেবারে শূণ্যের কোঠায় । সাম্প্রতিক সময়ের অনেকগুলো অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের ফলাফল অন্তত সেরকমই ইঙ্গিত দেয় । আসন্ন ভারতের নির্বাচনে ব্যাপক গন্ডগোল হওয়ার আশংকা থাকার কারনে কংগ্রেস চাচ্ছে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে ।

তাইতো তারা যে কোন উপায়ে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় বসাতে মরিয়া । কালকের নির্বাচনের পর আগামী তিনমাসের ব্যবধানে যদি ভারতের ক্ষমতার রদবদল হয় তবে আওয়ামীলীগের অবস্থা খুব একটা সুবিধার থাকবে কি ? যে শক্তির জোড়ে আওয়ামী সমর্থকরা দেশের নিরাপরাধ মানুষদেরকে হত্যা এবং নির্যাতন চালাচ্ছে সে শক্তির পতন ঘটলে আওয়ামীলীগের অবস্থা বর্তমান বিরোধীদলের মত হবে সেটা মনে রাখা দরকার । “ ছাগল যে খুঁটির জোড়ে লাফায় সে খুঁটি না থাকলে ছাগলের অস্তিত্ব থাকে না” সেটা জীবনে চলার পথে সর্বস্তরে মনে রাখা আবশ্যক ।

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এতদিন ভারতের বর্তমান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপি কোন বিবৃতি না দিলেও গতকাল তাদের অবস্থা স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করেছে । বিজেপী জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত তারাও বাংলাদেশে একটি সূষ্ঠু গনতান্ত্রিক নির্বাচন দেখতে চায় ।

কংগ্রেস এবং আওয়ামীলীগের অবস্থানের সমালোচনা করে বিজেপীর অন্যতম শীর্ষ নেতা সুব্রানিয়াম বলেন-“কেবল মাত্র কংগ্রেসের মদদে আওয়ামীলীগ এমন নজিরবিহীন নির্বাচনের সাহস দেখিয়েছে” । বাংলাদেশের ভিতরেও নির্বাচন বিরোধীদের ক্ষোভ ধীরে-ধীরে দানা বেঁধে দাবানল তৈরির দ্বারপ্রান্ত্রে পৌঁছেছে । যে কোন সময় এর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে । বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় কিছু মিডিয়া বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে বিশ্লেষণ করছে । তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের যে অবস্থা তাতে যে কোন সময় গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে ।



অবিলম্বে আসন্ন নির্বাচন স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী সংঘঠন ও বুদ্ধিজীবীরা । সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে “৫ই জানুয়ারী দশম জাতীয় নির্বাচন তামাশার এবং অগ্রহনযোগ্য”। সুজন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনীত ৫৪০ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২ জন প্রার্থী ৩০২ ধারার খুনের আসামী । ৬০ জন প্রার্থী আছেন যাদের বার্ষিক আয় কোটি টাকার উপরে । ১০৩ জন প্রার্থী আছেন যারা পাঁচ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক ।

সুতরাং অবিলম্বে এ নির্বাচন স্থগিত করে গ্রহনযোগ্য সমাধান খোঁজা উচিত । বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ জানান “শেখ হাসিনা যদি ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন স্থগিত করে সংলাপ ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয় তাহলে তিনি রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকবেন অন্যথায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকবে না”। গতকাল সাংবাদিকদের ১০০১ সদস্যের একটি বড় অংশ সরকারকে আল্টিমেটামি দিয়েছে । সেখানে বলা হয়েছে “৫ই জানুয়ারীর অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচন স্থগিত করে সবার কাছে গ্রহনযোগ্য একটি নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন”। ১৫৩ টি আসনে ভোট গ্রহন ছাড়াই বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাকি ১৪৭ আসনেও এরকম প্রার্থীবিহীন লোক দেখানো নির্বাচন হচ্ছে যা কখনও বৈধতার দাবি করতে পারে না ।



তামাশার নির্বাচনের সাথে যোগ হচ্ছে আরও অনেক তামাশা । জাতি তামাশার আনন্দে হাসবে না কাঁদবে তার দিশা হারিয়ে ফেলেছে । জয় নিশ্চিত জেনেও যদি কোন দল ম্যাচ ফিক্সিং করে তখন সে ব্যাপারে বলার কি থাকে । আওয়ামীলীগের জয় নিশ্চিত জেনেও কিছু প্রার্থীরা ভোট কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির ঘোষণা দিয়েছে । বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় অনলাইন পোট্রাল (zoombangla) প্রকাশ করেছে তেমনি এক খবর ।

পোর্টালটি প্রকাশ করে “যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের ভোট কেন্দ্র দখল করে বেলা ১১.৫৯ মিনিটের মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনন্দ মিছিল করতে নেতা কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যশোর-১ (শার্শা) আসনের সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন । গত ৩০ শে ডিসেম্বর নির্বাচনী এক মত বিনিময় সভায় তিনি কর্মীদের এ নির্দেশ দেন” ।

আওয়ামীলীগ সরকার ধর্মের প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল সেটা গত কয়েকটি ঘটনায় ধর্মীয় নেতাদের সাথেকৃত আচরনই প্রমান করেছে ! তারপরেও দশম জাতীয় সংসদকে কেন্দ্র করে দেয়া নামমাত্র নির্বাচনী ইশতেহারে সেটা আবারও উল্লেখ করেছে । সেখানে বলা হয়েছে কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন করা হবে না । গতকাল রাত্রে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন ।

তিনি যখন ভাষণ আরম্ভ করেন তখন বাংলাদেশ টেলিভিশনে এশার নামাজের আযান চলছিল । এশার আযানে বড়জোড় ২-৩ মিনিট লাগে । আর কোন বক্তার ভাষণের শুরুতে ধন্যবাদ প্রস্তাবেই ৫-৭ মিনিট কেটে যায় । আযানের শেষেই শেখ হাসিনার ভাষণ সম্প্রচার করা যেত কিন্তু আযান বন্ধ করেই শেখ হাসিনার ভাষন সম্প্রচার শুরু করা হয়েছে । এই তাহলে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ! (সূত্র: ফেসবুক)।



দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে শুরু হয়েছে চরম অরাজকতা । গত দুই রাতে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক ভোটকেন্দ্র । বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে সাতক্ষীরা এবং ঢাকাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার গুলশানস্থ বাসায় অবরুদ্ধ, গ্রেফতার নাকি গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে তা বি এন পির কাছে স্পষ্ট নয় । গতকাল বিকেলে বি এন পির সংসদীয় দল মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনিও সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন ।

গত এক সপ্তাহধরে খালেদা জিয়ার বাসার সামনে বালি ভর্তি ট্রাক রাখা হলেও গতকাল সন্ধ্যায় যোগ হেয়েছে জলকামান । বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাথে বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিক সহ কাউকেই সাক্ষাৎ করতে দিচ্ছে না আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী । গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ইকোনোমিস্টের সাংবাদিক খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে গেলে তার বাসার সামনে নিয়োজিত ৭ প্লাটুন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে ফিরিয়ে দেন । আসন্ন নির্বাচনকে বন্ধ করার দাবিতে ১৮ দল আহুত টানা অবরোধের সাথে রোববার সকাল থেকে যোগ হয়েছে টানা ৪৮ ঘন্টার হরতাল । আসন্ন নির্বাচনকে বিবিসি বিতর্কিত হিসেবে উল্লেখ করলেও সবচেয়ে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্টের সিনেটের সদস্যরা ।

তবুও সর্বদলীয় সরকার তাদের পূর্ব অবস্থানে অনড় । তারা যে কোন মূল্যে নির্বাচন উঠিয়ে নিবে । সর্বলীয় সরকার গঠন করার পর থেকে নির্বাচনের দুই দিন আগ পর্যন্ত নির্বাচনী সংহিসতায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে ১৪৯ জন মানুষ ।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটারদের কত স্বপ্ন থাকে বিশেষ করে নতুন ভোটারদের উচ্ছলতার কাছে সকল আনন্দ হার মেনে যায় । তারা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করবে , পছন্দের প্রার্থীকে বাছাই করবে ।

কিন্তু সকল আশার সমাধি রচনা করে শুরু হল মহা নাটক । শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ভোটারদের মধ্য থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি ভোটার ভোট প্রদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । গনতন্ত্রের মাথায় আঘাত করে সাড়ে চার কোটির বেশি ভোটার তাদের গনতান্ত্রিক অধিকার ভোট দিতে পারছেনা । গতকাল এক বন্ধুর সাথে ফেসবুক চ্যাটিংয়ের সময় তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ভোটের ব্যাপারে তার অবস্থান কি । সে যা বলল সেটা হুবুহু তুলে ধরছি “ভোট কিভাবে দেয় ? সীল কিভাবে মারে ? ব্যালট পেপার কোথায় রাখে ? খুব আগ্রহ ছিল জানার ।

বড় শখ ছিলো ভোট দেবার । অদম্য ইচ্ছা ছিল ব্যালটের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে বাছাই করার । কিন্তু আমার আগ্রহ, আমার শখ, আমার ইচ্ছা সব এক আওয়ামীলীগের ইচ্ছার নিচে চাপা পড়ে গেলো । একজন তরুন তুর্কী ভোটার হিসেবে এসব অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের আগেই আমি জানলাম-আমাকে অভিজ্ঞতার নকল মালা পড়িয়ে দেয়ার আয়োজন চলছে । আমি তাদের এ নকল আয়োজন ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছি ।

মিছে গোলরক্ষক সেজে তাদের ফাঁকা পোষ্টে করা গোলের বৈধতা দেয়ার আমি কে ? ওরা আমার স্বপ্ন কেড়ে নিল । স্বভাবতই আমি ক্ষুদ্ধ আর হতাশ । এ হতাশা আমার একার নয় , কোটি কোটি তরুনের । যারা চাতক পাখির মত অপেক্ষায় ছিল প্রথমবারের মত তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে বলে । সুষ্ঠূ গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের আয়োজনে আমাদের এ হতাশা দূর হোক ।

তরুনদের লালিত স্বপ্ন পূরণ হোক”। সে বন্ধুকে স্বান্তনা দেয়ার মত ভাষা আমার ছিল না । যখন মনে হল স্বান্তনা দেয়া দরকার তখন স্মরণহল আমার ভোটাধিকারের অবস্থা । আমার স্বপ্ন আর তরুনের স্বপ্ন তো একই রকম ছিল । অভাগা অভাগারে আর কি স্বান্তনা দিতে পারে ।



স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বাঙালীদেরকে অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে হয়েছে । এসব ইতিহাসের মধ্যে গর্বের ইতিহাসের চেয়ে লজ্জা, ঘৃণা, ক্ষোভ বা বেদনার ইতিহাসও কম নয় । সেরকম আরেকটি হতাশার ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে হবে আগামী ৫ই জানুয়ারী ২০১৪ । গনতন্ত্রের মূল মন্ত্রে জনগনকে সকল ক্ষমতার উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন । এদেশে সকল ক্ষমতা বহন করে শাসক গোষ্ঠী, যাতে অন্য কারো ভাগ বসানোর কোন অধিকার নাই ।

আগের নির্বাচনগুলোর সময়টাতে ক্ষনিকের জন্য হলেও জনগনের কাছে কিছু ক্ষমতা ছিল কিন্তু দশম জাতীয় নির্বাচনে সেটাও নেই । এখানে সবর্দলীয় সরকারের মোড়কে আওয়ামীলীগই সর্বেসর্বা । তাইতো চুপচাপ বসে থেকে আরেকটি জঘন্যতম ইতিহাসের স্বাক্ষী হওয়াই উত্তম, অতি উত্তম, সর্বোত্তম ।

লেখক : রাজু আহমেদ । শিক্ষার্থী ও কলামিষ্ট ।


সরকারী বি এম কলেজ, বরিশাল ।




অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।