আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“জয় বাংলা”: আসল নকল চিনে নিন

আমাদের স্বাধীনতার কাব্যময় ইতিহাসের মহাকবির নাম শেখ মুজিব; ধ্রুপদী সেই মহাকাব্যের শিরোনাম “জয় বাংলা”।
“জয় বাংলা”— মধুরতম সেই স্লোগানের নাম। ছোট্ট এই স্লোগানের অপরিসীম শক্তিতে এক হয়েছিলো বাংলার সকল মুক্তিপ্রাণ মানুষ।
“জয় বাংলা”— বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো অসাম্প্রদায়িক স্লোগানের নাম। নাম-ধাম-রং-সাকিন-জাত-ধর্ম-লিঙ্গ-বয়ষ সব কিছু ছাপিয়ে শৈল্পিক দ্যোতনায় বাঙ্ময় হয়ে উঠেছিলো জয় বাংলা।

এমন সহজিয়া, এমন মাটি-সংলগ্ন, এমন মায়া-জাগানিয়া, এমনই ঘোরলাগা সেই শব্দযুগল।
শুধু কি তাই? এই শব্দযুগল কি কেবলই স্লোগান? না তো! এ তো আমাদের মহত্তম সংগীতের নাম— মৃতপ্রায় বাঙ্গালীও জেগে ওঠে জয় বাংলায়
শুধু কি সংগীত? তাও নয়। সবকিছু ছাপিয়ে জয় বাংলা আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র
কিন্তু এবারে কিছুটা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ।

কারণটা বলবার আগে খানিকটা মুখবন্ধ দুস্তর। জয় বাংলাই যে মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র স্লোগান তথা পরিচয়পত্র হয়ে উঠেছিলো সে তো আমরা সবাই জানি। রাজাকাররাও যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে উঠতো, সেটা আমাদের সবার জানা নাও থাকতে পারে। তবে কি তারা্ও জয় বাংলার লোক?
এর চেয়ে কদাকার কোনো প্রশ্ন হতে পারে না— প্রশ্নটাও কুৎসিত, আর উত্তরও তো জানা। জয় বাংলার লোকেদের সন্ধানেই সেই রাজাকারের দল জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে উঠতো।

অনেকটা ডাহুক ধরার জন্য শিকারী যেমন ডাহুকের ডাক নকল করে, তেমন। আশেপাশে লুকিয়ে থাকা জয় বাংলার লোক কতবার সেই স্লোগান শুনে নিজেদের লোক ভেবে বুক মেলাতে যেতো; অচিরেই ঝাঁঝরা হতো বিশ্বাসের বুক।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আমরা যখন সোচ্চার হলাম, শাহবাগ যখন জেগে উঠলো, আমাদের অবধারিত স্লোগান হয়ে উঠলো— জয় বাংলা। এই স্লোগান কত অজানা মানুষকে মুহূর্তেই নিকটতম বন্ধু বানিয়েছে, কত মুখোশধারী বন্ধুর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে। কষ্ট যে হয়নি এই বিচ্ছেদে তা নয়, কিন্তু সেটা বিচ্ছেদের জন্য নয়, বরং একটা মুখোশধারী শয়তানকে এতোকাল বন্ধু ভেবে এসেছি বলে।


আঁতাত-তত্ত্বের মুখপাত্ররা, যারা প্রথমে বলেছিলেন বিচারই হবে না, পরে বলেছিলেন বিচার হলেও গোপন আঁতাত করে তাদেরকে ফাঁসির রায় দেয়া হবে না, আরো পরে বলেছিলেন ফাঁসির আদেশ দেয়া হলেও ফাঁসি কার্যকর হবে না, আরো আরো পরে হঠাৎই বলে উঠেছিলেন, জয় বাংলা। আমরা হতবাক হবার মতো মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত হলাম।
ভাবলাম, বুঝিবা এদের বোধোদয় হলো। ভুল সবই ভুল। অচিরেই তারা নিজেরাই প্রকাশ্য মাধ্যমে স্বীকার গেলেন, জয় বাংলা তারা বলেছিলেন পরিস্থিতির শিকার হয়ে।

একজন এ্ও বললেন, তিনি জয় বাংলা বলার ‘চর্চা’ করছেন, কারণ তাঁর ধারণা আরো প্রায় পঞ্চাশ বছর আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকবে; পিঠ তো বাঁচাইতে হবে। হুজুগে জয় বাংলা বলে চিৎকার করে ওঠা একজন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুৎসিত একটা পোস্ট দিলেন এই তো ক’দিন হলো। তিনি আবার বিজ্ঞাপনও দিলেন এই বলে যে, তিনি মুজিববিদ্বেষী নন! আরেকজন জয় বাংলা’র একমাত্র পরিবেশক হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বাংলার ইতিহাসকে তেঁতুলময় করে চলেছেন। এককালে জয় বাংলার স্লোগান দেয়া গামছা তো কাদের যেন হয়ে গেলো! আরো আছে আরো আরো কত!
একারণেই লেখা:
জয় বাংলা বলার মানেই স্বাধীনতার পক্ষ নয়
জয় বাংলা বলছো বলেই তোমার আমার সখ্য নয়।
এ-কিন্তু ভয়ের নয়, শংকারও নয়; কেবল সতর্ক থাকার প্রস্তুতি।

জয় বাংলা আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বলেই তো এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী কতজনাই তো মনেপ্রাণে পাকি। আর, নকল তো ভালো জিনিসেরই হয়। জয় বাংলা।


সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।