আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন্নির গল্প

আমি পথ মঞ্জরী ফুটেছি আঁধার রাতে

তিন্নির জন্মদিনে মা জামা গিফ্‌ট করেছেন। জামাটা তিন্নির এত পছন্দ হোলো! মামা দিয়েছেন রং এর বক্স। তিন্নির বাবা নেই। তিন্নির যখন তিন বছর বয়স তখন বাবা লন্ডনী কন্যা বিয়ে করে চলে গেছেন লন্ডনে। তাঁদের আর কোন খোঁজ নেন না।

বাবা কখনই তিন্নিকে বেশী প্রশ্রয় দিতেন না। কিন্তু তিন্নি বাবাকে দারুন ভালবাসতো। এই তিন বছরে তিন্নি বুঝে গেছে তার এই ভালবাসার মানুষটি অনেক দূরে চলে গেছে। তিন্নির মাঝে মাঝে মনে হয় বাবার হাসিটা ঠিক যেন আগের মত চোখে ভাসে না। একটা কুয়াশা যেন বাবার স্মৃতিগুলোকে অস্পষ্ট করে দিচ্ছে।

তিন্নির অসাধারণ একটা গুন ছিল। সে স্বছন্দে যা চাইত তাই এঁকে ফেলতে পারত! সে তার খাতা ভরে অগি, ককরোচ এদের ছবি এত সুন্দর করে এঁকে রেখেছে যে মামা সত্যি সত্যি ভেবেছিলেন এটা ছাপানো ছবির বই আর তাই তিনি তিন্নিকে রং এর বক্স কিনে দিয়ছেন এই ছবিগুলো রং করার জন্য। মা ছবির এলবাম থেকে তিন্নির বাবার ছবিগুলো আস্তে আস্তে সরিয়ে ফেলেছেন। একদিন তিন্নি বলল মা বাবার বড় ছবিটা খুঁজে দাও না, আমি বাবার চেহারা ভুলে যাচ্ছি! মা বললেন ছবিগুলো হারিয়ে গেছে। তিন্নি বাবার ছবি আঁকার চেষ্টা শুরু করলো।

কিন্তু ছবিগুলো বাবার চেহারা ঠিক ফুটিয়ে তুলতে পারছিল না। অবয়ব হচ্ছে, কিন্তু তার মধ্যেও ছবিতে এক দূর্বোধ্য অস্পষ্টতা! তার এই ছবিগুলো দেখে তার মামা চিত্র প্রতিযোগীতায় দিতে চাইলে মা রাজী হলেন। সাড়ে ছয় বছরের মেয়ের ছবি যখন প্রথিতযষা শিল্পীদের সাথে পাল্লা দিয়ে দ্বিতীয় পুরষ্কার ছিনিয়ে নিল তখন চারিদিকে হৈ চৈ পড়ে গেছে। তিন্নির ছবি পত্রিকায় ছাপা হল, টিভিতে বিভিন্ন চ্যানেলে নিউজ হল। ছবিগুলো চড়া মূল্যে বিক্রী হয়ে গেল।

তিন বছর পরের কথা। তিন্নির বাবা দেশে ফিরেছেন। আজ তিনি স্বর্বশান্ত! লন্ডনী কন্যার সাথেও তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। হঠাৎই এক বিকেলে তিন্নির বাবা তিন্নিদের বাসায় এলেন। তিন্নি নিজেই দরজা খুলে দিয়েছে।

তিন্নি বাবাকে দেখে চীৎকার করে ডেকে উঠতে গেল, কিন্তু তার গলায় জোর এলনা। সে ছুটে জড়িয়ে ধরতে চাইল, পা নড়লোনা। এরপর কোন রকমে বল্ল আপনি বসুন! তারপর ছুটে নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় পড়ে কাঁদতে লাগলো। মা বাবাকে কী বলেছিলেন তিন্নি যানে না। কিন্তু এরপর থেকে তিন্নি আর তার বাবাকে দেখেনি।

বাবা মেয়ের আঁকা ছবিগুলো মেয়েকে ফেরত দিয়েছিল, কিন্তু মা সেই ছবি তিন্নিকে আর দেখান নি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।