আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্রুত সংলাপ ও নির্বাচন চায় আন্তর্জাতিক মহ

সর্বশেষ নির্বাচনে জনসম্পৃক্ততা কম থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জোট ও বিদেশি রাষ্ট্রগুলো। তারা এখন দ্রুত সংলাপের মাধ্যমে আবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাইছে। রাজনৈতিক সংঘাত বন্ধ করতে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর কার্যকর সংলাপের কোনো বিকল্প দেখছে না তারা। তাই সরকারের কাছেই তাদের আহ্বান, যত দ্রুত সম্ভব যেন জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডার বিবৃতিতে এ অভিন্ন অবস্থানের কথাই উঠে এসেছে। ভারতও ইতোমধ্যে এ নির্বাচনকে নিছক সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পূরণের অংশ হিসেবেই অভিহিত করেছে।

নির্বাচনের পর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন নিউইয়র্ক থেকে গতকাল এক বিবৃতিতে তার হতাশার কথা জানিয়েছেন। ঢাকার জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদাশিমো একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এর আগে লন্ডন থেকে কমনওয়েলথের মহাসচিব কমলেশশর্মা, ব্রিটিশ সিনিয়র পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদা ওয়ার্সি, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মেরি হার্ফ নির্বাচনে জনসম্পৃক্ততা না থাকায় হতাশার কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বেয়ার্ড উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন তার দেশের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই সংঘাতের নিন্দা জানিয়েছেন তীব্রভাবে। গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। কিন্তু দুই দিন ধরেই ঢাকায় দায়িত্বরত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র জানিয়েছেন, মহাসচিব বান কি-মুন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে রাজনৈতিক মেরুকরণ ও স্বল্প অংশগ্রহণমূলক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু এ সাধারণ নির্বাচনে প্রাণহানি ও সহিংস ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি সব পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। জনসাধারণ যেখানে সমবেত হয়ে ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের মত প্রকাশের অধিকার চর্চা করতে পারেন, সর্বাগ্রে সে ধরনের শান্তিপূর্ণ ও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন তিনি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী ফলাফল পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের মাধ্যমে যে ধরনের মতৈক্য বা সমঝোতায় উপনীত হওয়া উচিত ছিল, তা না হওয়ায় হতাশ ও মর্মাহত বান কি-মুন বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অবিলম্বে প্রধান দলগুলোকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও অর্থবহ সংলাপ শুরুর তাগিদ দিয়েছেন। বলেছেন, অংশগ্রহণ, অহিংসা, সমঝোতা ও সংলাপের ভিত্তিতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন দিয়ে যাবে জাতিসংঘ।

একসময়ে ব্রিটিশ উপনিবেশে থাকা ৫৩ দেশের জোট কমনওয়েলথের মহাসচিব কমলেশ শর্মাও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নিজের হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, কমনওয়েলথ সনদ অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রত্যেক ব্যক্তির অংশগ্রহণের অধিকারসহ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার বিষয়টিতে সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো ও সুশীল সমাজের দায়িত্ব রয়েছে। সে কারণে দ্রুত অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণর্ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সামনে এগোনোর পথ খোঁজার জন্য আলোচনার ধারায় অগ্রসর হওয়া বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে জনগণের মতামত পুরোপুরি প্রতিফলিত হতে পারে। নির্বাচনের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ-মুখপাত্র মেরি হার্ফ ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে দেওয়া বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা বাংলাদেশ সরকার ও বিরোধী দলকে অবিলম্বে সংলাপে বসার জন্য উৎসাহিত করছি, যার মাধ্যমে তারা যত শীঘ্র সম্ভব একটি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুঁজে বের করবে_ যেটি হবে অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য এবং যা বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। সেই সঙ্গে সব নাগরিক যাতে স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করতে পারে সে জন্য রাজনৈতিক পরিসর দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। শান্তিপূর্ণভাবে এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এই পরিসর ব্যবহার করার জন্য আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানাই। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ার্সি তার বিবৃতিতে বলেছেন, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতাকে প্রাধান্য দিয়ে ভয় ও হয়রানির বাইরে ভবিষ্যতে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বেয়ার্ড তার বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশে অচিরেই একটি নতুন নির্বাচন আয়োজন করতে রাজনৈতিক দলগুলো একটি সমঝোতায় পেঁৗছবে, যা হবে আসলেই অংশগ্রহণমূলক এবং বাংলাদেশের মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে। জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদাশিমো বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছা অনুসারে ভোট দিয়ে রাজনৈতিক পছন্দ সৃষ্টির সুযোগ তৈরির জন্য 'সিরিয়াস' উদ্যোগ নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানাচ্ছে জাপান।

কড়া অবস্থানে জাপান : জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদাশিমো কূটনৈতিক ভাষায় তার দেশের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। সর্বোচ্চ কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে থেকেই প্রতিটি আলোচিত বিষয় বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমবারের মতো 'ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং' (নির্বাচনে কারসাজি) শব্দটি তুলেছে জাপান। বলেছে, এদেশের মানুষ যে ভোট দিতে চায়, জাপান সেটা জানে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছা অনুসারে ভোট দিয়ে রাজনৈতিক পছন্দ সৃষ্টির সুযোগ তৈরির জন্য 'সিরিয়াস' উদ্যোগ রাজনৈতিক দলগুলো নেবে বলে জাপান বিশ্বাস করে। রাষ্ট্রদূত সহিংসতার বিষয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছেন বিবৃতির শুরুতেই। বলেছেন, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, গণগ্রেফতার ও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংসহ সব ধরনের সহিংসতার জন্য উদ্বিগ্ন ও নিন্দা জানাচ্ছে। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, জাপান এ বিষয়ে সচেতন যে, বাংলাদেশের মানুষের নিজের পছন্দে ভোট দেওয়ার গভীর আগ্রহ আছে।

ঢাকায় কূটনীতিকদের তৎপরতা : ঢাকায় কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে একমাত্র বিবৃতি দিয়েছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত। অন্যদের সব বিবৃতি এসেছে দেশ ও জোটগুলোর রাজধানী থেকে। তবে ঢাকার কূটনীতিকরা নিজেদের মধ্যে দেখা ও আলোচনা করছেন। জানা গেছে, নির্বাচনের পর দিন সোমবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন ইউরোপের আট দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান উইলিয়াম হানার বাসায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইইউ সদস্যদের অন্য দেশগুলোর মিশনপ্রধানরা। ওই বৈঠক শেষ হওয়ার পরই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খালেদা জিয়?ার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন জার্মান রাষ্ট্রদূত। এ সময় বিএনপি নেতা ড. আবদুল মঈন খানের বাসায় গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতরা। বিকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করেন মার্কিন সহযোগী সংস্থা ইউএসএইড ও বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি। গতকাল সন্ধ্যার পরে কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রডেন গিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.