আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থ পাচার হচ্ছে, সন্দেহ গবেষকদের

হঠাৎ করে শিল্প স্থাপনের জন্য ‘সবচেয়ে’ প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রপাতি আমদানি বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে এই সন্দেহ জেগেছে দুই অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ও জায়েদ বখতের মনে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ক্যাপিটাল মেশিনারি (মূলধনী যন্ত্রপাতি) আমদানির জন্য এলসি খোলার (ঋণপত্র) পরিমাণ  বেড়েছে ২৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।

এলসি নিস্পত্তির পরমিাণ বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।

গত বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছিল মাত্র ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

নিস্পত্তির পরিমাণ কমেছিল ২৮ শতাংশের বেশি।

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এই তথ্য পর‌্যালোচনা করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের বর্তমান এই পরিস্থিতিতে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি বাড়াকে আমি সন্দেহের চোখে দেখছি। আমার মনে হচ্ছে- ওভার ইনভয়েসের (পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি দাম দেখিয়ে)যন্ত্রপাতি আমদানির নামে টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

“বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর খতিয়ে দেখা উচিৎ বলে আমি মনে করি। ”

জায়েদ বখত বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। হরতাল-অবরোধসহ ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে শিল্প উদ্যোক্তারা উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

কোন বিনিয়োগ করছেন না। তার প্রমাণ ব্যাংকগুলোতে পড়ে থাকা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার অলস অর্থ (বিনিয়োগ হয় না এমন টাকা) পড়ে আছে।

“কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে-তা নিয়েও আতংকিত তারা। এ অবস্থায় ক্যাপিটাল মেশিনারির এলসি বাড়া সত্যিই আমার কাছে সন্দেহ লাগছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আমি বিষয়টিকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ করছি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি বাড়ার কোন কারণ নেই। যে কোন পদ্ধতিতেই হোক না কেনো-যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালে টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। ”

তিনি বলেন, “ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির ডিউটি খুবই কম। অধিকাংশের শুল্ক শূণ্য। কোনটির ৩ শতাংশ; এর বেশি নয়।

সে কারণে এই পণ্য আমদানির এলসি খুলতে শুল্ক বাবদ খুব একটা খরচ হয় না।

“এই সুযোগে ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে ক্যাপিটাল মেশিনারির এলসি খোলার মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করা হচ্ছে।

“অনেক সময় ক্যাপিটাল মেশিনারির নামে শূণ্য কন্টেইনারও দেশে আসছে। বন্দরে মাঝেমধ্যে এ ধরনের কন্টইনার ধরা পড়ছে।

“আবার কখনও কখনও ক্যাপিটাল মেশিনারির এলসি খুলে কনজ্যুমার প্রডাক্ট আমদানি করা হচ্ছে।

“এভাবে নানা প্রক্রিয়ায় ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির নামে অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে,” বলেন আজিজুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য মোট ১১৭ কোটি ৮২ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। নিস্পত্তি হয়েছে ৯৪ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের।

গত বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৯২ কোটি ৯১ লাখ ডলার। নিস্পত্তি হয়েছিল ৮০ কোটি ৩১ লাখ ডলারের।

তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর সময়ে মোট এক হাজার ৫৪৫ কোটি ৫৫ লাখ (১৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে।

যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।

আমদানি নিস্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৯ শতাংশ।

এ সময়ে চাল আমদানি এলসি বেড়েছে ৭৩০ শতাংশ। গম ৩৩ শতাংশ।

পেঁয়াজের এলসি বেড়েছে ১০৩ শতাংশ।

জ্বালানি তেল আমদানির এলসি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।