আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ শুক্রবার, জুমআর দিন, আজকের দিনের আমল

بسم الله الرحمن الرحيم -الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على خاتم الأنبياء والمرسلين، وعلى آله وصحبه أجمعين، وعلى من تبعهم بإحسان إلى يوم الدين

عن سلمان الفارسي قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم : لا يغتسل رجل يوم الجمعة ويتطَهَّر ما استطاع من طُهر ويَدَّهن من دُهنِهأو يمس من طيب بيته، ثم يخرج فلا يُفَرِّق بين اثنين، ثم يُصَلِّي ما كُتِب له، ثم يُنْصِت إذا تكلَّم الإمام، إلا غُفِر له ما بينه وبينالجمعة الأخرى.
সালমান ফারেসী রাহ. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কোনো পুরুষ যখন জুমার দিন গোসল করে, সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে বা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে, এরপর (জুমার জন্য) বের হয় এবং (বসার জন্য) দুই জনকে আলাদা করে না, এরপর তাওফীক মতো নামায পড়ে এবং ইমাম যখন কথা বলে তখন চুপ থাকে, তাহলে অন্য জুমা পর্যন্ত তার (গুনাহ) মাফ করা হয়। - সহীহ বুখারী, হাদীস : ৮৮৩; মুসনাদে আহমদ ৮/৪৩ (২৩৭১০); সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ২৭৭৬

কেউ কেউ বলেন, জুমার আগে নামায তো আছে, কিন্তু তা নফল নামায, যত রাকাত ইচ্ছা পড়বে। তাদের দাবি, ‘‘জুমার আগে ‘সুন্নতে রাতিবাহ’ (সব সময় আদায় করার মতো সুন্নত) বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা নেই। ’’

এঁদের সংশয়ের সূত্র বোধহয় এইখানে যে, উপরোক্ত হাদীসসমূহে তো রাকাত-সংখ্যা নির্ধারণ ছাড়াই নামায পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে, যার দ্বারা বোঝা যায়, এটি নফল নামায। কিন্তু তাঁরা যদি এ বিষয়ে অন্যান্য হাদীস ও আছার সামনে রাখতেন তাহলে পরিষ্কার হয়ে যেত যে, জুমার আগের নামায দুই প্রকারের : এক. নফল, যার যত রাকাত ইচ্ছা পড়তে পারে।

দুই. সুন্নতে রাতিবা, যার রাকাত-সংখ্যাও নির্ধারিত এবং সে বিষয়ে তাকীদও আছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও তা আদায় করা প্রমাণিত।

খাইরুল কুরূন থেকে মুসলমানদের এ আমল চলে আসছে যে, তাঁরা জুমার আগের নফল নামায ‘যাওয়ালে শামস’ বা সূর্য ঢলে যাওয়ার আগেও পড়তেন, আবার পরেও পড়তেন, কিন্তু এই চার রাকাত পড়তেন সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে। আর এরই নাম ‘কাবলাল জুমা’ বা ‘জুমার আগের সুন্নত’।

এ বিষয়ে হাদীস ও আছার লক্ষ করুন।



প্রথমে আছার :

১. জাবালা ইবনে সুহাইম রাহ. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘তিনি জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন। মাঝে সালাম ফেরাতেন না। ’

عن جَبَلة بن سُحَيْم، عن عبد الله بن عمر أنه كان يصلي قبل الجمعة أربعا لا يفصل بينهن بسلام، ثم بعد الجمعة ركعتين ثم أربعا.

-শরহু মাআনিল আছার, তহাবী পৃ. ১৬৪-১৬৫

আল্লামা নীমাভী রাহ. ‘‘আছারুস সুনান’’ পৃ. ৩০২-এ এর সনদকে সহীহ বলেছেন। ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. ‘‘ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী’’ গ্রন্থে (৫/৫৩৯) একে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. জুমার আগে দীর্ঘসময় নামায পড়তেন।

কিন্তু উপরের বর্ণনায় চার রাকাতকে আলাদা করে এজন্যই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তা সুন্নতে রাতিবা।

নাফে রাহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. জুমার আগে দীর্ঘ সময় নামায পড়তেন (يطيلالصلاة قبل الجمعة) আর জুমার পরে ঘরে গিয়ে দুই রাকাত পড়তেন। আর বলতেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১১২৮, কিতাবুল জুমুআ)

ইমাম ইবনে রজব রাহ. সহীহ বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থে এই হাদীসের আলোচনায় লেখেন-

وظاهر هذا يدل على رفع جميع ذلك إلى النبي صلى الله عليه وسلم : صلاته قبل الجمعة وبعدها في بيته، فإن اسم الإشارة يتناول كلما قبله مما قرب وبعد، صرح به غير واحد من الفقهاء والأصوليين.وهذا فيما وضع للإشارة إلى البعيد أظهر، مثل لفظة ذلك، فإن تخصيص القريب بها دون البعيد يخالف وضعها لغة.

আহলে ইলম বুঝতে পারছেন, এখানে ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. ঐ ব্যক্তিদের বক্তব্য খন্ডন করছেন যারা বলেছেন যে, সুনানে আবু দাউদের উপরোক্ত হাদীস দ্বারা শুধু ‘বা’দাল জুমা’ (জুমার পরের নামায) মারফূ হওয়া প্রমাণিত হয়, কাবলাল জুমা নয়। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা ‘যাদুল মাআদ’ ও ‘ফতহুল বারী, ইবনে হাজার’-এর আলোচনার দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে যায়।



যাক, এ তো ছিল একটি প্রাসঙ্গিক কথা। আমি কাবলাল জুমা চার রাকাত সুন্নত সম্পর্কে আছার উল্লেখ করছিলাম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর আছর উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় আছর এই-

২. আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, ‘তিনি জুমার দিন নিজ ঘরে চার রাকাত পড়তেন। এরপর মসজিদে আসতেন এবং জুমার আগে আর কোনো নামায পড়তেন না, জুমার পরেও না।



عن ابن عباس رضي الله عنهما أنه كان يصلي يوم الجمعة في بيته أربع ركعات، ثم يأتي المسجد فلا يصلي قبلها ولا بعدها.

এই আছরটি মুহাদ্দিস হার্ব ইবনে ইসমাঈল আলকিরমানী (২৮০হি.) তাঁর কিতাবে সনদসহ বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনে রজব রাহ. বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থে (৫/৫৮০) তা দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

উল্লেখ্য, এ বর্ণনায় জুমার পরে কোনো নামায না-পড়ার অর্থ হবে মসজিদে না পড়া।

৩. সাফিয়া রাহ. বলেন, তিনি (উম্মুল মুমিনীন) সফিয়্যাহ রা.কে দেখেছেন, জুমার জন্য ইমাম আসার আগে চার রাকাত পড়েছেন। এরপর ইমামের সাথে দুই রাকাত জুমা আদায় করেছেন।



عن صافية قالت : رأيت صفية بنت حُيَيّ رضي الله عنها : صلَّت أربع ركعات قبل خروج الإمام للجمعة، ثم صلت الجمعة مع الإمامركعتين.

তবাকাতে ইবনে সা’দ ; নসবুর রায়াহ ২/২০৭; ফাতহুল বারী, ইবনে রজব ৫/৫৩৯

নারীদের উপর জুমা ফরয নয়, তাঁরা ঘরে যোহর পড়ে থাকেন। তবে কখনো যদি জুমা পড়েন তবে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। ঐ অবস্থায়ও তাদের জুমার আগে চার রাকাত পড়া উচিত, যেমনটা সাফিয়্যাহ রা.-এর আমল থেকে জানা গেল।

৪. আবু ওবায়দা রাহ. বর্ণনা করেন, (আববাজান) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন।

عن أبي عُبَيْدة، عن عبد الله قال : كان يصلي قبل الجمعة أربعا.

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা খন্ড ৪, পৃ. ১১৪ (৫৪০২)

তাবেয়ী ক্বাতাদা রাহ.ও একথাই বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন, জুমার পরেও চার রাকাত পড়তেন।

أن ابن مسعود كان يصلي قبل الجمعة أربع ركعات وبعدها أربع ركعات.

-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক খন্ড ৩, পৃ. ২৪৭ (৫৫২৪)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু নিজে চার রাকাত পড়তেন এমন নয়, তিনি অন্যদেরও চার রাকাত কাবলাল জুমা পড়ার আদেশ দিতেন।

তাঁর বিশিষ্ট শাগরিদ আবু আব্দুর রহমান আসসুলামী রাহ.-এর বর্ণনা : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পরে চার রাকাত পড়ার আদেশ করতেন। পরে যখন আলী রা. আগমন করলেন তখন তিনি আমাদেরকে জুমার পরে প্রথমে দুই রাকাত এরপর চার রাকাত পড়ার আদেশ করেন।

كان عبد الله يأمر أن نُصَلِّي قَبْلَ الجُمْعة أربعا، وبعدها أربعا، حتى جاءنا علي فأمرنا أن نصلي بعدها ركعتين ثم أربعا.

-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক খন্ড ৩, পৃ. ২৪৭ (৫৫২৫)

নফল নামাযের বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া যায়, আদেশ দেওয়া যায় না।

আদেশ করার অর্থ, এই নামায অন্তত সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যেমন পরের চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

এ বর্ণনার সনদ সহীহ ও মুত্তাছিল।

এই বর্ণনায় লক্ষণীয় বিষয় এই যে, খলীফায়ে রাশিদ আলী ইবনে আবী তালিব রা. যখন কুফায় এসে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর শিক্ষা দেখলেন এবং তাঁর আদেশ সম্পর্কে অবগত হলেন তখন তিনি কাবলাল জুমার বিষয়ে কোনো পরিবর্তন করেননি, শুধু বা’দাল জুমা চার রাকাতের সাথে আরো দুই রাকাত যোগ করার আদেশ করেছেন। ফলে পরবর্তী সময়ে ইমাম আবু ইউসুফ রাহ.সহ আরো অনেক ইমামের নিকটে, জুমার পরের সুন্নত সর্বমোট ছয় রাকাত। এ থেকেও প্রমাণিত হয় খলীফায়ে রাশিদ আলী ইবনে আবী তালিব রা.-এর নিকটেও কাবলাল জুমার সুন্নত চার রাকাত।



এ শুধু উপরোক্ত চার, পাঁচজন সাহাবীরই আমল নয়, খাইরুল কুরূনে সাহাবা-তাবেয়ীনের সাধারণ আমল এটিই ছিল। দু’টি বর্ণনা লক্ষ করুন :

৫. তাবেয়ী আমর ইবনে সায়ীদ ইবনুল আস রাহ. (৭০হি.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে দেখতাম, জুমার দিন সূর্য যখন ঢলে যেত তখন তাঁরা দাড়িয়ে যেতেন এবং চার রাকাত পড়তেন। ’

كنت أرى أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، فإذا زالت الشمس يوم الجمعة، قاموا فصلوا أربعا.

এ আছরটি ইমাম আবু বকর আল-আছরাম রাহ. (২৭৩হি.) তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর সূত্রে ইমাম ইবনে আব্দুল বার রাহ. ‘‘আততামহীদ’’ (খন্ড ৪, পৃ. ২৬حديث ثامن لزيد بن أسلم)) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

এই বর্ণনার সনদ নিম্নরূপ :

قال الأثرم : حدثنا منجاب بن الحارث قال : أخبرنا خالد بن سعيد بن عمرو بن سعيد بن العاص عن أبيه قال : كنت أرى …

আহলে ইলম জানেন, এ সনদটি সহীহ।

গ্রন্থকার ‘আছরাম’ তো ইমাম, ‘মিনজাব’ ছিকা রাবী, সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য কিতাবে তাঁর সূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ১৩১ হিজরীতে তাঁর ইন্তিকাল। (তাহযীবুত তাহযীব খন্ড ১০, পৃ. ২৯৭-২৯৮; তাকরীবুত তাহযীব ৬৮৮২)

তাঁর উস্তাদ ‘খালিদ ইবনে সায়ীদের’ রেওয়ায়েতও সহীহ বুখারীতে আছে। ইমাম মুসলিম রাহ. মুহাম্মাদ ইবনে বিশ্র থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাকে الثقة الصدوق المأمونউপাধিতে ভূষিত করেছেন। (তাহযীবুত তাহযীব খন্ড ৩, পৃ. ৯৫)

তাঁর পিতা ‘আমর ইবনে সায়ীদ’ তো প্রসিদ্ধ তাবেয়ী, যিনি অনেক সাহাবীকে দেখেছেন।

অনেক সাহাবীর জীবদ্দশায় ৭০ হিজরীতে তাঁর ইন্তেকাল।

এই আছরটি আবু বকর আল আছরামের উদ্ধৃতিতে ইবনে রজব রাহ. বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থে (খন্ড ৫, পৃ. ৫৪২) উল্লেখ করেছেন। এরপর তিনি আছরাম রাহ.-এর হাওয়ালায় এই আছরও বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম আবু বকর ইবনে আইয়াশ রাহ. বলেন, আমরা জুমায় (তাবেয়ী ইমাম) হাবীব ইবনে আবী ছাবিত (রাহ.)-এর সাথে থাকতাম। তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, ‘সূর্য কি ঢলে গেছে?’ এরপর নিজেও দেখতেন। সূর্য ঢলার পর তিনি কাবলাল জুমা চার রাকাত নামায পড়তেন।



ইবনে রজব রাহ. ছাড়া ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ.ও এই আছর ‘‘আলমুগনী’’তে (খন্ড ৩, পৃ. ২৫০) উল্লেখ করেছেন। এর আরবী পাঠ এই-

فإذا زالت الشمس صَلَّى الأربع التي قبل الجمعة.

আমর ইবনে সায়ীদ রাহ.-এর বিবরণ দ্বারা সাহাবা-যুগের তা’আমুল (কর্মধারা) সামনে এল। এবার সাহাবা-যুগ ও তাবেয়ী-যুগের কর্মধারা দেখুন :

২. (তাবেয়ী) ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. (৯৫হি.) বলেন, ‘তাঁরা জুমার আগে চার রাকাত পড়া পছন্দ করতেন। ’

قال إبراهيم النخعي : كانوا يحبون أن يصلوا قبل الجمعة أربعا.

-কিতাবুল ঈদাইন, ইবনে আবিদ দুন্য়া

ইমাম ইবনে রজব রাহ. বলেন, ‘এই আছরের সনদ সহীহ। ’ এরপর তিনি ইমাম ইবনে আবী খাইছামা রাহ.-এর ‘‘কিতাবুত তারীখে’’র উদ্ধৃতিতে ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর এই বক্তব্য বর্ণনা করেছেন যে, ‘যখন আমি তোমাদেরকে كانوا يستحبون (তারা পছন্দ করতেন) বলব তাহলে তা এমন বিষয় হবে, যার উপর তাঁদের ইজমা ছিল।

’ (ফাতহুল বারী খন্ড ৫, পৃ. ৫৪০)

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর বক্তব্য থেকে জানা গেল, তিনি যখন (তাঁরা পছন্দ করতেন) শিরোনামে কোনো আমল বর্ণনা করেন তখন তা অন্তত কুফায় অবস্থানকারী সাহাবা-তাবেয়ীন (যাদের সংখ্যা ছিল কয়েক হাজার)-এর সর্বসম্মত কর্মধারা হবে। তো সে যুগের এই সাধারণ কর্মধারা ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর সূত্রে ইমাম ইবনে আবী শাইবা রাহ.ও তাঁর ‘‘আলমুসান্নাফ’’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। (দ্র. আলমুসান্নাফ খন্ড, ৪, পৃ. ১১৫-১১৬; ৫৪০৫)

সাহাবা-তাবেয়ীনের এই সাধারণ কর্মধারা প্রমাণ করে, জুমার আগে নফল নামাযের রাকাত-সংখ্যা যদিও নির্ধারিত নয়, প্রত্যেকে নিজ নিজ ইচ্ছা ও অভিরুচি অনুযায়ী পড়বে। তবে এসময় চার রাকাত নামাযের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। আর তা পড়া হত সূর্য ঢলে যাওয়ার পর দ্বিতীয় আযানের আগে।



আর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর ঐ চার রাকাতের আদেশ দেওয়া এবং খলীফায়ে রাশেদের তাঁর সাথে একমত থাকা, বলাই বাহুল্য, নিছক ইজতিহাদের ভিত্তিতে হতে পারে না। এ কারণে তাঁর এই হুকুম ‘‘মারফূ হুকমী’’ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত।

যারা দাবি করেন কোনো হাদীসেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জুমার আগে নামায পড়া প্রমাণিত নয়-না ঘরে, না মসজিদে, তাদের দাবি সত্য নয়। যদি তা সত্যও হত তবুও উপরোক্ত আছর, সাহাবা-তাবেয়ীনের ব্যাপক রীতি এবং উপরে উল্লেখিত ‘মারফূ হুকমী’ একথা প্রমাণে যথেষ্ট হত যে, জুমার আগে চার রাকাত সুন্নতে রাতিবা (মুয়াক্কাদাহ) রয়েছে।

ক্বাবলাল জুমআ সুন্নত সম্পর্কে স্পষ্ট মারফূ হাদীস

এ বিষয়ে সুনানে ইবনে মাজাহর একটি হাদীসই তালিবানে ইলমের হাতের কাছে থাকায় শুধু এ হাদীসটির কথাই সাধারণত বলা হয়।

আর এর সনদ অতি দুর্বল হওয়ায় বলে দেওয়া হয়, ‘এ বিষয়ে যে মারফূ হাদীসটি আছে তার সনদ অতি দুর্বল। সেটি ছাড়া আর কোনো মারফূ হাদীস নেই। ’ এই ধারণা ঠিক নয়। জুমার আগে নামায পড়া আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়টিই নিবেদন করার ইচ্ছা রাখি।

অনুরোধ করি, ধৈর্যের সাথে পুরো আলোচনাটি পাঠ করার।

সুনানে ইবনে মাজায় (কিতাবুল জুমা, বাবুস সালাহ কাবলাল জুমা-র অধীনে) হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে :

عن بقية، عن مبشر بن عبيد، عن حجاج بن أرطاة، عن عطية العوفي، عن ابن عباس قال كان النبي صلى الله عليه وسلم يركع قبلالجمعة أربعا لا يفصل في شيء منهن.

বাকিয়্যাহ মুবাশশির ইবনে উবাইদ থেকে, তিনি হাজ্জাজ ইবনে আরতাত থেকে, তিনি আতিয়্যা আল আওফী থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন। মাঝে (সালামের দ্বারা) আলাদা করতেন না, (অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন)। ’-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১১২৯

সনদের যে অংশ উল্লেখিত হয়েছে তাতেই ‘আসমাউর রিজাল’-বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বুঝতে পেরেছেন, এই সনদ অতি দুর্বল, বিশেষত মুবাশশির ইবনে উবাইদ তো এমন রাবী, যার সত্যবাদিতাই সংশয়পূর্ণ। সুতরাং এই সনদ যে নির্ভরযোগ্য নয় তাতে আর সন্দেহ কি।

ব্যাস, এখান থেকেই প্রসিদ্ধ করে দেওয়া হল যে, এ বিষয়ে একমাত্র হাদীস ইবনে মাজার হাদীসটি, আর তা অতি দুর্বল।

‘‘ইলাউস সুনানে’’ ‘‘মাজমাউয যাওয়াইদ’’ এর বক্তব্য থেকে অনুমান করা হয়েছিল যে, এ হাদীস তবারানীতে যে সনদে বর্ণিত হয়েছে তাতে বোধ হয়, মুবাশশির ইবনে উবাইদ নেই, সুতরাং ঐ সনদ নির্ভরযোগ্য হতে পারে। কিন্তু এই অনুমান সঠিক প্রমাণিত হয়নি। তবারানীর ‘‘আলমু’জামুল কাবীরে’’ এই রেওয়াতের সনদ সেটিই যা ইবনে মাজার সনদ। এতে মুবাশশির ইবনে উবাইদ আছে।

আর এটা নসবুর রায়া (খন্ড ২, পৃ. ২০৬) থেকেও বোঝা যায়। যাহোক, এতে এই ধারণা আরো প্রবল হয়ে গেল যে, এ বিষয়ে কোনো সহীহ মারফূ হাদীস নেই!

আগেই বলেছি, এই ধারণা সঠিক নয়। আর তা সঠিক নয় কয়েক কারণে। এক. কয়েকজন হাফিযুল হাদীস স্পষ্টভাষায় বলেছেন, হাদীসটি ইবনে মাজা যে সনদে বর্ণনা করেছেন তা জয়ীফ বটে, কিন্তু ইমাম আবুল হাসান আল খিলায়ী রাহ. (৪৯২ হি.) ‘‘আল ফাওয়াইদ’’ কিতাবে তা নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণনা করেছেন। সনদের শেষ অংশ তাঁরা উল্লেখও করেছেন।

হাফেয আবু যুরআ ইরাকী (৮২৬ হিজরী) তরহুত তাছরীব গ্রন্থে ( খ. ৩, পৃ. ৩৬) লেখেন-

والمتن المذكور رواه أبو الحسن الخِلَعي في فوائده بإسناد جيد من طريق أبي إسحاق عن عاصم بن ضمرة عن علي رضي الله عنه عنالنبي صلى الله عليه وسلم.

সুতরাং এ বিষয়ের প্রথম মারফূ হাদীস যার সনদ নির্ভরযোগ্য তা এই-

১. আবু ইসহাক আস সাবীয়ী আসিম ইবনে দমরা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আলী রা. থেকে, যে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন। ’ (আল-ফাওয়াইদ, আবুল হাসান আল খিলায়ী-তরহুত তাছরীব খ ৩, পৃ. ৩৬)

একাধিক হাদীসবিশারদ ‘‘আল ফাওয়াইদ’’-এর উদ্ধৃতিতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং সনদ নির্ভরযোগ্য বলেছেন। যেমন :

ক. হাফিয যাইনুদ্দীন ইরাকী (৮০৬ হি.) (দ্র. ফয়যুল কাদীর)

খ. হাফিয আবু যুরআ ইরাকী (৮২৬ হি.) (দ্র. তরহুত তাছরীব ৩/৩৬)

গ. হাফিয শিহাবুদ্দীন আল বূসীরী (৮৪০ হি.) (দ্র. মিসবাহুয যুজাজাহ ফী যাওয়াইদি ইবনে মাজাহ খ. ১, পৃ. ১৩৬)

ঘ. মুহাদ্দিস আব্দুর রউফ আল

মুনাভী (১০৩১ হি.) (দ্র. ফয়জুল কাদীর খ. ৫ পৃ. ২১৬)

ঙ. মুহাদ্দিস মুরতাজা যাবিদী (১২০৫ হি.) (দ্র. ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন ফি শরহি ইহইয়াই উলূমিদ্দীন খ. ৩, পৃ. ২৭৫)

সনদের শেষ অংশ তো তাঁরা উল্লেখ করেই দিয়েছেন, যা কমসে কম ‘হাসান’ পর্যায়ের। আর আবুল হাসান আল খিলায়ী থেকে আবু ইসহাক আস সাবীয়ী পর্যন্ত সনদের যে অংশ তা উল্লেখ না করলেও তাঁরা একবাক্যে বলেছেন, তা ‘জাইয়েদ সনদ’ যার শাব্দিক অর্থ উত্তম সনদ। আর উসূলে হাদীসের পরিভাষায় ‘জাইয়েদ সনদ’ কে ‘হাসান’-এর উপরে গণ্য করা হয়।

(তাদরীবুর রাবী খ. ১ পৃ. ১৭৮)

আবুল হাসান আল খিলায়ীর সনদের সমর্থন ঐ রেওয়ায়েত দ্বারাও হয়, যা তবারানী ‘‘আলমুজামুল আওসাত’’ কিতাবে এবং আবু সায়ীদ ইবনুল আরাবী তাঁর ‘‘আলমু’জাম’’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাটি এই-

محمد بن عبد الرحمن السَّهْمي، حدثنا حُصَيْن بن عبد الرحمن السُّلَمِي، عن أبي إسحاق، عن عاصم بن ضَمْرة، عن علي قال : كانرسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي قبل الجمعة أربعا، وبعدها أربعا، يجعل التسليمَ في آخرهن.

২. মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আসসাহমী বর্ণনা করেন, আমাদেরকে হুসাইন ইবনে আব্দুর রহমান আসসুলামী বর্ণনা করেছেন, তিনি আবু ইসহাক (সাবীয়ী) থেকে, তিনি আসিম ইবনে দমরা থেকে, তিনি আলী রা. থেকে, যে ‘‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পরে চার রাকাত পড়তেন এবং সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন। ’’-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী খ. ২, পৃ. ৩৬৮ আলমু’জাম আবু সায়ীদ ইবনুল আরাবী-লিসানুল মীযান খ. ৭, পৃ. ২৭৮, ৫ : ২৪২)

সনদের মান : সনদের সকল রাবী পরিচিত ও প্রসিদ্ধ এবং উত্তম স্মৃতিশক্তির অধিকারী ও নির্ভরযোগ্য। সামান্য আপত্তি শুধু আছে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আস-সাহমী সম্পর্কে। তাঁর ব্যাপারে ইমাম আবু হাতিম বলেছেন ليس بالمشهور অর্থাৎ ‘তিনি তেমন প্রসিদ্ধ রাবী নন’।

হযরতুল ইমামের এ উক্তি লিসানুল মীযানে এভাবেই আছে। তবে ইবনে আবী হাতিম এর কিতাব ‘‘আলজরহু ওয়াত তা’দীলে’’ (খ. ৩ কিসত : ২ পৃ. ৩২৬) লেখা আছে ليس بمشهور যার অর্থ : ‘তিনি প্রসিদ্ধ নন’। যা হোক, লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে আবু হাতিম রাহ. তাuঁক ‘মাজহূল’ (অপরিচিত) বলেননি। এদিকে ইমাম ইবনে আদী রাহ. ‘‘আল-কামিল’’ কিতাবে (খ. ৬, পৃ. ১৯১-১৯২) তাঁর বর্ণনাসমূহ পরীক্ষা করার পর নিম্নোক্ত ভাষায় তার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছেন-

وهو عندي لا بأس به.

অর্থাৎ ‘আমার কাছে এই রাবীর মাঝে অসুবিধার কিছু নেই। ’

আহলে ইলমের জানা আছে, হাদীস-বিশারদ ইমামগণ এ ধরনের মন্তব্য সাধারণত ঐ সকল রাবী সম্পর্কে করেন যাদের রেওয়ায়েত ‘হাসান’ পর্যায়ের হয়।



এদিকে ইমাম ইবনে হিববান তাঁকে ‘‘কিতাবুছ ছিকাত’’ (খ. ৯, পৃ. ৭২)-এ অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যার অর্থ, তিনি তাঁর নিকটে ‘ছিকা’ রাবীদের মধ্যে গণ্য।

‘‘লিসানুল মীযান’’ কিতাবে অবশ্য ইবনে আবী হাতিমের উদ্ধৃতিতে ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি এই রাবীকে ‘জয়ীফ’ বলেছেন, কিন্তু ইবনে আবী হাতিমের ‘কিতাবুল জরহি ওয়াত তা’দীলে (খ. ৩, কিসত : ২, পৃ. ৩২৬) এই বক্তব্য আমরা পাইনি, তদ্রূপ ‘‘তারীখে ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীনে’’ও না। একারণে এই উদ্ধৃতিটি সংশয়পূর্ণ।

এই রাবী সম্পর্কে ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত সেটিই যা ইবনে আদী রাহ. বলেছেন। এ কারণে আলোচিত হাদীসটি সনদের বিচারে তো ‘হাসান’ পর্যায়ের, কিন্তু এর মতন (বক্তব্য) সাহাবা-তাবেয়ীন যুগে ব্যাপকভাবে বরিত ও অনুসৃত (মুতালাক্কা বিলকবূল) ছিল, যা প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত আছার ও তাআমূল (কর্মধারার) বিবরণ থেকে সম্পূর্ণ স্পষ্ট হয়েছে।

ঐখানে বলা হয়েছিল, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. জুমার আগে চার রাকাত পড়ার যে আদেশ করেছিলেন, আলী রা. তা বহাল রেখেছিলেন। বলাবাহুল্য, এর কারণ

এ-ই হবে যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এরূপই করতে দেখেছেন। যার বিবরণ তাঁর বর্ণনাকৃত হাদীসে এসেছে।

৩. মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আস-সাহমীর এ বর্ণনার সমর্থন আলী রা.-এর ঐ প্রসিদ্ধ হাদীস দ্বারাও হয়, যা সুন্নত ও নফল সম্পর্কে খুবই প্রসিদ্ধ এবং ‘সুনান’ ও ‘মাসানীদ’ গ্রন্থসমূহে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত।

আসিম ইবনে দমরা বলেন-

أتينا عليا، فقلنا : يا أمير المؤمنين ألا تحدثنا عن صلاة النبي صلى الله عليه وسلم بالنهار تطوعا؟ فقال : من يطيق ذلك منكم؟ قلنانأخذ منه ما أطقنا.

আমরা আলী রা. এর কাছে এলাম এবং আরজ করলাম, আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কি আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘সালাতুত তাতাওউ’ (সুন্নত ও নফল নামাযসমূহের) বিষয়ে অবগত করবেন না? তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে তার (অনুসরণের) হিম্মত রাখে? আরজ করলাম, ‘আমরা সাধ্যমতো আমল করব।



এরপর আলী রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিবসের সুন্নত ও নফল নামাযের বিবরণ দিলেন। প্রথমে ফজরের পর সূর্য মাথার উপর আসার আগ পর্যন্ত দুই নামাযের কথা বললেন : দুই রাকাত এবং চার রাকাত (অর্থাৎ ইশরাকের দুই রাকাত ও চাশতের চার রাকাত)

এর পর বলেন-

ثم أمهل فإذا زالت الشمس قام فصلى أربعا، ثم صلى بعد الظهر ركعتين، ويصلي قبل العصر أربعا، يفصل بين كل ركعتين بتسليمعلى الملائكة المقربين ومن اتبعهم من المؤمنين والمسلمين، فتلك ست عشرة ركعة.

‘এরপর তিনি নামায পড়া থেকে বিরত থাকতেন। যখন সূর্য ঢলে যেত তখন দাঁড়াতেন ও চার রাকাত পড়তেন। এরপর যোহরের পর দুই রাকাত পড়তেন, আসরের আগে চার রাকাত পড়তেন। প্রতি দুই রাকাতকে তাশাহহুদ দ্বারা আলাদা করতেন।

এ হল সর্বমোট ষোল রাকাত। (আল-আহাদীসুল মুখতারা, যিয়াউদ্দীন আলমাকদেসী খ. ১, পৃ. ১৪২-১৪৩ হাদীস : ৫১৪)

সুনানে ইবনে মাজায় (হাদীস : ১১৬১) এই হাদীসের শেষে আছে-

قال علي فتلك ست عشرة ركعة، تطوع رسول الله صلى الله عليه وسلم بالنهار، وقل من يداوم عليها. قال وكيع : زاد فيه أبي : فقالحبيب بن أبي ثابت : يا أبا إسحاق! ما أحب أن لي بحديثك هذا مِلْءَ مسجدك هذا ذهبا.

অর্থাৎ, আলী রা. বললেন, ‘এ হচ্ছে সর্বমোট ষোল রাকাত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিনের তাতাওউ (নফল ও সুন্নত) নামায। খুব অল্প সংখ্যক মানুষই তা নিয়মিত আদায় করে। ’

রাবী বলেন, এই হাদীস বর্ণনা করার পর (উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে থেকে ইমাম) হাবীব ইবনে আবী ছাবিত বলে উঠলেন, ‘আবু ইসহাক! আপনার বর্ণিত এই হাদীসের বিনিময়ে তো আপনার এই মসজিদ ভরে যায় এই পরিমাণ স্বর্ণের মালিক হওয়াও আমি পছন্দ করব না!

এ হাদীসে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর যে চার রাকাতের কথা এসেছে, খুব সহজেই বোঝা যায়, সপ্তাহের ছয়দিন তা যোহরের আগের সুন্নত আর জুমার দিন জুমার আগের সুন্নত।

কিন্তু অধিকাংশ দিনে তা যেহেতু ‘কাবলায যোহর’ আর জুমাও হচ্ছে যোহরেরই স্থলাভিষিক্ত তাই এ চার রাকাতকে অন্যান্য বর্ণনায় এভাবে বলা হয়েছে-

وأربعا قبل الظهر إذا زالت الشمس

(এবং জোহরের আগে চার রাকাত, যখন সূর্য ঢলে যায়) এবং এভাবে-

ويصلي قبل الظهر أربعا.

(এবং যোহরের আগে চার রাকাত পড়তেন)

এই বর্ণনাগুলোতে ‘যোহর’ শব্দ ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকে মনে করেছেন, এই চার রাকাত শুধু ‘যোহরের নামাযে’র আগে পড়তে হবে, কারণ এই হাদীসে তো ‘কাবলায যোহর’ বলা হয়েছে, ‘কাবলাল জুমা নয়!’ বলাবাহুল্য, এটা অগভীর চিন্তার ফল। কারণ,এখানে ঐ সকল সুন্নত ও নফল নামাযের আলোচনা হচ্ছে, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনে আদায় করতেন। জুমার দিনও তো দিনই বটে, রাত তো নয়। তাহলে এই ‘দিন’ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর চার রাকাত নামায কেন হবে না? এ বিষয়ে জুমার দিনের নিয়ম যদি আলাদা হত তাহলে আলী রা. তা বলতেন। বলেননি যখন বোঝা গেল যে, জুমার দিনেও এ নামায পড়া হত।

জুমার দিন কি ইশরাক, চাশত ও আসরের আগের সুন্নতসমূহ নেই? তাহলে সূর্য ঢলে যাওয়ার পরের এই চার রাকাত কেন থাকবে না? এটিও তো ‘আন নাহার’ (দিবস) শব্দের অন্তর্ভুক্ত।

৪. আব্দুল্লাহ ইবনুস সাইব রা. বর্ণনা করেছেন-

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلي أربعا بعد أن تزول الشمس، قبل الظهر، وقال : إنها ساعة تُفْتَح فيها أبواب السماء،فأحب أن يصعد لي فيها عمل صالح.

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলার পর যোহরের আগে চার রাকাত নামায পড়তেন। এবং বললেন ‘এই সময় (সূর্য ঢলার পর) আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয়। আমি চাই, এ সময় আমার কোনো নেক আমল ওপরে যাক। -আশ শামাইলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ, তিরমিযী, হাদীস : ২৯৫; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪৮২; মুসনাদে আহমদ খ. ৬, পৃ. ৪১১, হাদীস : ১৫৩৯৬

ইমাম তিরমিযীর মতে, হাদীসটি ‘হাসান’।



এ হাদীসে সূর্য ঢলার পর চার রাকাত নামাযের কথা এসেছে। এটিই জুমার দিন ‘কাবলাল জুমা’, অন্যান্য দিন ‘কাবলায যোহর’। যেহেতু ছয়দিন তা কাবলায যোহর তাই একে বলা হয়েছে ‘কাবলায যোহর’। নতুবা এ নামাযের যে হিকমত বর্ণনা করা হয়েছে (অর্থাৎ সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজা খোলা হয়, এ কারণে এ সময় কোনো নেক আমল পাঠানো উচিৎ’) তা তো জুমার দিনেও আছে। জুমার দিনও তো সূর্য ঢলে এবং আসমানের দরজা খোলে।

সুতরাং ঐ দিন চার রাকাত রহিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পরবর্তী হাদীস থেকে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়।

৫. আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত-

أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يدمن أربع ركعات عند زوال الشمس، فقلت : يا رسول الله إنك تُدْمِن هذه الأربع ركعات عندزوال الشمس، فقال : إن أبواب السماء تفتح عند زوال الشمس. فلا ترتج حتى يُصَلي الظهر، فأحب أن يصعد لي في تلك الساعةخير؟ قلت : أفي كلهن قراءة؟ قال : نعم، قلت : هل فيهن تسليم فاصل؟ قال : لا.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম সর্বদা সূর্য ঢলার পর চার রাকাত নামায পড়তেন। আমি আরজ করলাম, আল্লাহর রাসূল! আপনি সর্বদা সূর্য ঢললে চার রাকাত নামায পড়েন (এর তাৎপর্য কী?) ইরশাদ করলেন, সূর্য ঢলার পর আসমানের দরজা খোলা হয়, এরপর যোহর পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। আমি চাই, ঐ সময় আমার কোনো নেক আমল ওপরে যাক।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘প্রতি রাকাতে কি কুরআন পড়তে হবে?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। বললাম, এর মাঝে কি সালাম ফিরাতে হবে? তিনি বললেন, ‘না’। -আশ শামাইলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ, তিরমিযী, হাদীস : ২৯৩; মুসনাদে আহমদ ২৩৫৩২

এ হাদীস বিভিন্ন সনদে মুসনাদে আহমদ সহ বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। এর সনদগত মান কমসে কম ‘হাসান লিগায়রিহী’। (দ্র. টীকা, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা খ. ৪, পৃ. ২৭৩, (৫৯৯২); পৃ. ১১৫ (৫৪০৫) শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামা।

শায়খ শুআইব আরনাউত তো মুসনাদে আহমদের টীকায় (হাদীস ২৩৫৫১) একে ‘সহীহ লিগায়রিহী’ বলেছেন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।