আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমন লগঃ পূর্ব থেকে পশ্চিমে- প্রথম পর্ব

শুক্র, শনি দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির সাথে রবিবার মহরমের ছুটি মিলিয়ে মোট তিন দিনের একটা ছুটি পাওয়া গেল, সাথে আরও তিন দিন ছুটি নিয়ে মোট ছয় দিনের জন্য বেড়িয়ে পরার একটা পরিকল্পনা করলাম। যদিও এই ট্রেইলটির জন্য অন্তত আট থেকে দশ দিন প্রয়োজন। বেশ আগে থেকেই ট্রেইলটির ব্যাপারে কয়েকজনকে জানাতেই সবাই সাথে যোগ দিতে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করল। কিন্তু কারো অফিসের ছুটির সমস্যা, কারো বা পরীক্ষা, আবার কারো বা পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত বার জনের ভিতরে আমরা টিকলাম মাত্র পাঁচ জন। উদ্দেশ্য সিলেট বিভাগের উত্তর পূর্ব দিকের জাফলং থেকে আরম্ভ করে সুনামগঞ্জের উত্তর পশ্চিম দিক দিয়ে শেষ করে নেত্রকোনার কলমাকান্দা দিয়ে বের হওয়া।

সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট থেকে আরম্ভ করে কোম্পানিগঞ্জ হয়ে, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারা বাজার, সুনামগঞ্জ, বিসম্ভপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা হয়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় এসে ট্রেক শেষ করা। তিন জেলার মোট নয়টি উপজেলা ট্রেকিং করা। পূর্ব থেকে পশ্চিমে পুরো ট্রেইলের বাঁদিকে অর্থাৎ উত্তরে মেঘালয়ের পাহাড় সারি আর ডানদিকে অর্থাৎ দক্ষিনে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝরনা ও নদী, এবং খালবিল, হাওড়, গ্রামগঞ্জ ও বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। উপভোগ করার মত চমৎকার একটি ট্রেইল। সাতদিন আগে থেকেই ঢাকা -সিলেটগামী ট্রেনের টিকেটের চেষ্টা করে না পেয়ে অবশেষে বাসের পাঁচটি টিকেট কিনা হল।

সঙ্গী সাথে তানভীর, তনময়, শিবলি ও পিয়াল। প্রতিবারের মত এইবারও থাকার জন্য দুইটি তাঁবু আর খাওয়ার জন্য কয়েক প্যাকেট রেডিমিক্স খিচুড়ি, ইনস্ট্যান্ট নুডুলস ও কিছু বিস্কুট ও চকলেট। ছুটি সমস্যার কারনে তনময় ও শিবলি দুইদিন ট্রেক করে তৃতীয় দিনে ঢাকায় ফিরে আসবে। অতএব আমরা তিনজন বাকী ট্রেক সম্পূর্ণ করব। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে শেষ মুহূর্তে তানভীর আটকে গেল তাঁর অফিসের জরুরী মিটিং এর জন্য, তবে সে এই বলে আশ্বস্ত করল যে অফিসের জরুরী মিটিং সেরে দুই দিন পরে আমাদের সাথে যোগ দিবে।

সুতরাং তৃতীয় দিনে তানভীরকে নিয়ে বাকী ট্রেকটুকু করার আশা নিয়ে আমরা রওনা হলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে মহাখালী থেকে ২২শে নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় এনা পরিবহনের বাসে। সারা রাত মোটামুটি ঘুমিয়ে পার করে দিলাম বাসে। খুব ভোরে বাস আমাদের সিলেটের জাফলং যাওয়ার বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিল। বেশ অন্ধকার ও কুয়াশা তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। রাস্তার পাশেই এক রেস্টুরেন্ট মাত্র খুলেছে দেখে সেই রেস্টুরেন্টে যেয়ে চায়ের অর্ডার দিলাম।

তখনও তাঁদের চুলা ধরায়নি জানিয়ে বলল চা দিতে সময় লাগবে। এরই মধ্যে এক লেগুনা এসে হাজির, হোটেল বয় জানাল যে আমরা জাফলং যেতে চাইলে এই লেগুনাতে এখনই রওনা দিতে পারি। অতএব চায়ের অপেক্ষা না করে লেগুনাতে চরে বসলাম। হিম শীতে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে কাঁকভোরে রওনা হলাম লেগুনাতে করে সারিঘাটের উদ্দেশ্যে। সারিঘাটে নেমে তারপর যাব লালাখাল।

যদিও আমাদের প্রথম গন্তব্য হওয়ার কথা জাফলং কিন্তু রওনা দেয়ার আগেই শিবলি আবদার করল লালাখাল হয়ে যাওয়ার। একই পথে লালাখাল হয়ে জাফলং যাওয়া যাবে বলে তাই কেউ আর আপত্তি করল না। সারিঘাটে নেমে পাশে একটা ছোট্ট চায়ের হোটেল যেয়ে দেখলাম যে তাঁরা খিচুড়ি নামক ভাত ভাঁজি করতেছে সকালের নাস্তা হিসাবে। আমাদের নাস্তার জন্য কয়েক প্যাকেট ইনস্ট্যান্ট নুডুলস রান্নার সাহায্য চাইতেই হোটেলওয়ালা বেশ সানন্দে সব ব্যাবস্থা করে দিলেন। মাটির চুলায় লাকড়ি চাপিয়ে, একটা বড় হাড়ি ধুয়ে, কিছু পিয়াজ ও কাঁচা মরিচ ধুয়ে, কেটে আমাদের সাহায্য করলেন।

অতএব নুডুলস রান্না করে হোটেলওয়ালাকে নিয়ে একসাথে খেয়েদেয়ে এবং কিছুটা টিফিনবক্সে নিয়ে, হোটেলওয়ালাকে বিদায় জানিয়ে লালাখালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম। কিছুদূর এগুতেই লালাখাল যাওয়ার লেগুনা চোখে পরল, প্রথমে দুই একজন লেগুনাতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও পরে সবাই হিমহিম, কুয়াশাছন্ন ও শান্ত স্নিগ্ধ এই শীতের সকালে হেঁটে যাওয়ার সিধান্ত নিলাম। পাকা রাস্তা গ্রামের ভিতর দিয়ে কয়েক কিলোমিটার চলে গেছে, আমরাও সেই পথে হেঁটে চললাম। বেশ কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর পাকা রাস্তা মিলিয়ে যেয়ে গ্রামের ধুলোমাখা মেঠো পথে রূপান্তরিত হয়ে গেল। সেই পথে কিছুটা এগিয়ে যেতেই পাশে নীলাভ সবুজ পানির সারি নদী চোখে পড়ল, শিবলি হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো দৌড়ে গেল নদীর পাশে সাথে তনময়ও শিবলির সাথে যোগ দিল।

কিছুক্ষণের যাত্রা বিরতি নিয়ে ২৫/২৬ কেজির ব্যাকপেক নামের বোজাটা নামিয়ে বয়ে আনা খাবারগুলো সবাইকে কিছু কিছু করে ভাগ করে দিলাম। তারপরও বোজাটা খুব একটা কমেছে বলে মনে হচ্ছে না। যাইহোক আবার ২০/২২ কেজির বোজাটা পিঠে চাপিয়ে আবার সামনের পথে পা বাড়ালাম। প্রায় ঘণ্টা দুইয়েক হেঁটে আমরা লালাখাল এসে পৌঁছলাম। পাশেই নাজিমঘর রিসোর্টে আমাদের ব্যাকপেকগুলো রেখে সবাই সারি নদীর কাছে এগিয়ে গেলাম।

শিবলি তার আন্ডার ওয়াটার ইকুইপমেন্ট স্নোরাকেল নিয়ে দৌড়ে সারি নদীতে ডুব দিল। খুব অল্প গভীরতার নীলাভ সবুজ পানিতে কয়েক বার ডুব দিয়ে দিয়ে সে স্নোরাকেলের পারফর্মেন্স পরীক্ষা করল খুব উৎসাহের সাথে, তবে মনে হয় না সে পানির নীচে বালি ছাড়া আর কিছু দেখতে পেয়েছে। এই সুযোগে আমরাও সবাই গোসল সেরে নিলাম। প্রায় ঘন্টাখানেক লালাখালে অবস্থান করে আবার রওনা হলাম জাফলং এর উদ্দেশ্যে, তবে সময় বাঁচানোর জন্য এইবার না হেঁটে লেগুনাতে করে সারিঘাটে ফিরে আসলাম। জাফলং এর বাসে জাফলং পৌঁছে পিয়াইন নদী পাড় হয়ে সংগ্রামপুঞ্জির নাজিমঘর রিসোর্টে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় বেলা আড়াইটা বেজে গেল।

অবশ্য এর মধ্যে ছোট্ট একটা চায়ের বিরতি ও কিছু ছবি তোলার বিরতি নেয়া হয়েছিল। কিছুক্ষণের যাত্রা বিরতি নিয়ে নাজিমঘর রিসোর্ট থেকে পানির বোতলগুলো ভরে নিয়ে আবার রওনা হলাম পান্তুমাই গ্রামের পথে। আগে থেকে প্ল্যান ছিল বর্ডার ঘেঁষা পিয়াইন নদীর পার ধরে হেঁটে পান্তুমাই হয়ে বিছানাকান্দি যাব এবং এই রাতটা বিছানাকান্দিতে ক্যাম্পিং করব। কিন্তু একবেলা লালাখালে কাটিয়ে আসাতে ঠিক করলাম আজকে রাতটা পান্তুমাইতে ক্যাম্পিং করার, তবে কেউ আর প্রায় পানিশূন্য পিয়াইন নদীর শুকনো বালির পার ধরে হেঁটে যাতে রাজী হল না। শুকনো বালিতে হাঁটা খুব কষ্টকর, তাই কি আর করা পুঞ্জির ভিতরের পাকা পথে এগিয়ে যাব ঠিক করলাম।

সংগ্রাম্পুঞ্জি থেকে বল্লাপুঞ্জি, নক্সিয়ারপুঞ্জি হয়ে হাজীপুর বাজারে যাওয়ার এই পথটি আমার খুব পছন্দের একটি ট্রেইল। খসিয়াদের ঘরবাড়ি, জীবনযাত্রা ও দুইপাশে ঘন সুপারির বাগান, সুপারি গাছে বেয়ে উঠা লতানো পান গাছ, বিভিন্ন প্রকার প্রচুর ও ঘন গাছ গাছালির সারি। সূর্যের আলো খুব একটা দেখা যায় না, নান রকম গাছ গাছালির ফাঁকে রোদের লুকোচুরি খেলা। প্রতিবারই এই ট্রেইলটি আমি খুব উপভোগ করি, যদিও খুব তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে যাই। ঘন গাছপালার কারনে এমনিতে এই পথটায় মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা নেমে এসেছে, তার উপর সূর্যও অনেকটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে।

অনেকটাই সন্ধ্যা সন্ধ্যা ভাব, তনময় ও শিবলি মনে হচ্ছে বেশ উদবিগ্ন সন্ধ্যার আগে আমরা পান্তুমাই পৌঁছাতে পারব কিনা। বার বার দ্রুত এগুবার তাড়া দিচ্ছে ছবি তোলারও খুব একটা সুযোগ দিচ্ছে না। এরই মধ্যে একটা খালি ট্রাক্টর হাজীপুর বাজারের দিকে যাচ্ছিল দেখে তনময়, শিবলি ও পিয়াল চরে বসল হাজীপুর বাজারের উদ্দেশ্যে। আর মাত্র আড়াই তিন কিলোমিটার বাকী, আমি হেঁটেই যাব ঠিক করলাম। তাঁদেরকে ট্রাক্টরে বিদায় দিয়ে আবার হাঁটা আরম্ভ করলাম।

প্রায় পৌনে চারটা বাজে। নিরব নিস্তব্ধ পথে একা একা হেঁটে চলেছি, বেশ ভালই লাগছিলো। নিস্তব্ধতা কাটিয়ে মাঝে মাঝে দুই একটা মোটর সাইকেল ভো ভো করে পাশে দিয়ে চলে যাচ্ছে। মোটর সাইকেল অতিক্রমের কয়েক মিনিট পরই আবার নিস্তব্ধতায় ডুবে যাচ্ছি। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা হেঁটে হাজীপুর বাজারের কিছুটা আগে একটা ছাউনিতে তাঁদের দেখা পেলাম।

তনময় জানাল ট্রাক্টর কিছুটা এগুবার পর নষ্ট হয়ে যায়, তাই তাড়া আরও কিছুটা হেঁটে এখানে ছাউনিতে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাঁদের নিয়ে হাজীপুর বাজারের পাশ দিয়ে পান্তুমাই এর পথে এগুতেই একজন বিজিবি কর্মীর সাথে দেখা হল। আমাদের পরিচয় দিয়ে তার সাথে কুশল বিনিময় হল। আলাপ প্রসঙ্গে জানালাম যে আমরা পান্তুমাই হয়ে বিছানাকান্দি যাচ্ছি, তবে আজ রাতটা পান্তুমাই গ্রামে ক্যাম্পিং করব। পান্তুমাই বর্ডারের খুব কাছে একটি গ্রাম, বিএসএফ মাঝে মধ্যে এই গ্রমে যাতায়াত করে।

তিনি আমাদের নিরাপত্তার কারনে পান্তুমাই না থেকে হাজীপুর থাকার পরামর্শ দিলেন। সন্ধ্যা হয়ে এলো, অন্ধকারে আর না এগিয়ে বিজিবি কর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা হাজীপুর থাকার সিধান্ত নিলাম। হাজীপুর বাজারের পাশেই হাজীপুর স্কুলের মাঠে। শিবলি ও পিয়ালকে রাতের খাবারের ব্যাবস্থা করার জন্য রেডিমিক্স খিচুড়ির প্যাকেটসহ বাজারে পাঠিয়ে, আমি ও তনময় টেন্টিং এর জন্য স্কুলের মাঠে গেলাম। সদ্য আমেরিকাত থেকে আনা দুইটি কোলম্যান তাঁবুই সেট করা আরম্ভ করলাম।

তাঁবু সেট করতে করতে স্থানীয় একজনের সাথে পরিচয় হল। মাঠের পাশেই তার বাড়ী নাম মোহাম্মাদ আলী, পেশায় সাইকেল মেকার বলে জানালো। তবে তিনি রেডিও, টিভি ও মেরামত করে থাকেন বলে জানালেন, অনেকটা সব কাজেরই কাজী তিনি। তিনি ও আরও অনেক গ্রামবাসী দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমাদের তাঁবু সেট করা পর্যবেক্ষণ করলেন বেশ আগ্রহের সাথে। পিয়াল বাজার থেকে কিছু পিঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও আলু কিনে বাজারের একটি চায়ের হোটেলে রান্নার ব্যাবস্থা করতে করতে আমরা মাঠে তাঁবু সেট করে, সব ব্যাগপত্র তাঁবুতে রেখে চায়ের জন্য বাজারে আসলাম।

পিয়ালকে বাজারের একটি চায়ের হোটেলে দেখে সেই হোটেলেই এগিয়ে গেলাম। হোটেলওয়ালা হাশেম আমাকে দেখেই জানতে চাইল আমি কেমন আছি, আরও বলল যে, আমাকে সে দেখেই চিনতে পেরেছে আমি কয়েক মাস আগেও গিয়াছিলাম, তাঁর দোকানে চা পিয়াজু খেয়েছিলাম। উল্লেখ্য মাঠে তাঁবু সেটিং এর সময় আরও দুই জন একই কথা বলেছে যে আমাকে চিনতে পেরেছে, আমি কয়েক মাস আগেও গিয়েছিলাম, তাঁদের সাথে আলাপ হয়েছিল। খুব ভাল লাগে যখন দেখি অজপাড়া গাঁয়ের মানুষের সাথে কবে কখন কয়েক মিনিটের আলাপ হয়েছিল, সেই সৃতি তাঁদের মনে থাকে, পরে আবার দেখা হলে চিনতে পারে, তাঁদের কথাবার্তায় সেই আবেগ প্রকাশ পায়। প্রকৃতির পাশাপাশি মনে মনে তাঁদের জন্য একটা সূক্ষ্ম টান অনুভব করি, হয়ত সেই টানই বারবার প্রকৃতির কাছাকাছি এই মানুষগুলোর কাছে তাড়িয়ে নিয়ে যায়।

হাশেমের কাছে চায়ের খোঁজ করে পেলাম না, তার বানানো চা শেষ, চুলাতে আমাদের খিচুড়ি রান্না হচ্ছে তাই চা দিতে পারছে না। বাজারের মসজিদের টিউবওয়েলে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য এগুতেই পাশে আরেকটি পান সিগারেটের দোকানে চা বানাতে দেখে চায়ের অর্ডার দিয়ে হাতমুখ ধোয়ার জন্য মসজিদে রওনা হলাম। মসজিদের টিউবওয়েলে হাতমুখ ধুয়ে ফিরে এসে চা খেতে খেতে আরেক কাপ চা দিতে বললাম। দোকানে দাড়িয়ে প্রথম কাপ চা খেয়ে দ্বিতীয় কাপ নিয়ে পাশে হাশেমের হোটেলে যেয়ে বসে পিয়ালকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য পাঠালাম। আমাদের খিচুড়ি রান্না প্রায় শেষ পর্যায়ে আর ১৫/২০ মিনিট ধমে রেখে নামিয়ে ফেললেই খেতে পারব।

হাশেমকেও আমাদের সাথে খেতে বললাম সে রাজি হল না, জানাল তাঁরা বাজারের সব দোকানদাররা একটি সমিতি করে এবং সেই সমিতির আজকে মিটিং আছে। তার জন্য মিটিং আটকে আছে, রান্না শেষ হলেই সে মিটিং এ দৌড় দিবে। এরই মধ্যে খেয়াল করলাম দুই একজন এসে তাকে মিটিং এ যাওয়ার জন্য তাড়া দিয়ে গেছে। হাশেম কয়েকটা প্লেট ধুয়ে ও চুলা থেকে খিচুড়ির হাড়ি নামিয়ে টেবিলে এগিয়ে দিয়ে বলল যে আমরা খেয়েদেয়ে তাঁবুতে চলে যেতে পারি তাঁর জন্য অপেক্ষা করার দরকার নাই। সে জানালো যে এখানে চুরির কোন ভয় নাই আমরা তাঁবুতে সবকিছু রেখে সবাই এক সাথে তাঁর হোটেল এসে খেতে পারি।

সে পরে এসে দোকান গুছাবে জানিয়ে সে বিদায় নিল। অতএব সবাইকে ডেকে এনে আমরা একসাথে খেতে বসলাম। সবাই বেশ তৃপ্তির সাথে সারাদিন পর অনেকটা খিচুড়ি খেলাম এবং হাড়িতে কিছুটা হাশেমের জন্য রেখে বাকীটা টিফিন বক্সে ভরে নিলাম পরদিনের সকালের নাস্তার জন্য। খাওয়াদাওয়া শেষ করতে করতে হাশেম তাঁর সমিতির মিটিং শেষ করে ফিরে এসেছে, ততক্ষণে ঘরিতে প্রায় ১০টা বাজে। চা খাব কিনা জানতে চাইল, আপত্তি না করে সানন্দে সায় দিলাম।

সে চুলাতে চায়ের হাড়ি চাপিয়ে বেশ তাড়াতাড়ি চা বানিয়ে দিল। চা খেয়ে তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাঁবুতে ফিরে আসতে আসতে প্রায় রাত ১১টা বেজে গেল। চতুরদিকে কিছুটা কুয়াশা থাকলেও আকাশ অনেকটা পরিষ্কার। চাঁদের আলোয় পুরো মাঠটা ও তার আশেপাশটা খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছিল রাতটা মাঠেই কাটিয়ে দেই।

পিয়ালের নিয়ে আসা স্লিপিং ম্যাটটা মাঠে বিছিয়ে শুয়ে শুয়ে শিবলি ও পিয়ালের সাথে গল্প আরম্ভ করলাম। খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে, হিসাব করে দেখলাম আর কয়েকদিন পরই পূর্ণিমা। পূর্ণিমার সময় আমরা হয়ত চলতি নদীর পারে নারায়নতলা, বা জাদুকাটা নদীর পারে বারেক্ টিলা, কিংবা টাঙ্গুয়া হাওরের কাছাকাছি কোথাও থাকব। এই রকম একটা পরিবেশে পূর্ণিমার রাত কাটানো সত্যি একটা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমরা তিনজনই নিজেদের অতীত ট্রেকিং সৃতি নিয়ে আলাপ করতে করতে রাত প্রায় ১টা বেজে গেল।

রাত যতই বাড়তেছে কুয়াশার ঘনত্ব ততোই বাড়তে লাগল, সাথে শীতের তীব্রতাও। কাঁপতে কাঁপতে রীতিমত দাঁতে দাঁত লাগার অবস্থা। বুজা যাচ্ছে আর বাহিরে থাকা যাবে না, তাছাড়া সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে, তাই সবাইকে বিদায় জানিয়ে তাঁবুতে ঘুমাতে গেলাম। চলবে……  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।