আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেন চারদিকে শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন এর উত্তর দেয়ার কি কেউ নেই?

আমি শনজিম।

বলার আছে অনেক কিছু কিন্তু সব কিছু কি বলা হয় বা তা কি আমরা বলতে পারি, তবে কিছু মনের কথা আজ না বলে পারলাম না।
এই দেশ আমার আপনার সকলের, আমার দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। এই দেশের জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তাদের কথা স্মরণ করে আজ আমরা কি করছি? আমাদের যা করণীয় ছিল তা কি আমরা ঠিকভাবে আদায় করছি? প্রশ্ন একটাই সে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মত কেউ আজ আর নেই। সবাইকে বলতে চাই আসুন আমরা একে অপরের গায়ে কাঁদা ছুঁড়া ছুঁড়ি না করে চলুন দেশটার জন্য কিছু করি বা করার চেষ্টা করি।

এই দেশের জন্য রক্ত দিয়েছে হাজারো লাখো মানুষ, তাঁদের সেই আত্মদানের কথা আজ আমরা এভাবে ভুলে যাব? যাব কি আমরা তো ভুলেই গেছি। আচ্ছা যারা শহীদ/মারা গেছেন তাঁদের কথা না হয় একদিকে কিন্তু যারা এই দেশের জন্য (সত্যিকারের) যুদ্ধ করে আজো জীবিত আছেন তাঁরা কি পাচ্ছেন, কিভাবে তাঁরা বেঁচে আছেন? তাঁদের কথা কি আমরা একবারের জন্যও চিন্তা করেছি বা করি, বলতে পারেন কেউ? যে কারনে আজ আমার এই লেখা সেটাই আপনাদের সাথে আজ আমি শেয়ার করবো, একদিন আমার কাছে একটি লোক আসলো কিছু সাহায্যের জন্য, লোকটির একটি হাত নেই। তখন আমি যাই পারলাম লোকটাকে কিছু টাকা সাহায্য করলাম। টাকাগুলো লোকটার হাতে দেয়ার পর সে কিছুক্ষন সেই টাকাগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে সামান্য একটু মুচকি হাসি দেয়, আমি সে ব্যাপারটা লক্ষ করলাম, তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি আমার এই সামান্য সাহায্যে খুশি হননি? লোকটি তখন আমার দিকে তাকিয়ে বলল বাবা আমি খুব খুশি হয়েছি এবং আপনার জন্য আল্লাহর কাছে মন খুলে দোয়া করছি তবে একটি কথা মনে পড়ে গেল এই জন্য.........। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম কি কথা? এই দেশটাকে কেন স্বাধীন করা হয়েছিল জানেন বাবা? লোকটি আমাকে প্রশ্ন করলো।

আমি বললাম হ্যাঁ আমরা যেন স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারি সেই জন্য। তখন লোকটি আমাকে বলল বাবা আমরা কি আজ সত্যি সত্যি স্বাধীনভাবে বেঁচে আছি? সে বলল, জানেন যেই হাতে আপনার কাছ থেকে আমি সাহায্য গ্রহন করলাম এবং যে হাতটি আজ আমার নেই সেই হাতেই একদিন এই দেশের জন্য অস্ত্র তুলে নিয়েছিলাম দেশকে স্বাধীন করবো বলে। দুই হাতেই আমার প্রচুর শক্তি ছিল এবং খেঁটে খেতাম আর দশজন মানুষের মত। আমিও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতাম। নিজের মা, বাবা, ভাই, বোন এমনকি স্ত্রী সন্তানের কথাও ভুলে গিয়ে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলাম শুধু এই দেশ এবং দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে।

যুদ্ধ করেছি, দেশকে স্বাধীন করেছি, অনেক কে হারিয়েছি, হারিয়েছি নিজের স্ত্রীকে হারিয়েছি মূল্যবান হাত। তারপরেও মনে এই আশা ছিল যা কিছু হারিয়েছি তাঁর অভাব পুরন করবে আমার দেশ এবং আমার দেশের মানুষ। কিন্তু তাঁর প্রতিদান হিসেবেই কি আজ আমি ভিক্ষে করছি মানুষের দাঁরে দাঁরে এই আমার পাওনা? আমি এটা বলছিনা যে, আমি যুদ্ধ করেছি বলে আমাকে মানুষ বাহবা দেবে বা মানুষের কাছ থেকে আমি উপঢৌকন নেব বা সাহায্য নেব। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার যে সম্মানটুকু পাওয়ার কথা, আমার যে অধিকার আছে তাও তো আমি পাচ্ছিনা। কেউ কোন কাজ দিতে চায়না আমার একটি হাত নেই বলে, তাই বাধ্য হয়ে ভিক্ষে করছি মানুষের দাঁরে দাঁরে।

যুদ্ধ করেছি দেশের জন্য, মানুষের জন্য, যেন অন্যের গোলামি করতে না হয়, যেন সঠিকভাবে আমরা বাঁচতে পারি সে জন্য। তবে কেন আজ আমি নিঃস্ব, সহায় সম্বলহীন, অঙ্গহীন? সেদিন যদি আমি ঘরের কোনে বসে থাকতাম, শুধুই আমার এবং আমার পরিবারের কথা ভাবতাম তবে আজ হয়তো তাঁরা সবাই আমার সাথেই থাকতো, হয়তো আমার হাতটিও ভালো থাকতো আর আমিও হয়তো স্বাবলম্বী থাকতাম। কেন তবে আমাকে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের দাঁরে দাঁরে হাত পাততে হচ্ছে? আমি না একজন মুক্তিযোদ্ধা আজ আমার সম্মান কি তবে দেশ এবং দেশের মানুষ এভাবে দেবে? কেন আমার আজ এই অবস্থা? এই জন্যই কি দেশকে স্বাধীন করার জন্য আমার ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সেদিন, বলতে পারেন বাবা? এই সেই স্বাধীনতা যার জন্য আমরা দেশকে স্বাধীন করতে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে কেউ শরীরের অঙ্গ হারিয়েছি কেউ হয়েছি শহীদ? লোকটির একটি কথার উত্তর ও আমি দিতে পারিনি।

কান্না জড়িত কন্ঠে লোকটি শেষটায় আমাকে যা বলেছিল তা আজও আমার মাথায় এবং মনে তীরের মত বেঁধে। লোকটি বলেছিল বাবা এই দেশ এরকম স্বাধীন আমরা করতে চাইনি আর এরকম স্বাধীন হবে জানলে কেউ কোনদিন সেই যুদ্ধে অংশগ্রহন করতাম না।

কেন সেই লোকটির এতো আক্ষেপ কেউ কি বলতে পারেন? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে কোথায়, কেন চারদিকে শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন এর উত্তর দেয়ার কি কেউ নেই? আছে আমরাই পারি এই প্রশ্নের সহজ এবং সুন্দর উত্তর দিতে। তাই আজ শুধু একটি কবিতার লাইন আমার বারবার মনে পরে যাচ্ছে, আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।

আসুন আমরা সবাই কাজে বড় হই, সবাই মিলে দেশটাকে সুন্দরভাবে সাজানোর চেষ্টা করি। সব অস্বচ্ছতা, অপূর্ণতা, হাহাকার, রাহাজানি বন্ধের জন্য আমরা তৎপর হই। একবারেই হয়তো সব কিছু ঠিক করা সম্ভব নয় কিন্তু চেষ্টা করেতো দেখতে হবে আর চেষ্টা করে দেখতে বা দেখলে দোষ কোথায়? আজকের যুব সমাজ, সর্বোপরি আপামর সকল জনগনই পারে এইসব অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং সেইসব অসহায় গরিব, দুঃখী মানুষ এবং জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিছু করতে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।