আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজামী-বাবর কাশিমপুর কারাগারে

বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ঠাঁই হয়েছে কাশিমপুর কারাগারের কনডেম সেলে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে নেওয়া হয়েছে এনএসআইয়ের (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা) সাবেক দুই প্রধান রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও আবদুর রহিমকে। তাদের সবাইকেই পরানো হয়েছে কয়েদির পোশাক। ফাঁসির আসামি হিসেবে তারা এখন থেকে জেল কোড অনুসারে সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কারা সূত্র জানায়, গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিজামী, বাবর, রেজ্জাকুল ও রহিমকে নিয়ে তিনটি মাইক্রোবাসে করে পুলিশ ঢাকার দিকে রওনা দেয়।

সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে কাশিমপুরে পেঁৗছায় নিজামী-বাবরকে বহন করা মাইক্রোবাস। অন্যদিকে রহিম-রেজ্জাকুলকে বহন করা গাড়ি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পেঁৗছায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে। কাশিমপুর-১ কেন্দ্রীয় কারাগারের তিন সেলে (কনডেম সেল) ঠাঁই পাওয়া লুৎফুজ্জামান বাবরের পাশেই রয়েছেন ফাঁসির আসামি সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরী ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। মতিউর রহমান নিজামীকে রাখা হয়েছে হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের নীলগিরী ভবনের দ্বিতীয় তলায় (কনডেম সেল)। ওই ভবনে রয়েছেন বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ডিএডি তৌহিদসহ ওই মামলার ফাঁসির আসামিরা।

অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে কঠোর নিরাপত্তায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয় রেজ্জাকুল হায়দার ও আবদুর রহিমকে। পরে তাদের ঠাঁই হয় 'আট সেলে'। ওই সেলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের রাখা হয়েছিল।

কাশিমপুর-১ এর সিনিয়র জেলসুপার জামিল আহমেদ জানান, সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে ফাঁসির আসামি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। জেল কোড অনুযায়ী তাকে সব সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ও অস্ত্র মামলায় ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, এনএসআই'র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুর রহিম, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদফতরের (ডিজিএফআই) পরিচালক (পরে এনএসআই'র মহাপরিচালক) মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া রয়েছেন।

হাস্যেজ্জ্বল নিজামী, দোয়া চাইলেন বাবর : নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম জানান, কয়েদির প্রটোকল নিয়েই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর কারাগারে গেলেন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লুৎফুজ্জামান বাবর ও মতিউর রহমান নিজামীসহ চার আসামি। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম কারাগারের বাইরে উৎসুক জনতা ভিড় করে তাদের একনজর দেখতে। কারা কর্তৃপক্ষের সব প্রস্তুতি শেষ করেই ১০টা ৪০ মিনিটে বের হন জামায়াত নেতা, সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ চারজন আসামি।

বের হয়েই সবাইকে সালাম দিয়ে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় কয়েদির পোশাকে দ্রুত গতিতে গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ একটি লাল মাইক্রোর মাঝের সিটে বসে পড়েন নিজামী। একইভাবে লুৎফুজ্জামান বাবরও একটি চাদরসহ কয়েদির পোশাক পরে অন্য একটি মাইক্রোতে উঠে পড়েন। এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের জন্য দোয়া করবেন, সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ যেন ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। ' এরপর অন্য একটি মাইক্রোয় বাকি দুজন- এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিমকে গাড়িতে তোলা হয়।

এরপর র্যাবসহ প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঢাকায় রওনা হন তারা। ওই চারজনের বিরুদ্ধে আরও মামলা বিচারাধীন থাকায় হাজিরা দেওয়ার জন্য ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে এবং ১০ ট্রাক মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আট আসামি বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলেই আছেন বলে জানান চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার রফিকুল কাদের। কারাসূত্রে জানা যায়, বাবর-নিজামীকে রাখা হবে কেন্দ্রীয় কারাগারের পার্ট-১ (কাশিমপুর) কারাগারে। রেজ্জাকুল হায়দার ও রহিমকে রাখা হবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই। এদের মধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি গ্রেনেড হামলা মামলার তারিখ রয়েছে।

হরতালসহ বিভিন্ন নিরাপত্তার কারণে তাদের আগেই নেওয়া হয়েছে।

রায়ের কপির আবেদন ও আপিল : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন আসামির আইনজীবী কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ফাঁসির ১২ আসামির রায়ের কপি নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার আদালতে আবেদন করেছেন তিনি। তারপর বলতে পারব কাকে কী অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে সাজা দেওয়া হয়েছে, এটি দেখেই আসামিরা জেল আপিল করবেন। তবে মহানগর পিপি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, জেল কোড বিধি-৬০০ অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এর ৩০(ক) অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। অন্যদিকে আইন অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত কেউ আর্থিক সংকটের কারণে জেল আপিল করতে না পারলে সরকারিভাবে করতে পারবেন।

আর যারা পলাতক রয়েছেন তারা গ্রেফতার বা আত্দসমর্পণের দিন থেকে তামাদি আইন অনুযায়ী আপিল করতে পারবেন বলে কারা সূত্রে জানা গেছে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।