আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই মন্ত্রীরা এখন...

সেই সাবেক মন্ত্রীরা এখন হতাশ। দল এবং সরকারে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবস্থানেই নেই তারা। দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরাও সাবেক সেই মন্ত্রীদের বিপক্ষে। কারণ বিগত সরকারের পাঁচ বছরে নেতা-কর্মীরাও তাদের কাছে ঠাঁই পাননি। নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার ত্যাগী নেতা-কর্মীরাও ছিলেন উপেক্ষিত।

কোনো কোনো মন্ত্রীর বাসভবন এবং সচিবালয়ের দফতরে ছিল সুবিধাবাদী ও হাইব্রিডদের আধিক্য। পাঁচ বছরেই এসব মন্ত্রীর সঙ্গে নেতা-কর্মীদের দূরত্ব তৈরি হয় যোজন যোজন। ত্যাগী নেতা-কর্মীরা মনে করেন বরং ক্ষমতার পাঁচ বছর সাবেক অনেক মন্ত্রী সরকারকে করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত। সেই মন্ত্রীদের বেশির ভাগ এখন ভালো নেই। অনেকে নিজের নির্বাচনী এলাকায়ও অবস্থান হারিয়েছেন।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরে-বাইরে নানামুখী বিতর্কের কারণে এবার সাবেক মন্ত্রিসভার ৩৬ জন সদস্যকে বাইরে রেখেছেন। এদের কেউ কেউ অনেক চেষ্টা করেও মন্ত্রিসভায় নাম লেখাতে ব্যর্থ হন। যারা শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে চেয়েছিলেন তাদের মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি দলে ব্যাপক আলোচিত। ডা. দীপু মনিকে ঘিরে সেই সময়ের কয়েকটি ঘটনা রীতিমতো কর্মীদের কাছে হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। মন্ত্রিসভা গঠনের পর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রীদের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের সময় প্রটোকল ছাড়াই স্মৃতিসৌধে প্রবেশের সময় দীপু মনিকে ঘিরে যে অনভিপ্রেত ঘটনার সৃষ্টি হয় তা দলের বাইরেও ব্যাপকভাবে আলোচিত।

এর পরও আশা ছাড়েননি দীপু মনি। প্রধানমন্ত্রীর সানি্নধ্য পেতে ছুটে যান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির পেছনে ছুটে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করেন যা দলের অভ্যন্তরে মুখরোচক আলোচনায় পরিণত। উল্লেখ্য, দীপু মনির সঙ্গে ড. ইউনূস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের অবনতি হয়। প্রতিবেশী দেশও তার পক্ষে ছিল না।

বিএনপিবিহীন নির্বাচনেও শুধু ইমেজ সংকটের কারণে গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী। শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিজ থেকেই দলীয় মনোনয়ন চাননি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন পাননি সাবেক প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ এনামুল হক। সাবেক স্বাস্ব্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক সাতক্ষীরাকে আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছেন। এখন মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন ছেড়ে উত্তরার বাসায় উঠেছেন।

গত পাঁচ বছরে মন্ত্রী থাকাবস্থায় দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা রুহুল হকের কাছে ছিলেন অনেকটা গুরুত্বহীন। স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি এলাকায় ক্রমান্বয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এবার মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল স্বাস্থ্য খাতে বিএনপি-জামায়াতের অনেককে নিয়োগ দিয়েছেন, দলের সুপারিশ শোনেননি। এ ছাড়াও একজন মিঠুকে নিয়ে ছিলেন সমালোচিত। কর্মীরা এখনো তার ওপর ক্ষুব্ধ।

সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে। নিজ এলাকায় দলীয় কর্মীদের কাছে তার জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোঠায়। মন্ত্রী থাকাবস্থায় ত্যাগী নেতা-কর্মীদের ভুলে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তিনি। পাঁচ বছরে নিজের পছন্দের লোকদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দিলেও ত্যাগী কর্মীদের তিনি পদে পদে বঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সরকারি চাকরিতে মন্ত্রী হিসেবে সুপারিশের ক্ষেত্রেও দলের ত্যাগী কর্মীদের বঞ্চিত করেছেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও শহরের সরকারি কলেজের পাশে মাঝেমধ্যে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন তিনি। গ্রামের বাড়ি রামনাথে ছুটে যান দলীয় কর্মীদের সানি্নধ্য পেতে। এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হলেও মাঠপর্যায়ে তার সাড়া নেই। দলের পরিচয় না থাকলেও ইন্দ্রনাথ বাবুর সঙ্গে সখ্যের কারণেই সাবেক এই মন্ত্রী দলীয় কর্মীদের কাছে বেশ বিতর্কিত হয়ে ওঠেন। তার বিপক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম বাও একটি বলয় সৃষ্টি করছেন যা রমেশের জন্য রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে এলাকাবাসীর অভিমত।

সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের সামনে এখন শুধুই হতাশা। জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ) থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য মন্ত্রী থাকাবস্থায় পাঁচ বছরে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে টানেননি। মিডিয়াকে তিনি আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দূরে ঠেলেছেন। এলাকায় ছিলেন অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন। নিজ এলাকার সার্বিক উন্নয়নেও তার ভূমিকা ছিল উদাসীন।

দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে পাশ কাটিয়ে দেওয়ানগঞ্জের পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে অনেকটা একলা চলো নীতির কারণেই জনপ্রিয়তায় চিড় ধরে আজাদের। মন্ত্রিত্ব হারানোর পর এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ডে অনেকটা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে কর্মীদের কাছে টানতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। মন্ত্রী থাকার পাঁচ বছরে ড. রাজ্জাক অন্য মন্ত্রীদের তুলনায় এলাকায় যতটা সম্ভব গণসংযোগ সচল রেখেছেন।

এলাকায় তার জনপ্রিয়তায় খুব একটা হেরফের না ঘটলেও নিজ এলাকায় এখন তিনি আগের তুলনায় গুরুত্বহীন। ড. রাজ্জাক দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে মাঝেমধ্যে অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মাঝেমধ্যে কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান সাবেক এই মন্ত্রী। নিজ এলাকায়ও দলীয় কর্মকাণ্ডে আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ শারীরিকভাবে অসুস্থ।

নিজেই এবার দলীয় মনোনয়ন চাননি। হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরে মন্ত্রিত্ব চালালেও তাকে ঘিরে দলে কোনো বিতর্ক নেই। এলাকার মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা কমেনি। হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে নিজ বাড়ি হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে সাবেক এই মন্ত্রী থাকছেন ঢাকার মিরপুরে। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে সাবেক এই মন্ত্রীকে তিনবার 'ডায়ালাইসিস' দিতে হচ্ছে।

সাবেক শ্রমমন্ত্রী, দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর অবস্থা অনেকটাই নাজুক। নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) থেকে এবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। গত পাঁচ বছরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এই মন্ত্রী নিজ এলাকায় রীতিমতো কোণঠাসা। নিজ নির্বাচনী এলাকাই শুধু নয়, গোটা নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগে রাজুবিরোধী একটি শক্ত অবস্থান দলের অভ্যন্তরে। তার মন্ত্রিত্ব হারানোর খবরে এলাকার মানুষ খুশি।

সাবেক পৌর মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডের পর রাজুর জনপ্রিয়তা ক্রমে নিম্নগামী হতে থাকে। সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক মন্ত্রিত্ব হারানোর পর সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়েছেন। দলীয় কর্মকাণ্ডে তাদের সরব উপস্থিতি কর্মীদের দৃষ্টি কাড়ছে। দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি ধানমন্ডির কার্যালয়েও সাবেক এই দুই মন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। ড. হাছান দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে ব্রিফিং দিচ্ছেন মিডিয়াকে।

জাহাঙ্গীর কবীর নানক সারা দেশে সাংগঠনিক তৎপরতায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর নির্বাচনের পর নিজ জেলা চাঁদপুরে গিয়েছিলেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতির শুরু মন্ত্রী থাকাবস্থায়। পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি এখনো। সাবেক এই মন্ত্রী ঢাকায় বেশির ভাগ সময় কাটান গুলশানে তার ব্যক্তিমালিকানাধীন ফার্মার্স ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে।

সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের অবস্থা অনেকটা নিজ ঘরে পরবাসের মতোই। এলাকাবাসীর মতে, সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে ডুবিয়েছেন মূলত তার দুই ছেলে সোহেল সরকার ও বকুল সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের সব উন্নয়নকাজে টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে পুলিশে চাকরি দেওয়ার নামে দলের অসংখ্য নেতা-কর্মীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থর্ সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের পর দলীয় সভা-সমাবেশে কর্মীদের তোপের মুখে পড়ছেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রিত্ব হারানোর পর মন ভালো নেই আহাদ আলী সরকারের।

সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার নিজ জেলা পটুয়াখালীতে এখনো সমালোচিত নানামুখী দুর্র্নীতির অভিযোগে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মন্ত্রী থাকাবস্থায় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল নামের তিনটি সেতু নির্মাণের টেন্ডারকাজে প্রভাব খাটিয়েছিলেন। সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী নিজ এলাকায় তার হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধারের কাজে ব্যস্ত থাকলেও কর্মীদের সাড়া মিলছে না। বরং তার পক্ষে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামিয়ে বিতর্ক টেনে এনেছেন। সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, আফসারুল আমিন, আবদুল লতিফ বিশ্বাস, মন্নুজান সুফিয়ান, ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান ফকির, শাজাহান মিয়া মন্ত্রিত্ব হারানোর পর নিজ নিজ এলাকায় তুলনামূলক বেশি সময় দিচ্ছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুকে নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায় নানামুখী বির্তকের ঝড় বইছে। বিশেষ করে নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগ তাকে দলীয় কর্মীদের কাছে করেছে বির্তকিত। দলের সিনিয়র নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্ত্রিত্ব হারানোর পর কেন্দ্রের রাজনীতিতে সময় দিচ্ছেন। সাংগঠনিক কর্মসূচিতে তার অংশগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।