আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

০৬-০২-২০১৪ তারিখের ডায়েরী



সকাল থেকেই মন খারাপ । রাতের দীর্ঘ ঘুম থেকে জেগে ফজরের নামাজ আদায় করে শরীর খারাপ থাকার কারনে আবারও বেশ লম্বা চওড়া একটি ঘুম দিয়েছিলাম । উঠতে উঠতে দেখি সকাল সাড়ে আটটা বেজে গেছে । বালিশের নিচে রাখা মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখি মেঝ ভাইয়ের বউ মানে মেঝ ভাবী কল দিয়েছিল সকাল সাড়ে সাতটায় । তড়িঘড়ি করে কল ব্যাক করলাম ।

ভাবী কল রিসিভ করতেই শুনলাম তার আশে পাশে অনেক মহিলাদের গলার আওয়াজ । এ আওয়াজ শুনে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না কেননা ভাবী খুব মিশুক প্রকৃতির হওয়ার কারনে তার কাছে মহিলারা থাকেই । কিন্তু ফোনে ভাবী যা বলল তা শুনে খুবই কষ্ট অনুভব্ করলাম । বরিশালে ভাবীরা যে বাসায় বাড়া থাকে ( বাংলাবাজারের খান মঞ্জিলের তিন তলায়) । সে বিল্ডিংয়ের প্রতি তলাতে চারটি করে ফ্লাট থাকায় চারটা ফ্লামিলি থাকে ।

ভাবীদের ঠিক উল্টো অর্থ্যাৎ দরজার মুখোমুখি দরজার ফ্যামিলিটির সদস্য সংখ্যা চারজন । স্বামী স্ত্রী ও একটি মেয়ে ও একটি ছেলে । মেয়েটির নাম হোমায়রা হিমু । বয়স সতের কি আঠারোর মধ্যে হবে । পড়াশুনা করত বরিশাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে একাদশ শ্রেনীতে ।

সঠিক জানিনা তবুও মনে হয় মাস চারেক আগে বিয়ে হয়েছিল । স্বামী ঢাকায় কোন এক ফার্মে জব করে । আমি প্রায়শই বরিশাল থাকার কারনে বাসার মধ্যে অথবা ছাদে অবস্থান করতাম । তবে দীর্ঘ দিন থাকার মধ্যেও মেয়েটিকে বার দু’য়েক দেখেছি । সর্বশেষ গত সপ্তাহে আমি সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় মেয়েটি ওপরে ওঠছিল ।

কানের কাছে মোবাইল ছিল বলে আমাকে সম্ভবত ততোটা খেয়াল করে নি । আমিই পাশ কাটিয়ে নেমে গিয়েছিলাম । ভাবীর কাছে মাঝে মধ্যে আসত অথবা ভাবী তাকে ডাকত । আমার সাথে কখনো কথা হয় নি । আজকে শত চেষ্টা করেও তার অবয়ব স্মরণ করতে পারছি না ।

তবে গাঁয়ের রং ফর্সা ছিল এবং দেখতে অকেটাই সুশ্রী ছিল সে ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত । এমন একটি মেয়ে ০৫/০৫/২০১৪ তারিখ রাতে চারতলার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সেটা ভাবতেই যেন কষ্ট হয় । ভাবীর সাথে কথা বলে যেটুকু জানতে পেরেছি তাতে মনে হয়েছে স্বামীর সাথে বোঝা-পরা ভাল ছিল না । প্রায়ই ঝগড়াজাটি হত । স্বামী-স্ত্রীর কথোপকথনের অনেক রেকর্ডও নাকি আছে ।

সে যাই হোক স্থানীয় পত্রিকা ‘আমাদের বরিশাল’ এর রিপোর্ট পড়ে মনে হয়েছে আত্মহত্যার রাত্রে প্রেমের সূত্রধরে মায়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে ।

বয়সটা আবেগের ছিল তাতে কোন সন্দেহ নাই । মায়ের বকুনি ভাল লাগে নি তাই আত্মহত্যা করে থাকলে সেটাও ভূল সিদ্ধান্ত ছিল । যে যাবার সে চলে গেছে । মা, বাবা এবং ছোট ভাই হাজার বার ডাকলেও সে আর ফিরে আসবে না ।

আমি ঘটনাটিকে ঠিকমত ফুটিয়ে তুলতে পারিনি অথবা তুলতে চাইও না । এ ঘটনা থেকে এদেশের প্রতিটা ছেলেমেয়ের অনেক কিছু শেখার আছে । বাবা মা সন্তানের জন্য যে সিন্ধান্ত গ্রহন করুক না কেন তার মধ্যে অবশ্যই কোন না কোন কল্যান নিহিত আছে । একটি কাজ করার আগে প্রত্যেকেই হাজার বার ভাবুন । আমি এ কাজটি কেন করছি ? একটি ভূল সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেললে জীবন চলে যেতে পারে যেমনটি হয়েছে হিমুর ক্ষেত্রে ।



রাজু আহমেদ


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।