আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামীলীগ যেমন জনগণকে ভোট কেন্দ্রে নিতে পারে নাই , বিএনপিও তেমন আন্দোলনে নামতে পারে নাই



আওয়ামীলীগ বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করে ফেলবে , জাতিসংঘ সহ পশ্চিমা বিশ্বের দৌড়ঝাঁপ সব ভেস্তে যাবে, বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হবে – আন্দোলন করতে পারবে না ইত্যাদি ৫ই জানুয়ারির আগে ভাবা যায় নাই । শুধুমাত্র ভারতের উপর নির্ভর করে আওয়ামীলীগ সবকিছু সফল করেছে এমনটাই মনে করা হয় । আমার কাছে বিষয়টা এত সরল নয় । এখানে পশ্চিমা বিশ্বের রাজনীতির সাথে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার রাজনীতির দ্বন্দ্বেরও একটি প্রতিফলন ঘটেছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তি আফগানিস্থান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে বংগপসাগরের কাছাকাছি রাখার একটি পরিকল্পনা দীর্ঘদিন থেকে করে আসছে এমনটাই আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করে ।

সেই প্রশ্নে বাংলাদেশ এর সাথে আমেরিকার একটি দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ জড়িত । সেই স্বার্থ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষমতা বদলের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে এবং বাংলাদেশের দুই রাজনৈতিক শক্তিও মার্কিনের স্বার্থের সাথে নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বার্থকে কাজে লাগানরও চেষ্টা করেছে । কিন্তু বাধ সেধেছে ভারত । বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এত দৌড়ঝাঁপ তাই বলে এবং বাংলাদেশের মার্কিন রাষ্ট্রদূত দিল্লী গিয়ে ফয়সালা করার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে । কিন্তু চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত দ্বন্দ্ব সহ ক্ষমতার প্রতিযোগিতা থাকলেও চীন – ভারত কেউ মার্কিন রণতরী এই উপমহাদেশের সিমানায় দেখতে রাজী নয় ।

বাংলাদেশের জনগণও কতটা রাজী এই বিষয়টি বিরোধী রাজনীতিবিদরা মাথায় আনেননি বলেই মনে হয় । আর আনলেও পররাষ্ট্র কূটনীতিক তৎপরতায় যথেষ্ট ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে । ভারতের সাথে কূটনীতিক চালেও যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে দেখা যায়নি বিরোধী নেত্রীকে । ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখরজির বাংলাদেশ সফরের সময় সৌজন্য সাক্ষাৎ পর্যন্ত করেননি । এই পরামর্শ যারা দিয়েছিল তারা একটি গুষ্ঠি স্বার্থের অবস্থান থেকে দিয়েছিল ।

দলিয় স্বার্থের অবস্থান থেকে নয় । বিরোধী নেত্রীকে বরাবরই দেখা গিয়েছে ব্যক্তি ও গুষ্ঠি স্বার্থের অবস্থান থেকে দল পরিচালনা করতে । দেশ-জাতি বা দলীয় স্বার্থের অবস্থান থেকে নয় । তা না হলে জামাত প্রশ্নে একটি নীতিগত রাজনৈতিক অবস্থান জনগণের কাছে পরিষ্কার করা উচিৎ ছিল । এখন কোনটা নীতি আর কোনটা কৌশল তা জনগণের কাছে পরিষ্কার নয় ।

তা ছাড়া জোটবদ্ধ আন্দোলনের বাইরে বিএনপির নিজস্ব কোন কর্মসূচী বা আন্দোলন নেই । ফলে বিএনপির কর্মী সমর্থকরা দলের জন্য মাঠে নামতে প্রস্তুত কিন্তু জোটের জন্য নয় । বিএনপি - জামাত জোট ক্ষমতায় থাকা কালিন জামাতের মন্ত্রিত্ব অনেক বিএনপি কর্মী সমর্থকরা মেনে নিতে পারে নাই , সেই সাথে হাওয়া ভবনের হাওয়া পুনারায় কেউ গায়ে মাখাতে রাজী নয় । এই বিষয়গুলি আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারন । মানুষ এখন উন্নয়ন চায় ।

সেই উন্নয়ন একদলীয় ব্যবস্থা থেকে আসবে না গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে আসবে তা বোঝার মত রাজনৈতিক শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গি জনগণের মধ্যে নেই । জনগণ মাত্র গত ২২ বছর যাবত ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে । কিন্তু রাষ্ট্রের অন্যন্য গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থার ফল ভোগ করতে পারে নাই । কারন গত ২২ বছরে দুই দলই জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে । গণতন্ত্রের নামে জনগণকে আন্দোলনে নামিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্রকে শুধু লুটপাটের মেশিন হিসেবে ব্যবহার করেছে ।

রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেনি বিধায় জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কোন স্বাদ নেই । থাকলে জনগণ গণতন্ত্র হরন করা মেনে নিত না । এখন একদলীয় ব্যবস্থা থেকে জনগণ সামান্যতম অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া পেলে তাকে গ্রহণও করতে পারে । যদিও একদলীয় ব্যবস্থা পুঁজিবাদী রাষ্ট্র বিকাশের সহায়ক নয় । বরং পরিপন্থী ।

পুজির বিকাশের একমাত্র রাস্তা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ( বুর্জোয়া গণতন্ত্র ) । তারপরও চীনে একদলীয় ব্যবস্থায় পুজির বিকাশ ঘটেছে , কারন চীনের পুজির বিকাশ রাষ্ট্রের জনগণের জীবন মানকে উন্নত করেছে । সেই সাথে চীনের কংগ্রেস প্রতিনিধি জনগণের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত ।
পুরো বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আওয়ামীলীগ একটি একদলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েম করলো শুধুমাত্র ভারতের সমর্থনে । ভারত গত ৫ বছরে আওয়ামীলীগ থেকে অনেক সুবিধা নিয়েছে ।

আওয়ামীলীগও দিয়েছে । রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে রাজনৈতিক সুবিধা বেশি নিয়েছে । কেউ দিলে কারও নিতে আপত্তি নেই । এই দেয়া নেয়ার মধ্যে যে অসামঞ্জস্য আছে তা বিএনপিকে কখনও বলতে শোনা যায়নি । বরং প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্কের কথাই বলে এসেছে ।

এই দেয়া নেয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ আছে কিন্তু প্রতিবাদ নেই । বিশ্বায়নের এই যুগে মধ্যবিত্তরা বরং ভারতের সাথে আরও গভীর সম্পর্কেও মেনে নেবে । কিন্তু ভারত যখনই এ দেশের অর্থনীতির উপর আগ্রাসন চালাবে তখনই শুরু হবে দুই দেশের পুজির দ্বন্দ্ব । এই দ্বন্দ্ব রাজনীতিতে ব্যপক প্রভাব ফেলবে । এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নিজ দলের পুঁজিপতিরাও তা মেনে নিবে না ।

গত ৪২ বছরের লুটেরা পুজির সবচেয়ে বড় অংশ এখন ক্ষমতাসীনদের দখলে । দুর্বল রাষ্ট্র যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে লুটেরা পুজি বিনিয়োগ সহজ বিধায় ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা থেকে নামানো অনেক কঠিন । ঘটনাটি ধাপে ধাপে ঘটেছে । স্বৈরাচার এরশাদ লুটপাটের রাজনীতিকে প্রথম বৈধতা দেয় । ১৯৯০ সালে গনভ্যুত্থানে এরশাদের পতন হয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও এরশাদের দেখানো লুটপাটের রাজনীতি আরও গেঁড়ে বসে ।

পরবর্তী প্রতিটি সরকারের আমলেই তা আরও দিগুন হয় । এইভাবে এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে লুটেরা স্রেনি গোটা রাজনীতিকে দখলে নিয়ে রাষ্ট্রকেও দখল করে ফেলেছে । ফলে ক্ষমতার বাইরের লুটেরা শ্রেণী বিএনপির উপর ভর করে আবার ক্ষমতায় আসতে চাইছে তা জনগণের কাছে পরিষ্কার । কিন্তু ক্ষমতাসীন লুটেরা শ্রেণী ক্ষমতা ছাড়তে রাজী নয় । তারা দেশের জনগণ বাদ দিয়ে এখন বিদেশি শক্তির হাত ধরেছে ।

সেই হাত ধরায় ক্ষমতাসীনরা বেশি এগিয়ে , কারন তারা ক্ষমতায় এবং ক্ষমতায় থাকলে বিদেশীদের অনেক কিছু তাৎক্ষনিক দেয়া যায় ।
দুই দলই রাজনীতিকে বিসর্জন দিয়েছে । রাজনীতি যেখানে বিসর্জিত হয় জনগণ সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় । কারন রাজনীতি জনগণের কথা বলে । রাজনীতির মাধ্যমে জনগণ নিজেদের শিক্ষিত জাতী হিসেবে গড়ে তুলে , নিজেদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা খুজে পায় , নিজেদের কৃষ্টি – সংস্কৃতিকে বিকশিত করে ।

সেই রাজনীতি যেখানে খুজে পাবে না, জনগণ সেখানে যাবে না । সেইজন্যই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামীলীগ যেমন জনগণকে ভোট কেন্দ্রে নিতে পারে নাই , বিএনপিও তেমন আন্দোলনে নামতে পারে নাই । বর্তমান এই পরিস্থিতিতে ইতিপূর্বে বাংলাদেশের জনগণ পড়ে নাই । এটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি নতুন প্রেক্ষাপট , নতুন অভিজ্ঞতা । ফলে এই ৫ই জানুয়ারি হচ্ছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রাজনীতির টারনিং পয়েন্ট ।


রাজনীতি বিবর্জিত এই দুই দলকে ব্যবহার করা ছাড়া বিদেশিদের এখানে দর কষাকষির কিছু নেই । যেহেতু আওয়ামীলীগ ভারত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত , যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের কাছে দর কষাকষি না করে ভারতের সাথে করছে । এর বিপরীতে বিএনপিকে দেখা গেছে মার্কিনের কাছে ধর্না দিতে । মার্কিনীরা বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য সর্বোচ্চ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে । কিন্তু বাংলাদেশ তো আর উত্তর কোরিয়া বা সিরিয়ার মত ইস্যু না যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশ নিয়ে মেতে থাকবে ।

তাদেরও এই ইস্যুতে কূটনৈতিক তৎপরতার একটা নির্দিষ্ট সীমা আছে । ঠিক ততটুকুই তারা করেছে । ফলে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারত ও মার্কিনের মধ্যে একটি কূটনৈতিক যুদ্ধ দেখা গিয়েছে এবং আপাতত ভারত জয়লাভ করেছে কিন্তু মার্কিনের কূটনীতি ব্যর্থ হয়েছে বলা যাবে না । ভারত ও মার্কিনের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতায় অভিজ্ঞতার ব্যাপক ফারাক রয়েছে । ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন থেকে দেখা গেছে যে বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের ন্যূনতম আস্থা নেই ।

সরকার ও রাষ্ট্রের সাথে জনগণের দূরত্ব বাড়লে তার পরিনতি কি হয় ভারতের জানা না থাকলেও দুইশ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মার্কিন কূটনীতিবিদদের সেই অভিজ্ঞতা আছে । ভারত ইতিমধ্যেই এদেশের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধী জনমত তৈরি করেছে যা মার্কিনীরা করেনি বরং মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে দেখা গেছে গ্রাম গঞ্জে সমাজসেবা করে ঘুরে বেড়াতে ।
৫ই জানুয়ারির নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণে হলে জনগণ একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত থাকতো কিন্তু বর্তমানে জনগণের সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই । এই সরকার এর প্রতি জনগণের কোন দায়িত্ব নেই আবার সরকারেরও জগণকে শাসন করার অধিকার নেই – এটা সংবিধানের অংশ । কারন বাংলাদেশ একটি গন প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ।

এই রাষ্ট্রে জনগণকে শাসন করার ক্ষমতা ও অধিকার কেবল মাত্র জগনের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারের । জনগণ এটা ভালই বোঝে । আর বোঝে বলেই ৮২-৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জনগণের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল এবং আন্দোলনের মাধ্যমে ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনেছিল । ভোটাধিকার হচ্ছে জনগণের সবচেয়ে বড় সম্পদ যা দিয়ে জনগণ রাজনীতি চর্চা করে । এই অধিকার অর্জন করতে ৯ বৎসর ( ৮২-৯০ ) অনেক রক্ত দিতে হয়েছে ।

২৩ বৎসর পর জনগণ সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে । কিন্তু বিরোধীদলের আন্দোলনে জন সম্পৃক্তটা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি । এর অন্যতম কারন বিএনপির উপর জনগণের আস্থার অভাব রয়েছে । পূর্বতম শাসন কালের অভিজ্ঞতাই তার কারন । আর একটি বড় কারন শ্রেণী চরিত্র ।

উভয় দলই লুটেরা শ্রেণির প্রতিনিধি । ফলে বিএনপি নিজেকে কোন ভাবেই প্রমান করতে পারে নাই যে তারা ক্ষমতায় আসলে শাসন ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হবে , অর্থনৈতিক গতি আরও তরান্বিত হবে , পররাষ্ট্র নীতিতে জাতীয়তাবাদের প্রতিফলন ঘটবে । বরং জনগণ বিএনপিকে দেখেছে মার্কিন ও পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকিয়ে থাকতে । আন্দোলনের ক্ষত্রেও দেশের অর্থনীতির প্রতি তাদের কোন দায় দায়িত্ব আছে বলে লক্ষ্য করা যায়নি । ফলে ব্যবসায়িক মহল গোটা আন্দোলনে ছিল বিরক্ত ও আতংকিত ।

বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুঁজিপতিদের সমর্থন না থাকলে সেই আন্দোলন সফল হয় না । বিএনপির আন্দোলনের ডাক ছিল গণতান্ত্রিক কিন্তু আন্দোলনের ভাষা ছিল নৈরাজ্যমুলক । নৈরাজ্য কখনও রাজনীতিকে গতিশীল করে না । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে রাশিয়ায় , চীনে , ভিয়েতনামে , সর্বশেষ নেপালে কমিউনিস্টদের নেতৃতে নিরাজ্য বা সহিংস আন্দোলন ছিল । কিন্তু সেটা ছিল শ্রেণী স্বার্থে ।

সমাজের সবচেয়ে বড় অংশ তথা শ্রমিক কৃষকের স্বার্থে । শ্রমিক কৃষকরা সরাসরি সেই সমস্ত আন্দোলনে অংশ নিয়েছে । কিন্তু একই শ্রেণির ক্ষমতা দখলের সহিংসতায় বৃহত্তর নিপীড়িত জনগণ কেন অংশ নিবে ? এই সোজা সাপটা বিষয়টা বোঝার মত রাজনৈতিক ব্যক্তিরও বিএনপিতে আভাব আছে বলেই প্রতিয়মান হয় ।
একতরফা নির্বাচন করে আওয়ামীলীগ আপাতত কয়েকটি বিষয়ে জয়লাভ করেছে । একঃ প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে পেরেছে , দুইঃ ভারতের সাথে সম্পর্ক গভীর করে মার্কিনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে পেরেছে যা এদেশের রাজনীতিতে প্রথম , তিনঃ ব্যপক কালো টাকা তৈরি করেছে যা তাদের রাজনৈতিক চরিত্রকে ভিন্ন রুপ দিবে ।

আর যে সমস্ত বিষয়ের কারনে আওয়ামীলীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে তা হচ্ছে একঃ অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে জনগণের ভোটাধিকার হরন করেছে, দুইঃ ভারতের সাথে সম্পর্কটাকে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে যে বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের স্বাধীন পররাষ্ট্র কূটনীতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে , তিনঃ ভারতের স্বার্থ নিয়ে কাজ করছে যার কারনে এদেশে ভারত বিরোধী একটি জনমত তৈরি হয়েছে যা ভারতের জনগণকে ভবিষ্যতে বিব্রত করতে পারে , আর এই কাজটি কোন রাজনৈতিক নীতিগত অবস্থান থেকে করছে না স্রেফ ক্ষমতায় থাকার জন্য করছে । চারঃ আওয়ামীলীগ একটি অগণতান্ত্রিক কাঠামোয় প্রবেশ করায় গণতান্ত্রিক সমস্ত অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত থাকবে , পাচঃ জনগণকে শাসন করতে গিয়ে ও বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক দাবিকে দমন করতে গিয়ে বল প্রয়োগের আশ্রয় নিতে হবে যার কারনে দলটির জনবিচ্ছিন্নতা বাড়বে ।
সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দুই দলই একই শ্রেণি চরিত্রের হওয়ায় জনগণ যে কোন একটাকে বেছে নিবে এবং নিপীড়িত শ্রেণির পক্ষে কথা বলার আর একটি দল খুজে নেয়ার চেষ্টা করবে । এঁর অন্যতম কারন রাজনীতিতে বিশ্বায়নের যে বৈশিষ্ট তৈরি হয়েছে তাতে ভারত, পাকিস্থান, আমেরিকা , চীন , রাশিয়া ইত্যাদি দেশ সমূহ নিজেদের ভিতর ইতিমধ্যেই পুজির অবাধ প্রবাহ তৈরি করেছে । পুজির এই সীমানাহীন সঞ্চালনের কারনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আস্তে আস্তে কমে আসছে ।

বাংলাদেশের সাথে ভারতের বাণিজ্যের চাইতে ভারতের সাথে পাকিস্থানের বানিজ্য ও চীনের বানিজ্য অনেক বেশি । এবং বাণিজ্যের স্বার্থে সিমান্তে সুযোগ সুবধাও ভারত – বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে অনেক বেশি । বরং জামাতের রাজনীতি নতুন মোড় নিবে । জামাতকে এই সরকার শুদ্ধ করে দিচ্ছে ফলে ভবিষ্যতে জামাত একটি ইসলামিক দল হিসেবে জনগণের একটি বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব করবে । যারা বলে জামাত একটি নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দল তাদের সাথে আমার দ্বিমত আছে , কারন জামাত ভোটের রাজনীতি করে , ভোটের রাজনীতি ও নৈরাজ্য একই সাথে জনগণ গ্রহন করে না ।

বিএনপি ইতিমধ্যেই সংস্কারপন্থী কাতারে ফেলে বেশীর ভাগ ত্যাগি ও পুরনো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতাদের দলের বাইরে রেখেছে । এখন শোনা যাচ্ছে পুনরায় শুদ্ধি অভিযান চালাবে । এতে করে দলটি আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবে । তাছারা লন্ডন থেকে তারেক জিয়ার ভাষণের মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে দ্বৈত নেতৃত্বও লক্ষ্য করা যাচ্ছে । তারেক জিয়ার রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা দলকে আরও ক্ষতিগ্রস্থ করবে ।

তারেক জিয়ার উচিৎ সুধুমাত্র ঐক্যের প্রতিক হিসেবে দলের মধ্যে থেকে রাজনীতিবিদের মাধ্যমে দল পরিচালনা করা । তা না করে উনি নিজেই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের নির্দেশ দিচ্ছেন – যা শমসের মবিন চৌধরির সাথে টেলি সংলাপে লক্ষ্য করা যায় । এই দ্বৈত ও অনভিজ্ঞ নেতৃত্বের কারনে দলটিকে এখন খেসারৎ দিতে হচ্ছে । এই গুলো না সুধরালে আরও দিতে হবে । টেলিভিশন টক শোতে ইতিমধ্যেই বিএনপির পক্ষে কথা বলা লোক অনেক কমে গিয়েছে এবং দলীয় নেতারাতো টক শোতে আসেই না ।


পরিশেষে ছোট করে বলা যায় , বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি পরিবর্তন অত্যাবশ্যক । কোন একটি পুরনো প্রক্রিয়া বিলুপ্ত হয় যখন নতুন একটি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার জন্য অভ্যন্তরে তার বৈশিষ্ট বিদ্যমান থাকে । এর উপর একটি বিশদ লেখার পরিকল্পনা আছে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।