আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন ছিলেন তিনি? প্রিয়নবী স: এর অপূর্ব রুপ-সৌন্দর্য ও চরিত্রের বিবরণ

সত্যকে মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করিনা

হিন্দ্ বিন আবু হালার বর্ণনা: রাসূল ( সঃ ) সত্ত্বাগত ভাবে মহান ছিলেন, মানুষের দৃষ্টিতেও ছিলেন প্রভূত মর্যাদার অধিকারী। পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত তার চেহারা মুবারক ঝলমল করত। মধ্যমাকৃতির চেয়ে সামান্য দীর্ঘ এবং খুব দীর্ঘাঙ্গী লোকের তুলনায় বলা যায় একটু খাটো ছিলেন।

তাঁর মাথা মুবারক একটু বড় ছিল। তাঁর চুল মুবারক ছিলো সামান্য ঢেউ খেলানো,সামান্য কোঁকড়ানো! অনায়াসে সিঁথি করা গেলে সিঁথি কাটতেন,অন্যথায় সিঁথি কাটতেন না।

চুল মুবারক যখন ওয়াফরা (এক প্রকার লম্বা চুল)করে রাখতেন তখন তা কানের লতি অতিক্রম করত।

তিনি লালিমা মিশ্রিত উজ্জ্বল বর্ণের ছিলেন। কপাল মুবারক ছিল বেশ উন্নত। ভ্রু ছিলো চিকন সরু ও ঘন লম্বা পাপড়ি বিশিষ্ট। দু চোখের ভ্রু পৃথক পৃথক ছিলো।

মিলানো ছিলো না। সেখানে একটি রগ ছিলো, রাগের সময় তা ভেসে উঠত।

নাসিকা মুবারক সুদীর্ঘ,খাড়া ছিল। তাতে এক ধরণের নূর চমকাত। কেউ গভীরভাবে লক্ষ্য না করলে মনে করত তিনি প্রকাণ্ড নাক বিশিষ্ট।

দাঁড়ি মুবারক ঘন ছিল। গণ্ডদ্বয় ছিল মসৃণ। মুখ ছিল প্রশস্ত। দন্ত মুবারক ছিল আলাদা আলাদা (একটির উপর অন্যটি উঠানো ভাব ছিল না)

বুক থেকে নাভি পর্যন্ত পশমের সরু একটি রেখা ছিল (স্বপ্ন যোগে তা দেখার সৌভাগ্য অধম এ লেখকের হয়েছে, প্রশংসা আল্লাহর জন্যই)

তাঁর গর্দান মুবারক এতো উন্নত ও সুন্দর ছিল যে, মনে হত যেন হাতির দাঁত দ্বারা নির্মিত পুতুলের গর্দান, তবে তা ছিল রুপার মত ঝলমলে। সুসামঞ্জস্য পূর্ণ গড়নের অধিকারী ছিলেন তিনি।

সুদৃঢ় মজবুত ছিল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। পেট ও বুক (উচ্চতায়)সমান ছিল। বুক বেশ প্রশস্ত ছিল। দু কাঁধের মাঝে বেশ দূরত্ব ছিল। জোড়ার হাড়গুলো মোটা ছিল।

আবরণবিহীন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ খুব উজ্জ্বল ছিল।

বুকের উপরিভাগ থেকে নাভি পর্যন্ত পশমের চিকন রেখা ছিল ,তবে বুকের দু পাশ ও পেট লোম শূণ্য ছিল। এছাড়া উভয় বাহু,উভয় কাঁধ ও বুকের উপরি ভাগ লোম যুক্ত ছিল।

তাঁর উভয় হাতের বাহু ও হাতের তালু প্রশস্ত ছিলো। হাত পায়ের আঙ্গুল গুলো মাংসল ও লম্বা ছিল ।

উভয় পায়ের তালুর মাঝখান গভীর ছিল,পায়ের উপরিভাগ মসৃণ ছিল,ফলে পানি ঢাললে তত্ক্ষণাত্‍ গড়িয়ে পড়ত।

যখন হাঁটতেন তখন পা তুলে তুলে দৃপ্ত পদে হাঁটতেন (তাতে মেয়েলী ভাব থাকত না)সামনের দিকে ঝুঁকে স্বচ্ছন্দ ও কিছুটা দ্রুত গতিতে হাঁটতেন। যখন হাঁটতেন (সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে হাঁটায়) মনে হত তিনি যেন নিম্নভূমিতে অবতরণ করছেন।

কোন দিকে তাকানোর সময় পূর্ণ রুপে তাকাতেন (তথা কানি চোখে তাকাতেন না, যা অহংকারীদের অভ্যাস) । দৃষ্টি অবনত রাখতেন।

উপরের চেয়ে নীচের দিকেই তার দৃষ্টি বেশী থাকত। সাধারণতঃ স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকাতেন (ছানাভরা ও বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকাতেন না) তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে সামনে রেখে নিজে পিছনে পথ চলতেন । কারো সাথে দেখা হলে তিনি আগেই সালাম দিতেন। (সূত্রঃ শামায়েলে তিরমিযী। হাদীস নং ৭)

দু কাঁধের মাঝখানে ছিল মহরে নবুওয়াত।

তিনি সর্বশেষ নবী। তিনি ছিলেন প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী,শ্রেষ্ঠ দানবীর। ছিলেন সবচেয়ে সত্যবাদী। সবচেয়ে কোমল স্বভাবের। সবার চেয়ে মহৎ ও দয়াদ্র।



হঠাৎ যে তাকে দেখত ভাব গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিত্বের দরুণ ভয় পেত। যে তার সাথে উঠাবসা করত সেই তার প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়ত । তার পরিচয় বর্ণনাকারী যে কেউ তাকে দেখে বলবে তাঁর মত আর কাউকে আমি কখনো দেখিনি। তার আগেও না পরেও না। (শামায়েলে তিরমিযী, হাদীস ৬ এর আংশিক উল্লেখ করা হলো।

বাকীটুকু আগের হাদীসে এসে গেছে, তাই আর উল্লেখ করা হলোনা। )


কিভাবে হাসতেন তিনি ?

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন সদা চিন্তার সাগরে ডুবে থাকতেন তেমনি মাঝে মাঝে হাসি কৌতুকও করতেন। সাহাবী জাবের ইবনে সামুরা রাযিঃ বলেন রাসূলে কারীম সঃ এর পায়ের গোছা সামান্য সরু ধরণের ছিল। তিনি তাবাসসুম বা মুচকি হাসি হাসতেন। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে (মনে মনে)বলতাম তিনি দু চোখে সুরমা লাগিয়েছেন।

অথচ তিনি সুরমা লাগানো অবস্থায় ছিলেন না। (শামায়েলে তিরমিযী, হাদীস নং ২১৭)

আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস ইবনে জায বলেনঃ আমি রাসূল সঃ এর চেয়ে অধিক মুচকি হাসতে আর কাউকে দেখিনি! (শামায়েলে তিরমিযী, হাদীস নং হাদীস২১৮)


প্রিয় নবীর রুপ সৌন্দর্য ও একটি ঘটনা

হযরত হাসসান বিন ছাবেত রাযিঃ ছিলেন বিখ্যাত আরব্য সাহিত্যিক এবং নামকরা একজন কবি। তার ইসলাম গ্রহণের আগে কাফেররা তাকে বলল তুমি কবিতার ছন্দে মুহাম্মদ সঃ এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করো তবে তোমাকে অঢেল ধন সম্পদ দেয়া হবে। তিনি রাজী হলেন। নবীজীর শারীরিক দোষ ধরার জন্য তাকে দেখার অপেক্ষায় রইলেন যে কখন তাকে দেখবেন।

অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো । নবীজী সঃ যাচ্ছিলেন উঁচূ টিলা থেকে হাসসান যখন তাঁকে দেখলেন তাঁর রুপ সৗন্দর্যে সীমাহীন অভিভূত হয়ে পড়লেন এবং একটি কবিতা আবৃত্তি করলেন যার অর্থঃ

“যখন আমি তাঁর সৌন্দর্যের অপূর্ব জ্যোতির বিচ্ছুরণ দেখতে পেলাম ,তখন দৃষ্টিশক্তি বিলুপ্ত হবে এ শংকায় হাত দিয়ে চোখ দুটি চেপে ধরলাম। ফলে তার অপরুপ সৌন্দর্য যতটুকু দেখার ভাগ্য লিপি ছিল ততটুকুই দেখতে পেলাম। এ যে আলোর আত্মা চাঁদের দেহে! এ যেন গহনা যা বানানো আলোময় উজ্জ্বল তারা দিয়ে ”

এরপর তিনি কাফেরদেরকে এসে বললেন, তোমাদের সম্পদ তোমরা নিয়ে যাও। এটা কোন মিথ্যুকের চেহারা হতে পারেনা।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ এক ও একক। মুহাম্মদ ( সঃ ) নিঃসন্দেহে তাঁর প্রেরিত রাসূল!


প্রিয় নবী ( সঃ ) এর সৌন্দর্য সম্পর্কে বিখ্যাত কবি হাসসান বিন ছাবেত রাযিঃ এর একটি কবিতা (অনুবাদ)

☀তোমার চেয়ে সুন্দর কোন সত্ত্বা আমার দু নয়ন কভু দেখেনি।
☀তোমার চেয়ে রুপময় কোন সন্তান কোন মা কভু জন্মেনি।
☀তোমায় সৃষ্টি করা হয়েছে রুপ সৌন্দর্যের সকল দোষ থেকে মুক্ত করে।
☀যেন তোমায় সৃষ্টি করা হয়েছে তুমি যেমন চাও তেমনই করে।





অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.