আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দশ ট্রাক অস্ত্রের দায় বহন করতে হবে বিএনপিকেই



বর্তমান সরকারের সাথে ভারতের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ কার্যক্রম শুরু হলেও এ সরকার দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলা এগিয়ে নিয়েছে। ফলে দেরিতে হলে এ মামলার রায় হয়েছে। ফলে এ রায় ভারতের সাথে এ সরকারের সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করবে। জোট সরকারের হঠকারী ও অপরিণামদর্শী কাজের জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্টের যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল, তা এই সরকারের পদক্ষেপ ও দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার রায় সে আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছে।

ভারতসহ বিশ্বসমাজে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে তুলেছে। অন্যদিকে তৎকালীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান প্রধান কর্মকর্তাবৃন্দ কর্তৃক উলফাকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ দল হিসেবে বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্তই করেছে। নিঃসন্দেহ রাজনৈতিক মাঠে এটি বিএনপির জন্য আত্মঘাতী কাজের মতো। কেননা, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো ভারতও গুরুত্বপূর্ণ। ভারত বিদ্বেষ কিংবা ভারতের স্বার্থের বিপক্ষে এমন দূরদৃষ্টিহীন কাজের খেসারত বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে দিতে হতে পারে।


ভারত একটি বৃহৎ দেশ। অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে যোজন-যোজন এগিয়ে। এ দেশটির সাথে প্রতিযোগিতা করার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। বরং বাংলাদেশের রাজনীতির ভাগ্য নির্ধারণে বেশ খানিকটা ভূমিকা রাখে দেশটি। যে কারণে সব সরকারই দেশটিকে তুষ্ট করার চেষ্টা করে।

ক্ষমতাসীন কিংবা বিরোধী দল উভয়ই দেশটিতে সরকারি ভ্রমণের সুযোগ পেলে ধন্য হয়। ফিরে এসে তীর্থস্থান থেকে পবিত্র হয়ে আসার মতো অভিনয় করে। এমন একটি প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশের স্বার্থের বিপক্ষে গিয়ে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় গোয়েন্দা প্রথম সারির কয়েকজন কর্মকর্তা সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের ঘাট ব্যবহার করে সে দেশের নিষিদ্ধ, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী একটি সংগঠনকে অস্ত্র এনে দেওয়ার মতো ঝুঁকি ব্যক্তি পর্যায় থেকে গ্রহণ করতে পারেন না। এটা বিশ্বাসযোগ্যও নয়। আর সরকার তার পরিষদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডের দায় এড়াতে পারে না।

সে দায় শতভাগ তৎকালীন জোট সরকারকেই বহন করতে হবে।
দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানে সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া এখনো জানা যায়নি। বাংলাদেশের আদালতে দীর্ঘদিন ধরে করা ভারতের অভিযোগ ও ভারতকে অস্থিতিশীল করে তোলার তৎকালীন সরকারের ষড়যন্ত্র সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে বিএনপিকে বেকায়দায় পড়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি করেছে। ভারতের নিকট বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নবোধক হয়ে দেখা দেবে।

এটা জানা সম্ভব নয়, বিএনপির নেতৃবৃন্দ এটা উপলব্ধি করেন কিনা। নাকি দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার রায়কে আওয়ামী লীগ সরকারের ভারত প্রীতি ও বিএনপিকে অপদস্ত করার রাজনীতি বলেই উড়িয়ে দেবে বিএনপি।
দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় হয়েছে। তৎকালীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান প্রধান কর্মকর্তাবৃন্দকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। এ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে হয়তো আপিল হবে।

রায় পুনর্বিবেচিত হতেও পারে, নাও পারে। ব্যক্তিগতভাবে দন্ডপ্রাপ্তরা দ-ন্ডভোগ করবেন। তারপরও এ রায় ব্যক্তিকে ছাপিয়ে গেছে। এ রায়ে মৃত্যুদন্ড হয়েছে রূপকার্থে
বিএনপিরই।
কাজেই দোষারোপের রাজনীতি না করে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অপরাধের দায় রাজনৈতিকভাবে কাঁধে নিয়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতি করলে বিএনপিরই পুনর্জীবন ঘটবে।



দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আবদুর রশীদ (অব.) এর অভিমত
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আবদুর রশীদ (অব.)-এর মতে, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানস্থলে অনেক পদস্থ লোক উপস্থিত ছিলেন। সেখানে অনেক শ্রমিককে কাজে লাগাতে হয়েছে। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্তরা অজানা কোনো কারণে নিশ্চিত ছিলেন যে এ চালান কেউ ধরবে না বা কিছু বলবে না। এমনও হতে পারে, বিষয়টিকে তাদের কেউ কেউ অপরাধও মনে করেননি। এটাও হয়তো ভাবা হয়নি যে দশ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ভারতের সীমান্তে পৌঁছানো পর্যন্ত সমস্যা হতে পারে।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হতে পারত ভারত সীমান্তে। আসামের ওই এলাকাটিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। চীনও কাছেই। এ কারণে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ছাড়াও সেনা উপস্থিতি রয়েছে। দশ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ সহজ ছিল না।

কিন্তু সে ঝুঁকি নেওয়া হয়েছিল। বলা যায়, চোরাচালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যথেষ্ট বেপরোয়া ছিল। সামরিকভাবে স্পর্শকাতর এলাকা দিয়ে এ ধরনের চালান নিয়ে যাওয়ার বিপদ তারা খুব একটা বিবেচনায় নিয়েছে বলে মনে হয় না। কিন্তু যারা এ বিপজ্জনক কর্মকা-ে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে তারা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে চরমভাবে বিব্রত করেছে। এ চালানের সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতাও গোপন বিষয় নয়।

আমাদের গোয়েন্দা বিভাগের একটি অংশও তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, যা দেশের স্বার্থের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। কেন এ বেপরোয়া আচরণ সংশ্লিষ্টরা করেছিল তার তিনটি কারণ বলা যায়। এক. পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনা; দুই. প্রচন্ড- ভারতবিরোধিতা; তিন. উত্তর-পূর্ব ভারতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের ক্ষমতা খর্ব করা। পাকিস্তান কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এটা করছে। আমাদের সীমান্তের সংলগ্ন এলাকাতেও তাদের প্রায় একই লক্ষ্য।

ভারতের পার্লামেন্ট ভবন এবং মুম্বাইয়ের হামলার সঙ্গে এ বিষয়টিকে আলাদা করে দেখা চলে না। কিন্তু এমন ঘটনা যে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি, সেটা বাংলাদেশের কেউ কেউ বিবেচনায় রাখতে চান না। আমাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে চাই বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা। বিশ্বায়নের এ যুগে এর অন্যথা হওয়ার সুযোগ নেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।