আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'কেউ কথা রাখেনি'

'কথা রাখেনি কেউ। কেবল আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থেকেছে সব। প্রথমে ৪৮ ঘণ্টা, তদন্তের প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি, সর্বশেষ সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর। কিন্তু আমার বুকের ধন আর বউমায়ের খুনিরা কেউ ধরা পড়ল না। ' গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এসব কথা বলার সময় যেন কোনোভাবেই চোখের পানি আটকাতে পারেননি নিহত সাংবাদিক সাগর সরোয়ারের মা সালেহা বেগম।

নিহত দম্পতির সন্তান মেঘের কথা বলার এক পর্যায়ে সালেহা বেগম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মেঘের সব দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছিলেন। তার অভিযোগ, এত দিনে সরকারের পক্ষ থেকে একটিবারের জন্যও মেঘের কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। হয়তো কেউ প্রয়োজন বোধও করেননি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমি উনাকে বলেছিলাম, আপনি বাবা-মা হারা। আপনি আমার কষ্ট এবং মেঘের কষ্ট বুঝতে পারবেন।

তিনি তাতে সম্মতি দিয়েছিলেন। আমাকে এবং মেঘকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু সবই কপাল। তবে মেঘের জন্য প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কে থাকি। কেউ যদি ওর ক্ষতি করে ফেলে? তবে তার বিশ্বাস বড় হয়ে মেঘ ঠিকই তার শিকড় চিনে নেবে।

কেউ তাকে তার রক্ত থেকে আলাদা করতে পারবে না। আমার ভাঙা ঘরের মালিকও তো সে-ই।

পরিবারের অন্য লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাগরের মা সালেহা বেগমকে এখন দেখভাল করছেন তার মেজ মেয়ে মঞ্জু আরা পারভীন। তিনি সারা দিন প্রায় সাগরের চিন্তা করে আর মেঘের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে সময় পার করেন। এ জন্য মাঝেমধ্যে আনমনা হয়ে যান।

গতকাল দুপুরে মেঝেতে পড়ে গিয়ে তার ডান হাতে একটি আঙ্গুলের হাড়ে চিড় ধরেছে। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাদির মতো সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মাহির সরোয়ার মেঘের অবস্থাও অনেকটা একই রকম। বাবা-মা হারা মেঘ বড় হচ্ছে নানী নূরুন্নাহার মির্জার ছায়াতলে ইন্দিরা রোডের বাসায়। তবে দেড় মাস আগে নূরুন্নাহার মির্জাও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী।

কথা জড়িয়ে আসে। বর্তমানে মেঘের দেখভাল করছেন মামা নওশের আলম রোমান। মাঝেমধ্যে মেঘকে নিয়ে যাওয়া হয় দাদির কাছে। সালেহা বেগমের মতো একই আক্ষেপ নিহত সাংবাদিক মেহেরুন রুনির ভাই রোমানের। তিনি বলেন, পাঁচ বছরের শিশুসন্তান মেঘের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অনেকে।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তার দায়িত্ব নেওয়ার। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের খুনিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার। ঘটনার দুই বছর পার হয়েছে। সাড়ে সাত বছরের অসহায় মেঘের পাশে কেউ নেই। মা-বাবার স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো মেঘ বড় হচ্ছে স্বজনদের স্নেহে।

তার স্মৃতিতে এখন বাবা আর মায়ের মুখচ্ছবি। যদিও স্বজনরা চেষ্টা করছেন, সেই ভয়াবহ স্মৃতি ভুলে মেঘ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠুক। মেঘের স্বজনদের দাবি, কেউ তার দায়িত্ব নিক এটি তারা নিজেরাও চান না। তারা চান হত্যাকাণ্ডের বিচার। রোমান মন্তব্য করেন, আমরা চাই না আমরা থাকতে মেঘের দায়িত্ব কেউ নিক।

বারবার আমরা একটা কথাই বলেছি, বিচার চাই। তবে এত আশ্বাস সত্ত্বেও কোনো কিছুই এখনো হলো না। ছোট্ট শিশুটি এখনো নিজের মতো করে তার বাবা-মাকে স্মরণ করে। নিহত রুনির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বললেও মেঘ ঘুরেফিরে তার বাবা-মায়ের প্রসঙ্গ নিয়ে আসে। মা-বাবার খুনিদের মেঘ এখনো জানে চোর হিসেবে।

আর সেই চোরদের শাস্তি দিতে একটি পিস্তলের জন্য প্রার্থনা সৃষ্টিকর্তার কাছে। রোমান বলেন, মেঘ এখন অনেকটা স্বাভাবিক। বর্তমানে সে উইলিয়াম কেরি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে সিনিয়র কেজিতে পড়ছে। আগে মা তাকে স্কুলে নিয়ে গেলেও বর্তমানে আমিই নিয়ে যাচ্ছি এবং নিয়ে আসছি। বাসায় আমার ভাতিজি রিঝিমের সঙ্গেই তার বেশির ভাগ সময় কাটে।

সে এখন বুঝতে পারে তার বাবা-মা আর ফিরে আসবে না। তারা চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। চোর তাদের মেরে ফেলেছে। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সাগর-রুনির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে মামলা তদন্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

৬২ দিনের মাথায় হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালতের নির্দেশে তদন্তভার নেয় র্যাব। তারা ভিসেরা পরীক্ষার জন্য সাগর-রুনির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী নিহত দম্পতির শিশুপুত্র মাহির সরোয়ারের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে। জিজ্ঞাসাবাদ করে শতাধিক ব্যক্তিকে।

গত বছরের মাঝামাঝি থেকে র্যাব বলে আসছিল নিরাপত্তা কর্মী এনামুলকে গ্রেফতার করা গেলেই সব রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে। তবে এনামুল গ্রেফতার হলেও রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি।

সাগর-রুনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ : সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সাগর-রুনি হত্যার দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) পৃথকভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি রাজধানীর পূর্ব রাজা বাজারের নিজ বাসভবনে ২০১২ সালের এই দিনে দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন।

এই সাংবাদিক দম্পতি খুনের পর থেকে সাংবাদিক সংগঠনগুলো প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) দুই সদস্য সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা বিচারের দাবিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ডিআরইউ-সাগর-রুনি মিলনায়তনে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। সাগর সরোয়ারের মা সালেহা মনির, মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান ও সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মাহির সরোয়ার মেঘ এই সভায় উপস্থিত থাকবেন। বক্তৃতা করবেন ডিআরইউর বর্তমান ও সাবেক নেতারা। ডিআরইউ সভাপতি শাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান স্মরণ সভায় উপস্থিত থাকার জন্য ডিআরইউ সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে তাদের প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিএফইউজে ও ডিইউজে উভয় অংশ যৌথভাবে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে। সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সাংবাদিক সমাজকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া ও শওকত মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি আলতাফ মাহমুদ ও আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান। সাংবাদিক নেতারা সাগর-রুনির প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক সহকর্মী বন্ধুদের উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।