আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'বসন্ত'কাল!

'খুসখুসে কাশি ঘুসঘুসে জ্বর
ফুসফুসে ছ্যাঁদা বুড়ো তুই মর। '
এমনিতে আমার বেশি অসুখবিসুখ হয় না। কিন্তু অল্প যা কিছু হয় সেইটা বেশ ভালই ভোগায়। একটা সময় আমার সুতীব্র ডাস্ট এলার্জির সমস্যা ছিলো, নাকেমুখে মুখোশ এঁটে ঘর থেকে বের হতে হইতো। আজকাল ঢাকা শহরের বেশিরভাগ যানবাহনই সিএনজিতেও চলায় শহরের বাতাস মোটামুটি পরিষ্কার, তারপরেও বসন্তকালটা আমার কাছে সবসময়েই একটা আতঙ্ক নিয়ে এসে উপস্থিত হয়।


গত প্রায় দুই যুগ ধরে হিসেব করে দেখেছি- জানুয়ারির শেষে শীতটা কমতে শুরু করে, আর কেনো জানি স্বরস্বতী পূজোর ঠিক পর থেকেই আমার বাৎসরিক সর্দি কাশির ঝামেলাটা শুরু হয়। এমনিতে অবশ্য বিদ্যা, কলা ও সংগীতের দেবী সাথে আমার কখনোই তেমন ভাল রিলেশনশিপ ছিলো না, এখনো নাই। ধর্মকর্মেও মন নাই, তারপরে আবার একটা লৌকিক আচার আছে যে স্বরস্বতী পূজোর আগে নাকি কুল বড়ই খেতে নাই। আমার অবশ্য এই ফলটা বড়ই পছন্দ। এইসব নিয়মকানুনের ধার না ধেরে এইবারও পূজোর দিনকতক আগে বিটনুন আর গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে কেজিখানেক কুল খেয়ে ফেলেছিলাম।

এইটাও একটা কারণ হইতে পারে বলে মনে হয়।
গত কয়েক দিন ধরেই সিজন চেঞ্জ হচ্ছে। এই তীব্র গরম আবার এই ঠান্ডা। আমিও বেশ কয়েকদিন ধুলোয় আচ্ছন্ন বইমেলায় গিয়ে বাৎসরিক ধুলোর ডোজ নিয়ে এসেছি। ফলাফল- গত কয়েকদিন ধরে একেবারে আটাত্তর বছর বয়সী বুড়োদের মতো খুক খুক করে কাশছি।

গলা ভেঙ্গে এমন অবস্থা হয়েছে যে ফোনে লোকজন আমাকে চিনতে পারে না, যেকোনো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ডেথ মেটাল ব্যান্ড আমাকে প্লেনের টিকিটের পয়সা দিয়ে নিয়ে যাবে ওদের হয়ে 'গান' করার জন্য।
কয়েকটা দিন বিশ্রাম নিতে পারলে ভালো হইতো অবশ্যই- কিন্তু ঘটনা হলো যে আমি হপ্তাখানেক আগেই অসুস্থতার ভান করে কাজ থেকে দুইদিন ফাঁকি মেরে বইমেলা, বন্ধুর বিয়ে এইসবে সময় দিয়েছি, তাই এখন নিজের চালাকির মাশুল এক্সট্রা কাজ করে দিতে হচ্ছে। রেস্ট নেয়া তো হচ্ছেই না, কাজের চোটে গতকাল হিমু ভাইয়ের বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে যেতে পারি নাই। দুর্দান্ত এক সচল সম্মিলন হইছে বলে শুনলাম।
একটু আগে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বহুত কষ্টে জ্যাম ঠেলেঠুলে ভার্সিটির দিকে যাচ্ছি।

আমি পোস্টগ্রাড কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম ঢাকা ভার্সিটির আন্ডারে, সেইটা মাইগ্রেশন করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ভার্সিটির আন্ডারে আসতে হয়েছিলো, সেইটারই কিছু কাগজপত্র ঠিক করার দরকার ছিলো। শাহবাগের আশেপাশেই দেখি হলুদ কাপড় পড়া লোকজন গিজগিজ করছে। ভুলেই গেছিলাম আজকে পয়লা ফাল্গুন। পয়লা ফাল্গুন, শফিক 'গুলাব' রেহমানের ভেলেন্টাইনস ডে বা একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে ইচ্ছে করেই আমি ভার্সিটি এলাকা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি, আজকেও পলায়া আসতে বাধ্য হইলাম। একে তো শরীর খুব একটা ভালো না, কাশির ঝামেলাটাও আছে।

বিকেলে আবার কাজে যেতে হবে। এরপরে এই গরম, ভিড় আর ধুলো র মধ্যে না গিয়ে ঘরে বসে ড্রিম থিয়েটার শুনতে শুনতে , ট্যাং খেতে খেতে ব্লগরব্লগর করাই ভালো। এমনিতেই বহুদ্দিন হইলো লিখিটিখি না। প্রাচীন শাদাকালো বাংলা ছবির ট্রাজিক নায়কেরা কাশতে কাশতে বিরহের গান গাইতো, (আর গানের শেষে গলায় রক্ত উঠে অক্কা পেতো), আমি নাহয় কাশতে কাশতেই ইট্টু ব্লগরব্লগর করলাম ।
যাই হোক, এই হাবিজাবি ব্লগরব্লগর শেষ করি ছোটবেলার একটা স্মৃতিচারণ দিয়ে।


আমি তখন বেশ ছোট, মাত্র পড়তে শিখেছি। ছোটবেলা থেকেই হামবড়া ভাব ধরার চেষ্টা করি বলেই আমার লেখাপড়ার শুরুটা হইছিলো পেপার পড়া দিয়ে। সকালবেলা বসে বানান করে করে সংবাদ পেপার পড়া ছিলো ওই বয়সে আমার একমাত্র গঠনমূলক কাজ। ঘটনা সাতাশির আগেই হবে, কারণ স্কুলে যেতাম না। আমি বাবর রোডের বাসার পেছনের উঠোনে বসে বানান করে পেপার পড়ছি, দূরে কাঠমিস্তিরি বসে বসে কাঠের কি জানি বানাচ্ছিলো, সেইটা মনে নাই, তবে মিস্তিরির নাম মনে আছে - নিরঞ্জন।


আমি বানান করে জোরে জোরে হেডলাইন পড়লাম- 'নগরে বসন্তের আগমন' ।
নিরঞ্জন চমকে গিয়ে মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলো- "কি কও গো দাদা! বসন্ত শহরেও আইয়া পড়ছে!!!"
শুভ চিকেনপক্স দিবস সবাইকে।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।