আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আ স্টাডি ইন কুকুরের লেজ

আমি লিখতে আসা পড়ুয়া মানুষ


বিনুদা কে নিয়ে আর পারা গেল না, এই ভাদ্রের ভর দুপুরে নাকি সুত্র খুজতে যেতে হবে সেই মলকিরপুরে একেতো রোদ মাথার উপরে ঠাটিয়ে উঠেছে তার উপরে খাওয়া দাওয়া কিছুই হয়নি এখনো। একবার খাবারের কথা বলতেই একেবারে চ্যা চ্যা করে ঊঠলেন যেন আমি তাকে রক্ত দান করতে বলেছি! আর পোষাকের সেকি বলিহারি! সাক্ষাত শার্লক হোমস বনে গেছেন একেবারে । লম্বা ওভার কোট আর মাথায় সাহেবি টুপিতে! আর বিনুদাও মাইরি ছ'ফুটের কম নন । পেল্লাই কান দুটো যেন পৃথিবীর তাবৎ শব্দ শুনে নেবে!

দিনকতক আগেই, আমাদের বাবুল বেকারী স্ট্রীটে একটা লোক এসেছিলো, বড্ড তাড়াহুড়া ছিলো বেচারার। হাতে দিন কতক আগের পুরোনো খবরের কাগজে কি একটা যেন মুড়নো! এসেই সোজা যেন আমার ঘাড়ের উপরে পরবেন! লাফিয়ে সরলাম দরজা থেকে!

-জ্বী, বিনু মন্ডল আছেন??

-জ্বী আছেন!! কি ব্যাপারে বুলন তো??

-জ্বী ইয়ে!! মানে কথাটা উনাকেই বলতে চাইছিলাম কিনা!!!

বড্ড রাগ হলো ব্যাটার উপরে!! ইচ্ছে করছে মুখের উপরে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেই! কোন মতে সামলে বললাম

-আমাকে বললে কোন সমস্যা হবে না! আমি উনার সহকারী!!

কথাটা বলেই কেমন যেন নিজের বুদ্ধির উপরে সন্দেহ লেগে গেল!! লোকটা কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই বিনুদা রকিং চেয়ারটা থেকে উঠে আসলেন। সোজা লোকটার দিকে তাকিয়ে বললেন

-দাড়ান আমি নিজেই বের করছি কি বলতে চাইছিলেন,

আত্ববিশ্বাসের সাথে বললেন বিনুদা!

-আপনি এসেছেন বাসে চেপে, বাসের একটা লোক আপনার গায়ে পানের পিচকি ফেলেছে! নামার সময়ে প্রায় পরেই গিয়েছিলেন!! ঠিক আছে??আর আপনি এসেছেন আপনার হারানো ভাতিজাকে খোজে দেওয়ার জন্য! ঠিক বলেছি??

বলেই আমার দিকে তাকালেন বিনুদা! আমি লোকটার দিকে!! ওদিকে লোকটা সমানে মাথা এপাশ ওপাশ নাড়াচ্ছেন!! বিনুদা খানিকটা অবাক হলো! ডিডাকশনে কি সামান্য ভুল হলো??? লোকটা বলা শুরু করল এবারে!!!

-আমি ওপাড়ায় থাকি! নগেন্দ্রপাড়ায়! হেটেই এসেছি!! আসার সময়ে পান নিয়েছিলুম একটা! এমনিতে পান খাওয়ার অভ্যাস নেই তাই পিচকি ফেলতে গিয়ে নিজের গায়েই পরেছে!! কাপড়টা ধুয়ে তাড়াহুড়া করে আসতে গিয়ে আপনাদের দোতলার সিড়িতে হোচট খেলাম তাতেই জুতার দফারফা আর হাতের আর পকেটের বাইরে বেড়িয়ে আসা বাসের টিকেট টা দুদিন আগের!! মলকির পুর থেকে আসার সময়কার ঠিকেট!! তবে আমার হারানো গেছে ঠিক তবে ভাতিজা না !! একটা কুকুর!! বড় পেয়ারের সাথে মলকির পুর থেকে এনেছিলাম! কুকুরটা হারিয়ে গেছে তবে লেজটা রেখে গেছে!!

বিনুদার দিকে তাকিয়ে দেখলাম লোকটা প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে মনে, চোখে মুখে তারই প্রতচ্ছবি!
লোকটাকে বললাম

-কি ধরনের কুকুর? টেরিয়ার?? না এলশেসিয়ান??

-ওই বাবু কোথায় পাবু?? দেশি কুকুর আমাদের!!

লোকটা মাথা দুলিয়ে বলল!! এবার ঝাজের সাথে বললাম,

-না! না! ওই সব নেড়ি ফেড়ি আমাদের দ্বারা খোজা সম্ভব না!! কিন্তু বিনুদা আমাকে আরেকবার কথা বলার আগেই থামিয়ে দিয়ে বললেন!

-আমরা খুজব!! আপনি লেজটা দেখান!!

লোকটা খবরের কাগজটা মেলে ধরে পলিথিনের ভেতর ত্থেকে লেজটা দেখাল একবার, মাইরি বলছি!! কি একটা গন্ধ সারা ঘরে ছড়িয়ে পরলে সাথে সাথে!! সারা গা রি রি করে ঊঠল আমার!! এদিকে বিনুদা সাক্ষাত শার্লক হোমসের মত ওইটা নাকের কাছে নিয়ে গিয়ে শুকছেন!! তারপরেই বলা নেই কওয়া নেই তড়াক করে লাফ দিয়ে লেজটা একপাশে ছেড়ে দিয়ে হাচ্চো হাচ্চো করতে করতে সারা ঘর তুলকালাম করে ফেলতে লাগলেন!! ভাগ্যিস পিসী ঘরে নেই!! নাহলে সেই সময়েই আমাদের বাক্স পেটরা ঘোচাতে হতো!! তারপরে গিয়ে একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস তুলে এনে আমাকে ডাকলেন!! কনমতে নাক চেপে লেজটার দিকে এগুলাম!! দেখলাম লেজে কয়েকটা বড় টাইপের উকুন বসে আছে!!! আর সেই লেজ কিনা বিনুদা এতক্ষন শুঁকছিলেন!!! নিশ্চয় তার একটা বিনুদার নাকে ঢুকে পরেছিলো!!!

২)
বিনুদা সেদিনই বললে কুকুরটা নিশ্চয় মলকিরপুরে চলে গেছে কিন্তু লোকটা কিছুতেই মলকির পুরে যেতে চাইলেন না! শেষে বিনুদাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো! আপদ বিদেয় হলো ভাবছিলাম কিন্তু বিনুদা বলল লোকোটা কেস ছেড়ে দিলে কি হবে?? আমরা তো ছাড়িনি!! কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তার আগেই বলে ঊঠলেন, ডান!! পরশুই মলকির পুরে যাচ্ছি আমরা !! আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না!! বললেই বিনুদা আমাকে মারতে আসবেন জানি!! বিনুদা এই কেসের নাম দিলেন " আ স্টাডি ইন কুকুরের লেজ"

আজকে সকালে মলকিরপুরে বেরনোর আগে পিসীকে বলে রাখছিলাম আমরা বাইরে খাবো!! পিসী আমাদের বাড়িওয়ালী!! আমাদের অনেক ভালোবাসেন নিঃসন্তান মহিলাটি!! ভাড়া ফড়া চাননা! তার বাসাতেই খেয়ে নেই আমরা! পিসির একটা হোটেল আছে!! নিজেই চালান স্বামী নেই!! তবে বড্ড খিটখিটে!!

-পিসী!! আমরা বেরুচ্ছি!!!

- যা!! যা!! এখন বিরক্ত করিসনে বাপু! এমনিতেই ঝামেলাই ঝমঝম করছি!!

-আচ্ছা তাহলে যাচ্ছি!!

-রাতের খাবারটাও কি এখানেই মেরে দিবি নাকি???

আমরা ততক্ষনে নিচতলাতে চলে আসছি!! একপাশে পিসির খাবারের দোকান আর একপাশে দোতলার সিড়ি! বাড়ির নম্বর ১৭২/বাবুল বেকারী ষ্ট্রীট!

বাসে চড়তেই কন্ডাকটর ব্যাটা টিকিট কাটার জন্য চলে আসল!! বিনুদা বলল পরে আমরা অনেক দূরে যাবো!! মলকিরপুরে!! ব্যাটা মনক্ষুন্ন হয়ে চলে গেল! বিনুদা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখতে লাগল!!

-ডিডাকশনে ব্যস্ত!! ( মনে মনে বললাম)

এর মাঝেই ফাকা একটা সিট দেখে বসে পরলাম!! আরেকটা দেখে বিনুদাকেও বসতে বলেছিলাম! উনি গা করলেন না! দেখতে দেখতে বাসে লোক টইটম্বুর!! বিনুদার পোয়াবারো!! বহু মানুষকে ডিডাকশনে রেখেছেন!!! একজন বিনুদার গায়ে ধাক্কা খেলো হটাত!! আমার সন্দেহ হলেও বিনুদা কিছু বললেন না দেখে আমিও চুপ মেরে গেলাম!! মলকিরপুরের কাছাকাছি আসতেই কন্ট্রাকটর আবার ভাড়া চাইলো!! বিনুদা পকেটে হাত দিয়েই চমকে ঊঠল!! আমি জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে উনার দিকে তাকাতেই বললেন

-পিক পকেট হয়েছেরে

এদিক ওদিক তাকালাম ধাক্কা লাগা লোকটি আছে কিনা কিন্ত আগের স্টেষনেই অনেকেই নেমে গেছে সেই সাথে মনে হয় পকেটমারটাও গেছে!! কন্ট্রাকুটর ব্যাটা আমাদের দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন আমরাই চোর!!

মলকিরপুরে আসতেই নেমে পরলাম!! ভেবেছিলাম নেমেই কিছু খেয়ে নেবো!! সে আশায় গুড়েবালি!! এখন জল খেয়েই পেট ভরাতে হবে!! বিনুদা এদিকে হাটতে লাগলেন সোজা!! আমি ভুখা আস্তে আস্তে পিছু নিলাম!!

দুই মোড় পেরিয়েই একটা কুকুরের দলকে শুয়ে থাকতে দেখলাম!! বাবারে কি রোয়াবি কুকুর!! দেশি কুকুর যে এরকম দশাসই সেটা জানতাম না আগে!! এই ভাদ্র মাসে কুকুর খোজার ব্যাপারটা কি ভয়ানক হতে পারে বুঝতে পারলাম নিমেষেই!!! ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম এর মাঝে একটা লেজ হারা কুকুরও আছে!! এইটাই মনে হয় নগেন্দ্রবাবুর সেই কুকুরটা!! বিনুদা আগেই থেমে পরেছেন!! বললেন

-দেখেছিস?? মাঝেরটাই!! কেম্নে নিয়ে যাই ?? বলতো!!

-ও বাবা!! সে আমার দ্বারা সম্ভব না!!

লাফিয়ে পিছে সরে গেলাম!! কিন্তু বিনুদা নাছোড় বান্দা! নিয়ে যাবেন বলেছেন তো নিয়ে যাবেনই!! মিনিট কয়েক পরে দেখি কোথা হতে পূরনো চটের বস্তা একটা আর হাড় একটা এনেছেন!! বলল

-দেখ কি করি!!

বিনুদাকে সুযোগ দিতেই যেন সব কুকুর কোথায় হাওয়া হয়ে গেল লেজ কাটা টাকে একলা রেখে!! ওঠা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে রাস্তার ধারে!! বিনুদা আস্তে আস্তে চটের বস্তাতে পুরছেন ওটাকে প্রায় পুরে ফেলেছেন! এই সময়ে ওইটা জেগে ঊঠল!! ব্যাপার সুবিধার না দেখে দৌড়ের জন্য প্রস্তুতি নিলাম!! তাকিয়ে দেখলাম অন্যগুলোও হাজির!! বিনুদা ফাদে পরেছেন!! আমি চোখ বুঝে বাস স্টেশনের দিকে দৌড় লাগালাম!!!

পরিশিস্টঃ- বিনুদার সেইবার সাতটা ইঞ্জেকশন লেগেছিলো!! কুকুর গুলো থেকে কোন মতে নাকি পালিয়ে এসেছিলেন!!! লেজ কাটাটা নাকি ওই কুকুর গুলোর সর্দার!! উনি ডিডাকশন করেছেন তখন!!

ঘটনার দুদিন পরে নগেন্দ্রপাড়া দিয়ে যাচ্ছিলুম!! এক হাড় জিরজিরে লেজ ছাড়া নেড়ি দেখি ডাস্টবিনে কি খুঝছে!!! আমি বুঝলাম এইটাই আমাদের " আ স্টাডি ইন কুকুরের লেজ " কেসের সমাপ্তি!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।