আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অল্প কবিতায় ধরে রাখা বিষন্ন সময়

জীবনের জন্যই এই সব কথামালা


১.
দুচোখের পাতা এক না হওয়াকে যতই দুশ্চিন্তার খাতায় ফেলি
বলি রাত্রি জাগা এক বড্ড অসুখ,
তবু জানি ঘুম হবে না, দুচোখের ভেতর বিষন্ন শালিক নেচে চলে
সারা রাত ভরে মিহি হাওয়ার রাজত্ব চলে, বুকের ভেতর নৈঃশব্দ
তিতাসের পাড় থেকে রুপোলি থালা উড়ে আসে রাসেল স্কয়ার,
এ বড় আজব প্রহরী, শিকড়ের নিরব বেদনা -
এই সব অগ্রহায়নের রাত্রিতে আমার ঘুম হবে না। ।

২.
এই রাত্তিরে কি দূর্দান্ত পৃথিবী
জ্যোৎস্নায় হেলান দিয়ে এ পারের বিচিত্রতা
মুগ্ধ হয়ে দেখে চলেছেন আমাদের নীরব ঈশ্বর
চাঁদের হাসিতে মুখ মিলাচ্ছে পাতার দল সবুজ
আর হিমেল হাওয়ায় সুর তুলছে আশীর্বাদপুষ্ঠ সময়।
আমি বিচ্ছিন্ন অন্ধকার, ব্রহ্মান্ডে নেহায়েৎ উচ্ছিষ্ট
ভাসমান কীট, সৌন্দর্য্যে অসুন্দর ছড়ানো রঙ।

৩.
কবিতার টান ফেরাতে পারেনা ব্যক্তিক দৈন্যতা
কবিতা তুমি উপোসী রাতের নির্ঘুম যন্ত্রণা
কেবল হাহাকার বাড়িয়ে চলে যাও।


আমি সাত সমুদ্র দীর্ঘ পথের মানচিত্র দেখে
অন্যপথে আর হাটি না। পড়ে থাকি এখানে
দৃষ্টিতে জুড়ে বসা অন্ধকারে, কবিতার ঘর।

৪.
তোমার নামে ঘুমন্ত শহর জেগে ওঠে
অন্ধকার কেটে গিয়ে কৃষ্ণচুড়া জাগে
কুয়াশার জল কবিতা হয়, কবিতার
অমৃতসুধায় সেরে যায় মরণ রোগ।

তোমার নাম লিখা ছোট্ট টুকরো ফেলে
এসেছি গত বিষন্ন বিকেল;
ঘুমন্ত শহরে তাই লেগে থাকা স্বর্প চুম্বন
জীবনের কঠিন পাঠ শিখায় এখন।

আমি তোমাকে ভুলে গেছি হে রোদ্দুর
শূন্যের ভেতর হঠাৎ দেখা অচিন সমুদ্রে।



৫.
রক্তের যোগান বেড়ে গেলেও দুধের মূল্য ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে,
বরং বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাড়তে থাকে।
আমাদের কাচাবাজারে অর্থতন্ত্রের সংজ্ঞা কোন কালেই বিকোয় না।
তুমি আরাম কেদারায় বসে ধনতন্ত্র আর গনতন্ত্রের নীতিশাস্ত্রের সম্মিলন ঘটাও
একটি তরতাজা মাথা একটি সংখ্যা, সকালের চায়ের কাপের সাথে গরম শিরোনাম
দশটা গর্দানে উৎসব জমে যাবে, নবান্নে আর খুঁজতে হবে না বৈদেশিক রঙ
যার যায়, সেই কেবলি জানে রক্তের বেদন।
চাপা কান্নার ভেতর কত লক্ষ ঘৃণা থাকে জানলে ফেরাতে পারতেনা দূর্যোগ।

৬.
কেবল অন্তঃস্থ চোখ জানে,
নিরব বেদনারা ক্রমঃশ আত্মঘাতী
কোন এক প্রার্থিত অন্ধকার কিংবা নক্ষত্রের রাত
বড় জোর তীব্র যন্ত্রণায় নীল হওয়া পান্ডুলিপিই কেবল
একদিন জানবে সুগভীর খুনের রহস্য।



৭.
প্রবল ঈর্ষান্বিত কুকুর চোখে চেয়ে থাকি হিমাঘাতে মৃত মাছে'র মুখ
আহা, মাছ! শীতের রাতের প্রয়াণ! চোখে তবুও কেন বিলাসী ঘুম।

৮.
অনির্দিষ্ঠ যাত্রাপথ যখন স্বাগত জানাচ্ছে
আমি চোখ কচলিয়ে ঘুম থেকে উঠি মাত্র
সে কি ভীষণ ভিড় মানুষের, অলিগলিতে
অস্ফুটে বলি, আমি শেষ বেঞ্চিরই ছাত্র।

কেবল জানি সম্মুখে দীর্ঘ পথ খানাখন্দ
দিন ফুরালে যাপিত জীবনও যেন অন্ধ
সব বন্ধ এখানে, বিশ্রাম কিংবা আশ্রয়
অন্তহীন বির্ভীষিকা জাগে নিথর এ সময়।

৯.
এ যেন ধ্রুব সত্যের কাছে ছুটে যাওয়া।

খানাখন্দের শহরে দাগ লেগে থাকে ছোপ ছোপ রক্তের
কার জন্য কে কাঁদে, মায়াকান্নায় ডুবছে মানুষ।


পশ্চিমে দৌড়াচ্ছে লাল থালার মত সময় ঘন্টি,
একটু জল দাও। শেষ বার আকো চুম্বন শুকনো ঠোঁটে
একটু জল দাও। একটু পরই জলের রঙ গভীর কালো।

১০.
কখনো কি মনে হয় শহরের ফুটপাত ধরে ফিরে আসছে
পুরনো সব ডাকনামের ভেতর উন্নাসিক হাসি?
অথচ সে ভয়ের নাম বদলে গিয়ে লেখা হলো মধুরতম
ধোঁয়া উঠা সন্ধ্যায় স্বগরবে ঢুকে গেল ধূপের গন্ধ।

সারি সারি ঘর ফেরা যন্ত্রের দলে হৈ-হল্লায় কেউ কি ফেরে
পৌষের শীতে অর্ধেক শরীর বের করা অদৃশ্য মানুষ?
আধপোড়া বিষন্নতা কে দাড় করিয়ে আসি খাঁ খাঁ জলাধার
রাত গভীর হলে কুয়াশার ধোয়া থেকে বেরোবে সে মুখ।



এসো,
ভাঙা গদ্যের আসরে স্মৃতির গন্ধ মাখা নিবিড় অন্ধকার
অশুদ্ধ ডাকনামে সুখ সুখ অভিনয়শালার অবাক শহর।

১১.
এইসব বেনামি কুয়াশা একদিন পৃথিবী শ্রেষ্ঠ সুগন্ধির স্বীকৃতি পাবে।
এইসব বিষন্ন স্নান, বিবর্ণ রাজপথ ধরে অনির্দিষ্ঠে উজবুক হাটা -
নিজের অনন্ত বিশাল ছায়া দেখে অন্ধকারের ভেতর লুকিয়ে থাকা
সবই একদিন গল্প হবে। গৌরবিনী শহর এসব কথকতায় মুগ্ধ হবে।
একদিন এসব ফুটপাতে লেগে থাকা রক্তের দাগ উজ্জ্বল সব রঙ হবে।



১২.
আমাকে কাগজের মত ছিড়ে ফেলে সময়
রেখে যায় স্তুপীকৃত আবর্জনার সংস্পর্শে
কতগুলো মৃত চোখ চেয়ে থাকে অপলক
ছিন্নভিন্ন আমি মাথা আড়াল করি লজ্জায়।

এখানে পাথর দেয়াল। স্তুপের প্রসূতি গন্ধ
অস্ফুট আর্তি জানেনা নিঃস্বর্গের দ্বার বন্ধ।





অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।