আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাই লিটিল বল অফ সান শাইন

সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমি ভালো রকম স্বার্থপর । এর দায় ভার আমি দিবো আমার আশে পাশের খুব ভালো মানুষগুলোকে। তাই জন্মের পর টানা ৪ বছর একক রাজত্তের পর আমার আদরে অন্য কারো ভাগ বসানোটা ভালো করে নিতে পারিনি। বাইরে এ্যাম্বুলেন্স দাঁড়ান। আমি মাকে জরিয়ে ধরে বসে আছি ।

আম্মু ১ সপ্তাহ হাসপাতাল এ থাকবে, তাই আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নানু বাসায়। এই সময়ে আমার আচরণবিধি নির্ধারণ করা হচ্ছে। খুব বেশি কিছু বোধগম্য হচ্ছিলনা। মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছিল 'আমার নতুন সহোদর ' কে আনতে যাওয়ার জন্য আমার মা থেকে আমাকে দূরে থাকতে হবে। প্রায়ই আমি নানু বাসায় থাকতে যেতাম মহাউৎসাহে ।

কিন্তু এবারের অনুভুতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত । একটু পরে আম্মু উঠে গেলেন এ্যাম্বুলেন্সে আর আমি গাড়িতে, বিপরীত দিকে চলতে শুরু করল যান দুটি। আমি মোটেও ভালো ছিলাম না এক সপ্তাহ কোন এক অজানা ভয়ে। এর কয়েকদিনপর আমি আমার নতুন সহোদরকে দেখতে গেলাম। এখনও যেন স্পষ্ট সেই দৃশ্য আমার চোখে, অন্তরে।

সাদা তোয়ালেতে মোড়া, বিড়ালছানা সদৃশ একটি অতি ক্ষুদ্র শিশু। তার অবয়বে ছিল অদ্ভুত আদর, ছোট্ট মুঠি গুলোতে যে কি মায়া লুকিয়ে ছিল তা বর্ণনাতীত । কিন্তু এই আবেগগুলো একটু পরেই চলে যায়। নিজের আদর , দীর্ঘ ৪ বছরের একনায়কতন্ত্র, সবার একনিষ্ঠ মনোযোগ হারানোর ভয়ে তার প্রতি এক নেতিবাচক অনুভুতি জন্ম নেয়। এর পর কখনও চেষ্টা করিনি এই অনুভুতি পরিবর্তনের, সযত্নে লালন করেছি বরং ।

কিন্তু দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কখনো বুঝতে পারিনি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটি , অনেক বেশি ভালবাসার উৎস এই ছোট্ট শিশুটিই। সময় কাটতে থাকে, কিন্তু এই অনুভুতির কোন পরিবর্তন আসে নাই। তবে মাঝে মাঝেই খেয়াল করতাম এই শিশুটির চিন্তাভাবনা খুব সুন্দর, সুন্দর তার আমার জন্য অনুভূতিগুলো । নিজের সাথে আমার জন্য ও একই জিনিষ কিনা, আমার নানা ফরমায়েশ খাটার -মত জিনিষ গুলো মাঝেমধ্যে আমার টনক নরালেও তার প্রতি আমার অনুভুতি বদলায়নি। এরপরের কথা আমি যখন ক্লাস ৫ এ পড়ি , আমাদের দুটি বাসা পরেই এক অ্যান্টি থাকতেন।

উনার ছেলেমেয়ে সবাই নিজের কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকায় উনার একা সময় কাটত একা এবং অধিকাংশ সময় আমাদের বাসায়। হঠাৎ উনার মাথায় বিচিত্র খেয়াল এল আমার এই ছোট্ট সহদর-প্রমাকে উনি নিয়ে যাবেন। কথাটি উনি বলতেন হাল্কা ভাবেই এবং নিজেই উরিয়ে দিতেন। কিন্তু কেন জানি কথাগুলো আমাকে বিচলিত করত, রাগের সঞ্ছার করত। কিন্তু বিপত্তি ঘতে তখনই যখন প্রমা গিয়ে ওই বাসায় মাঝে মধ্যে থাকতে শুরু করে।

ধীরে ধীরে ওর অনুপস্থিতিই, ওর ভূমিকা আমার জীবনে স্পষ্ট করে তুলে আমার কাছে। আমি বুঝতে পারি , এই শিশুটিই আমার জীবনের ছোট্ট সূর্য। এর পর ধীরে ধীরে কখন যে ও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুতে পরিনত হল খেয়াল করিনি। ভালো বই পেলে আমার জন্য আনা, আমি রাত জেগে পড়ার সময় বসে থাকার মত কাজ গুলো ও খুব স্বাভাবিক ভাবেই করে যেত। রগচটা এ আমি খেপে গেলেও ওর মুখ থেকে কখনো কোন পাল্টা উত্তর থাকত না, হলাম না হয় আমি ভুল।

রাগ পরে গেলে, নিজের ভুল আমি বুঝতে পারলে হালকা করে শুধু বলত 'তুমি না হয় বুঝ না, আমি না বুঝলে চলবে । ' আমার পাশে সব সময় থেকে শুধু উৎসাহ দিয়ে গেছে, খুব বাজে সময়গুলোতে আমার একমাত্র আনন্দের উৎস হয়ে ছিল এই ছোট্ট সূর্যটি । আমাদের কুকুর-বিড়াল পালার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আম্মুর জন্য এই ইচ্ছা , ইচ্ছাই থেকে গেছে। তাই মাঝে মধ্যে ও আমার বিড়াল হয়ে যেত।

কথো- পোকথনে সক্ষম বিড়াল এর সাথে সেই খেলাগুলো এখন খুব মনে পরে। স্মৃতির অসুখে আক্রান্ত এই আমার এখন ২৩০ কিমি দূর থেকে মোবাইলে ওর 'বুবু' ডাক শোনা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। মাঝে মাঝে চোখ ভেঙে কান্না পায় । কিন্তু তখন ভাবি বাসায় গেলেই ছোট্ট দুটি হাত আমাকে জড়িয়ে ধরবে অসীম আনন্দ নিয়ে, তখন শুধু অপেক্ষা করে যাই- আমার ছোট্ট সূর্যেকে দেখার জন্য। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।