আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরচর্চা বনাম রূপচর্চা

সদ্য স্কুল পেরুনো ভাগ্নীর মুখে অত বড় কথাটা শুনে হজম করতে পারলাম না আমি। তাই ওকে আবার জিজ্ঞেস করলাম –এই কী বললি তুই?
ঘাড়টাকে ত্যাড়া করে মেয়েটা বলল- তুমি কি জানতে চাইছিলে যেন?
-আমি জানতে চেয়েছি মুখে ওসব কী আটা ময়দা মেখে বসে আছিস পড়াশুনা না করে?
-এর উত্তরে আমি বলেছি পরচর্চা অপেক্ষা রুপচর্চা উত্তম।
আমার চোয়াল ঝুলে যাবার উপক্রম। নিজেকে নিয়ে মগ্ন থাকি, পরের সমালোচনায় সময় নষ্ট করি না বলে আমার মনে মনে একটু বড়াই আছে বৈকি, তাই ওর কথা শুনে মেজাজ খারাপ হবারই কথা। কিন্তু তারচেয়ে বেশি অবাক হলাম।

কারণ মেয়েটাকে এখন পর্যন্ত দিনরাত শুধুমাত্র টেক্সট বই মুখস্ত করতে দেখেছি, আর কিছুতে ওর আগ্রহ নেই। নিরেট মগজ, আহামরি ব্রিলিয়ান্ট বলে মনে হয় নি কখনো, ওই মুখস্ত বিদ্যার জোরে যাবতীয় পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়ে আসছে। ওর মুখে এমন কথা শুনে তাই অবাক হবারই কথা। তারপর আমার বিরুদ্ধে ওর মুখে পরচর্চার অপবাদ! বললাম
-আমি কখন পরচর্চা করলাম?
-এই যে মাকে বলছিলে তোমার কাজের লোকটা একদম অলস, কোনো কাজ ঠিকভাবে করে না…
আমি হা হয়ে গেলাম। ঠিক তো, বলছিলাম তো এইসব কথা! কিন্তু ওটাও পরচর্চার মধ্যে পড়ে কিনা এই নিয়ে একটু খটকা লাগল।

তাই শুধালাম
-ওটা আবার পরচর্চা নাকি?
-আলবৎ! কেউ অফিসে ঠিকমত কাজ না করলে সেটা নিয়ে অন্যরা যখন আলাপ করে তখন সেটা যদি পরচর্চা হয় তাহলে...
ওর যুক্তিবোধ দেখে লজ্জা পেলাম আমি আর দ্রুত প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলাম।
-বড়দের কথা শুনছিলি লুকিয়ে লুকিয়ে? ছিঃ
-তোমরাতো চেঁচাচ্ছিলে…
-মুখে কি মেখেছিস?
-উপটান!
-কেন?
-মা বলেছে আমি দেখতে কুৎসিত।
-তাতে কী?
-আমি সুন্দর হব।
-সুন্দর হয়ে?
-সুন্দরকে সবাই পছন্দ করে!
-তুই এত ভাল ছাত্রী, তোকে কে অপছন্দ করে?
-মোটেও না, ভাল রেজাল্ট করলেই কি ভাল ছাত্র হওয়া যায় নাকি!
-যায় না?
-না, মুখস্ত করে ভাল নম্বর পেলেই তো হয় না।
আমি তাজ্জব বনে যাচ্ছি!
-তাহলে? এখন কি রূপচর্চা করে সুন্দর হবি?
গম্ভীরভাবে মাথা নাড়ছে মেয়েটা।


-এই মেয়ে কথা বলছিস না কেন?
-কথা বললে উপটান নষ্ট হয়ে যাবে।
আমি চুপচাপ কথাগুলো ভাবছি আর ওর কাণ্ডকারখানা লক্ষ্য করছি! কি সুন্দর আত্মোপলব্ধি হয়েছে মেয়েটার। মুখস্তবিদ্যায় করা ভাল রেজাল্টের মূল্য যে নেই সেটা বুঝে ফেলেছে। পরচর্চা নিয়ে কি ভাবছে সেটা আরো বিশদে শুনব বলে অপেক্ষা করে ছিলাম। নিজের মায়ের মুখে দিনরাত অন্যের সমালোচনা শুনে শুনে হয়ত বিরক্ত হয়ে এই রকম একটা যুক্তি দাঁড় করিয়েছে মেয়েটা! মুখ ধুয়ে এলেই ওকে ডাকলাম আমার কাছে।

বললাম
-এইবার বল পরচর্চার চেয়ে রূপচর্চা কেন ভাল?
মিটিমিটি হাসছে মেয়েটা। আবার জিজ্ঞেস করতেই বলল
-প্রতিদিন অন্তত মিনিট দশেক অন্যের বদনাম কর না?
-না করি না। অত সময় নেই।
-আচ্ছা বেশিরভাগ মানুষই তো করে, তাই না?
-হুম তা করতেই পারে।
-এটা কি ভাল?
-মোটেও ভাল না।


-ওই সময়টুকু নষ্ট না করে অন্তত মৌনতা অবলম্বন করা খুব কি কঠিন?
-বেশ কঠিন হতে পারে অনেকের জন্য।
-তাহলে মুখে আটা ময়দা মেখে বসে থাকলেই তো সহজ হয়ে যায় ব্যাপারটা!
চোখ সরু করে তাকালাম ওর দিকে। আবার বলতে শুরু করেছে ও।
-তোমার চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল হয়েছে কিন্তু।
-জানি
-প্রতিদিন দশ মিনিট আলুর ...
ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম
-আচ্ছা মেয়েরা নাহয় রূপচর্চার পেছনে সময় দিয়ে পরচর্চা থেকে নিজেদের দূরে রাখবে।

ছেলেরা কি করবে? ওরাও মুখে উপটান মাখবে? ওকে নাজেহাল করার জন্য বললাম কথাটা!
-কেন? সৌন্দর্য বা রূপের ব্যাপারটা শুধু মেয়েদের জন্য নাকি?
-ছেলেরা সেটার যত্ন নেবে মুখে আটা ময়দা মেখে?
-রূপ ব্যাপারটা কি শুধু বাইরের নাকি? মনের রূপ বলে কিছু নেই?
আমি এবার একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বললাম
-তার জন্য কি সাজেস্ট করবি?
-বই পড়তে বলব।
-আর মেয়েরা?
-সবার জন্য একই পদ্ধতি!
-তার মানে রুপচর্চা বলতে হাতে বই আর মুখে উপটান?
-হুম!
এবার ওর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললাম-কি চাস বল? যা চাইবি তাই তোকে দিব আজকে।
মেয়েটা বলল- চলো, বইমেলাতে যাই, কিছু বই কিনে দিও।
আমি বললাম-চল্!
----------------------------------


সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।