আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেখ হাসিনা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেঃ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি - সরকারের ভুল নীতির খেসারত দিতে হবে গরিব মানুষকে।

মানুষ নিদ্রিত এবং মৃত্যুর পরপরই সে জেগে উঠবে।


বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগের সমালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের ভুলের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এই দায় গ্রাহকের ওপর চাপানো ঠিক হবে না। সরকারের ভুল নীতির কারণে খেসারত দিতে হবে গরিব মানুষকে। দাম বাড়ালে তা সার্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে।

এক্ষেত্রে দাম না বাড়িয়ে সাশ্রয়ী উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, সরকারের এ পদক্ষেপে সাধারণ গ্রাহকরা অসুবিধার সম্মুখীন হবেন। তাই এ উদ্যোগ এড়াতে পারলে ভাল হয়। সরকারের উচিত দাম বাড়ানোর পরিবর্তে উৎপাদন ব্যয় কমানোর চেষ্টা করা। বিদ্যুতের উৎপাদন না বাড়িয়ে এভাবে দাম বাড়ালে সরকার বেশি দূর যেতে পারবে না।



তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক বিশেষ সহকারীর দায়িত্বে থাকা ম. তামিম বলেন, বিদ্যুতের মূল্য ইতিমধ্যেই সাধারণ গ্রাহকদের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। যদিও সাড়ে ছয় শতাংশ বৃদ্ধি বেশি না। কিন্তু এই মূল্য যে ছয় মাস বা এক বছরের মধ্যে বাড়বে না এর কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ সরকার ধাপে ধাপে দাম বাড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ক্রমশই বিদ্যুৎ ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে।

দাম বাড়ানোর কোন বিকল্প আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সরকারের উচিত সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া। দেশী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এক্ষেত্রে ভাল ভূমিকা রাখতে পারে। গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের যে উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে তা জনগণের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পর গ্যাস পাওয়া না গেলে এটা হবে বড় ধরনের ক্ষতি। তাই সরকারের উচিত এই উদ্যোগ পরিত্যাগ করা।





সরকারের ভুল নীতির কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সরকারের এই ভুল নীতির খেসারত দিতে হবে গরিব মানুষকে। দাম বৃদ্ধি হলে মূল উৎপাদন শ্রেণী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর প্রভাব সব শ্রেণীর মানুষের ওপর পড়লেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগের বিষয়ে মানবজমিনকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, যেহেতু সরকারের ভুলের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে তাই এর দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। মূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তাদেরই দেখতে হবে।

তাদের ভুলের জন্য সাধারণ মানুষ কেন খেসারত দেবে? সরকার বলছে উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে দাম বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গত এক বছরের বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়েনি। তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে তো উৎপাদন বাড়ার কথা না। একই সঙ্গে পিডিবি’র বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচও বাড়ার কথা না। ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো ও বন্ধ থাকা কেন্দ্র ভাড়া নেয়াসহ অনিয়ম ও ভুল নীতির কারণে উৎপাদনে চাপ বাড়ছে।

দামের ওপর প্রভাব পড়ছে। লোকসানের বোঝা তৈরি হচ্ছে। এই বোঝা জনগণের মাথায় চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। মজার বিষয় হচ্ছে লোকসানের এই বোঝা গরিব মানুষ ও কৃষকের ওপর চাপানো হচ্ছে। যারা বেশি উৎপাদনশীল ভার তাদের ওপর দেয়া হচ্ছে।

এমন সিদ্ধান্তের ফলে সামগ্রিক অর্থনীতি ও উৎপাদনশীল খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, ধনীদের মধ্যে একটি শ্রেণী আছে যারা বিদ্যুতের মূল্য না দিয়ে তা ব্যবহার করে। তাদের না দেখে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে বাড়তি মূল্য চাপিয়ে দেয়া অনৈতিক। আমরা এর বিরোধিতা করছি। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, বিদ্যুতের উৎপাদন দাম দিতে হবে।

বাস্তবতা বলছে, উৎপাদন দাম বাড়ছে সরকারের ভুলের কারণে। এর দায় সরকারের।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টা রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন কমরেড সেলিম -
‘জনগণের পকেট কেটে ‘কুইক-লুটপাটের’ আয়োজন চলছে’
‘গণ শুনানি হতে হবে বিদ্যুতের দাম কমানোর লক্ষে’
দুর্নীতি হঠাও-নীতি বদলাও-বিদ্যুতের দাম কমাও
৫ মার্চ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সামনে গণঅবস্থান

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টা রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কতিপয় ব্যক্তি ও দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বেপরোয়া লুটপাটের সুযোগ করে দেয়ার জন্যই সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। কুইক-রেন্টাল একটি স্বল্প সময়ের জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে বিশেষ অবস্থায় কাজে লাগানো হলেও, সরকার তা বছরের পর বছর চালু রেখেছে এবং সে বিষয়ে চুক্তি নবায়ন করে চলেছে। সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পথ গ্রহণ করেছে লুটপাটের জন্য, বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য নয়।

বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভ্রান্ত নীতি ও পদক্ষেপ, দুর্নীতি, অদক্ষতা ইত্যাদির আর্থিক দায়ভার সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। ক্রমাগতভাবে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে, সাধারণ মানুষের পকেট কেটে, এই লুটপাটের ভা-ার জোগাড় করে দেয়া হচ্ছে। জনগণের পকেট কেটে ‘কুইক লুটপাটের’ আয়োজন চলছে। তিনি বলেন, গণ শুনানি হতে হবে বিদ্যুতের দাম কমানোর লক্ষে। বিইআরসি-কে সরকারের পক্ষে নয়, জনগণের পক্ষে দায়িত্ব পালন করতে হবে।




এটা এখন পরিষ্কার যে সরকার আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়বে গ্যাসের দামও। এর আগে ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আড়াই বছরে আরো পাঁচবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে মোট ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ দাম বেড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম হয়েছে এখন পাঁচ টাকা ৭৫ পয়সা।

এখন বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ছে।

চলতি মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন করেছে। পত্রপত্রিকায় যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে, এতে প্রতীয়মান হয়, বিদ্যুতের দাম আবার বাড়বে। খোদ প্রধানমন্ত্রী সংসদে প্রদত্ত বক্তৃতায় এ রকম ইঙ্গিত করেছেন। শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রী রীতিমতো সতর্ক করে দিয়েছেন সবাইকে। চিৎকার করে কোনো লাভ নেই।

দাম বাড়াতে হবে। তিনি বরং গ্রাহককে ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এ রকম কথা বলতেই পারেন, যদিও তাঁর কথা বাস্তব ও সত্য নয়। তা যদি অতীত এবং সত্য আড়াল না করে।

কেন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে? যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ছয় টাকা ২২ পয়সার মতো। অথচ তা বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র পাঁচ টাকা ৭৫ পয়সায়।

চট করে এ কথার জবাব দেওয়া যাবে না। এর জবাব দেওয়ার জন্য আমাদের অতীতের দিকে তাকাতে হবে। আমি বলেছি, পাঁচবার দাম বাড়ানোর পর আমরা এ অবস্থায় এসেছি।

তাহলে শুরুটা এত খারাপ ছিল না। দাম এবং উৎপাদন খরচ তো কম ছিল। বাড়ল কেন? বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থায় পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবহেলা করা হয়েছে। কম পয়সায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এ রকম সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলোকে দিনের পর দিন অবহেলা করা হয়েছে। মেরামতের পয়সা দেওয়া হয়নি।

গ্যাস সরবরাহ করা হয়নি। সামান্য কিছু টাকা খরচ করলে যেখানে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আরো সচল করা যেত, নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যেত, তা করা হয়নি। এ কাজে কয়েক দশক ধরে সরকারগুলো অবহেলা করেছে। বরং তার বদলে নানা উপায়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে বিদ্যুতের লোডশেডিং সৃষ্টি করে আওয়াজ তোলা হয়েছে, যেকোনো মূল্যে বিদ্যুৎ চাই। এটা ছিল আমাদের বিদ্যুৎব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক সর্বনাশা ষড়যন্ত্র।

এ আওয়াজ তুলে যেকোনো দামে, টেন্ডার ছাড়া, একক চুক্তিতে অত্যন্ত চড়া দামে বেসরকারি খাতে, ব্যক্তিমালিকানায় রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। সরকারি জমিতে, সরকারি পয়সায় ভর্তুকি দেওয়া চড়া দামের জ্বালানি তেল ব্যবহার করে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের গোটা বিদ্যুৎব্যবস্থাকে বিপর্যয়কর জায়গায় নিয়ে গেছে। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে। ২০০৯ সালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো যেখানে ২ দশমিক ৫০ টাকায়, ২০১৪ সালে তা এসে পৌঁছেছে ৬ দশমিক ২২ টাকায়। ২০০৯ সালে গ্রাহককে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য দিতে হতো ৩ দশমিক ৮৩ টাকা, ২০১৩ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৫ টাকায়।

এ চাপ সামলাতে সরকার উপর্যুপরি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে যে বিদ্যুৎ এসেছে, তার উৎপাদন দাম পড়েছে গড়ে ইউনিটপ্রতি আট থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। আজ এ দায়ভার জনগণের ওপর চাপানো হচ্ছে।

সরকারের বক্তব্য ছিল, রেন্টাল, কুইক রেন্টাল লোডশেডিং মোকাবিলায় সাময়িক পথ। সে বক্তব্য মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে সমর্থনও করেছিল।

পরিস্থিতি এমনই অসহ্য জায়গায় নেওয়া হয়েছিল যে সাধারণ গ্রাহকরা যেকোনোভাবে এর থেকে পরিত্রাণ চাচ্ছিলেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞজনরা তখনো বলেছিলেন, বিশ্বব্যাপী কুইক রেন্টালের অভিজ্ঞতা কিন্তু ভালো নয়। আর সরকার, প্রশাসন যদি অনভিজ্ঞ হয়, দুর্নীতিবাজ হয়, তবে এগুলো জাতীয় অর্থনীতিকে ধরে টান দেয়।


সমাপ্ত।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।