আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Killer Whale- এক অদ্ভুত সুন্দর কিন্তু প্রচণ্ড শক্তিশালী প্রাণীর গল্প!

তুমি হয়ত সবকিছুতে ভালো নও, কিন্তু তোমার উচিৎ সবকিছুতেই তোমার নিজের সেরাটা ঢেলে দেয়া!

কিলার হোয়েল এর নাম শুনেছেন? অথবা ওরকা? অনেকে হয়তো চেনেন এদের, অদ্ভুত সুন্দর কিন্তু অসাধারণ শক্তিশালী এক শিকারি এরা। এরা ডলফিন গোত্রের সবচেয়ে বড় প্রজাতি, সব ডলফিনই যে শান্তিপ্রিয় তা কিন্তু না! এদেরকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী Predator, আর সাগরে এদের চেয়ে নিপুণ শিকারি আর কেউই নেই। এমনকি যে গ্রেট হোয়াইট শার্ক আমাদের রাতের ঘুম হারাম করে দেয়, শক্তিতে সেটাও ওরকা এর সামনে কিছু না। !

এদের খাবারের তালিকায় আছে মাছ, সী-লায়ন, সিল, স্কুইড, ওয়ালরাস এমনকি তিমি মাছ! এদের একটা বড় সুবিধা হচ্ছে এরা স্বীকার করে দল বেঁধে, তাই নিজের চেয়ে বড় এবং শক্তিশালী প্রাণীকেও এরা সহজেই খাবারে পরিনত করতে পারে। এদের আছে চার ইঞ্চি লম্বা দাঁত, শরীরের রঙ সাদা আর কালো…সাদা রঙের চামড়াটা এমনভাবেই থাকে যে ছোটবেলা টিভিতে দেখে সেটাকেই বিশাল একজোড়া চোখ ভেবে ভুল করতাম।



এরা স্তন্যপায়ী, সাগরে সাধারনত ৫০ থেকে ৮০ বছর বাঁচে। লম্বায় ২৩ থেকে ৩২ ফুট পর্যন্ত হয়, ওজন হয় প্রায় ৬ টন। এত বড় শরীর নিয়েও এরা অসম্ভব দ্রুতগামী, ঘণ্টায় ৫৬ কি.মি পর্যন্ত রেকর্ড আছে…এছাড়া পানির উপর লাফ দিয়ে ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। এজন্যই এদেরকে বলা হয় APEX predator, বসে আছে ফুড চেইনের একেবারে শীর্ষে। তবে মানুষের অসাধ্য কিছু নাই, মানুষ এই ভয়ঙ্কর শিকারিকে পোষ মানিয়ে এমন ট্রেনিং দিয়েছে যে পৃথিবীর কিছু দেশে ওরকা শো আছে; যেখানে ওরকা মানুষের সাথে নানারকম খেলা দেখায়।



কিন্তু এমন শক্তিশালী একটা প্রাণীকে সাগরের বিশাল খোলা পরিবেশ থেকে এনে একটা ছোট পুল এ আটকে ফেললে তার খেসারৎ তো দিতেই হবে। একটা প্রবাদ আছে না- বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে, তেমনি ওরকা সবসময়ই সাগরে সুন্দর…মানুষের বিনোদন এর জন্য এদের আটকে ফেলা মানেই হল খাল কেটে কুমির আনা। ব্যাপারটা যদি এভাবে চিন্তা করি, যে এই বুদ্ধিমান এবং শক্তিশালী প্রাণীগুলো তাঁদের সারা জীবন ওই ছোট পুলে কাটিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে শুধুমাত্র আমাদের বিনোদন এর জন্য? এই বিনোদন কি প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাওয়া না?

যদিও ওরকা মানুষখেকো না, মানুষকে আক্রমণ করছে এমন ইতিহাসও তেমন নেই; কিন্তু এরকম আটকে ফেলা ওরকা কিছু মানুষের মৃত্যুর কারন হয়েছে (হওয়ারই কথা, একটা মানুষকে ছোট একটা যায়গায় আটকে ফেললেই সে আগ্রাসী হয়ে ওঠে, আর এটা তো ওরকা!)…তাঁর মধ্যে রয়েছে তাঁর ট্রেইনার নিজেই। যে কোম্পানি এই মেরিন পার্ক এর মালিক তাঁর নাম হচ্ছে Sea World, যারা প্রতিবছর মিলিওন মিলিওন ডলার ব্যাবসা করছে এই পার্ক থেকে। অ্যাজ এক্সপেক্টেড, সী-ওয়ার্ল্ড সবসময়ই এই দুর্ঘটনার দায় চাপিয়েছে ট্রেইনার এর উপর, আফটার অল ইটস অ্যা হিউজ বিজনেস।


কিন্তু অনেকেই এই বিপদজনক খেলার বিরুদ্ধে, এই বিশাল শক্তিশালী প্রাণীদের আটকে ফেলার বিরুদ্ধে। বেশ কিছুদিন আগে এই ঘটনা নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম, নাম Blackfish (ওরকা এর আরেক নাম ব্ল্যাকফিশ)। এতে উঠে এসেছে কিভাবে Tilikum নামের একটা কিলার হোয়েল তিনজন মানুষকে খুন করেছে, আর কিভাবে সী-ওয়ার্ল্ড প্রত্যেকবারই দোষটা মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা চালু রেখেছে।

আমি ডকুমেন্টারি সাধারনত দেখি না, কিন্তু নেটে এটা সম্পর্কে খুবই ভালো কিছু রেটিং আর রিভিউ পড়ে দেখার খুব আগ্রহ হল। প্রায় দেড় ঘণ্টার এই ডকুতে আছে টিলিকাম এর জীবন, কিভাবে একে ধরা হয়, কিভাবে এটি তিনজন মানুষের মৃত্যুর কারন হয়, কিভাবে সী-ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ সবসময় ওরকা এর ভয়ঙ্কর দিকটা লুকিয়ে রেখে তাঁদের ট্রেইনারদের মৃত্যুর সাথে খেলতে পাঠায়।

এই ঘটনা নিয়ে অনেক হইচই হয়েছে, মামলা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত আইন পাশ হয়েছে যে ওরকা এর সাথে ট্রেইনারদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এতে আছে নিহতদের পরিবারের সদস্য, প্রাক্তন সী-ওয়ার্ল্ড ট্রেইনার, প্রাণীবিজ্ঞানী ইত্যাদি মানুষের ইন্টারভিউ, সবার বক্তব্য থেকেই উঠে এসেছে যে আসলে কি ঘটেছিলো আর সী-ওয়ার্ল্ড এর কাভার আপ স্টোরি। সী-ওয়ার্ল্ড এখনও এই মুভির বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে আর তাঁদের বিজনেস কিন্তু আরও ফুলে ফেঁপে উঠছে, হায়রে মানুষ!
যারা একটু ডিফরেন্ট কিছু দেখতে চান, আর ওরকা সম্পর্কে আগ্রহী তাঁদের অবশ্যই এই ডকুটা ট্রাই দেওয়া উচিৎ। এর রিসেপশন কিন্তু টাস্কি খাওয়ার মত, রটেন এ ৯৮% ফ্রেশ আর আইএমডিবি রেটিং ৮.১। হ্যাপি ওয়াচিং!

ডাউনলোড লিংক- Click This Link


 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।