আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডায়াবেটিস-যক্ষ্মা : এক মায়ের দুই সন্তান!

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ছিল গতকাল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে এ দিবসটি। আমাদের দেশে যে কয়টি স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম যক্ষ্মা। বর্তমানে ডায়াবেটিসও এ তালিকায় যোগ হয়েছে। তাইতো কেউ কেউ বলে থাকেন, ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা যেন এক মায়ের দুই সন্তান।

স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ডায়াবেটিস এবং যক্ষ্মা অন্যতম। বিভিন্ন কারণে যেমন কায়িক পরিশ্রম কম করা, খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন, বংশগত এবং অন্যান্য কারণে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে যক্ষ্মা যা একটি জীবাণুঘটিত রোগ, আমাদের সমাজে সবসময় বিদ্যমান এবং প্রধানত দরিদ্র শ্রেণী বেশি আক্রান্ত, এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং তার মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার মৃত্যুবরণ করে। যথেষ্ট চেষ্টা সত্ত্বেও যক্ষ্মারোগ এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বরং ইদানীংকালে বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মারোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে।

 

বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মারোগ বিস্তারের অন্যতম কারণ হলো HIV এবং AIDS রোগের ব্যাপকতা। যেহেতু যক্ষ্মা একটি জীবাণুঘটিত রোগ, তাই যে সব রোগে বা কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, সেই রোগীদের যক্ষ্মা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের দেশে এখনো AIDS রোগের ব্যাপকতা এত বেশি নয়। কিন্তু একটি বিশাল জনগোষ্ঠী ডায়ারেটিস রোগে আক্রান্ত। আর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ।

ডায়াবেটিস রোগী যক্ষ্মা আক্রান্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করতে যথেষ্ট দেরি হয়ে যায় কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের যক্ষ্মারোগের লক্ষণ সাধারণ যক্ষ্মারোগীদের মতো নাও হতে পারে। যদিও যক্ষ্মারোগে প্রধানত ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে থাকে, কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ফুসফুসবহির্ভূত যক্ষ্মা আক্রান্তের হার অনেক বেশি।  

যক্ষ্মারোগ নির্ণয়ের অন্যতম পদ্ধতি হলো কফ পরীক্ষা করা এবং বুকের X-ray করা। এই দুই ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় X-rayতে যক্ষ্মারোগের লক্ষণ সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না এবং কফের মধ্যে জীবাণু পাওয়ার হার অনেক কম। তাই ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে যক্ষ্মারোগ নির্ণয়ের জন্য ঐরময High Degree of suspicion দরকার।

যদি কোনো ডায়াবেটিস রোগী জ্বর-কাশিতে ভোগে এবং বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরেও অবস্থার উন্নতি না হয়, তখন যক্ষ্মারোগের বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে কফে জীবাণু পাওয়া না গেলে কালচার করা এবং X-ray তে সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা গেলে  FNAC করা যেতে পারে। যক্ষ্মারোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায় অতিরিক্ত সাবধানতার দরকার হয়। সঠিক নিয়মে পূর্ণ মাত্রায় ওষুধ সেবন করলে ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায়ও যক্ষ্মারোগের ওষুধ সমানভাবে কার্যকর। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি।

কারণ রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি হলে যক্ষ্মা বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং যক্ষ্মারোগের ওষুধ সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।

লেখক : বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।