আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আগামীর পথে রাজিয়া

৯ মার্চ। সকাল সাড়ে ১০টা। কলেজের গেটে এসে থামল একটি রিকশা। নেমে দাঁড়ালেন এক ছাত্রী। বাঁ কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ।

লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যান কলেজের ভেতর। একটু খেয়াল করতেই দেখা গেল মেয়েটির ডান হাত নেই। নেই বাঁ পাও। শুধু ডান পায়ে ভর দিয়েই হাঁটছেন। কলেজের নিচতলার সিঁড়ি পেরিয়ে একটু একটু করে উঠে গেলেন তিনতলার শ্রেণীকক্ষে।


মেয়েটির নাম রাজিয়া সুলতানা। চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন ডিগ্রি কলেজের বিকম (পাস) কোর্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। প্রতিদিন এভাবেই রিকশায় করে কলেজে আসেন তিনি। ক্লাস শেষে একইভাবে আসেন কলেজের ফটকের সামনে। এরপর এক বান্ধবী তাঁকে ধরে রিকশায় তুলে দেন।

পতেঙ্গা পূর্ব কাঠগড় এলাকায় বাড়ি ফেরেন তিনি।
রাজিয়ার সহপাঠী ও শিক্ষকেরা জানান, কখনো ক্লাস কামাই করেন না রাজিয়া। ছয় ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রাজিয়া। বাবা শেখ আহমেদ একসময় ব্যবসা করতেন। এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় নিজেদের ভাড়া ঘরের দেখাশোনা করেন।

মা আয়েশা খাতুন গৃহিণী।
কথা হয় রাজিয়ার সঙ্গে। বললেন, ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে। তিনি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়েন। একদিন বিকেলে ফুপাতো বোনের বাড়ির ছাদে হাঁটার সময় অসতর্কতাবশত বৈদ্যুতিক তারে হাত লেগে যায়।

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করে তাঁর ডান হাতটি কেটে ফেলতে হয়। কিছুদিন পর বাঁ পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়।
চিকিৎসায় অবহেলার জন্যই এমনটি হয়েছে বলে জানান রাজিয়া।

বললেন, ‘সময়মতো চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো আমার বাঁ পাটি হারাতে হতো না। ’
দুর্ঘটনার পর প্রায় বছর তিনেক রাজিয়ার পড়াশোনা বন্ধ ছিল। বাড়িতে শুয়ে-বসে কাটাতে হয়েছে। একটু সুস্থ বোধ করার পর বাড়িতেই পড়াশোনা শুরু করেন। এরপর এক ভাইয়ের সহযোগিতায় রাজিয়া মাইজপাড়া মাহমুদুন্নবী চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন।

২০১০ সালে সেখান থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ২০১২ সালে নৌবাহিনী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।
তবে ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট নন রাজিয়া। বললেন, ‘বাঁ হাত দিয়ে লিখতে হয়। প্রশ্ন কমন পড়লেও তিন ঘণ্টায় সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় না।

তাই এসএসসি ও এইচএসসিতে আশানুরূপ ফল করতে পারিনি। ’ কারণ, লেখার পাশাপাশি হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে প্রচুর ছক ও ক্যালকুলেটরে হিসাব-নিকাশ করতে হয়। ভবিষ্যতে শিক্ষকতা, নয়তো ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন রাজিয়া।
কলেজের অধ্যক্ষ ইসমত আরা বলেন, ‘রাজিয়া পড়াশোনায় অনেক ভালো করছে। তাঁর পরীক্ষার সুবিধার্থে সহযোগী উত্তরদাতা বা পরীক্ষার সময় বাড়ানো যায় কি না সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব আমরা।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।