আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমন আন্দোলন হবে যে গিনেস বুকে নাম উঠবে : খালেদা

বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, শত কোটি টাকা খরচ করে জাতীয় সংগীত গেয়ে কোনো লাভ হবে না। টাকা খরচ করে বাসভর্তি মানুষ নিয়ে এসে এ অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এভাবে গিনেস বুকে নাম ওঠানো যায় না। জনগণের আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানে সরকারের বিদায়ের মাধ্যমেই গিনেস বুকে নাম উঠবে। তিনি বলেন, এমন আন্দোলন হবে, সেখানে টাকা দিয়ে মানুষ আনতে হবে না।

ওই গণঅভ্যুত্থান গিনেস বুকে এমনিতেই স্থান পাবে।

গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের একাংশের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন, ২০১৪ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি কামালউদ্দিন সবুজ, বিএফইউজের মহাসচিব শওকত মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, বিএফইউজের যুগ্ম-মহাসচিব এম আবদুল্লাহসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরী থেকে আগত সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য দেন। এ ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীন আহমদসহ বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, এখন আর সময়-কাল নির্ধারণ করে আন্দোলন নয়।

আন্দোলন চলছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। তবে আগামীকাল ৩১ মার্চ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন। তার পরই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের। আপনাদের সবাইকেই যার যার অবস্থান থেকে অংশ নিতে হবে। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন ৩১ মার্চ শেষ হবে, এরপর শুরু হবে আন্দোলনের প্রস্তুতি।

সরকারের প্রতি অতি দ্রুত সংলাপের মাধ্যমে আরেকটি নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচন দিতে যত দেরি হবে দেশের তত বেশি ক্ষতি হবে। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের ধারণা বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না। তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন করতে পারে, তবে আওয়ামী লীগের মতো ধ্বংসাত্দক কর্মকাণ্ড পারে না। বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো বাসে গানপাউডার কিংবা লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করতে পারে না। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের শক্তি দাবি করলেও তারা মুক্তিযুদ্ধের দল নয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাদের কী ভূমিকা ছিল তা জাতি জানে। দেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যখন জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, তখন আওয়ামী লীগের লোকেরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শরণার্থী হিসেবে জীবন কাটিয়েছেন। কাজেই আওয়ামী লীগের কেউ মুক্তিযোদ্ধা নন, তারা হলেন সীমান্ত পাড়ি দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা। আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির বর্ণনা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের কোনো উন্নতি করেনি। উন্নতি হয়েছে তাদের দলের নেতাদের, আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের।

আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে দেশকে বিভ্রান্ত করছে। দেশের তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গায়ের জোরে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। যেহেতু তারা ক্ষমতায় আছে, তাই তারা গায়ের জোরে মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে।

তবে তারা বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। দেশের জনগণ তাদের টেনে নামাবে।

খালেদা জিয়া বলেন, কথায় কথায় রাজাকারের বিচারের কথা বলে আওয়ামী লীগ। কিন্তু তাদের দলের ভেতরে যেসব রাজাকার রয়েছে সেগুলোর কথা বলছে না কেন? তাদের দলের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেছেন। রাজাকারি করার জন্য তার তো কারাগারে থাকার কথা।

খালেদা জিয়া বলেন, গুটিকয় লোক ছাড়া দেশের সবাই যুদ্ধ করেছে।

সরকারের সমালোচনা করে ১৯-দলীয় জোট নেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ টেন্ডারবাজি করছে। ব্যাংকের টাকা লুট করছে। তারা বাড়ি দখল, জমি দখল করছে। তারা প্রথমে পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া জায়গা-জমি, কল কারখানা দখল করেছে।

পরে হিন্দুদের জায়গা-জমি দখল করে নিয়েছে। বিএনপির শেকড় দেশের অনেক গভীরে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপির জন্ম এ দেশে। এ দেশের মানুষই বিএনপির মূল। তাই বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। তিনি আরও বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সাংবাদিকদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, দেশে এখন কী অবস্থা চলছে।

সংবাদ প্রকাশ যাদের পেশা, সেই সাংবাদিকদের ২৩ জনকে এ সরকার হত্যা করেছে। কোনো পেশার মানুষই এ সরকারের কাছে নিরাপদ নয়। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, কুইক রেন্টাল প্লান্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত। তাদের পকেট ভারী করতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পাঁচবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে।

আর তাদের উপদেষ্টাদের কথায় এখন রাস্তাঘাটে টোল বসানোর ঘোষণা দিয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে সরকারের এ টোল আদায় সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিদেশিরা ট্রানজিট নেবে তার ফি নিলে বেয়াদবি হবে, আর বাংলাদেশর জনগণের কাছ থেকে টোল নিলে তা হবে আদবি। তিনি আরও বলেন, সীমান্তে যে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তার প্রতিবাদ করা হয় না। তিস্তা ও পদ্মায় পানি নেই, তার কোনো প্রতিবাদ নেই। আর আমরা দেশের ভেতরে প্রতিবাদ করলে আমাদের ওপর গুলি চালায়।

জাতীয় পার্টির বেগম রওশন এরশাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, 'সম্মান ও চামড়া' বাঁচাতে চাইলে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করুন। রওশনের 'চাপে পড়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি' বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, চাপ তো আমাদের ওপরও ছিল। কিন্তু আমরা জনগণের কথা চিন্তা করেছি। তার মানে আপনারা এমন কোনো অপকর্ম করেছেন, যে কারণে চাপ উপেক্ষা করা আপনাদের কাছে সম্ভব ছিল না। এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া আরও বলেন, ভবিষ্যতেও এ ধরনের চাপের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

সংসদকে 'অবৈধ' আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এ 'অবৈধ' পার্লামেন্টের পেছনে এত টাকা খরচ করে তা চালানোর প্রয়োজন নেই। অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সারা দুনিয়ায় সমালোচনা হচ্ছে। এ সমালোচনা থেকে মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে তারা উপজেলা নির্বাচন দিয়েছে। এ নির্বাচনে যখন দেখেছে আমাদের প্রার্থীরা জয়ী হচ্ছেন, তখন তারা কারচুপি ও কেন্দ্র দখল শুরু করে।

রাতেই ভোট বাঙ্ ভরে রাখে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর বিকালে চলে কর্মঅধিবেশন। আজ বিএফইউজে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এ নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তা হলো 'শওকত মাহমুদ-এম এ আজিজ' ও 'গোলাম মহিউদ্দিন খান-এলাহী নেওয়াজ খান সাজু' পরিষদ।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।