আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্বশুর-শাশুড়ীবিরোধী পুত্রবধুরা সাবধানঃ পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩

সরকার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ পাশ করেছে অসহায় পিতামাদের জন্য, যাদের সন্তানরা হয় ভরন-পোষণ দেয়না নতুবা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে সহায়তা করে থাকে। আসলে জন্মদাতাদের কি এটাই পাওনা হওয়া উচিত যে, তাদের অসহায় অবস্থায় সন্তান খোঁজখবর নেবেনা বা ভরণ-পোষণ দেবেনা? বিবেক বা ধর্ম বা আইনে কোথাও এর সমর্থন নেই।

ইসলাম তাই তাদের কষ্ট দেয়াকে জাহান্নামে যাবার রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পবিত্র কুরআন বলেছে-তোমরা পিতামাতাদের সাথে এমন ব্যবহার পর্যন্ত করনা যাতে তারা ''উফ'' শব্দও বলতে পারে। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত-বলেও নবী ঘোষণা করেছেন।



রাষ্ট্রের এ উদ্যোগ ভালো। তবে এ আইন ইসলামের কিছুটা সমর্থক হলেও দু’য়ের মধ্যে ফারাক এই যে-ইসলাম সচেতনতা, নৈতিকতাবোধ ও পরকালীনভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে সন্তানকে নিজ পিতামাতার উপকারে লাগাতে চায় তারা যাতে স্বেচ্ছায় ভরণ-পোষণ দেয়। আর এ আইনে অবাধ্যদের ভরণ-পোষণপ্রদানে বাধ্য করা হয়েছে। অনেক ত্রুটি থাকলেও আইনটি খুব ভালো। পিতা-মাতাকে ভরন-পোষন দিইনা বলে বাধ্য করতেই এ আইন।

তাই এ আইনকে যেমন শ্রদ্ধা করি তেমনি লজ্জাও পাই এ ভেবে যে, পিতা-মাতার জন্য ছেলের দরদ বা ভালবাসা নেই। অথচ ইসলামের বিধানের আলোকে বাংলাদেশ সরকারেরও সে দরদ সৃষ্টি হয়েছে। এমন আইন অন্য দেশে আছে কিনা আমার জানা নেই।

আরেকটি বিষয় বেশ ভালো মনে হচ্ছে, সন্তানের স্ত্রী বা পুত্রবধু বা আত্মীয়দের কেউ পিতামাতার ভরণ-পোষণে বাধা দিলে তারাও সমভাবে দোষী এবং দণ্ডযোগ্য হবে। আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়- পুত্রের বিয়ের পরপরই সন্তান পর হয়ে যায়।

ফলে জন্মদাতা পিতামাতার ভাগ্যে নেমে আসে দুর্দশা। এখন এ আইনে শ্বশুর-শাশুড়িদের পছন্দ করেনা এমন পুত্রবধুর বিরুদ্ধেও প্রতিকার পাওয়া যাবে ভেবে ভালোই লাগছে আমার।


কিন্তু একজন কুলাঙ্গার সন্তান হিসেবে আমি পিতা-মাতার ভরণ-পোষন দিলাম না বলে রাষ্ট্র আমাকে জেলে দিল। কিন্তু আমি জেলে থাকাকালীন সেই পিতামাতার ভরণ-পোষণ কে দেবে? রাষ্ট্র কি ইসলামী রাষ্ট্রের মতোই আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে ভরন-পোষণ দেবে, এ আইনে সে বিধান নেই? এটার সমাধান না থাকলে আমার মতো মন্দ সন্তানের জেলের বাইরে থাকাও যা জেলে থাকাও তা-ই? সেই অসহায় মাতাপিতাদের কিন্তু সমাধান হলোনা-এটা নিয়ে রাষ্ট্রের আরো ভাবা উচিত। সরকারের যুগান্তকারী আইনটি নিচে দিলাম--

‘’পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩
( ২০১৩ সনের ৪৯ নং আইন )
[২৭ অক্টোবর, ২০১৩ ]
সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রনীত আইন

যেহেতু সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইলঃ—
সূচী
ধারাসমূহ
১) সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন
২) সংজ্ঞা
৩) পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ
৪) পিতা-মাতার অবর্তমানে দাদা-দাদী, নানা-নানীর ভরণ-পোষণ
৫) পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ না করিবার দণ্ড
৬) অপরাধের আমলযোগ্যতা, জামিনযোগ্যতা ও আপোষযোগ্যতা
৭) অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ ও বিচার
৮) আপোষ-নিষ্পত্তি
৯) বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা।

‘’

৩নং ধারায় যা আছে- ‘’পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ
৩। (১) প্রত্যেক সন্তানকে তাহার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিতে হইবে।
(২) কোন পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকিলে সেইক্ষেত্রে সন্তানগণ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করিয়া তাহাদের পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবে।
(৩) এই ধারার অধীন পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার একইসঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করিতে হইবে।
(৪) কোন সন্তান তাহার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাহার, বা ক্ষেত্রমত, তাহাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, কোন বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করিতে বাধ্য করিবে না।


(৫) প্রত্যেক সন্তান তাহার পিতা এবং মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখিবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করিবে।
(৬) পিতা বা মাতা কিংবা উভয়, সন্তান হইতে পৃথকভাবে বসবাস করিলে, সেইক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে নিয়মিতভাবে তাহার, বা ক্ষেত্রমত, তাহাদের সহিত সাক্ষাত করিতে হইবে।
(৭) কোন পিতা বা মাতা কিংবা উভয়ে, সন্তানদের সহিত বসবাস না করিয়া পৃথকভাবে বসবাস করিলে, সেইক্ষেত্রে উক্ত পিতা বা মাতার প্রত্যেক সন্তান তাহার দৈনন্দিন আয়-রোজগার, বা ক্ষেত্রমত, মাসিক আয় বা বাৎসরিক আয় হইতে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ পিতা বা মাতা, বা ক্ষেত্রমত, উভয়কে নিয়মিত প্রদান করিবে।

৫নং ধারায় যা আছে-‘’পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ না করিবার দণ্ড
৫। (১) কোন সন্তান কর্তৃক ধারা ৩ এর যে কোন উপ-ধারার বিধান কিংবা ধারা ৪ এর বিধান লংঘন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবে; বা উক্ত অর্থদণ্ড অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে।


(২) কোন সন্তানের স্ত্রী, বা ক্ষেত্রমত, স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোন নিকট আত্নীয় ব্যক্তি—
(ক) পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানীর ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধা প্রদান করিলে; বা
(খ) পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানীর ভরণ-পোষণ প্রদানে অসহযোগিতা করিলে—
তিনি উক্তরূপ অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিয়াছে গণ্যে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।