আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা-বাবাই অটিজম শিশুর উত্তম চিকিৎসক

আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে এ দিবসটি। অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই আজকের এ প্রয়াস-

১. ফুটফুটে অমিয় যখন নুসরাতের কোল জুড়ে আসল, সংসারের সবার চোখ জুড়িয়ে গেল। বাবা ফরহাদ আর মা নুসরাতের যেন আনন্দ ধরে না। অনিন্দ সুন্দর তাদের সন্তান।

কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের ছন্দ পতন শুরু হলো। অমিয় অন্য শিশুদের মতো বাবা-মার আদরে স্নেহে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে না, এমনকি বাবা-মা বা অন্যরা আদর করতে গেলে সে চোখ তুলে তাকায়ও না। একা একা খেলা করে। অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মিশে না। মাঝে মাঝে নিজে অদ্ভুত কিছু আচরণ করে।

এই সময়ে যখন 'মা'- 'বাবা' ডেকে ডেকে বাবা মাকে আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে দেবে, তখন তার কোনো কিছুই সে করে না।  

২. শিশু অমিয় অসম্ভব অটিজম নামক সমস্যা/রোগে ভোগছে। অটিজম ব্রেইন ও মনের বিকাশজনিত জটিল সমস্যা। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে মূলত শিশু আচরণ। (Behaviour), সামাজিক ও পারস্পরিক যোগাযোগ (Social Communication and interaction), কথা (Language/ Speech) ইত্যাদির ব্যতিক্রম ও ব্যত্যয়ের মধ্য দিয়ে।

অটিজম নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার শেষ নেই। এমনকি শিক্ষিত এবং পোশাজীবীদের মধ্যেও অটিজম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এটা কি নিউরোলজিক্যাল? মনোরোগ? শিশুরোগ? এসব বিতর্কের চেয়ে কি করে অটিজম সমস্যায় শিশুর সাহায্য করা যায় তা নিয়ে ভাবা শ্রেয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রোগ বিন্যাসের মধ্যে অটিজম শিশু-কিশোরদের জটিল ব্রেইনের বিকাশজনিত (Pervasive Development Disorder) শিশু মনোরোগের অন্তর্ভুক্ত। আগে অটিজমকে বিভিন্ন প্রকার ভেদে ভাগ করলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অটিজমের সব ধরনকে একই ছাতার নিচে অটিজম স্প্রেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) নাম দেওয়া হয়েছে।

৩. অটিজম যেমন জটিল সমস্যা, এর সংখ্যা ও নেহায়েত কম নয়। সচেতনতা, নির্ণয়ের সক্ষমতার কারণে গত ৪০ বছরে অটিজম নির্ণিত হয়েছে ১০ গুণ বেশি। মেয়ে সন্তানের চেয়ে ছেলে সন্তানদের অটিজম পাঁচ গুণ বেশি হয়। প্রতি ৫৪ জন বালকের মধ্যে এক জন এবং প্রতি ২৫২ জন বালিকার মধ্যে এক জন অটিজমে আক্রান্ত। মনে রাখতে হবে অটিজম নির্ণয় করতে হবে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে।

অটিস্টিক শিশুদের এ সমস্যাটির সঙ্গে অন্যান্য সমস্যা যেমন কম বুদ্ধাংক / খিঁচুনি, শারীরিক সমস্যা যেমন Motor incordination, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি থাকে।

৪. অটিজমের সঠিক কোনো একটি কারণ এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা যায়নি। ক্রোমোজোমে জীবনের পরিবর্তন/ ক্রটিকে এর প্রধানতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে জিনে ত্রুটি/ পরিবর্তন এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণ যেমন- গর্ভাধারণের সময় পিতা-মাতার বেশি বয়স, গর্ভকালীন মাতৃত্বের জটিলতা, না জেনে গর্ভকালীন বিভিন্ন ওষুধ ইত্যাদি সেবন, প্রসবকালীন জটিলতা যা শিশুর মস্তিষ্কে জন্মকালীন অক্সজেন স্বল্পতা সৃষ্টি, রোগ প্রতিরোধক অক্ষমতা ইত্যাদি মিলে এ সমস্যার সৃষ্টি করে। সব ত্রুটিসমূহ মস্তিষ্কে (ব্রেইন) তথ্যবিন্যাস পদ্ধতিতে ব্যাহত করে।

এতে ব্রেইনে গঠনগত কোনো ত্রুটি থাকে না কিন্তু বিকাশগত /কার্য পদ্ধতিতে সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। তাই অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।

লেখক : এফসিপিএস, এফআরসিপি, সিনিয়র সাইকিয়াট্রিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।