আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ খুলনার কথা বলি ?



আলো ব্লগের প্রিয় বন্ধুরা আপনারা অনেকেই জানেন আমার বাড়ি মুজিবনগর খ্যাত মেহেরপুর জেলায়, সেই সুত্রে আমি খুলনা বিভাগের মানুষ। আজ আমার বিভাগ খুলনা নিয়ে কিছু বলি? অনেক দিন আগের কথা আমি তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। বন্ধুরা সব ঐক্যমত হলাম যে, রেডিও সেন্টার এবং বিভাগ দেখার জন্য খুলনা বেড়াতে যাবো। আমাদের সবার প্রিয় বড় ভাই স্কুল শিক্ষক আমিরুল আমাদের নিয়ে খুলনা যাবে বলে জানালেন। আমরা আমিরুল ভাইয়ের প্রস্তাব পেয়ে মহা খুশি।

আমিরুল ভাই খুলনার বি এল কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করেরছেন তাই খুলনা বিষয়ে আমিরুল ভাইয়ের ভাল ধারনা আছে এ বিষয়ে আমাদের আর সন্দেহের অবকাশ রইল না। দিনক্ষন ঠিক হলো। আমরা আগামী রবিবার ভোরে বাস যোগে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিব। হাতে এখনো তিন দিন সময়। রবিবার আর আসেনা।

নাওয়া খাওয়া ঘুম সব বন্ধ। জীবনে এই প্রথম দুরে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছি! বিমান লঞ্চ ষ্টিমার জাহাজ ট্রেন কোন কিছুই এখনো দেখা হয়ে উঠেনি তবে খুলনা গেলে ট্রেন দেখতে পাবো ভেবে পুলকিত হচ্ছি। অপেক্ষার প্রহর শেষ। উপস্হিত হলো সেই মাহেন্দ্রক্ষন! খুব ভোরে আমরা খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অনেক দুরের পথ খিদে কষ্ট হবে ভেবে মা পরাটা আর ডিম ভাজি সাথে দিয়ে দিলেন।

আমাদের বাস দ্রুত গতিতে খুলনার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দর্শনা পৌঁছাতেই বন্ধুরা চিৎকার করে বলল ঐ যে ট্রেন! ষ্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে ! সড়ক পথ আর রেল পথ পাশাপাশি হওয়ায় বাস থেকে ট্রেন দেখা যাচ্ছে তবুও আমিরুল ভাইকে বাস থামানোর জন্য অনুরোধ করলাম। যে কথা সেই কাজ বাস থামানো হলো। আমরা হুড়মুড় করে বাস থেকে নেমে ট্রেনের কাছে দৌড়ালাম। খুব কাছ থেকে ট্রেন দেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করাতে পারছিনা যে সত্যিই কি আমরা ট্রেন দেখছি? কিছুক্ষন পর ট্রেনটি ষ্টেশন ছেড়ে চলে গেল।

আর একটি রেল লাইন অন্যদিকে গেছে কেন জিজ্ঞেস করতেই আমিরুল ভাই বললেন এই লাইনটা কলকাতা গেছে, দেশ ভাগের আগে এই লাইনে ট্রেন চলত, এখন আর চলেনা। এ কথা শুনে কষ্ট পেলাম যে কোনদিন ট্রেনে চড়ে কলকাতা যেতে পারবো না ভেবে তবে বর্তমানে “মৈত্রী এক্সপ্রেস” নামের একটি ট্রেন ঢাকা- কলকাতা চলাচল করছে এবং এই ট্রেনে ভ্রমনের মধ্য দিয়ে অবশ্য সেদিনের সেই কষ্ট দুর হয়েছে। আমিরুল ভাই বললেন চলো এবার তোমাদের এশিয়ার বিখ্যাত দর্শনার কেরু এন্ড কোম্পানীর চিনিকল দেখিয়ে নিয়ে আসি। ষ্টেশন থেকেই দেখা যাচ্ছে বিশাল এই চিনিকল। আমরা হেটে চিনি কলের কাছে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখলাম।

সময়ের অভাবে ভিতরে যাওয়া সম্ভব হলোনা পাশের সবুজ চত্বরে বসে সকালের নাস্তা শেরে আবার খুলনার পথে পাড়ি জমালাম। আমরা এখন যশোর শহর অতিক্রম করছি। শহরের মাঝখানে দেখলাম অনেক লোকের ভিড়, আমিরুল ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন এটা হচ্ছে দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহত প্রেক্ষাগৃহ “মণিহার“! ওয়াও! আমরাতো অবাক, যার কথা প্রতিদিন রেডিওতে শুনি সেই মণিহার? বাস থেকে তাড়াহুড়া করে নেমে যে যার মত ছুটলাম মণিহারের দিকে। কি চমৎকার! মার্বেল পাথরের সুরম্য অট্রালিকা! রঙ্গীন পানির ফোয়ারা! দৃষ্টি নন্দন কারুকার্য! বাহিরেই এত কিছূ ভিতরে না জানি কত সুন্দর? হলের ভিতরে ছবি না দেখার বেদনা নিয়ে ফিরলেও পরে অনেকবার মণিহার হলে ছবি দেখার সুযোগ হয়েছে কিন্তু সেদিনের মত আনন্দ কোনদিনই আর পাইনি! বাস আবার খুলনার দিকে ছুটে চলেছে আমরা এখন দৌলতপুর শিল্প এলকা অতিক্রম করছি, রাস্তার দু’পাশে পাটকল, শ্রমিকদের কর্মমুখর ব্যস্ততা, মিলের বিকট সাইরেন সবই আমাদের পুলকিত করছে! এর পর দেখলাম পৃথিবী বিখ্যাত খুলনা নিউজিপ্রিন্ট মিল, সুন্দর বনের সুন্দরী কাঠ কাগজ তৈরীর কাঁচা মাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে যদিও কোন এক অদৃশ্য কারনে মিলটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে! এর কিছুক্ষন পর হঠাৎ আমাদের গাড়ি থামলো এবং আমিরুল ভাই বললেন এবার তোমরা সবাই নামো আমরা রেডিও সেন্টারে চলে এসেছি। কোথায় রেডিও সেন্টার ? কোন দিকে? ঐ যে টাওয়ার দেখা যাচ্ছে ঐটা রেডিও সেন্টার।

তখনতো টাওয়ার চিনতামনা, বললাম এটাতো টেলিফোন অফিস! এই টাওয়ারতো মেহেরপুরেও আছে। আমরা ভাবলাম আমিরুল ভাই আমাদের ফাঁকি দিচ্ছে! যে রেডিও সেন্টারে পছন্দের গান শুনার জন্য অনুরোধ করে চিঠি লিখি এটা সেই রেডিও সেন্টার হতে পারেনা! সুন্দর সুন্দর করে কথা বলেন, গান করেন, খবর পড়েন, আবহাওয়ার সংবাদ বলেন, নিখোঁজ সংবাদ বলেন সেই সব আপারা কোথায়? আমাদের বিশ্বাস হচ্ছেনা এটা রেডিও সেন্টার! যা দেখার জন্য তিনদিন ঘুমাইনি! মনে কষ্ট নিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। গেটে একজন দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে, আমাদের মত কোন বাস অপেক্ষা করছেনা, কৌতুহলি মানুষের কোন ভিড় নাই, তার পরেও বিশ্বাস করতে হলো এটায় রেডিও সেন্টার কারন গেটে লেখা আছে “ রেডিও বাংলাদেশ” বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার। আশাহত হয়ে আবার বাসে উঠলাম। আমিরুল ভাইকে বললাম এবার কিন্তু বিভাগ দেখাতে হবে।

আমিরুল ভাই বললেন শহরটাইতো বিভাগ। আমরা আমিরূল ভাইয়ের কোন কথায় আর বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমিরুল ভাই অনেক চেষ্টা করেও আমাদের বিভাগ দেখাতে পারলেন না। আমরা বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরলাম!

আজ নব নির্বচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের সফত গ্রহন অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়ে খুলনা বিভাগিয় কমিমনারে কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। তিন দশক পর সেই বিভাগ না দেখার বেদনা মুছে ফেললাম।

রাতে হোটেল রয়েল ইন্টার ন্যাশনাল (ফাইভ ষ্টার) এ নৈশভোজে অংশ নিয়ে রাত্রী যাপন করলাম তবে সেদিনের মায়ের হাতের দেয়া পরাটা ডিম ভাজি খাওয়ার যে মধুর স্মৃতি তা আজও ভোলার নয়!।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।