আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"We must apologise to Bangladeshis"-ইমরান খান

ইহা কঠোরভাবে একটি রাজনীতি মুক্ত ব্লগ । । এই মুহূর্তে জাতি'কে একতাবদ্ধ করে রেখেছে আমাদের ক্রিকেট ও ক্রিকেটার’রা। বোমা খুন ও জখমে উতপ্ত পাকিস্থানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সফর নিয়ে নানান জল্পনা। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি বলব,অন্তত এই মুহূর্তে না।

একজন ‘মোস্তফা কামালের’ ইচ্ছার বলি হতে পারে না আমাদের গর্বের সন্তান’রা। সরকার তখন সায় দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখন বিষয়টাকে আরো জটিল করে তুলেছে। আমরা একটা ভাল কূটনৈতিক সমাধানের প্রত্যাশা করি। নিজেকে বলি,যদি সুযোগ পেতাম তাহলে কি আমি এখন পাকিস্থানে যেতাম?না। তাহলে আমাদের ক্রিকেট দল কেন!আমাদের পররাষ্ট্রনীতি’সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’।

তবে মাস’টা ডিসেম্বর বলে কিছু কথা,কিছু আবেগ থেকে যায়। যদিও আবেগ দিয়ে দেশ চলে না,পররাষ্ট্রনীতিও নির্ধারিত হয় না। তবে আবেগ ভালবাসা না থাকলে ৭১ হত না,এই দেশও পেতাম না। চলেন আমরা একটু অন্যভাবে দেখে আসি..... ‘রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান যতই দুঃখ প্রকাশ বা এমন কি ক্ষমা প্রার্থনা করুন না কেন,আইন পরিষধে তার সমর্থনে প্রস্তাব গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত তা নিয়ে বিতর্ক শেষ হওয়ার নয়। ‘বলেছেন Melissa Nobles তাঁর The Politics of Official Apologies গ্রন্থে।

এই কথার সমর্থন দেখা যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দাস প্রথার জন্য আমেরিকায় বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগতভাবে অনেকে অথবা অনেক অঙ্গরাজ্যের আইন পরিষধে প্রস্তাব গ্রহনের মাধ্যমেও ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। এমন কি বিল ক্লিনটন,জর্জ বুশ পর্যন্ত আফ্রিকান-কৃষ্ণাংগদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। বিতর্ক না থামায় ২০০৮ সালে প্রতিনিধি পরিষধে ও ২০০৯ সালে সিনেটে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব গ্রহন করা হয়। বছর ২ আগে দীর্ঘ বিতর্কের পর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ক্ষমা চেয়েছে অতীতে আদিবাসিদের প্রতি নির্যাতনের জন্য।

কানাডা চেয়েছে তার আদিবাসি ইন্ডিয়ানদের কাছে। শুধু ক্ষমা না তারা সকলে ক্ষতিপূরণও দিয়েছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি-আমেরিকানদের অন্যায়ভাবে অন্তরীণ রাখার জন্য আমেরিকা ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি তাঁদের যারা বেঁচে আছেন প্রত্যেককে ২০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়। ৬০ বছর ধরে জাপানে বহু সরকারপ্রধান ২য় বিশ্বযুদ্ধে তাদের ভুকিকার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। স্বয়ং সম্রাট ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন।

কাজ না হওয়ায় ১৯৯৫ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের ৫০তম বার্ষিকী’তে জাপানের পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাশ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শুধুমাত্র ইহুদি নিধনের অপরাধে জার্মানি ৮০০ কোটি ডলার প্রদান করে। সেই সময় আগ্রাসনের জন্য জাপান কোরিয়া’র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। ক্যাথলিকদের কৃতকর্মের জন্য ভ্যাটিকান পর্যন্ত ক্ষমা চেয়েছে non-Catholic ও Constantinople(at the time of crusades) কাছে। তালিকা হয়ত আর দীর্ঘ করার প্রয়োজন নেই।

একাত্তর প্রশ্নে পাকিস্থানের সাথে আমাদের মতান্তর মূলত ৩টি বিষয়ে। একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা,একাত্তর-পূর্ব সম্পপ্তির ভাগবাটোয়ার ও বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্থানীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। শেষের’টা উচ্চ আদালতের দ্বারা মীমাংসিত। সম্পতির ব্যাপার দীর্ঘয়িত না করে শুধু একটা কথা বলি। ১৯৭৩ সালের আগস্টে কানাডায় কমনওয়েলথ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে বাংলাদেশের এই দাবি’টি সর্বান্তঃকরণে গৃহীত হয়।

তখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হারল্ড উইলসন বলেন,’বিশ্বের এমন কোন নজির নেই যে দুই জাতিতে পরিণত একটি রাস্ট্রের মাঝে সম্পতির যথাযথ ভাগ হয়নি। ‘এটা নিয়ে অনেক কিছু বলার থাকে। কিন্তু আমাদের সব থেকে ব্যথিত করে ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গটি। এ পর্যন্ত ২ বার ‘দুঃখ’ বা ‘অনুতাপ’ প্রকাশ করা হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে। ১৯৭৪ সালের জুন মাসে জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ২০০২’এর জুলাই মাসে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ।

আরও একবার করেছিল পাকিস্থান সরকারের পক্ষ থেকে আজিজ আহমেদ ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল। সেটা কেমন ছিল লক্ষ্য করেন ’His government condemned & deeply regretted any crime that may have been committed.’ মানে অপরাধ ‘যদি’ হয়ে থাকে......তারপরও সেইসব অনুভুতি’কে আমরা সন্মান জানাই। কিন্তু এটাই কি যথেষ্ট?তখন পাকিস্থানেই এর প্রতিবাদ হয়েছিল জেনারেল মোশাররফ এর অনুতাপ প্রকাশ এর পর। পাকিস্থানের বহুল প্রচারিত দৈনিক Dawn লিখে’আমাদের উচিত সে সময় কি ঘটেছিল ও কেন ঘটেছিল তা উপলব্ধি করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা যেন ভবিষ্যতে আর কখনও এমন না ঘটে। ‘গত বছরও তারা লিখেছিল’ On its part Pakistan must recognise the wrongs committed by its leadership during those days, and issue a full-fledged apology — not just expressions of regret’(Dawn,11/11/12). আমার চাই পাকিস্থান একাত্তরের গণহত্যা বিষয়টা হৃদয় দিয়ে অনুভব করুক,নিজেদের ভুল বুঝে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করুক।

এই দাবি আজ শুধু বাংলাদেশের না,খোদ পাকিস্থানের জনগণের একটা অংশ,সেখানকার অনেক বুদ্ধিজীবি,সুশীল সমাজ,সাংবাদিক, আইনজীবী,মিডিয়া,মানবাধিকার সংস্থারও। তাঁরা রাস্তায় মানববন্ধন করে,বক্তৃতা দিয়ে,টিভি টক শো’তে সোচ্চার হচ্ছেন। পাকিস্থানের কিংবদন্তী ক্রিকেটার ইমরান খান গত বছরের ২৩ মার্চ জিও টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন’Army operations always created hatred in Pakistan and we must apologise to Bangladeshis.’। সোচ্চার হয়েছেন senator Hasil Bazinju, Asfandyar Wali Khan MP সহ অন্তত ১২ জন এমপি। খোদ পাকিস্থানের এত মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে আমাদের পাশে দাড়াচ্ছে,আর আমরা নিজেরা নিজেদের ব্যাপারে একটু এক হতে পারবো না!! পাকিস্থানে ধীরে ধীরে জনমত গড়ে উঠছে এ দাবি’র পক্ষে।

যখন কেউ ৭১ এ শহীদ’র সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে,আমি আর যুক্তি-তর্কে না যেয়ে তার দিকে ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি আর একটা করে শুন্য কমাতে থাকি। বলি, ’৩০ লাখ না হোক ৩ লাখে হবে? ৩০হাজার? ৩হাজার? ৩০০? ৩০ ও যদি না হয় অন্তত ৩ জন কি মারা যায়নি?যদি যেয়ে থাকে আর ওই ৩ জনের একজন যদি আমার বাবা হতেন,আমি সেই হত্যার বিচার চাইতাম ও ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানাতাম। শেষ করব পাকিস্থানের প্রখ্যাত সাংবাদিক,জিও টিভি’র নির্বাহী সম্পাদক,বাংলাদেশের দাবি’র একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হামিদ মির এর কথা দিয়ে। ২০১০ সালের ২৬ মার্চ এক আবেগময় নিবন্ধে বলেছিলেন,‘A day will come very soon when the government of Pakistan will officially say sorry to Bangladeshis and March 26 will become an apology day for patriotic Pakistanis.I want this apology because I want to forge a new relationship with the people of Bangladesh. I don't want to live in my dirty past. I want to live in a neat and clean future. I want a bright future not only for Pakistan but also for Bangladesh. I want this apology because I love Pakistan and I love Bangladesh. Happy Independence Day to my Bangladeshi brothers and sisters.’ আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর পাকিস্থানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র জন্মবার্ষিকীতে পাকিস্থানের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। এই প্রত্যাশা রইল।

সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছাঃ) ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ লেখাটি আমার নয়। এত সুচিন্তিত লেখা লেখার মত যোগ্যতা এখনও অর্জন করতে পারিনি। এটি লিখেছেন আমার খুব প্রিয় বড় ভাই রানা ভাই, যে আমার দেখা একজন অভুতপূর্ব ভাল মানুষ এবং জ্ঞানী মানুষ, যিনি প্রকারান্তে আমার একজন আদর্শও। জীবন যেন খেলছে তারসাথে এক নিঃষ্ঠুর খেলা, কিন্তু পরাজয় মেনে নেবার লোক তিনি নন, এজন্যই জীবনের কিছূ কঠিন সময়েও তাকে স্মরণ করে অনেক শক্তি পাই, তার হাস্যজ্জল মুখের ছবিটা একবার দেখে নেই- প্রেরণা পাই সামনে এগিয়ে যাওয়ার। এই লেখাটি আজ তার ফেসবুক স্টাটাস এ দেখে কপি করার লোভ সামলাতে পারিনি, তার অনুমতি ব্যতিরেকে এখানে পোস্ট করলাম।

কিছুক্ষন পরেই তার কাছে এর জন্য ক্ষমা চেয়ে নেব।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।