আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জগৎ সংসারে চলা জীবন সংগ্রাম

চারা গাছ থেকে বৃক্ষ অত:পর পুষ্প কিংবা ফল পাওয়া যায়। এজন্যে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হয়, উপযুক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হয়। প্রথমে চাওয়া বা স্বপ্ন থেকেই চেষ্টা পরে পাওয়ার আকাঙ্খা বা ফল লাভের প্রত্যাশা। আসলে কষ্ট ছাড়া কল্পনা বিলাস নিষ্ফল করে জীবন, অর্থহীন হয়ে পড়ে সবকিছু। যদি অঙ্কুরে বিনষ্ট হয় বীজ কারো অসচেতনতার ফলে তবে তার জন্যে কাউকে দায়ী করা যেতে পারে, শাস্তিও দেয়া যেতে পারে কিংবা শক্তি প্রয়োগ করে জরিমানা দিতে বাধ্য করা যেতে পারে তবে বীজ মরে গেলে আর বৃক্ষ দর্শনের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও থাকে না।

এসএসসি এইচএসসির গন্ডি পেরাতে না পেরাতেই নষ্ট হয়ে যাওয়া বখাটেদের আমার কাছে অঙ্কুরে বিনষ্ট হওয়া বীজ বলে বোধ হয়।

স্মৃতিসৌধ রক্ষায় স্বপ্নসৌধ ভেঙ্গে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারেনা। কারণ ক্রমাগত আলোর জন্যে আধাঁরের সাথে লড়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। শক্তি বাড়াতে না পারলে সম্মানজনক অর্থবহ জীবনের গ্যারান্টি থাকবেনা, প্রাপ্তির আশাও হতাশার আবরণে ঢেকে যাবে, আর সামান্য কিছু হারানোর ভয়ে বৃহত্তর কিছু পাবার আগ্রহরও মৃত্যু ঘটবে। ফলে আমি যদি জানি সে ভালে আছে কিংবা নেই তবে তার কি জানা উচিৎ নয় কেমন আছি আমি? সম্পর্কের পরিসরকে সংকীর্ণতার বেড়াজালে আবদ্ধ করবেন না ।

'আপন'শব্দটি জুড়ে দিয়ে সম্পর্কের পরিসরকে সীমাবদ্ধ করা, সংকীর্ণতার বেড়াজালে আবদ্ধ করার যৌক্তিকতা নেই। সম্পর্কের গভীরতাকে হৃদ্যতা-আন্তরিকতা ও উদ্দেশ্যের আলোকেই বিবেচনা করা উচিৎ। রক্ত সম্পর্ক, বংশগত বন্ধনকেই সম্পর্কের একমাত্র মানদণ্ড ধরার পক্ষে অবস্থান বিশ্ব নাগরিকের ভাবনা নয়।

কে কতটা দূরে গেলে সঙ্গীর দৃষ্টি সীমাটা ঘোলাটে হবে সেটা তার চেয়ে সঙ্গীই ভাল বুঝতে পারবে। কারণ নিজেকে জানা বুঝাটা বোধহয় অন্যকে জানা বুঝার চেয়ে মোটেই কম কঠিন নয়।

আয়না যেভাবে আপনাকে দেখায় আপনি নিজে আয়নার সহযোগিতা না নিয়ে নিজেকে সেভাবে দেখতে পারেন না। শূণ্যতাগুলো প্রকাশ পাবে যা আছে তা হারানোর পর অথবা যা পেতে চাই তা পাবার পর অথবা যা নেই তার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি হবার পর। কে পর, কে অন্য সেটি দৃষ্টিভঙ্গিগত ভিন্নতা, চিন্তা- চেতনায় ও বিশ্বাসগত বৈপরীত্যের কারনে নানা রূপের হতে পারে। আদর্শিক সম্পর্ক, চেতনাগত মিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। টমাস ফুলারের ভাষায়, 'ভালোবাসতে শেখো, ভালোবাসা দিতে শেখো, তাহলে তোমার জীবনে ভালবাসার অভাব হবে না।

সঙ্গীর পরিচয় জানলেই সঙ্গ দেয়া ব্যক্তিকে চেনা যায়। যে যে ধরনের মনমানসিকতা পোষণ করে সে সে ধরনের মানুষকেই সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়। উদার আকাশের মত বিশাল হৃদয় আর বিস্তৃত মহাসাগরের বড়ত্ব অনুধাবন করার পর কেউ সম্পর্কের সীমারেখাকে ক্ষুদ্র ব্যাপ্তিতে নানা বিধি-নিষেধ দ্বারা জটিল বাস্তবতায় ফেলতে চাইলে কিছুই করার নেই।

তীব্র একাকীত্ব ধরবে ঘীরে কতটা দূরে গেলে তা নিভর্র করবে চারপাশের মানুষজনের সাথে তার সম্পকের ধরণ ও মাত্রার উপর। যখন স্মৃতিরা ডানা মেলবে কিংবা ইন্দ্রিয়ানুভূতি গুলো জাগবে তখন ভুলগুলো সব ভুলবে বা ভুল বুঝাবুঝি দূর হবে।

এটা বুঝা খুব মুশকিল কতটা দূরে গেলে কেউ ভবিষ্যতের সুখের আশে অতীতের সব মুছে চলবে নব উচ্ছাসে। তবে এটা ঠিক দিতে নিতেই বর্তমান আসে আর ভবিষ্যত হাতছানি দেয়। আন্তরিকতা আছে, ভালবাসা আছে, হৃদয় ভুলানো হাসি আর মিষ্টি চেহারা। তবে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রেখে যে গুণটি কাছে টানতে ফলপ্রসু হয়েছে সেটি হৃদ্যতাপূর্ণ কোমল ব্যবহার ও উষ্ণ অভ্যর্থনা। মনের অনেক দরজা, কেউ ঢুকে, কেউ বের হয়।

তবে কিছু চোখ, মুখ, হাসি, আন্তরিকতা হৃদয়ে খোদাই হয়ে থাকে। মনের পর্দায় স্থায়ী আসন করে নেয় খুব কম জনই। যাদের ভোলা যায় না, স্মরণীয় হয়ে থাকে হৃদয়পটে, মানসপটে। স্নেহের পরশে তৈরি হয় এক ধরনের দাবি। শ্রদ্ধার পরশ পেলে সেটি রূপান্তরিত হয় অধিকারে।

পারস্পরিক জানা-শুনা, মেলা- মেশা সম্পর্ককে গভীরতা দেয়। ধীরে ধীরে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। শেকড় বিস্তৃত হয়, ছড়িয়ে পড়ে ডালপালা চারপাশে। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাওয়া-পাওয়া, প্রাপ্তি-ত্যাগের বিবেচনা অনেক সময় ক্রিয়াশীল হয়। নানা দ্ব্ন্দ্ব-সংঘাত, কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতার মধ্য দিয়ে সম্পর্ক তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যায়।

কখনো সে গতি পরিবর্তিত হয়, কখনো বা একেবারেই থেমে যায়, কখনো সে গতি কার্যকর হয় বিভ্রান্তির পথে, কখনো স্বপ্ন-আশা, আস্থা-বিশ্বাস, আবেগ-উচ্ছ্বাস-অনুভূতির সমন্বয়ে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রচনায় এগিয়ে চলে নিজস্ব গতিতে। বাস্তবতা কখনোই অস্বীকার করা যায়না।

যখন শোনার ইচ্ছার মৃত্যু ঘটে তখন বলার জন্যে শত চেষ্টা করেও লাভ হয়না। যখন দেখার আকর্ষণ হারিয়ে যায় তখন হাজারো সাজগুজও গুরুত্ব পায়না। মূলত আকর্ষণটা চোখের দেখা থেকেই শুধু নয় মনের দেখা থেকেই তৈরি হয়।

যখন স্বপ্নের বীজটাই পরিচর্যা র অভাবে মরে যায় তখন অনেক সাধনা করেও বীজটাকে বাঁচানো যায় না। ভাললাগা-মন্দলাগা, পছন্দ ও অপছন্দের ব্যাপারটি ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি, রুচিবোধ, চিন্তাধারা ও মনমানসিকতার ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়। প্রিয়জনের চোখের অশ্রু কোনো বেদনার ঢেউ সৃষ্টি করে আর হৃদয়বিদারক সে দৃশ্যই কোনো কোনো হৃদয়ে প্রশান্তির ঢেউ জাগায়। কারণ সম্পর্কের ভিন্নতা। যার আনন্দে মনের আনন্দ বাড়ে, দুঃখে হৃদয় ব্যথিত হয় সেই আপন।

প্রিয় যারা হৃদয়ের মাঝে বিভিন্ন লেভেলে বিভিন্নজন অবস্থান করেন। সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তি। স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা, সামনে এগিয়ে চলার প্রতিশ্রুতি, একই লক্ষে ছুটে চলার প্রয়াসে সৃষ্টি হওয়া আত্মার সম্পর্ক অনেক কাছাকাছি করে দু’টি হৃদয়। হৃদয়ের বন্ধন, মনের মিল, চিন্তাও বিশ্বাসের গভীরতা, ঐক্যের সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী, বেশি কার্যকর, বড়ই ফলপ্রসু যা সব সম্পর্ককে ছাড়িয়ে যায়। সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি থাকলে, আস্থা ও বিশ্বাসের গভীরতা থাকলে, সুদূর লক্ষে পেঁৗছার পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকলে, আবেগ-অনুভূতি-উচ্ছ্বাসের সুতীব্র আবেদন থাকলে সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় নতুন প্রেরণার, নব স্বপ্নের সোনালী দিগন্তের বর্ণালী আকর্ষণের।

মনের মাঝে কাঁটে গভীর দাগ, যা মুছে ফেলা যায় না সহজে।

উপরতলার লোকজন নীচুতলার লোকজনকে মনে রাখার প্রয়োজনটা সাধারণত বোধ করেনা। দুপুর বেলায়ও বৈদ্যুতিক লাইট ছাড়া স্বাভাবিক কাজকর্ম চালানোটা যেখানে অসম্ভব এমন ঘুমোট পরিবেশে পেঁচা ছাড়া আর কারো আনন্দের সাথে বসবাস করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রাকৃতিক আলো বাতাস সুস্থতার জন্য যেমন জরুরী তেমনি মানসিক বিকাশ সাধনেও অতিব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে বুক ভরে শ্বাস নেয়ার জন্য পর্যাৈপ্ত বাতাস নেই, সূযের আলোর ঝলকানো নেই সেখানে প্রেম ভালবাসা সম্পূর্ণ মৃত।

এটা মনে হয় সবাই স্বীকার করবে অতীতের দিনগুলো স্মৃতির মণিকোঠায় বিদ্যমান থাকে।

অন্ত:সত্তা স্ত্রীর সুবিধার কথা ভেবে তার নিকটাত্মীয়দের সাথে থাকা। ভাবনাটা ছিল অসুস্থতার মাঝে তার সেবা নিয়ে এবং অনাগত নতুন অতিথির আগমন বার্তার অপেক্ষায় অপেক্ষমাণ থাকায়। দূর্ভাগ্যজনকভাবে রুমের সামনে রাখা জুতা-মোজার কড়া দূর্ঘন্ধ নিয়ে রুমে ঢুকতে হলে আবার দূর্ঘন্ধ নিয়ে বেরোতে হলে ভাল লাগার কথা নয়। আপনজনেরা ভালবাসার নিদর্শন স্বরুপ ফ্ল্যাটের সবচেয়ে বাজে রুমটি বরাদ্দ করলে রুমে আসতে যেতে মেজাজটাই বিগড়ে যেত।

পরে যখন দেখলাম তারা আমাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়ার মত উদারতা দেখালেন তখন আমাদের চেয়ে অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে গেলেন।

যদিও আলো বাতাসের পর্যােপ্ততা সত্তেও বেদনাদায়ক দু:সংবাদ শুনতে হয়েছে। তবে অনেকের আন্তরিকতায় আমি রীতিমত মুগ্ধ। বিপদে আপদে পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা যেকোন বিবেচনায় উন্নত রুচির বহি:প্রকাশ। পরের ব্যাথায় ব্যথিত হতে পারাতে স্বার্থকতা।

আর দোষ ত্রুটি বিবেচনায় এনে বিপদে আপদে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্কের জন্যে কল্যাণকর নয়। আসলে আমাদের সমাজটাই এখন এমন যে এখানে আপনি কাউকে বিশ্বাস করলে প্রতারিত হবার আশংকা সৃষ্টি হবে। আর নিজের ভাগ্য নির্ধারণের বা গড়ার দায়িত্ব অন্য কাউকে দিলে সন্দেহাতীতভাবে আপনি ঠকবেন। কারণ এখন আর কেউ পরের জন্যে অপেক্ষাকৃত ভাল নীতিতে চলেনা। অনেক পুরুষ নারীর প্রেমে পড়ে ব্যক্তিত্বহীন হয়ে ওঠে আবার অনেক নারী পুরুষের প্রেমের এই দুর্বলতার সুযোগে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তিকে গুরুত্ব দিয়ে নৈতিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে।



জগতে দুই শ্রেণীর মানুষ আছে। ১. ঠকে শিখে ২. ঠকিয়ে শিখে। আমি অবশ্য আন্তরিকতাকে অর্থমূল্যে নয় মানবিক মূল্যে বিচার করি। কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে আন্তরিকতার প্রমাণ কি? আন্তরিকতা প্রদর্শনের প্রমাণই হচ্ছে পরের জন্যে ত্যাগ স্বীকার। সুখ কি ত্যাগ স্বীকারে নাকি কারো ত্যাগের ফলে পাওয়া সুবিধা ভোগে।

আসলে সুখ একটি অনুভূতি, মানসিক অবস্থা এবং এটা আপেক্ষিক। কোন মানুষ কখন প্রকৃত সুখে থাকে তা সে নিজে এবং স্রষ্টা ছাড়া তৃতীয় কারো জানার কথা নয়। কেউ চরম কষ্টেকর পরিস্থিতিতে থেকেও সুখানুভূতি লাভ করতে পারে। আবার কেউ আনন্দ উৎফুল্লতার মধ্যেও বেদনাভূতি লাভ করতে পারে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।