আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

র‌্যাব-পুলিশে বিরোধ

পুলিশের সঙ্গে এলিট ফোর্স র‌্যাবের বিরোধ এখন তুঙ্গে। তবে তা চলছে ভেতরে ভেতরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এ দুই বাহিনীর কর্মকর্তারা পাল্টাপাল্টি নানা অভিযোগ ও নেতিবাচক মন্তব্যও করেন বলে জানা গেছে। র‌্যাব এ অবস্থায় পুলিশ সদর দফতরের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে চায়। সম্প্রতি এমন প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে র‌্যাব সদর দফতর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'পুলিশের কারণে অনেক সময় র‌্যাবের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এমনকি দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যরা সাদা পোশাকে অভিযানে গিয়ে র‌্যাবের নাম ব্যবহার করছে। তারা ঘুষ, চাঁদা দাবি, এমনকি হুন্ডির টাকার ভাগ চেয়েও র‌্যাবের নাম ব্যবহার করছে। এটা চৌকস বাহিনী র‌্যাবের জন্য ভাবমূর্তি বিড়ম্বনার সৃষ্টি করছে। ' প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, র‌্যাব পুনর্গঠনের ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুলিশ সদর দফতরের অধীনে পরিচালিত হওয়ায় র‌্যাবেকে নানা প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

অভিযান ও নানা কর্মকাণ্ডের ধরন অনুযায়ী পর্যাপ্ত বাজেট প্রাপ্তিতেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। র‌্যাবের প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ না করে জনবল পাঠানোয় দাফতরিক কাজে দেখা দিচ্ছে জটিলতার। আভিযানিক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে চাহিদামতো যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি যথাসময়ে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।

পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত দশকের প্রথম দিকে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলসহ বহুমাত্রিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নির্মূলে সময়ের প্রয়োজনে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্স-১৯৭৯ সংশোধন করে 'দি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নস (সংশোধন) আইন ২০০৩' করা হয়। সে আনুযায়ী গঠন করা হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাব। তখন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ সদর দফতরের তত্ত্বাবধানে পুলিশের বিশেষায়িত একটি স্বতন্ত্র বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে র‌্যাব। পুলিশ সদর দফতরের অধীনে সব কার্যক্রম পরিচালিত হলেও শুরু থেকেই র‌্যাবের দায়িত্ব, কর্তব্য ও কার্যাবলির মধ্যে ছিল স্বাতন্ত্র। আভিযানিক দিক বিবেচনায় প্রথম থেকেই র‌্যাব স্বতন্ত্র ছিল এবং এখনো আছে।

তবে র‌্যাবের একাধিক কর্মকর্তার মতে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলে পর্যাপ্ত আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষিত জনবল বাংলাদেশে নেই। এখন পর্যন্ত আমাদের জাতীয় ডাটাবেজ এবং ডিএনএ ব্যাংক নেই। কাজেই অনেক ঘটনা এবং ঘটনার শিকার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ধরা পড়ে না এবং অজ্ঞাত পরিচয়েই থেকে যায়। এটা র‌্যাবের জন্য প্রধান সীমাবদ্ধতা, যা উত্তরণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় প্রয়োজন। এসব চ্যালেঞ্জের কথা বিবেচনা করে র‌্যাবকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র বাহিনী হিসেবে পুনর্গঠন করা হলে অভিযান ও প্রশাসনিক কাজে গতি আসবে।

সময়মতো ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত দ্রুত গ্রহণ করা যাবে। দক্ষ জনবল বৃদ্ধি ও বাহিনীর আধুনিকায়ন সহজ হবে। সার্বিকভাবে স্বতন্ত্র বাহিনী হিসেবে র‌্যাব পুনর্গঠন করা হলে বাহিনীর কর্মতৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। তারা যুক্তি দেখান, পার্শ্ববর্তী দেশ ছাড়াও পৃথিবীর অনেক দেশেই বিশেষায়িত বাহিনীগুলো সরাসরি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তবে প্রয়োজনে তারা যুগপৎভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

যেমন ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (র্লাক ক্যাটস), জার্মানির জিএসজি-নাইন এবং ইটালির ক্যারাবিনিয়েরি।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।