আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা-লঙ্কার রাবণদের ইতিকথাঃ

সভ্য স্বাধীন দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে। বেশীরভাগ মানুষের মতামতই নির্ভর করে ব্যক্তি মানুষের নিজস্ব জ্ঞান মেধা রুচি শিক্ষা অভিজ্ঞতা ও দর্শণের ভিত্তিতে। কেউ আবার দর্শণের কাছে বেশী মাত্রায় পরাভূত। ব্যক্তির নিরপেক্ষ জ্ঞান যখন অনেকাংশেই লোপ পায় তখনই তার চিন্তা চেতনা একপেশে হতে বাধ্য। আর তখনই হয়তো একজনকে একটা বিশেষ ঘরাণার মানুষ বলে ভাবা হয়ে থাকে।

একজনের চিন্তা চেতনা বা মতামত অভিব্যক্তি যে সবার কাছে সমানভাবে সমাদৃত হবে তেমন কোন কথা নেই। তাই বলে তার চেতনা বা মতামতকে অবজ্ঞা করাও সুস্থ্যতার পরিচায়ক নয়?
প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ বোধ চেতনা ও মতাদর্শের ভিত্তিতে কিছু বলতে পারেন তবে সাধারণ্যে ভব্যতাবোধটুকু সবার কাছেই বাঞ্চনীয়। একজনের বর্ণিত মত-পথ হয়তো আমার পছন্দ নয় কিন্তু তারমধ্যে সত্য খুজতে বাঁধা কোথায়? আর অসভ্যতাই বা করি কেন? তাতে কি আমার নীচতাই প্রমাণ করবে না? তথ্যভিত্তিক লেখা হলে তার উদ্দেশ্য যা ই থাকুক না কেন তথ্যটাকে আমলে নিলে ক্ষতি কি? তথ্যভিত্তিক তথ্য হলেও যদি আমি ফুঁসে উঠি - তাহলে তো মানুষ বুঝতে পারবে যে সেই তথ্যে আমারো আঁতে ঘা লেগেছে। শুধুই বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা নয়, সমালোচনার জন্যই সমালোচনা নয় - আসুন অনেক মিথ্যার মাঝেও কিছু সত্য আছে কি না তা জেনে নেই!
একজন অতি সাধারণ পাঠক হিসাবে - সমাজ বাস্তবতার অনেক কিছুই অর্ধ শতাব্দী ধরে [সেই পাকিস্থানী আমল থেকে] দেখে আসছি। যথেষ্ট সচেতনতা বা চর্চার অভাবে বেশীর ভাগই স্মৃতিতে নেই আবার সংগ্রহে কোন তথ্য-প্রমাণও নেই।

শুধু নিজের দেখা স্মৃতিটুকু পূঁজি করেই কিছু বাস্তব সত্য বিধৃত করার চেষ্টা করছি। আজকাল তথ্যপ্রযুক্তির আশির্বাদে অনেক সাধারণ মানুষও ব্লগ পত্রিকায় অনায়াসেই মতামত প্রকাশ করতে পারেন। আমারো ইচ্ছা করে; কোন কিছু সম্পর্কে নিজের অনুভূতি বা মতামত প্রকাশ করি কিন্তু চাইলেও যথাযথ তথ্য-প্রমাণ ও পেশাদারীত্বের অভাবে তা হয়ে উঠেনা। তাই অনেক সময় লেখার জন্য হাত নিশপিষ করলেও যথেষ্ট জ্ঞান ও চর্চার অভাবে লিখতে ভরসা পাইনা। এই মুহুর্তে আমার চোখে ৪২ বছরের রাজনীতির একটা ঘষা আয়না ভেসে উঠছে।

১৯৭১ থেকে ২০১৪ - রাজনীতির নামে কত জল ঘোলা হতে দেখলাম; কত রাতকে দিন, সাদাকে কাল, শত্রুকে মিত্র, সত্যকে মিথ্যা বানানো আবার এসবের প্রতিরূপও সাজানো হচ্ছে প্রতিনিয়তই। আমরা সাধারণ মানুষ বোবার মত এসব দেখি আর ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়ই হোক জ্ঞানী মহাজনদের কর্মের উপর ভরসা রেখে নির্ভীঘ্নে জীবনপাতের জপমালা হাতে দিন কাটাই।
তেতাল্লিশ বছরের ইতিহাস এত সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয়, সেই রকম ইচ্ছাও নেই। তবে এই সময়টায় উল্লেখ করার মত মোটামুটি চারটা ‘রেজিম’ দেখতে পাইঃ ৭১ পরবর্তী আওয়ামীলীগের বঙ্গবন্ধু সরকার, জাতীয় পার্টির এরশাদ সরকার, বিএনপি’র জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার (দুই কিস্তির) সরকার আর আওয়ামীলীগের শেখ হাসিনার সর্বশেষ ভোটারবিহীন নির্বাচিত সরকার সহ দুই দফার সরকার। এর মাঝে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের সরকার অনেক এসেছে সে সব এই আলাচনায় আনতে চাইনা।


এই চার ‘রেজিমে’ আমরা কি দেখলাম; বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা এলেও তিনি জাতির পিতার উদার আসনে অবস্থান করতে পারলেন না। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও নতুন স্বাধীন হওয়া একটা দেশের শাসন ক্ষমতা (দেশ শাসনে আনাড়ি হয়েও) তিনি আপন কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে তাঁকে অনেক কিছুর সাথেই আপোষ করতে হয়েছিলো। তার মধ্যে শিমলা চুক্তির বেড়াজালে আপোষ করে ৯৫ হাজার পাকিস্থানী যুদ্ধবন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী রাজাকার আলবদরদের নিঃশর্ত ক্ষমা করা হয়।

নিজ দলের অভন্তরে সংগঠিত নানান অবিচার ও অত্যাচারকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে স্বাধীনতার প্রসূতি বলে দাবীদার এই দলটিও বিতর্কিত হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য মাথাপিছু একটি কম্বলের সংস্থান করার পর তৎকালীন (রেডক্রস) রেড ক্রিসেন্টের কর্ণধার গাজী গোলাম মোস্তফা সেই কম্বল তসরুপের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধু আক্ষেপের সূরে বলেছিলেন; “আমি বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে যা আনি তার সব চাটার দলেই খেয়ে নেয়। আমি সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর জন্য মাথাপিছু একটি কম্বলের সংস্থান করেছি কিন্তু জনগন তা পায়নি, আমার কম্বলটি কোথায় গেল?”
শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু তনয়যুগল ও বিতর্কিত হয়ে উঠেছিলেন। একজনকে সিএনসির মত গুরুত্বপূর্ণ উচ্চপদ প্রদানের মত বিষয় অপরদিকে বঙ্গবন্ধু তনয়ের ব্যাঙ্ক ডাকাতি সংশ্লিষ্টতার গুজব থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি এমন কি মেজর ডালিমের স্ত্রীর শ্লীলতাহানির মত অভিযোগও উঠে আসে।

এসবের কতটুকু সত্য ছিল তা যদিও প্রশ্ন সাপেক্ষ তবু স্বাধীনতা উত্তর বিশৃংখলার দেশে জনমনে তা ঘৃতাহুতিরই জন্ম দিয়েছিল। পরবর্তীতে স্বাধীনতার স্থপতি, বৃহত্তর বাঙালীর নয়নের মনি, মহান নেতার দলটি, তাঁর পরিবার, দলের আদর্শ দেশপ্রেম ইত্যাদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছিল। ধারণা করা হয়ে থাকে; এসবের পরিনতিতেই ১৫ আগস্ট, ৭৫ এর নির্মম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। এক মেজরের ছত্রচ্ছায়ায় পরাজিত শক্তি তাদের পাশবিক লালসা চরিতার্থ করতে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহযোগী সৈনিক খন্দকার মুশতাককে ব্যবহার করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ কারী এক মীরজাফর খন্দকার মুশতাক সেই পট পরিবর্তনের সুফলও ভোগ করেছিলেন।


শাসনকার্যে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় স্বাধীনতা উত্তর একটি দেশের শাসনভার হাতে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে যথেষ্ট হিমসীম খেতে হয়। তাই তাঁকে একের পর এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাতিল করতে হয়েছিল। আর সে সবের কোনটিরই কোন সুফল না আসায় এবং উত্তরোত্তর নৈরাজ্য বাড়তে থাকায় খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা নষ্ট হতে থাকে। এসবের মধ্যে বেশী বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল রক্ষীবাহিনী, মুজিববাহিনী লালবাহিনী ইত্যাদি। স্বজনপ্রীতির একক ইচ্ছার প্রতিফলন হিসাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক গনতন্ত্র কায়েমের পরীক্ষার নামে গনতন্ত্রের বিলোপ সাধন তখন সবচে’ বেশী সমালোচনারও জন্ম দেয়।

যা সুযোগ পেলে বিরোধী দল আজো সেই রাজনৈতিক ইস্যূটিই ব্যবহার করে থাকে। কখনো প্রধানমন্ত্রী, আবার কখনো প্রেসিডেন্ট হওয়ার বাসনাকেও মানুষ তখন হাস্যকর বলে মনে করত। আবার সব দল বাতিল করে বাকশাল গঠন সবই হয়তো সময়ের বাস্তবতায় করতে হয়েছিল কিন্তু সকল কিছুই করতে হয়েছিল দূরদর্শী চিন্তা ও সুদূর প্রসারী বাস্তব পরিকল্পনার অভাবেই। অনেকেই মনে করেন; শাসন যন্ত্র হাতে নিয়ে বসা অনভিজ্ঞ শাসক হিসাবে বঙ্গবন্ধু বরাবরই দিল্লীর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতেন। আর দিল্লীর কুটনৈতিক চাল বুঝতে না পেরে বঙ্গবন্ধু কোনটাই ঠিকমত করতে পারতেন না বলেই একটার পর একটা যা ই করেছেন তাতেই তিনি দেশবাসীর কাছে হেয় হয়েছেন।


১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বাংলার ইতিহাসের জঘন্যতম ও নির্মম হত্যাকান্ডে জাতির জনক সপরিবারে শহীদ হলে আওয়ামী নেতৃবর্গ সাহসিকতার সহিত তা মোকাবেলা না করে দিগ-বিদিক রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য ছুটাছুটি করতে থাকেন। কেউবা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন কেউবা আবার নিজেদের মত আলাদা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিছু নেতা তখন বিদেশেও পাড়ি দেন। মনে হতে পারে যে দেশের মানুষ তখন একটা পরিবর্তন আশা করছিল কিন্তু এমন করুণ পরিনতি কোনভাবেই কাংখিত ছিল না।
১৭ মার্চ ১৯৮২ বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা দেশে না ফেরা পর্যন্ত আওয়ামীলীগ বস্তুতঃ এখনকার বিএনপির মতই দেউলিয়া হয়ে পড়েছিল।

আর ইতিহাসের সেই সন্ধিঃক্ষণে ক্ষমতালোভী সেনাবাহিনীর এক উচ্চাবিলাসী মেজর মাঠে নামেন। তিনি ঘোষনা দেন - I'll make politics difficult. ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিশ্বাসঘাতক কিছু আওয়ামী নেতা সহ সকল সুযোগ সন্ধানীদের নিয়ে প্রথমে তিনি ‘জাগদল’ গঠন করেন যা পরবর্তীতে আজকের বিএনপি’তে রূপান্তরীত হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী যুদ্ধাপরাধী খ্যাত আজকের জামাত সহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারীদের একটি মহল সেই difficult politics এর সুযোগটি লুফে নেন। পরিনামে স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র পাঠকারী একজন খাঁটি বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে পূণর্বাসিত করেন আর সেই সুযোগেই তারা রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়েন।
বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের শেষ দিকে এসে দেশে যে নৈরাজ্য তৈরী হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় বাকশাল গঠনের মাধ্যমে একজাতীয় রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের নজীর সৃষ্টি হয়।

জিয়া মাঠে নেমে সে আগল ভেঙে দেন। বহুদলীয় গনতন্ত্রের সূচনা করেন ও সকল বন্ধ পত্রিকাকে অবমুক্ত করেন। এর ফলে সেনাবাহিনীর ব্যারাক থেকে আসা্ একজন সামরিক উর্দি পড়া মেজর হয়েও জিয়া খুব সহজেই রাজনীতিতে দক্ষতার পরিচয় দেন ও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। আজকের জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়ম ও অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ থাকা সত্বেও এ কথা স্বীকার্য যে বিশেষ করে ব্যক্তি জিয়া বেশ সততার পরিচয়ই দিয়েছিলেন।
রাজনীতিকদের মুখে প্রায়ই একটা কথা শুনতে পাই – ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই এবং রাজনীতিতে আজ যে শত্রু কাল সে মিত্রও হতে পারে’।

সেই অর্থে প্রেসিডেন্ট জিয়া যে কর্মটির জন্য অভিযুক্ত আজকের প্রধানমন্ত্রীও তার থেকে নিষ্কৃতি পান না। রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে এককালে তিনিও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামাতের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। এখনো সুযোগ পেলে তিনি তাদের আনুকূল্য যে গ্রহন করবেন না তা ভাবার কোন কারণ নেই। কারণ, রাজনীতিতে চীরস্থায়ী শত্রু বলে যেমন কিছু নেই চীরকালীন মিত্র বলেও কিছু নেই। তার প্রমান আজকের জাতীয় পার্টি ও এর চেয়ারম্যান এরশাদের বর্তমান অবস্থান।

এতগুলো জঘন্য মামলায় যেকোন সময় যার বড় দন্ড হতে পারে তাকেও প্রধানমন্ত্রী তার বিশেষ দূত বানিয়েছেন। আবার একটু গড়বড় হলে এরশাদ কারাগারের নর্দমায়ও গড়াগড়ি খেতে পারেন।
৩১ মে ১৯৮০ তৎকালীন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে নিহত হন। politics কে difficult করার ঘোষনা দিয়ে মাঠে নেমে তিনি সকল দলছুট নেতাদের নিয়ে গঠিত দলে অনেক অভ্যাগতকেই ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে তুষ্ট রেখেছিলেন। আবার কর্ণেল তাহেরের মত দেশপ্রেমিককে নির্মম ভাবে উৎখাতও করেছিলেন।

জিয়ার ক্ষেত্রে দার্শনিক ম্যাকিয়াভ্যালীর বিখ্যাত উক্তি “শাসক হবে সিংহের মতই শক্তিশালী আর শৃগালের মত ধূর্ত” বেশ মানানসই ছিল বটে। সর্বোপরি ব্যক্তি জিয়া নিজে বেশ সৎ থেকেও দূর্নীতির বীজ ভাল করেই বপন করেছিলেন। যার ফলে তৎকালীন রাজনৈতিক মহলে তিনি খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর আওয়ামীলীগকে নতুন করে চাঙা করার প্রত্যয়ে, পিতৃ হত্যার প্রতিশেোধ ও তাঁর শূন্যতা পূরণের শপথ নিয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তাই তাঁকে নানান রাজনৈতিক চাল চাতুর্য সহ দুঃসহ কুটনীতির আশ্রয়ও নিতে হয়েছিল যার পরিনামে্ আমরা দেখতে পাই কখনো তিনি আজকের বিএনপি ও জামাতকে সাথে নিয়েই স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, আবার কখনো মিত্রদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাও করেছেন।

এমন কি, আজকের যুদ্ধাপরাধের দন্ডপ্রাপ্ত জামাতের তৎকালীন্ আমীর গোলাম আজমের সাহচার্য্ এবং আশির্বাদও মাথা পেতে নিয়েছেন। আবার বর্তমানে সেই স্বৈরাচারী এরশাদকেই জেলের ঘানি টানা কিংবা মৃত্যুদন্ড আড়াল করে নিজের বিশেষ দূত বানিয়ে তার দলকেই বিরোধী দলের মর্যাদাও দিয়েছেন। রাজনীতি এমন একটা জটিল খেলা যা্ আমাদের মত নিরীহ সাধারণের বোধেরও অগম্য।
তৎকালীন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে নিহত হওয়ার পর সাত্তার সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনীর আরেক জেনারেল হোমো এরশাদ দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন। পর্যায়ক্রমে তিনিও জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বেশ সফলতার সাখেই সাড়ে নয় বছর দেশকে জিম্মি করে রাখেন।

সম্মিলিত রাজনৈতিক জোটের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর তিনি কোন রকম মান রক্ষা করে ক্ষমতা ছাড়েন বটে, কিন্তু পিঠে তার অসংখ্য মামলা ঝুলতেই থাকে। ১৯৯২ থেকে ২০১৪ রাজনৈতিক কারণেই সুদীর্ঘ বাইশ বছরেও তার সেসব মামলার কোন সুরাহা হয়নি। যা পরবর্তীকালের শাসকদের জন্য এক জাতীয় হাতিয়ার হিসাবেই ঝুলে আছে। এরশাদের ইহজনমে সেসব মামলার সুরাহা হবে এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। কেন না এর নামই রাজনীতি।


শাসককূল যতই গনতন্ত্রের কথা বলুন না কেন স্বাধীনতার ৪৩ বছরে এমন একটি গনতান্ত্রিক সরকার দেখিনি যারা সত্যিকার অর্থেই গনতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। দলগুলো যতই জনগনের কথা বলে রাজনীতির মাঠ গরম করুক না কেন আসলে কারো মধ্যেই সত্যিকারের গনতান্ত্রিক চেতনা নেই। তাহলে তারা জনগনকে মর্যাদা দিতেন। আজ সুশীল সমাজ পর্যন্ত বহুধাবিভক্ত। দুই চারজন যারা এখনো কোন রকম নিরপেক্ষ আর নির্মোহতা বজায় রেখে সত্যিকারের কাজের কথা ভাল কথা বলেন তারাই ক্ষমতাসীন দলের কাছে অপ্রিয় হয়ে যান।

তাতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জনগনের ম্যান্ডেটই আসল নিয়ামক নয়। আসল বিষয় হল রাজনৈতিক কৌশল, ছল, জালিয়াতি ধোকাবাজি সেই সাথে ক্ষমতার এঁটো কাটা লোভী কিছু লোককে হাতে রাখা। রাজনীতি যতদিন পর্যন্ত দেশপ্রেমিক সৎলোকের হাতে না পড়েছে ততদিন জনগনের মুক্তি নেই।
কথায় আছে; "যে যায় লঙ্কায় সে ই হয় রাবণ"। ৪৩ বছরের ইতিহাস প্রমান করে যে এযাবত শাসন ক্ষমতায় আসা সকল দলই মুখে গনতন্ত্রের খই ফোটালেও তারা গনতন্ত্র আর জনগনকে শ্রেফ রাজনৈতিক চাতুর্যের একটা হাতিয়ার হিসাবেই ব্যবহার করে আসছেন।

আর যুদ্ধাপরাধী খ্যাত জামাতিদের শাসন প্রকৃতি সম্পর্কে তো জানাই হল না। তাদের মধ্য থেকে যতই সৎলোকের শাসন চান বলে দাবী করা হোক তাদের গ্রহন যোগ্যতা তারা নিজেরাই নষ্ট করেছেন। কারণ, দীর্ঘদিন যাবত স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির মূলস্রোতে মিশে থাকলেও কখনোই এককভাবে ক্ষমতা পায়নি। এমন কি মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য কখনোই অনুশোচনা পর্যন্ত বোধ করেন নি বা জাতির কাছে ক্ষমাও চাননি। কাজেই তারা রাজনীতিক হিসাবে কতটা ভাল কিংবা খারাপ তা নিরূপনের সুযোগও আসেনি।

বর্তমানে যে ধারা দেখতে পাচ্ছি অদূর ভবিষ্যতে খুব সহসাই তারা সে সুযোগ আর পাচ্ছেন বলেও মনে করার কোন কারণ নেই।
কাজেই শুধু আ্ওমীলীগ বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টিই নয় এক যুদ্ধাপরাধের জন্য ঘৃনীত জামাত ছাড়া এদেশের কোন রাজনৈতিক দলেই গনতন্ত্রের চর্চা নেই। সবারই সাংগঠনিক ভিত্তি নড়বড়ে। মুখে যে দলই যত আদর্শের বড়াই করুক বস্তুতঃ কেউই আপন স্বার্থের বিঘ্ন ঘটিয়ে শুধুই আদর্শের জন্য রাজনীতি করে না। সবারই এক নীতি - ঘুরে ফিরে একের পর এক তিনটি পার্টিই ক্ষমতায় যাবে।

আর পার্টি ক্ষমতায় গেলেই রাজনীতিকদের পোয়া বার; ধর, মার, কাট, খাও!! এই খাই খাই রাজনীতিকদের সামাজিক ভাবে বর্জন না করা পর্যন্ত এদেশে এই কালচার চলতেই থাকবে। এই খাই খাই পার্টির নেতাদের সামাজিক ভাবে বয়কট করার সময় এসেছে। বর্তমানে তরুন প্রজন্ম অনেক বেশী শিক্ষিত ও পরিশিলীত। জাতি এদের কাছে কিছু আশা করতে পারে। তাই জাতীয় স্বার্থে এদের প্রতিহত করার এটাই উপযুক্ত সময়।

আশা করতে পারি ধীরে ধীরে শিক্ষিত তরুন সমাজ রাজনৈতিক সচেতন হবেন এবং আর একটা গণজাগরনের সৃষ্টি করে দেশ ও জনগনের কল্যাণ সাধন করবেন। ।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।