আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামায়ণ (বিশ্বাস যেখানে প্রবল সেখানে যুক্তি অচল)

সংস্কৃত সাহিত্য থেকে রামায়ণের প্রথম অনুবাদ করেন কৃত্তিবাস। কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ বা শ্রীরাম পাঁচালি এক সময় বাংলার প্রধান গ্রন্থ বলে স্বীকৃত ছিল। এটি বাংলাসাহিত্যের এক অন্যতম সম্পদ।

রামায়ণ একটি প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋষি বাল্মীকি রামায়ণের রচয়িতা।

রামায়ণ ও মহাভারত ভারতের দুটি প্রধান মহাকাব্য। রামায়ণের মূল উপজীব্য হল বিষ্ণুর অবতার রামের জীবনকাহিনি। এই গ্রন্থের রচনাকাল আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী। ভারতের সংস্কৃতি চেতনার মৌলিক উপাদানগুলিই প্রতিফলিত হয়েছে রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, ভরত, হনুমান ও রাবণ চরিত্রগুলির মধ্যে। মহাভারতে সতীদাহ প্রথার উল্লেখ থাকলেও রামায়ণের মূল পাঠে তা নেই।

রামায়ণের নায়ক রাম হিন্দুধর্মে একজন অন্যতম প্রধান দেবতা বিবেচিত হন। শ্রীরাম ভারত তথা শ্রী লংকা, নেপাল, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ার একজন বিখ্যাত পুরুষ। কোথাও হিরো তো কোথাও ভিলেন। ভারতের উত্তরাঞ্চলে যেমন তাকে পুজো করা হয় তেমনি দক্ষিনাঞ্চলে তাকে ঘৃণা করা হয় তথা রামলীলার স্টাইলে রাবনলীলা করে তাকে পোড়ানো হয়। রামকে নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে।

একেক শাস্ত্রে রাম একেক রকম।

রামায়ন কয়েক খন্ডে ভাগ করা: আদিকান্ড, অযোধ্যাকান্ড, অরণ্যকান্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকান্ড, সুন্দরকান্ড, লঙ্কাকান্ড। আদিকাণ্ড-এ বর্ণিত হয়েছে রামের জন্ম, শৈশব ও সীতার সহিত বিবাহের কথা; অযোধ্যাকাণ্ড-এ বর্ণিত হয়েছে রামের রাজ্যাভিষেক প্রস্তুতি ও তাঁর বনগমনের কথা; তৃতীয় খণ্ড অরণ্যকাণ্ড-এ বর্ণিত হয়েছে রামের বনবাসের কথা ও রাবণ কর্তৃক সীতাহরণের বৃত্তান্ত; চতুর্থ খণ্ড কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড-এ বর্ণিত হয়েছে হনুমান ও রামের মিলন, রামের সহায়তায় বানররাজ বালী হত্যা এবং বালীর কনিষ্ঠ ভ্রাতা সুগ্রীবের কিষ্কিন্ধ্যার রাজ্যাভিষেক; পঞ্চম খণ্ড সুন্দরকাণ্ড-এ বর্ণিত হয়েছে হনুমানের বীরত্বগাথা, তাঁর লঙ্কাগমন ও সীতার সহিত সাক্ষাতের কথা; রাম ও রাবণের যুদ্ধ বর্ণিত হয়েছে সপ্তম খণ্ড লঙ্কাকাণ্ড-এ; সর্বশেষ খণ্ড উত্তরকাণ্ড-এর মূল উপজীব্য রাম ও সীতার পুত্র লব ও কুশের জন্মবৃত্তান্ত, তাঁদের রাজ্যাভিষেক ও রামের ধরিত্রী ত্যাগ।

ভারতবর্ষের সরযু নদীর কাছে অযোধ্যা নামের এক নগরে দশরথ নামের এক রাজা ছিলেন। তাঁর কোন সন্তান ছিল না।

মনের দুঃখে একদা মন্ত্রীদের বললেন, আমি দেবতাদের তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করব। রামায়ণের অন্যতম প্রধান চরিত্র ব্রহ্মা ও বিষ্ণু। রামায়ণে রামকে সর্বগুণের আধার বলে অভিহিত করা হয়েছে। রামের প্রিয়তমা পত্নী এবং রাজা জনকের পালিতা কন্যা। সীতার অপর নাম জানকী।

রাম বনে গেলে পুত্রশোকে দশরথের মৃত্যু হয়। রাম ও সীতার বিবাহের বারো বছর পর বৃদ্ধ রাজা দশরথ রামকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কোশল রাজসভায় তাঁর ইচ্ছাকে সকলেই সমর্থন করল। হনুমান হলো- কিষ্কিন্ধ্যা রাজ্যের এক বানর। লক্ষণ হলো রামের ভাই।

তিনি স্বেচ্ছায় রাম ও সীতার সঙ্গে বনবাসে গমন করেন ও সেখানে তাঁদের রক্ষা করে চলেন।

জটায়ু নামে একটি শকুন জাতীয় রামভক্ত পক্ষী সীতার অপহরণ দেখতে পেয়ে সীতাকে উদ্ধার করতে গিয়ে রাবণের হাতে গুরুতর আহত এবং ভূপাতিত হল। রাবণ সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে লঙ্কায় অশোক কানন নামক বনে নজরবন্দী করে একদল চেড়ীর (রাক্ষসী) তত্ত্বাবধানে রাখলেন। তিনি সীতাকে বিবাহ করতে চাইলেন। কিন্তু রামের প্রতি নিবেদিতপ্রাণা সীতা সেই কুপ্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন।

সীতার সঙ্গে রামের মিলন হল। কিন্তু দীর্ঘদিন রাক্ষসগৃহে বসবাসকারী সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে সতীত্ব প্রমাণ করতে বললেন রাম। সীতা অগ্নিতে প্রবেশ করলেন। স্বয়ং অগ্নিদেব আবির্ভূত হয়ে রামের নিকট সীতার পবিত্রতার কথা ঘোষণা করলেন। রাজা হওয়ার পর রাম অনেক কাল সীতাকে নিয়ে সুখে সংসার করেন।

প্রাচীনকালে ব্যাবিলন, ইজিপ্ট এবং ভারতবর্ষের নানা স্থানে ভাই- বোনের বিয়ে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে হিন্দুরা যখন রামকে অবতার হিসাবে গ্রহণ করে তখন সীতাকে নিয়ে পড়ে বিপাকে। বাল্মিকী পরবর্তী লেখকেরা সীতার জন্ম নিয়ে নানারকম আজগুবি গল্পের সৃষ্টি করে এবং সীতাকে সযত্নে রামের বোন হওয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

কথায় বলে মান্ধাতার আমল,মানে অনেক আগের কথা। সূর্য বংশের রাজা মান্ধাতা,এরপরে মান্ধাতার ছেলে হল মুচুকুন্দ, তারপরে পৃথু, ইক্ষাকু, আর্য্যাবর্ত, তার ছেলে ভরত।

এই রাজার সময় রাজ্য অনেকদূর প্রসারিত হয়েছিল, তাই মনে করা হয় ভরত রাজার নামেই হয়েছে ভারত। সীতা ভূদেবী পৃথিবীর কন্যা ও রাজর্ষি জনকের পালিতা কন্যা। রামচন্দ্র চোদ্দো বছরের জন্য বনবাসে গেলে সীতা তাঁর সঙ্গী হন। পরে রাবণ সীতাকে হরণ করে লঙ্কায় নিয়ে গেলে রাম ও রাবণের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। রাম বীর হলেও বাঙালি বীর, স্নেহ-মমতায় কোমলতায় সজল।

তিনি বাঙালি ঘরের আদর্শ পুত্র, আদর্শ ভ্রাতা, আদর্শ স্বামী। তেমনি সীতা, লক্ষণ, দশরত কৈকেরী শৃপলকাসহ প্রতিটি চরিত্র বাঙালির আদর্শের প্রলেপে পুনর্গঠিত। আর এই কাব্যে ভক্ত প্রধান হনুমান কর্মীকে পাওয়া যায় জীবন্ত চরিত্রে হিসেবে। মূল রামায়ণের বীর রামচরিত্র কৃত্তিবাসী রামায়ণে ভক্তের ভগবানে পরিণত হয়েছেন।

( আমার এক জ্ঞানী বন্ধু বলেন- রামায়ণ সম্পূর্ণ মানুষের কল্পনা।

একদম ভিত্তিহীন। আরব্য রজনীর মত। বিটিতে যেমন আগে আলিফ লায়লা দেখাতো- অনেকটা সেই রকম। সব রুপকথা। এগুলো বিশ্বাস করা ঠিক নয়।

) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।